জাঁ জ্যাক রুশো

জাঁ জ্যাক রুশো

পৃথিবীর ইতিহাসে এমন একেকজন মানুষের আবির্ভাব ঘটেছে যাঁদের চিন্তা, দর্শন, উচ্চমেধাসম্পন্ন রচনা একেকটি যুগান্তকারী পরিবর্তনের সহায়ক হয়ে উঠেছে। অষ্টাদশ শতাব্দীর দার্শনিক জাঁ জ্যাক রুশো (Jean Jacques Rousseau) তেমনই এক প্রতিভাবান ব্যক্তি। দার্শনিক হিসেবে তিনি সর্বাধিক পরিচিত হলেও সঙ্গীত রচয়িতা, সুরকার, উপন্যাস লেখক ইত্যাদি নানা ভূমিকাতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। তাঁকে একজন রাজনৈতিক তাত্ত্বিক বললেও ভুল হবে না। রুশোর রচনা ফরাসি বিপ্লবের সময়ে বিপ্লবীদের প্রভূত অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। অষ্টাদশ শতাব্দীর সামাজিক, সাংস্কৃতিক চিন্তাধারাকে এক ভিন্ন খাতে বইয়ে দিয়েছিলেন তিনি। রাজনৈতিক এক জাগরণ তো বটেই, তাছাড়া দর্শকদের সঙ্গীত ও বিভিন্ন শিল্পের স্বাদ বদলের নেপথ্যেও রুশোর অবদান অস্বীকার করা চলে না। এমনকি সন্তানদের শিক্ষা বিষয়ে কীভাবে পিতা-মাতার যত্নশীল হওয়া উচিত, তাদের শিক্ষা দানের পদ্ধতি কী হওয়া উচিত ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কেও তিনি তাঁর সুচিন্তিত মত প্রকাশ করেছিলেন। রুশো মানুষের অধিকারগুলির মধ্যে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিয়েছিলেন স্বাধীনতাকে। দুর্বলদের ওপর শক্তিশালীর শাসন করবার আকাঙ্ক্ষা থেকেই যে রাষ্ট্রের উৎপত্তি সে-কথা অকপটে বলেন রুশো। এমনকি মানুষের অসম অবস্থান, পরিস্থিতি নিয়েও লেখালেখি করেছিলেন তিনি। তাঁর লেখা উপন্যাসকে আধুনিক যুগের রোম্যান্টিকতার বিকাশের একটি উল্লেখযোগ্য সূচনা বলা যায়।

