বিশ্বসঙ্গীত বিশেষত আধুনিক গানের ভান্ডার নানা সময়ে যেসমস্ত একনিষ্ঠ সঙ্গীত সাধকের অকৃপণ দানে সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন আমেরিকান গায়ক এলভিস প্রেসলি (Elvis Presley) বা এলভিস অ্যারন প্রেসলি (Elvis Aaron Presley)। তিনি আমেরিকান সঙ্গীত এবং জনপ্রিয় সংস্কৃতির জগতে যেন এক নবযুগের আমদানি করেছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন সামাজিক এবং জাতিগত সমস্যাগুলিকেও তিনি যেন পদে পদে চ্যালেঞ্জ করতেন তাঁর গান এবং উপস্থাপনার মাধ্যমে। তাঁকে ‘রক এন রোল’-এর রাজা বলা হত। গির্জার গসপেল সঙ্গীত থেকে অনুপ্রেরণা, ট্রাক-ড্রাইভারি ইত্যাদি নানা বিচিত্রতায় ভরপুর তাঁর জীবন। এলভিসের যৌন আবেদনে পূর্ণ উপস্থাপন শৈলী, তাঁর স্পিনিং হিপ মুভমেন্ট, এমনকি তাঁর পোশাক, চুলের স্টাইল সবকিছুই সেসময়ের নিরিখে ছিল অত্যন্ত সাহসী এবং অভিনব। কেবল সঙ্গীত নয়, বত্রিশটি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন তিনি। তিনবার গ্র্যামি পুরস্কার জিতেছেন। এলভিস গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড দ্বারা সর্বকালের সেরা-বিক্রীত একক শিল্পী হিসাবে স্বীকৃত হয়েছিলেন।
১৯৩৫ সালের ৮ জানুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্গত মিসিসিপির টুপেলোতে এলভিস প্রেসলির জন্ম হয়। প্রেসলির বাবা ভার্নন এলভিস এবং প্রিসলির মা গ্ল্যাডিস লাভ (পূর্বে স্মিথ)। এলভিসের যমজ ভাই জেসি গ্যারন প্রেসলি এলভিসের ৩৫ মিনিট আগে মৃত অবস্থায় ভূমিষ্ট হয়েছিল। ফলে বাবা-মায়ের ভীষণই ঘনিষ্ঠ ছিলেন এলভিস। বিশেষত মায়ের সঙ্গে তাঁর একটি প্রগাঢ় বন্ধন তৈরি হয়েছিল। প্রেসলির বাবা ভার্নন উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্য ঘন ঘন চাকরি বদল করতেন, ফলে তাঁদের পরিবারে আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য তেমন ছিল না বললেই চলে। তারওপর ১৯৩৮ সালে তাঁর জমির মালিকের দেওয়া একটি চেক পরিবর্তন করার ফলে আটমাস জেলেও কাটাতে হয়েছিল ভার্ননকে। নিজেদের বাসস্থানও হারিয়েছিল তাঁরা সেসময়। প্রতিবেশীদের বদান্যতা এবং সরকারী খাদ্য সহায়তার ওপর নির্ভর করে থাকতে হত এলভিসের পরিবারকে। পরিবারের সঙ্গে গির্জায় কোনো এক সমাবেশে অংশগ্রহণ করে, সেখানকার গসপেল সঙ্গীত শ্রবণ করেই গানের প্রাথমিক অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন তিনি।
