Akshaya Tritiya

অক্ষয় তৃতীয়া ব্রত

বৈশাখমাসের শুক্ল পক্ষের তৃতীয়া তিথিতে অক্ষয় তৃতীয়া ব্রত পালন করা হয়। রঘুনন্দনের তিথি তত্ত্বে জানা যায় এই অক্ষয় তৃতীয়ার সূচনা সত্য যুগে। সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও এই কলিযুগেও একই ধারায় এই অক্ষয় তৃতীয়ার ব্রত পালন করে চলেছে মানুষ।

ভিডিওতে অক্ষয় তৃতীয়া ব্রত

হিন্দুদের বিশ্বাস অনুযায়ী যে দিন গঙ্গাদেবীকে দেবলোক থেকে মর্ত্যলোকে এনেছিলেন জনার্দন, সেই দিনটিই ছিল অক্ষয়-পুন্য দিন। বলা হয় এই দিনে নিষ্ঠাভাবে দান-ধ্যান, পূজা-অর্চনা করলে নাকি সংসারে সুখ- শান্তি – ঐশ্বর্য অটুট থাকে, অক্ষয় থাকে। বিশেষ করে যদি শিবপূজা, নারায়নপূজা , বিষ্ণুপূজা, গঙ্গাপূজা ইত্যাদি পূজা করা হয়। জেনে নেওয়া যাক এই ব্রতের পেছনে প্রচলিত কাহিনী।

প্রাচীনকালে একজন নিষ্ঠুর প্রকৃতির ব্রাহ্মণ ছিলেন। তিনি ক্রোধী-জেদি আর খুবই বদরাগী ছিলেন। একদিন দুপুরবেলা খিদে আর তেষ্টায় কাতর হয়ে এক বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ যখন ওই নিষ্ঠুর ব্রাহ্মণের দরজায় এসে সাহায্য চাইলেন, তখন ঐ নিষ্ঠুর ব্রাহ্মণ তাকে জল পর্যন্ত দিলেন না। এবং সেই তৃষ্ণার্ত ব্রাহ্মণকে তিনি বাড়ি থেকে বের করে দিলেন। নিষ্ঠুর ব্রাহ্মণের স্ত্রী দূর থেকে এই দৃশ্য দেখে মনে মনে খুবই কষ্ট পেলেন। তিনি নিজের স্বামীকে এই কাজের জন্য তিরস্কার করে ঐ বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের কাছে গিয়ে তার স্বামীর দুর্ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চাইলেন। তারপর বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের সেবা যত্ন করে তাকে তৃপ্ত করলেন। এই দিনটি ছিল অক্ষয় তৃতীয়া।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

কালক্রমে ঐ নিষ্ঠুর ব্রাহ্মণের মৃত্যু হয়। যমরাজের বিচার সভায় ঐ ব্রাহ্মণের নরকবাসের হুকুম হয়। এমন সময় চিত্রগুপ্ত পাপপুণ্যের হিসেব কষতে গিয়ে দেখলেন যে ঐ নিষ্ঠুর ব্রাহ্মণের স্ত্রী এক অক্ষয় তৃতীয়ার শুভদিনে এক বৃদ্ধ ব্রাহ্মণকে অন্ন ও জলদান করে তাকে তৃপ্ত করেছিলেন। শুধু তাইই নয়, সেই বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ ছিলেন স্বয়ং নারায়ণ।

এই কথা চিত্রগুপ্ত যমরাজকে বলতেই,যমরাজ ঐ নিষ্ঠুর ব্রাহ্মণকে বিষ্ণুর দূতদের কাছে দিয়ে আসার আদেশ দিলেন। যমরাজ তখন ঐ বৃদ্ধ-ব্রাহ্মণকে বললেন “তোমার পাপের সাজা স্বরূপ নরকই ছিল তোমার উপযুক্ত স্থান। কিন্তু তোমার পুণ্যবতী স্ত্রী অক্ষয় তৃতীয়ার দিন বৃদ্ধ ব্রাহ্মণকে অন্ন ও জলদান করে তৃপ্ত করায় তোমার বিষ্ণুলোক প্রাপ্তি হল।”

এইভাবে ব্রতের পুণ্যফলে পাপী একজন মানুষেরও বিষ্ণুলোকে স্থান হল।

তথ্যসূত্র


  1. মেয়েদের ব্রতকথা- লেখকঃ গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য সম্পাদিত ও রমা দেবী কর্তৃক সংশোধিত, প্রকাশকঃ নির্মল কুমার সাহা, দেব সাহিত্য কুটির, পৃষ্ঠা ৪২

One comment

আপনার মতামত জানান