ভিডিওতে জাঁ জ্যাক রুশোর জীবনী

১৭১২ সালের ২৮ জুন সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে জাঁ জ্যাক রুশোর জন্ম হয়। জেনেভা তখন ছিল একটি শহর-রাষ্ট্র এবং সুইস কনফেডারেসির প্রোটেস্ট্যান্ট সহযোগী। সারাজীবন নিজেকে জেনেভার নাগরিক হিসেবেই উল্লেখ করেছেন রুশো। তাঁর বাবা আইজ্যাক রুশো পূর্বপুরুষদের পন্থা অনুসরণ করেই ঘড়ি নির্মাণের পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। রুশোর মা সুজান বার্নার্ড রুশো ছিলেন উচ্চবিত্ত পরিবারের কন্যা। একজন ক্যালভিনিস্ট ধর্মপ্রচারকের কাছে বড় হয়েছিলেন তিনি। রুশোর জন্মের নয় দিন পরে ৭ জুলাই তাঁর মা সুজান পিউর্পেরাল জ্বরে মারা যান। রুশোর এক দাদা ছিলেন, তাঁর নাম ফ্রাঙ্কোইস। রুশোর যখন পাঁচ বছর বয়স তখন তাঁর বাবা আইজ্যাক মা সুজানের আত্মীয়দের কাছ থেকে পাওয়া বাড়িটি বিক্রি করে দেন। এই বাড়ি বিক্রি করে উচ্চবিত্ত শ্রেণির এলাকা ছেড়ে তাঁরা বিভিন্নরকম কারিগর, খোদাইকর, ঘড়ি প্রস্তুতকারকদের এলাকায় গিয়ে বসবাস শুরু করেন। এই পরিবেশে শ্রেণি-রাজনীতিরও সম্মুখীন হয়েছিলেন তিনি।সেই অর্থে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার কোনও স্মৃতি রুশোর ছিল না। কিন্তু পাঁচ-ছয় বছর বয়স থেকেই তাঁকে তাঁর বাবা পড়ার প্রতি আগ্রহী ও উৎসাহিত করে তুলেছিলেন। বাবার মাধ্যমেই ছোটবেলা থেকে প্রাচীন গ্রিক ও রোমান সাহিত্যের সঙ্গে পরিচিত হয়ে গিয়েছিলেন রুশো। বিশেষত পলায়নবাদী (Escapist) গল্পগুলি তাঁর ওপর গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল। এছাড়াও তাঁর অন্যতম প্রিয় বই প্লুটার্কের ‘লাইভস অফ দ্য নোবল গ্রিক অ্যান্ড রোমান’ বাবাকে পড়ে শোনাতেন যখন আইজ্যাক ঘড়ি নির্মাণ করতেন। তিনি নিজেই পরে বলেছিলেন যে, প্লুটার্কের বই পাঠ করা এবং বাবার সঙ্গে তা নিয়ে আলোচনাই পরবর্তীকালে তাঁর মধ্যে মুক্ত এবং প্রজাতান্ত্রিক এক চেতনার জন্ম দিয়েছে। রুশোর যখন দশ বছর বয়স তখন এক ধনী জমির মালিকের সঙ্গে আইনি ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন তাঁর বাবা আইজ্যাক। আদালতে নিশ্চিত পরাজয় এবং ফলস্বরূপ কারাবাস এড়াতে তিনি জেনেভা ত্যাগ করে চলে যান বার্ন অঞ্চলের নিয়নে। রুশো সেসময় জেনেভাতেই তাঁর মামার কাছে রয়ে গিয়েছিলেন। সেই ভদ্রলোক নিজের ছেলে এবং রুশোকে বোসি গ্রামে এক ক্যালভিনিস্টের কাছে পাঠিয়ে দেন পড়াশোনার জন্য। সেখানে তাঁরা গণিত এবং অঙ্কনবিদ্যা চর্চা করেন৷ ১৩ বছর বয়সে ১৭২৫ সালে রুশো প্রথমে একজন নোটারির কাছে এবং পরে এক খোদাইকরের কাছে শিক্ষানবিশ হিসেবে যোগ দেন। সেই খোদাইকর তাঁকে মারধরও করতেন। এরপর ১৬ বছর বয়সে ১৭২৮ সালে রুশো পালিয়ে যান জেনেভা ছেড়ে, কিন্তু অল্প কদিন পরে কারফিউয়ের জন্য শহরের গেটগুলি তালাবন্ধ অবস্থায় দেখতে পান। ফলে পার্শ্ববর্তী স্যাভয়ে একজন রোমান ক্যাথলিকের কাছে আশ্রয় নিয়েছিলেন রুশো। সেই ধর্মযাজক তাঁকে ফ্রাঙ্কোইস-লুইস ডি ওয়ারেন্সের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন একজন সম্ভ্রান্ত প্রোটেস্ট্যান্ট মহিলা এবং স্বামীর সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ হয়েছিল। এই ওয়ারেন্স নাম্নী নারী রুশোকে ক্যাথলিক ধর্মে দীক্ষিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। ফলে রুশোকে তাঁর জেনেভার নাগরিকত্ব পর্যন্ত বাতিল করতে হয়েছিল।  অবশ্য পরবর্তীকালে ১৭৫৪ সালে তিনি জেনেভায় ফিরে পুনরায় ক্যালভিনিজমে দীক্ষা নেন। ডি ওয়ারেন্সের সঙ্গে বেশ কয়েক বছর তাঁর সম্পর্ক স্থায়ী হয়েছিল এবং ক্রমে তা এক রোম্যান্টিক সম্পর্কে পরিণত হয়। যখন রুশোর ২০ বছর বয়স তখন ওয়ারেন্স তাঁকে প্রেমিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল৷ এসময় দর্শন, গণিত এবং সঙ্গীত খুব গভীরভাবে অধ্যয়ন করতে থাকেন রুশো। ২৫ বছর বয়সে মায়ের সম্পত্তির একাংশের উত্তরাধিকারী হওয়ার ফলে ওয়ারেন্সকে আর্থিক সহায়তাও করেছিলেন তা দিয়ে। ২৭ বছর বয়সে লিয়নে রুশো গৃহশিক্ষকের চাকরি নেন।