টুপেলোর প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই এলভিসের শিক্ষালাভ শুরু হয়েছিল। ১৯৪১ সালে ইস্ট টুপেলো কনসোলিডেটেডের প্রথম শ্রেণীতে প্রবেশ করেন। সেই তখন থেকেই তাঁর সঙ্গীতপ্রতিভার হদিশ পাওয়া যায়। ‘ওল্ড শেপ’ নামক প্রার্থনার গান গেয়ে স্কুল শিক্ষককে মুগ্ধ করেন তিনি এবং গানের একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে উৎসাহিত হন। যখন তাঁর মাত্র আটবছর বয়স তখন স্থানীয় রেডিও স্টেশনে যাতায়াত শুরু করেছিলেন তিনি। ১৯৪৫-এ মিসিসিপি-আলাবামা ফেয়ার অ্যান্ড ডেইরি শোতে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতাটি ছিল তাঁর প্রথম পাবলিক পারফরম্যান্স। তখন গীর্জার গায়কদলের সঙ্গে গাইতে শুরু করেছিলেন তিনি। বারো বছর বয়সের জন্মদিনে প্রথম গীটার উপহার পেয়েছিলেন এলভিস। পরের বছরে, তিনি তাঁর দুই চাচা এবং পরিবারের গির্জার নতুন যাজকের কাছ থেকে প্রাথমিক গিটারের পাঠ গ্রহণ করেন। ১৯৪৬ সালে ষষ্ঠ শ্রেণীতে তিনি নতুন স্কুল মিলামে প্রবেশ করেন। পরের বছর থেকে রোজ স্কুলে গিটার নিয়ে যেতে শুরু করেন তিনি৷ সেই অল্প বয়সেই বন্ধু স্লিমের সহযোগিতায় রেডিও স্টেশনে পারফর্ম করার সুযোগ আসে প্রেসলির।
১৯৪৮ সালে বাবা-মায়ের সঙ্গে এলভিস চলে আসেন টেনেসির মেমফিসে। রুমিং হাউসে প্রায় এক বছর বসবাস করার পর তাঁদেরকে লডারডেল কোর্ট নামে পরিচিত পাবলিক হাউজিং কমপ্লেক্সে একটি দুই বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্ট দেওয়া হয়েছিল। সেখানে এল.সি হিউমস হাইস্কুলে ভর্তি হন তিনি। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় সঙ্গীতে কেবলমাত্র ‘সি’ পেয়েছিলেন। ১৯৫০ সালে তিনি তাঁর আড়াই বছরের সিনিয়র প্রতিবেশী লি ডেনসনের তত্ত্বাবধানে নিয়মিত গিটার অনুশীলন শুরু করেন। তাঁরা এবং আরও তিনটি ছেলে একত্র হয়ে সেসময় একটি গানের দলের সূচনা করেন। সেবছর সেপ্টেম্বরে লোয়ের স্টেট থিয়েটারে কাজ পান প্রেসলি। টিকিট দেখে আগত দর্শকদের যথাস্থানে বসিয়ে দেওয়ার কাজ।
সকলের মধ্যে পোশাকে, চলাফেরায় এমনকি চুলের স্টাইলেও প্রেসলি ছিলেন আলাদা ধরনের। লডারডেল কোর্টের বাইরে পারফর্ম করায় কোনো ভবিষ্যৎ বা যৌক্তিকতা খুঁজে পাননি তিনি। হিউমসের বার্ষিক মিনস্ট্রেল শো-তে ১৯৫৩ সালের এপ্রিলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এলভিস। এই শো তাঁকে ভীষণ জনপ্রিয় করে তুলেছিল সেই স্কুলের মধ্যে। সেই ১৯৫৩ সালেই হিউমস হাইস্কুল থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। আনুষ্ঠানিক শিক্ষার পরিবর্তে বিভিন্ন ঘরানার সঙ্গীত ও বিবিধ বাদ্যযন্ত্র শ্রবণের অভিজ্ঞতা থেকেই সঙ্গীতকে আত্মস্থ করে স্বকীয় উপস্থাপনা শৈলীর অভিনবত্বে তিনি হয়ে উঠেছিলেন একজন তারকা শিল্পী। প্রায়শই শহরের আফ্রিকান-আমেরিকান বিভাগে বিলে স্ট্রীট পরিদর্শন করতেন কৃষ্ণাঙ্গ সঙ্গীতজ্ঞদের গানবাজনা শোনবার জন্য। তাছাড়া সেসময় মেমফিস ছিল ব্লুজ, বুগি উগি, কান্ট্রি এবং জ্যাজ প্রভৃতি নানা ঘরানার সঙ্গীতের প্রধান কেন্দ্র। প্রেসলি সেইসমস্ত সঙ্গীতের সঙ্গেও পরিচিত হন। তখন চার্লির রেকর্ডের দোকানে যাওয়া এবং গান শোনা ছিল তাঁর প্রিয় একটি কাজ।
