প্রতি বছর প্রতি মাসের নির্দিষ্ট কিছু দিনে বিভিন্ন দেশে কিছু দিবস পালিত হয়। ওই নির্দিষ্ট দিনে অতীতের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে স্মরণ করা বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতেই এই সমস্ত দিবস পালিত হয়। পালনীয় সেই সমস্ত দিবস গুলির মধ্যে একটি হল ভারতীয় নৌবাহিনী দিবস (Indian Navy Day)।
ভারতবর্ষে প্রতি বছর ৪ ডিসেম্বর নৌবাহিনী দিবস উদযাপন করা হয়ে থাকে। ভারতীয় নৌবাহিনীর সাফল্যকে সম্মান জানানোর জন্য এবং তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে সকলের সামনে তুলে ধরার জন্যই মূলত এই দিনে ভারতে নৌবাহিনী দিবস পালন করা হয়।
নৌবাহিনী হল সামরিক বাহিনীর নৌবিভাগ। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সশস্ত্র নৌবাহিনী ‘রয়্যাল ইন্ডিয়ান নেভি’ (Royal Indian Navy) নামটি স্বাধীনতার পর ১৯৫০ সালের ২৬শে জানুয়ারি পাল্টে রাখা হয় ভারতীয় নৌবাহিনী। ভারতের রাষ্ট্রপতি কমান্ডার-ইন-চিফ হিসেবে এই বাহিনীর নেতৃত্ব দান করেন। মারাঠা সম্রাট ছত্রপতি শিবাজিকে ভারতীয় নৌবাহিনীর জনক বলা হয়ে থাকে। নৌবাহিনীর প্রধান কাজ দেশের সামুদ্রিক সীমানা রক্ষা করা। এছাড়াও সমুদ্র বন্দর পরিদর্শন, যৌথ অনুশীলন, ইত্যাদির মাধ্যমে অন্যান্য দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রেও নৌবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে। এমনকি কোনো দুর্যোগের সময় ত্রাণকাজেও নৌবাহিনীকে ব্যবহার করা হয়। ভারতীয় নৌবাহিনীতে বর্তমানে প্রায় ৬৭ হাজারেরও বেশি সদস্য কর্মরত এবং এয়ারক্রাফ্ট কেরিয়ার, ল্যান্ডিং শিপ ট্যাংক, বিভিন্নরকম সাবমেরিনসহ আরও উন্নত কিছু অস্ত্র মজুত রয়েছে।
রয়্যাল ইন্ডিয়ান নেভি ১৯৪৪ সালের অক্টোবর মাসে প্রথম নৌবাহিনী দিবস পালন করেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৫ সালে ১লা ডিসেম্বর নৌবাহিনী দিবস উদযাপন করা হয়। বর্তমানে ৪ঠা নভেম্বর নৌবাহিনী দিবস পালন করা হয় ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের ৪-৫ তারিখে ঘটে যাওয়া ‘অপারেশন ট্রাইডেন্টের’ (Operation Trident) স্মরণে। ১৯৭১ সালে ভারত-পাক যুদ্ধের সময় ভারতীয় নৌসেনা গুজরাটের ওখা বন্দর থেকে রওনা হয়ে করাচি বন্দরের ৭০ মাইল দূরে পৌঁছায় এবং অ্যান্টিশিপ মিসাইলের সাহায্যে মুহূর্তের মধ্যে পাকিস্তানের পিএনএস খাইবার-সহ একাধিক জাহাজ ধ্বংস করে দেয়। এই অভিযানে ভারতীয় নৌবাহিনীর যে তিনটি যুদ্ধজাহাজ অংশগ্রহণ করেছিল সেগুলি হল, আইএনএস নিপাত, আইএনএস নির্ঘাত এবং আইএনএস বীর। এই সাফল্যকে কুর্ণিশ জানিয়ে, সেই অভিযানে অংশগ্রহণকারী বীরযোদ্ধাদের সম্মান প্রদর্শনের জন্য এই দিনটির স্মরণেই নৌবাহিনী দিবস পালিত হয় ভারতবর্ষে।
এই বিশেষ দিনটি উদযাপনের জন্য নানারকম ইভেন্টের আয়োজন করা হয়ে থাকে। এই বিশেষ দিনে সাধারণের বিশেষত স্কুল পড়ুয়াদের জন্য নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ও বিমানগুলি দর্শনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজনও করা হয় এবং সেখানে নৌবাহিনী সম্পর্কিত বিভিন্ন ছবি দেখতে পাওয়া যায়৷ এমনকি এই দিন উপলক্ষে রক্তদান শিবিরের আয়োজনও করা হয়। মুম্বাইয়ের গেটওয়ে অব ইন্ডিয়ায় নৌবাহিনী এই বিশেষ দিনে বিটিং রিট্রিট অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এছাড়াও নৌবাহিনী বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে ক্যুইজ কনটেস্টের মতো আরও নানা ইভেন্টের মাধ্যমে বিশেষ মর্যাদা সহকারে এই দিনটি পালন করা হয়ে থাকে।
প্রতি বছর নৌবাহিনী দিবসের জন্য একটি নির্দিষ্ট থিম বা বিষয় নির্ধারণ করা হয়। ২০১৮ সালের থিম ছিল ‘ইন্ডিয়ান নেভি, মিশন-ডিপ্লয়েড এন্ড কমব্যাট-রেডি’ (Indian Navy, Mission-deployed and Combat-ready)। ২০১৯ সালের বিষয় হিসেবে নির্ধারিত হয়েছিল, ‘ইন্ডিয়ান নেভি-সাইলেন্ট, স্ট্রং এন্ড স্যুইফ্ট’ (Indian Navy – Silent, Strong and Swift)।
One comment