১৭৪২ সালে প্যারিসে যান রুশো। মূলত অ্যাকাডেমি ডেস সায়েন্সে একটি নতুন সিস্টেমের সংখ্যাযুক্ত সাঙ্গীতিক স্বরলিপি উপস্থাপন করতে গিয়েছিলেন তিনি। বিশ্বাস করতেন এটিই তাঁর ভাগ্য ফিরিয়ে দেবে। অ্যাকাডেমি অবশ্য তাঁর দক্ষতার প্রশংসা করে এবং পুনরায় চেষ্টা করতে বলে সেই স্বরলিপি শেষপর্যন্ত প্রত্যাখান করে । সেবছরই ডেনিস ডিডরোটের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় রুশোর। ফলত বিভিন্ন সাহিত্যিক প্রচেষ্টার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন হয় তাঁর। ১৭৪৩ থেকে ১৭৪৪ পর্যন্ত রুশো ভেনিসে ফরাসি রাষ্ট্রদূত কমতে দে মন্টেহগের সচিব পদের দায়িত্ব সামলান। এসময় ইতালীয় সঙ্গীত বিশেষত অপেরার প্রতি তাঁর আজীবনের ভালোবাসার সূত্রপাত হয়। এগারো মাস পর সরকারি আমলাতন্ত্রের ওপর গভীর অবিশ্বাস নিয়ে সচিবের পদ ছেড়ে দেন তিনি৷ প্রায় নিঃস্ব হয়ে ফিরে আসেন প্যারিসে। একজন মহিলা দর্জি থেরাসি লেভাসিউরের (Therese Levasseur) সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেন এবং তাঁদের মধ্যে ক্রমেই একটি ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠতে থাকে। অবশেষে ১৭৬৮ সালে থেরাসিকে বিবাহ করেন রুশো।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

১৭৪৯ সালে সঙ্গীতের ওপর বেশ কিছু নিবন্ধ রচনা করেছিলেন রুশো৷ এছাড়াও ডিডরোট এবং ডি’আলেমবার্টের বিখ্যাত কাজ ‘এনসাইক্লোপিডিয়া’র জন্য বহু নিবন্ধ রচনা করেছিলেন তিনি। সেগুলির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল ১৭৫৫ সালে রাজনৈতিক অর্থনীতির উপর লেখা একটি নিবন্ধ। কলা ও বিজ্ঞানের বিকাশ নৈতিকভাবে উপকারী কিনা সে বিষয়ে অ্যাকাডেমি ডি ডিজন দ্বারা আয়োজিত একটি প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন রুশো। তাঁর লেখা ‘ডিসকোর্স অন আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস’ প্রথম পুরস্কার লাভ করেছিল এবং তাঁকে উল্লেখযোগ্য খ্যাতিও এনে দিয়েছিল। সঙ্গীতের প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল অব্যাহত। তিনি ‘লে ডেভিন ডু ভিলেজ’ অপেরা রচনা করেছিলেন যেটি ১৭৫২ সালে রাজা পঞ্চদশ লুইয়ের জন্য পরিবেশন করা হয়। রাজা এতটাই খুশি হন যে রুশোকে আজীবন পেনশনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যদিও তা প্রত্যাখান করে তিনি কুখ্যাত হয়ে ওঠেন৷ ১৭৫৩ সালে জাঁ জ্যাক রুশো ‘লেটার অন ফ্রেঞ্চ মিউজিক’ লেখেন যেখানে  ইতালীয় অপেরা এবং ফ্রান্সের অপেরার এক দ্বন্দ্ব ও বৈপরীত্য বিষয়ে আলোকপাত করেন তিনি। এই রচনা ঘোরতর বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল এবং রুশোর কুশপুত্তলিকা পর্যন্ত পোড়ানো হয়েছিল।