১৯৫৩ সালে মেমফিস রেকর্ডিং সার্ভিসেসে প্রবেশ করেন এলভিস। সেই কোম্পানি তখন চালাতেন স্যাম ফিলিপস নামক এক ব্যক্তি। সেসময় তিনি স্বল্প দৈর্ঘ্যের টু সাইডেড অ্যাসিটেট ডিস্ক রেকর্ডিং-এর জন্য অর্থায়ন চালু করেন। সেসময় এলভিস সেই ডিস্কের জন্য দুটি গান ‘মাই হ্যাপিনেস’ এবং ‘দ্যাটস হোয়েন ইওর হার্টচেস বিগিন’ রেকর্ড করেছিলেন। সেসময় এলভিসের নিজস্ব স্টাইল চোখ এড়ায়নি স্যাম ফিলিপসের। স্যাম যখন এরপর সান রেকর্ডিং স্টুডিও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এলভিসকে তিনি উপেক্ষা করেননি৷ ১৯৫৪-এর জানুয়ারিতে আরেকটি অ্যাসিটেট ডিস্কের জন্য দুটি গান গেয়েছিলেন প্রেসলি কিন্তু সফলতা আসেনি। তারপর ১৯৫৪ সালের এপ্রিল মাসে এলভিস ট্রাক ড্রাইভারের চাকরি পর্যন্ত করেছিলেন। সেবছরই ৬ জুন সান রেকর্ডস থেকে ফিলিপসের একটি ফোন আসে তাঁর কাছে এবং এলভিস একটি রেকর্ডিং সেশনের জন্য ডাক পান সান রেকর্ডসের তরফ থেকে। ফিলিপস তখন প্রেসলিকে গিটারিস্ট স্কটি মুর এবং বেসিস্ট বিল ব্ল্যাকের সঙ্গে একত্রে একটি সেটআপ তৈরি করেছিলেন। তাঁরা তিনজন বেশ কয়েকটি গান পরিবেশন করলেও প্রথমে স্যাম ফিলিপস তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। শেষে এলভিস আর্থার ক্রুডুপের ব্লুজ ঘরানার একটি গান ‘দ্যাটস অল রাইট’ সম্পূর্ণ নিজের স্টাইলে গাইতে শুরু করেন। সেই গানই ফিলিপসের মনে ধরে এবং তা রেকর্ড করে চালানো হলে ভীষণই জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। এরপর কয়েকদিনে বিল মনরোর ব্লুগ্রাস ঘরানার ‘ব্লু মুন অব কেনটাকি’র মতো গান রেকর্ড করেন তিনি।
১৭ জুলাই এই প্রেসলি এবং তাঁর এই দুই সাথী প্রথম জনসমক্ষে পারফর্ম করেছিলেন বন এয়ার ক্লাবে। আবার ওভারটন পার্ক শেলের শোতে এলভিস তাঁর বিখ্যাত ‘রাবার লেগস’ নামক নৃত্যশৈলীকে বিখ্যাত করে তোলেন। ১৯৫৪ সালেই প্রেসলি লুইসিয়ানা হায়ারাইড নামক শো-তে পারফর্ম করেছিলেন। এই অনুষ্ঠানটি ২৮টি রাজ্যের ১৯৮টি রেডিও স্টেশনে সম্প্রচারিত হয়েছিল।
কেএসএলএ-টিভি চ্যানেলে লুইসিয়ানা হায়ারাইডের সম্প্রচারে প্রথম টেলিভিশনে আত্মপ্রকাশ করেন প্রেসলি। সেসময় হায়ারাইড শো-তে নিয়মিত পারফর্ম করে টেনেসি থেকে পশ্চিম টেক্সাস পর্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। তৎকালীন সঙ্গীত ব্যবসার সেরা প্রচারক টম পার্কারের নজরে আসেন প্রেসলি। পার্কার বিখ্যাত গায়ক হ্যাঙ্ক স্নো-এর ফেব্রুয়ারি সফরে প্রেসলিকে বুক করেন। ১৯৫৫-এর শেষে এলভিস আরসিএ ভিক্টরের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন এবং ১৯৫৬ সালের ১০ জুন তাদের জন্য প্রথম রেকর্ডিং করেছিলেন। তারই ফসল ২৭ জানুয়ারি প্রকাশিত প্রেসলির একক সঙ্গীত ‘হার্টব্রেক হোটেল’। সেবছর ফেব্রুয়ারিতে সান রেকর্ডিং থেকে প্রকাশিত এলভিসের একটি গান বিলবোর্ড কান্ট্রি চার্টের শীর্ষে পৌঁছয়৷ আরসিএ ভিক্টর ২৩ মার্চ এলভিস প্রেসলি শিরোনামেই প্রথম অ্যালবাম প্রকাশ করে। এটি বিলবোর্ড কান্ট্রি চার্টের শীর্ষে থাকা প্রথম রক অ্যান্ড রোল অ্যালবাম হয়ে ওঠে।
