ভারতবর্ষের স্বাধীনতা দিবস ১৫ই আগস্ট। বলা যেতে পারে শিক্ষিত অশিক্ষিত সকল ভারতবাসীই এই একটি তারিখ মনে রাখা নিয়ে কখনো সংশয়ে থাকেনা। আমাদের বহু আকাঙ্খিত স্বাধীনতা লাভের দিনটি কি কখনো ভোলা যায়! আর তাই তো সারা ভারতজুড়েই অত্যন্ত মর্যাদা ও সমারোহের সাথে এই দিবসটি উদযাপিত হয়ে থাকে। কিন্তু এটা জানেনকি এই বাংলাতেই এমন তিনটি স্থান আছে যেখানে দেশের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন হয় ১৫ আগস্টের পরিবর্তে ১৮ আগস্ট। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন। বালুরঘাট, মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়ায় স্বাধীনতা দিবস পালিত হয় ১৮ আগস্ট। এখন ভাবছেন তো এর এরকম অদ্ভুত সিদ্ধান্তের কারণ কি। আসুন সেটাই জেনে নেওয়া যাক পশ্চিমবঙ্গের যে জেলাগুলিতে ১৮ অগাস্ট স্বাধীনতা দিবস পালিত হয় ।
১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট মধ্যরাত্রে স্বাধীন দেশ হিসেবে যখন ভারতের নাম সারা পৃথিবী জানতে পারলো স্বাধীনতার আনন্দে তখন সমগ্র দেশ উত্তাল। কিন্তু স্বাধীনতার ঘোষণার ঠিক কয়েকঘন্টা আগে অর্থাৎ ১৪ অগাস্ট রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বালুরঘাট হাইস্কুলের দখল নেয়। অবশেষে ১৮ অগাস্ট বালুরঘাট ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। মূলত সেই কারণেই আজও ১৫ অগাস্টের পাশাপাশি ১৮ অগাস্ট স্বাধীনতা দিবস পালন করেন বালুরঘাটবাসী। ঠিক এরকমভাবে ওই দিনেই ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়া জেলাও।
ঐতিহাসিক সূত্র অনুসারে ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট সকালে জনাব পানাউল্লা পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বালুরঘাটে। সেইদিন প্রায় গোটা বালুরঘাট মুড়ে দেওয়া হয়েছিল পাকিস্তানী পতাকায়। উপায়ান্তর না দেখে স্থানীয় স্বাধীনতা সংগ্রামীরা সশস্ত্রভাবে পাকিস্তানী বাহিনীর এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন বালুরঘাটে। তৎকালীন বালুরঘাট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক কুমুদরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের সাহসিকতায় হাইস্কুল চত্বরে পাকিস্তানি পতাকা তুলতে পারেনি পাকিস্তানী সেনা।
র্যাডক্লিফ লাইনের হোতা সিরিল র্যাডক্লিফ বালুরঘাট ও আসামের বেশ কিছু এলাকাকে ‘নোশনাল’ এরিয়া’ বলে ঘোষণা করেন। শেষ পর্যন্ত ১৮ অগাস্ট সকালে বালুরঘাট দখল করে ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং এর সাথে সাথে ১৮ অগাস্ট বালুরঘাট প্রশাসনিকভাবে স্বাধীনতা লাভ করে। এরপর ১৯ অগাস্ট বালুরঘাট হাইস্কুল ময়দানে স্বাধীনতার বিজয় উৎসব পালন করেন বালুরঘাটবাসী। মূলত এই কারণে ১৮ অগাস্ট দিনটি বালুরঘাটবাসীর কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এই দিনটিকেই তাঁদের স্বাধীনতা দিবস হিসেবে মানেন শহরের বাসিন্দারা।
একই ভাবে নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলাও স্বাধীনতা দিবস পালন করে আসছে ১৮ অগাস্ট। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় নদিয়া জেলার বিস্তীর্ণ অংশ চলে গিয়েছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে। শেষ পর্যন্ত দু’ দিন পরে এই তিন জেলাই ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়।
মুর্শিদাবাদকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করতে দিল্লিতে জোরদার তদারকি করেন শশাঙ্কশেখর স্যান্যাল, জনসংঘের শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। রাজনৈতিক দলগুলির পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হয়, গঙ্গা নদীকে ধরে ভৌগলিক সীমারেখা পুনরায় সংশোধন করে মুর্শিদাবাদকে ভারত ও খুলনা জেলাকে পূর্ব পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত করার। কলকাতা বন্দরের নিরাপত্তার বিষয়টিও আলোচনায় ওঠে। তিন দিনের টান টান উত্তেজনার পর ১৭ অগাস্ট ১৯৪৭, সরকারিভাবে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয় ‘মুর্শিদাবাদ’। পরের দিন ১৮ অগাস্ট মুর্শিদাবাদে প্রথম স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়। তাহলে জানা গেল আশা করি পশ্চিমবঙ্গের যে জেলাগুলিতে ১৮ অগাস্ট স্বাধীনতা দিবস পালিত হয় তাদের নাম ও এই রীতির