১৭৫৪ সালে জেনেভায় ফিরে পুনরায় সেখানকার নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন রুশো। তার আগে ১৭৫৩ সালে ডিজন অ্যাকাডেমির আরেকটি প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন এবং সেই বক্তৃতাটি ১৭৫৫ সালে প্রকাশিত হয় যার শিরোনাম ‘ডিসকোর্স অন দ্য অরিজিন অ্যান্ড বেসিস অফ ইনইকুয়্যালিটি অ্যামং মেন’। এই রচনাটিকে ‘ডিসকোর্স অন দ্য আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস’-এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা বলা চলে। বিচারকরা অবশ্য এই সাহসী এবং অপ্রচলিত দার্শনিক ধারণার উপস্থাপনের কারণে বিরক্ত হয়েছিলেন। ইতিমধ্যে ২৫ বছর বয়সী সোফি ডি হাউডেটট-এর সঙ্গে একটি রোম্যান্টিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তাঁর। যে অভিজ্ঞতার ফল ছিল, রুশোর এপিস্টোলারি উপন্যাস ‘জুলি, অর দ্য নিউ হেলোইস’ যেটি ১৭৬১ সালে প্রকাশিত হয় এবং প্রভূত জনপ্রিয়তা লাভ করে। পরবর্তী বছরটি অর্থাৎ ১৭৬২ সাল রুশোর দার্শনিক জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। এই বছর এপ্রিল মাসে তাঁর রাজনৈতিক দর্শনের ওপর লিখিত বই ‘দ্য স্যোশাল কনট্র্যাক্ট’ এবং মে মাসে শিক্ষা বিষয়ক আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ ‘এমিল, অর ট্রিটিজ অন এডুকেশন’ প্রকাশিত হয়েছিল। মূলত এই কাজগুলিতে খ্রিস্টধর্ম বিষয়ে ভিন্নধর্মী আলোচনা করার জন্য, ধর্মীয় উদাসীনতার কারণে প্যারিস কর্তৃপক্ষ এই দুটি গ্রন্থেরই নিন্দা করেছিল। জেনেভা এবং প্যারিসে গ্রন্থগুলি প্রকাশ্যে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল এবং নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল ।

রুশোর ‘স্যোশাল কনট্র্যাক্ট’ বইটি ইউরোপে বিশেষত ফ্রান্সে রাজনৈতিক সংস্কার বা বিপ্লবকে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল। রাজার আইন প্রণয়নের ক্ষমতা ঈশ্বরপ্রদত্ত, এই ধারণার বিরোধিতা করেন জাঁ জ্যাক রুশো এই গ্রন্থে। তার বদলে সর্বসাধারণের হাতেই সে-ক্ষমতা রয়েছে বলে সিদ্ধান্ত দেন তিনি। জনসাধারণের ইচ্ছেকে গুরুত্ব দেন তিনি। যৌক্তিক কঠোরতা এই বইয়ের একটি উল্লেখযোগ্য বিশেষত্ব। অপরদিকে ‘এমিল’ গ্রন্থটিতে শিক্ষার প্রকৃতি এবং মানুষের প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করেছেন রুশো। বইটি পাঁচটি অংশে বিভক্ত। একটি ছাত্রকে বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন বিষয়ে কীভাবে শিক্ষাদান করা যেতে পারে এই গ্রন্থ তার হদিশ। সততা, নম্রতা ইত্যাদির জন্য যেমন কঠিন নৈতিক পাঠের কথা বলেন, তেমনি শিশুদের লালন-পালনের পদ্ধতি বিষয়ে বাবা-মা অভিভাবকদের উদ্দেশ্যেও কথা বলেন। গৃহশিক্ষককে খুব গুরুত্ব দিয়েছিলেন তাঁর শিক্ষার দর্শনে। এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থার বর্ণনা দিতে চেয়েছিলেন জাঁ জ্যাক রুশো যা মানুষকে দুর্নীতিগ্রস্ত সমাজে টিকে থাকতে সাহায্য করবে। “প্রফেশন অফ ফেইথ অফ দ্য স্যাভয়ার্ড ভিকার” নামক অংশের জন্য বইটি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। রুশোর ‘এমিল’ নিয়ে ফরাসি পার্লামেন্ট ক্ষোভ প্রকাশ করে এবং রুশোকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়। রুশো তখন সুইজারল্যান্ডে পালিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু ‘এমিল’ এবং ‘স্যোশাল কনট্র্যাক্ট’-এর প্রতি সুইস সরকারও যখন সহানুভূতিহীন হয়ে পড়ে তখন ভলতেয়ার আমন্ত্রণ জানান রুশোকে তাঁর সঙ্গে বসবাসের জন্য। যদিও তা প্রত্যাখান করেন রুশো। সুইজারল্যান্ডের বার্নেও যখন বসবাস করা অসম্ভব হয়ে উঠল, তখন ডি’আলেমবার্ট তাঁকে নিউচেটেলে যাওয়ার পরামর্শ দেন। দুবছরের বেশি সময় নিউচেটেলের মোটিয়ার্সে বাস করেন তিনি। সেখানে থাকাকালীন ‘কনস্টিটিউশনাল প্রোজেক্ট ফর কর্সিকা’র খসড়া তৈরি করেন রুশো। এমনকি আত্মজীবনী ‘দ্য কনফেশনস’ও লিখতে শুরু করেছিলেন তিনি।