এরপর একে একে ‘মিল্টন বার্লে শো’, কিংবা ‘স্টিভ অ্যালান শো’ প্রভৃতি জনপ্রিয় সব টেলিভিশন শো-তে উপস্থিত হন প্রেসলি। এছাড়াও ‘দ্য এড সুলিভান শো’তেও হাজির হয়েছিলেন তিনি বেশ কয়েকবার। ততদিনে নিজস্ব ঘরানার সঙ্গীত প্রচলনের ফলে এলভিস জনপ্রিয় তারকা হয়ে উঠেছেন। এরপর একে একে যে-গানগুলি তাঁকে দর্শকপ্রিয় করে তুলে এক পাকাপাকি প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল, সেগুলি হল, ‘ডোন্ট বি ক্রুয়েল’ (১৯৫৬), ‘হাউন্ড ডগ’ (১৯৫৬), “ব্লু সুয়েড সুজ’ (১৯৫৬) ‘লাভ মি টেন্ডার’ (১৯৫৬) ইত্যাদি। ১৯৫৬তে ‘এলভিস’ নামে দ্বিতীয় অ্যালবাম বেরোয় জনপ্রিয় সংস্কৃতির ধারায় রক অ্যান্ড রোলকে বইয়ে দিয়েছিলেন প্রেসলি। ‘হাউ গ্রেট দো আর্ট’ (১৯৬৭) অ্যালবামটির জন্য প্রথমবার গ্র্যামি পেয়েছিলেন তিনি। ‘ক্রাইং ইন দ্য চ্যাপেল’ (১৯৬৫) একটি গসপেল ঘরানার সঙ্গীতের অ্যালবাম। ‘মুডি ব্লু’ (১৯৭৭) তাঁর চব্বিশতম এবং শেষ অ্যালবাম।
সঙ্গীতের পাশাপাশি চলচ্চিত্র জগতেও পদার্পণ করেন এলভিস। ১৯৫৬ সালের নভেম্বর মাসে তাঁর প্রথম অভিনীত ছবি ‘লাভ মি টেন্ডার’ মুক্তি পেয়েছিল এবং চুড়ান্ত জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। কিন্তু তাঁর সঙ্গীতসাধনায় ছেদ পড়েনি। ডিসেম্বরে আবার সান রেকর্ডসে একটি জ্যাম সেশন রেকর্ড করেন৷ সেটি ‘মিলিয়ন ডলার কোয়ার্টেট’ নামে প্রকাশিত হয়। ১৯৫৭ সালে তিনটি মিউজিক রেকর্ড ‘টু মাচ’, ‘অল শোক আপ’ এবং ‘(লেট মি বি ইওর) টেডি বিয়ার’ প্রকাশিত হয়। এরমধ্যেই সেই মাত্র ২২ বছর বয়সেই প্রেসলি ১৮টি ঘরবিশিষ্ট ‘গ্রেসল্যান্ড’ নামক এক প্রাসাদোপম অট্টালিকা ক্রয় করেন।
মোট বত্রিশটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন প্রেসলি এবং সমালোচকদের দ্বারা সেগুলি প্রশংসিতও হয়েছিল। তাঁর অভিনীত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে ‘জেলহাউস রক’ (১৯৫৭), ‘কিং ক্রেওল’ (১৯৫৮), ‘জিআই ব্লুজ’ (১৯৬০), ‘ব্লু হাওয়াই’ (১৯৬১), ‘গার্লস! গার্লস! গার্লস!’ (১৯৬২), ‘ভিভা লাস ভেগাস’ (১৯৬৪), ‘স্পিনআউট’ (১৯৬৬), ‘ফ্লেমিং স্টার’ (১৯৬০), ‘ওয়াইল্ড ইন দ্য কানট্রি’ (১৯৬১) প্রভৃতি।
