চন্দ্রশেখর

চন্দ্রশেখর

চন্দ্রশেখর সিং (Chandra Shekhar Singh) ছিলেন একজন ভারতীয় রাজনীতিবিদ যিনি ভারতের অষ্টম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন৷

১৯২৭ সালের ১ জুলাই উত্তর প্রদেশের বালিয়া জেলার ইব্রাহিমপাত্তি গ্রামের এক কৃষক পরিবারে চন্দ্র শেখর সিংয়ের জন্ম হয়৷ চন্দ্র শেখর সতীশ চন্দ্র পি.জি কলেজ থেকে বি.এ ডিগ্রি লাভ করেন৷ তারপর ১৯৫০ সালে তিনি এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন৷ ছাত্র জীবনেই রাজনীতিতে তাঁর হাতেখড়ি। বৈপ্লবিক চিন্তাধারা ও মতবাদের সমর্থক হিসেবে কলেজ জীবন থেকেই তিনি খ্যাত ছিলেন। কলেজের পড়া শেষ হতেই তিনি সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।

তাঁর কর্মজীবন বলতে রাজনৈতিক জীবনের কথাই বোঝায়৷ তিনি সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন এবং বালিয়া জেলার প্রজা সমাজতান্ত্রিক দলের(PSP) সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। এক বছরের মধ্যেই তিনি উত্তর প্রদেশে পিএসপির রাজ্য শাখার যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৬ সাল অবধি উত্তরপ্রদেশ রাজ্য প্রজা সমাজবাদী পার্টির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব তিনি পালন করেন ৷ এরপর ১৯৬২ সালের ৩ এপ্রিল উত্তরপ্রদেশ থেকে তিনি রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

সামাজিক পরিবর্তনের রাজনীতিতে তিনি বিশ্বাস করতেন। রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে তিনি আরও দুবার নির্বাচিত হয়েছিলেন৷ একবার ১৯৬৮ সাল থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত পরের বার ১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত। ১৯৬৫ সালে তিনি যোগ দেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে। সাংসদ হিসেবে তিনি দলিত ও অবহেলিতদের পক্ষে কন্ঠ তুলেছিলেন৷ তিনি সামাজিক ব্যবস্থার পরিবর্তন চেয়ে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় একচেটিয়া ব্যবসা-বাণিজ্যের অসম বাড়বাড়ন্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন। ফলে তিনি সরকারপক্ষের বিরাগভাজন হন।

১৯৭৫ সালের ২৫ জুন দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষিত হওয়ার অব্যবহিত পরেই তিনি মিসায় (মেন্টেন্যান্স অফ ইন্টারনাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট) গ্রেপ্তার হন যদিও তিনি সেই সময় জাতীয় কংগ্রেসের সর্বোচ্চ সংস্থা কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটি এবং কার্যনির্বাহী গোষ্ঠীর একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন।১৯৭৭ সালে মোরারজি দেশাইয়ের নেতৃত্বে ভারতীয় সাধারণ নির্বাচনের পরে জনতা পার্টি সরকার গঠন করলে চন্দ্রশেখর জেল থেকে ছাড়া পেয়ে সেখানে সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত হন৷ দেশকে আরও ভালোভাবে জানার জন্য ১৯৮৩ সালে তিনি দেশব্যাপী পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন।

চন্দ্রশেখর মাত্র সাত মাস প্রধানমন্ত্রীর পদে বহাল ছিলেন৷ মন্ত্রীত্বে থাকাকালীন তিনি প্রতিরক্ষা এবং স্বরাষ্ট্র বিষয়ক পোর্টফোলিওগুলিও পরিচালনা করেছিলেন।কংগ্রেস পার্টি বাজেট তৈরির সময় তাঁর সরকারের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করে নিলে ১৯৯১ সালের ৬ মার্চ তাঁর সরকার পূর্ণ বাজেট পেশ করতে ব্যর্থ হয়। ফলস্বরূপ চন্দ্রশেখর ঐ দিনেই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

পি ভি ভি নরসিংহ রাওয়ের কাছে প্রধানমন্ত্রীত্ব হস্তান্তর করার পরে চন্দ্র শেখরের রাজনৈতিক গুরুত্ব অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছিল যদিও পরবর্তীকালে তিনি বহু বছর লোকসভায় নিজের আসনটি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন৷ কায়েমি স্বার্থের বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই এবং দৃঢ় মনোবল, আত্মবিশ্বাস, সাহস ও একনিষ্ঠার জন্য তাঁকে ‘তরুণ তুর্কি’ (Young Turk) বলা হত । ১৯৬৯ সালে দিল্লী থেকে তিনি ‘ইয়ং ইন্ডিয়ান’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করা শুরু করেছিলেন৷ এই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন তিনি৷ এই পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগ সেই সময় জনগনের কাছে আলোচ্য বিষয় ছিল৷ জরুরি অবস্থা চলাকালীন (১৯৭৫ সালের মার্চ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত ) পত্রিকাটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন তিনি। ১৯৮৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে আবার এটি নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হতে থাকে।

দেশের অনগ্রসর এলাকাগুলিতে সমাজ ও রাজনীতির কাজে যুক্ত মানুষদের প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন দানের জন্য এবং তৃণমূল পর্যায়ে জনশিক্ষার প্রচারে তিনি কেরল, তামিলনাড়ু, কর্নাটক, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, উত্তর প্রদেশ এবং হরিয়ানার বিভিন্ন প্রান্তে ১৫টির মতো ‘ভারত যাত্রা কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা করেন৷

১৯৭৫ সালের ২৫ জুন জরুরি অবস্থার সময় কারাগারে বন্দী থাকার সময় তিনি হিন্দিতে একটি রোজনামচা লিখতেন। পরে, ‘মেরি জেল ডায়েরি’ নামে তা প্রকাশিত হয়। তাঁর বিভিন্ন রচনার একটি সুপরিচিত সঙ্কলন গ্রন্থ হল ‘ডায়নামিক্স অফ সোশ্যল চেঞ্জ’। রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান শ্রী হরিবংশ এবং রবি দত্ত বাজপেয়ী চন্দ্রশেখরের জীবন নিয়ে একটি বই লিখেছেন।

২০০৭ সালের ৮ জুলাই চন্দ্রশেখর সিংয়ের মৃত্যু হয়৷

2 comments

আপনার মতামত জানান