পরবর্তীকালে রুশোর নিজের যাজক ফ্রেডেরিক-গুইলাম ডি মন্টমোলিন প্রকাশ্যে তাঁকে খ্রিস্ট-বিরোধী বলে নিন্দা করতে শুরু করেন। এরপর বহু হেনস্থার স্বীকার হতে হয় তাঁকে। তাঁর বাড়িতে ঢিল ছুঁড়ে কাচের জানালা ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। এসময় ইলে দে সেন্ট-পিয়েরে নামক একটি ছোট দ্বীপে চলে যান তিনি। সেই দ্বীপ বার্নের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৭৬৫-র ২৯ অক্টোবর রুশো চলে যান স্ট্রাসবার্গে। এরপর তিনি প্যারিসে যান পাসপোর্টের জন্য। পরবর্তীকালে হিউমের আমন্ত্রণ গ্রহণ করে তিনি ইংল্যান্ডে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ১৭৬৬ সালে রুশো প্যারিস ত্যাগ করেন। দুবছর ইংল্যান্ডে থাকার পর হিউমের সঙ্গে ঘোরতর এক বিবাদ হয় তাঁর। ১৭৬৭ সালে ছদ্মবেশে ফিরে আসেন ফ্রান্সের দক্ষিণ-পূর্বদিকে। সেখানে তিন বছর কাটিয়ে ১৭৭০-এ পুনরায় রুশো প্যারিসে যান। জীবিকা নির্বাহের জন্য সঙ্গীতের অনুলিপি করেন সেখানে। ১৭৬৯-এ স্ত্রীয়ের সঙ্গে গ্রেনোবেলের খামারবাড়িতে থাকেন ও উদ্ভিদবিদ্যা অনুশীলন করেন এবং আত্মজীবনী শেষ করেন তিনি। ১৭৭২ সালে রুশো লেখেন ‘কনসিডারেশনস অন দ্য গভর্নমেন্ট অফ পোল্যান্ড’ নামের আরেকটি বই। সেবছর তিনি শুরু করেন ‘রুশো : জাজ অফ জাঁ-জ্যাক’। ১৭৭৭ সালে প্রকাশিত তাঁর শেষ কাজ ‘দ্য রিভারিজ অফ আ সলিটারি ওয়াকার’।

১৭৭৮ সালের ২ জুলাই এরমেনভিলে গিরার্ডিনের কুটিরে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ফলে জাঁ জ্যাক রুশোর মৃত্যু হয়।

আপনার মতামত জানান