১৯৫৮-এর ২৪ মার্চ প্রেসলিকে আরকানসাসের ফোর্ট চাফিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করা হয়েছিল। সেবছর তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়। ফোর্ট হুডে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। একসময় জার্মানিতে পাঠানো হয় তাঁকে। সেখানে কিশোরী প্রিসিলা বিউলিউয়ের সঙ্গে দেখা ও ঘনিষ্ঠতা হয় তাঁর। অবশেষে ১৯৬৭ সালে প্রিসিলাকে বিবাহ করেন এবং তাঁদের একমাত্র কন্যা লিসা মেরি প্রেসলির হন্ম হয় ১৯৬৮ সালে। যদিও ১৯৭৩ সালে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। আরও অনেকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল প্রেসলির। জিঞ্জার অ্যালডেনকে বিয়ের পরিকল্পনা তাঁর পূরণ হয়নি। ১৯৬০-এ সেনাবাহিনী থেকে ফিরে সঙ্গীত এবং চলচ্চিত্র জগতেই মনোনিবেশ করেন। ১৯৬৮তে একটি টেলিভিশন কনসার্ট শুরু করেন, যেটি ‘৬৮ কামব্যাক স্পেশাল’ নামেও পরিচিত৷ এর সাফল্যের পর সারা বিশ্ব থেকে ডাক আসে তাঁর। ১৯৬৯-এ প্রকাশ পায় তাঁর দশম অ্যালবাম ‘ফ্রম এলভিস ইন মেমফিস’। এই অ্যালবামে দেশের গান রয়েছে অনেকগুলি। কনসার্টে প্রেসলিরা বিটলসের গানও পরিবেশন করতেন নিজস্ব ঢঙে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সঙ্গেও দেখা করেন তিনি।
সঙ্গীত এবং চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য এলভিস নানাসময়ে বিবিধ খেতাবে সম্মানিত হয়েছিলেন। ন্যাশনাল একাডেমি অফ রেকর্ডিং আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস দ্বারা লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড (তখন বিং ক্রসবি অ্যাওয়ার্ড নামে পরিচিত) প্রাপ্ত প্রথম রক অ্যান্ড রোল গায়ক হয়েছিলেন প্রেসলি। তিনটি গ্র্যামি পুরস্কার লাভ, একাধিকবার মিউজিক হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্তি, গিনিস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে সর্বকালের সেরা বিক্রীত গায়ক—এমনই আরও নানা কৃতিত্বে ভরপুর তাঁর জীবন। মরণোত্তর পেয়েছেন প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রীডম। তাঁকে নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্রও (এলভিস অন ট্যুর) সেরার পুরস্কার পেয়েছিল।
১৯৭৩-এ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ছিলেন৷ এরপর অসুস্থতা নিয়েও অ্যালবামের কাজ করেছিলেন। মাদকেরও নেশা ছিল তাঁর। গ্লকোমা, উচ্চ রক্তচাপ, লিভারের অসুখ ইত্যাদি নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। গ্রেসল্যান্ডের বাথরুমে অচেতন অবস্থায় পাওয়া গেলে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। সেইদিনই অর্থাৎ ১৯৭৭-এর ১৬ আগস্ট ৪২ বছর বয়সে এলভিস প্রেসলির মৃত্যু হয়।
তথ্যসূত্র
- https://en.m.wikipedia.org/wiki/Elvis_Presley
- https://www.graceland.com/biography
- https://www.ducksters.com/biography/entertainers/elvis_presley.php
- https://www.notablebiographies.com/amp/Pe-Pu/Presley-Elvis.html
- https://www.thoughtco.com/elvis-presley-profile-1779499
- https://www.biographyonline.net/music/elvis-presley.html
- https://biography.elvis.com.au/