দ্রৌপদী মুর্মু

দ্রৌপদী মুর্মু

দ্রৌপদী মুর্মু (Draupadi Murmu) ভারতের পঞ্চদশ রাষ্ট্রপতি এবং একজন ভারতীয় মহিলা রাজনীতিবিদ যিনি তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের তরফ থেকে আগত প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ভারতের পঞ্চদশ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনীত প্রার্থী ছিলেন তিনি। এর আগে ঝাড়খণ্ডের নবম রাজ্যপাল হিসাবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। দ্রৌপদী মুর্মুই হলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল হিসাবে পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করেছেন। তিনিই দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি যিনি স্বাধীনতার পরে জন্মগ্রহণ করেছেন। নীলম সঞ্জীব রেড্ডিকে ছাপিয়ে দেশের সর্বকনিষ্ঠ রাষ্ট্রপতি তিনি। দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি তিনি যিনি কাউন্সিলর থেকে রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। 

১৯৫৮ সালের ২০ জুন ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার বাইদাপোসি গ্রামে একটি সাঁওতালি উপজাতি পরিবারে দ্রৌপদী মুর্মুর জন্ম হয়। তাঁদের আদি বাড়ি ময়ূরভঞ্জ জেলার উপড়বেদ গ্রামে। তাঁর বাবা বিরাঞ্চি নারায়ণ টুডু গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান ছিলেন। দ্রৌপদীর স্বামীর নাম শ্যামচরণ মুর্মু যিনি পরবর্তীকালে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন। তাঁদের দুই পুত্র ও এক কন্যা। পরবর্তীকালে দুই পুত্রকেই দুর্ঘটনায় হারান দ্রৌপদী। এক মাত্র কন্যা ইতিশ্রী মুর্মু বর্তমানে পেশায় একজন ব্যাঙ্ককর্মী। তাঁর স্বামী গণেশ হেমব্রম একজন রাগবি খেলোয়াড়। তাঁদের এক কন্যাও রয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে দ্রৌপদী তাঁর স্বামী, দুই পুত্র, তাঁর মা এবং তাঁর ভাইকে হারান। তাঁর এক পুত্র লক্ষ্মণ ওড়িশার পত্রপড়ে কাকার বাড়িতে থাকাকালীন এক সকালে বিছানায় জ্ঞানহীন অবস্থায় উদ্ধার হয়। হাসপাতাল তাঁকে মৃত ঘোষণা করলে শুরু হয় পুলিশি তদন্ত। তদন্তে উঠে আসে মৃত্যুর আগের রাতে বন্ধুদের সাথে একটি রেস্তরাঁয় নৈশভোজে উপস্থিত ছিল লক্ষ্মণ। পুলিশের দাবি অনুসারে বাড়ি ফেরার পথে লক্ষ্মণের মাথায় আঘাত লাগে যা থেকে তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে কিন্তু ময়নাতদন্তে এরকম কোন আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। পারিবারিক এই চূড়ান্ত বিপর্যয়ের পর দ্রৌপদী দাদা লেখরাজ কৃপালানী দ্বারা প্রচারিত ভক্তি আন্দোলন ব্রহ্ম কুমারী ধ্যানযোগে আকৃষ্ট হন।

দ্রৌপদী মুর্মু ভুবনেশ্বরের রামাদেবী উইমেন্স কলেজ থেকে কলা বিভাগে স্নাতক পাস করেছেন। পেশাদার রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশ করবার আগে তিনি স্কুল শিক্ষিকা হিসাবে জীবন শুরু করেন। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ওড়িশার রাইরংপুরের শ্রী অরবিন্দ ইন্টিগ্রাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারে শিক্ষকতা করেছেন তিনি। শিক্ষিকা হিসেবে স্কুলের সকলের প্রিয় পাত্রী হয়ে উঠেছিলেন তিনি। তাঁর কাছে শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীর মধ্যে কোন ফারাক ছিল না। সকলকেই সমান চোখে দেখতেন তিনি। স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের জন্মদিনে তিনি নিজের খরচায় চকলেট কিনে আনতেন এবং সবার সাথে তা ভাগ করে দিতেন। এমনকি স্কুলের দারোয়ানের জন্মদিনও পালন করে তাঁকে চকোলেটও দিয়েছিলেন তিনি। কন্যা ইতিশ্রীও এই স্কুলেই পড়তেন। শিক্ষাকেন্দ্রিক ক্ষেত্রের বাইরেও কাজ করেছেন তিনি। একসময় ওড়িশা সরকারের সেচ বিভাগে জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ছিলেন তিনি।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

রাজনীতিক হিসেবে দ্রৌপদী মুর্মু র জীবন শুরু হয় মুর্মু ১৯৯৭ সালে ভারতীয় জনতা পার্টি (বি.জে.পি)তে যোগদানের মাধ্যমে এবং রায়রংপুরে নগর পঞ্চায়েতের কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে। বিজেপি এবং বিজু জনতা দলের জোট সরকারের অধীনে তিনি বাণিজ্য ও পরিবহন এবং মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ উন্নয়নের স্বাধীন দায়িত্বের প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। রায়রংপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক হিসাবেও তিনি একসময় কাজ করেছেন।

২০১৫ সালের ১৮ মে ঝাড়খণ্ডের প্রথম রাজ্যপাল হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন দ্রৌপদী। দ্রৌপদী হলেন ওড়িশা থেকে আগত প্রথম আদিবাসী নেত্রী হলেন যিনি ভারতের কোন রাজ্যের রাজ্যপাল হিসাবে নিযুক্ত হন। ২০১৭ সালে রাজ্যপাল হিসেবে দ্রৌপদী খবরের শিরোনামে আসেন যখন তিনি ছোটনাগপুর প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯০৮ এবং সাঁওতাল পরগনা প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৪৯ -এর সংশোধনী সংক্রান্ত একটি বিল -এ সম্মতি জানাতে অস্বীকার করেন। এই বিলটিতে আদিবাসীদের তাদের জমিকে বাণিজ্যকরণের অধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল সেই সাথে জমির মালিকানা যাতে পরিবর্তন না হয় তাও নিশ্চিত করা হয় এতে। দ্রৌপদী মুর্মু রাজ্যপাল হিসাবে তাঁর সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন এবং সরকারের কাছ থেকে আদিবাসীদের কল্যাণের জন্য এই বিল কী কী পরিবর্তন আনবে সে সম্পর্কে বিশদে ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন।

২০২২ সালের জুন মাসে বিজেপি ২০২২ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটের প্রার্থী হিসাবে দ্রৌপদী মুর্মুকে মনোনীত করে বিরোধী জোট প্রার্থী যশবন্ত সিনহার বিপক্ষে। ২১ জুলাই ২০২২ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয় লাভ করেন।

আপনার মতামত জানান