জন ভন নিউম্যান

জন ভন নিউম্যান

জন ভন নিউম্যান (John von Neumann) একজন জগদ্বিখ্যাত হাঙ্গেরিয়ান-আমেরিকান গণিতজ্ঞ যাঁকে বিশুদ্ধ এবং ফলিত উভয় গণিতেই সমান পারদর্শী বিজ্ঞানীদের শেষ প্রতিনিধি হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে।   যুক্তিবিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, কম্পিউটার বিজ্ঞান, পরিসংখ্যান, তাত্ত্বিক জীববিজ্ঞান ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজের দক্ষতা এবং কর্মকুশলতা প্রমাণ করেছেন নিউম্যান। মূলত কার্যকরী বিশ্লেষণের বিকাশে কোয়ান্টাম মেকানিক্সে অপারেটর তত্ত্ব প্রয়োগের পথপ্রদর্শক ছিলেন নিউম্যান। এছাড়াও ইমপ্লোশন-টাইপ পারমাণবিক অস্ত্রে ব্যবহৃত বিস্ফোরক লেন্সগুলির নেপথ্যে গাণিতিক মডেলগুলি তৈরি করা তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজগুলির মধ্যে একটি। বিস্ফোরক শক্তির পরিমাপ হিসেবে ‘কিলোটন’ শব্দটির প্রবক্তা ছিলেন জন ভন নিউম্যান ৷ বিশুদ্ধ ও ফলিত বিজ্ঞানকে তিনিই প্রথম সার্থকভাবে একীভূত করেছিলেন।

১৯০৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর বুদাপেস্টের একটি ধনী ইহুদি পরিবারে জন ভন নিউম্যানের জন্ম হয়। জন্মের পর তাঁর নাম রাখা হয়েছিল নিউম্যান জানোস লাজোস (Neumann János Lajos)। তাঁর বাবা নিউম্যান মিক্সা বা ম্যাক্স ভন নিউম্যান আইনে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন এবং পেশায় ছিলেন একজন ব্যাঙ্কার। ১৮৮০-র দশকের শেষ দিকে তিনি পেকস থেকে বুদাপেস্টে চলে আসেন। জন ভনের মা কান মার্গিট ছিলেন একজন সমৃদ্ধ বণিক পরিবারের কন্যা। নিউম্যানের দুই ভাই ছিল যাঁদের নাম যথাক্রমে মাইকেল এবং নিকোলাস। ১৯২৯ সালে নিউম্যানের বাবা মারা যান। ১৯৩০ সালের ইংরেজি নববর্ষের দিনে মারিয়েটো কোভেসিকে বিবাহ করেন নিউম্যান। নিউম্যান এবং মারিয়েটোর একটিমাত্র কন্যা মেরিনা একজন বিশিষ্ট আমেরিকান অর্থনীতিবিদ। যদিও নিউম্যান এবং মারিয়েটোর বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল ১৯৩৭ সালের ২ নভেম্বর। এরপর ১৯৩৮ সালের ১৭ নভেম্বর নিউম্যান পুনরায় ক্ল্যারা ড্যানকে বিবাহ করেছিলেন।

খুব ছোটবেলা থেকেই গণিতে নিউম্যানের অভাবনীয় দক্ষতা লক্ষ করা যায়। ভবিষ্যতে তাঁর একজন প্রসিদ্ধ গণিতবিদ হওয়ার সম্ভাবনা সেই শৈশবেই বোঝা গিয়েছিল। মাত্র ছয় বছর বয়স থেকে নিউম্যান অনেক বড় বড় সংখ্যার গুন এবং ভাগ করতে পারতেন অনায়াসে। সেই বয়সেই আট সংখ্যাবিশিষ্ট দুটি বৃহৎ সংখ্যাকে ভাগ করতে পারতেন মাথার মধ্যেই, কোনো খাতা কলম ছাড়াই। এমনকি প্রাচীন গ্রীক ভাষাতেও কথা বলতে পারতেন সেই অল্প বয়সেই। মাত্র আট বছর বয়সেই ডিফারেন্সিয়াল এবং ইন্টিগ্রাল ক্যালকুলাসের সঙ্গে পরিচিত হন তিনি। বেশ একটু কড়া শাসনের মধ্যেই বাড়িতে বড় হয়েছেন তিনি এবং প্রাথমিকভাবে বাড়িতে অধ্যয়নকালেই হাঙ্গেরিয়ান, ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান এবং ইতালীয় ভাষায় তিনি পাঠ গ্রহণ করেন। বারো বছর বয়সে তিনি বোরেলের ‘থিওরি দেস ফনশনস’(Théorie des Fonctions) পড়ে তার পাঠোদ্ধারও করে ফেলেছিলেন। গণিত ছাড়া ইতিহাসেও প্রবল আগ্রহ ছিল নিউম্যানের।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

১৯১৪ সালে জন ভন নিউম্যান লুথেরান ফাসোরি ইভাঞ্জেলিকাস জিমন্যাসিয়ামে ভর্তি হন। সেখানে ইউজিন উইগনার,, নিউম্যানের থেকে এক বছর বড় হয়েও শীঘ্রই তাঁর বন্ধু হয়ে ওঠেন। এই প্রতিষ্ঠানটি ছিল বুদাপেস্টের অভিজাতদের জন্য অন্যতম সেরা স্কুল। যদিও নিউম্যানের যা বয়স সেই অনুযায়ী উপযুক্ত ক্লাসেই নিউম্যানকে ভর্তি করিয়েছিলেন তাঁর বাবা কিন্তু যে যে বিষয়ে নিউম্যানের  বিশেষ ব্যুৎপত্তি তাঁর বাবা লক্ষ করেছিলেন   নির্দিষ্ট সেই বিষয়গুলির জন্য গৃহশিক্ষক রেখেছিলেন তিনি। পনেরো বছর বয়সে নিউম্যান বিখ্যাত বিশ্লেষক গাবর সেজেগোর অধীনে আরও উচ্চ স্তরের ক্যালকুলাস অধ্যয়ন করতে শুরু করেন। প্রথম সাক্ষাতে, সেজেগো নিউম্যানের গাণিতিক প্রতিভা দেখে এতটাই বিস্মিত হয়েছিলেন যে তাঁর চোখে জল চলে এসেছিল। উনিশ বছর বয়সের মধ্যে ভন নিউম্যান দুটি প্রধান গাণিতিক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলেন যার দ্বিতীয়টিতে ক্রমিক সংখ্যার আধুনিক সংজ্ঞা দিয়েছিলেন তিনি যা জর্জ ক্যান্টরের সংজ্ঞাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। জিমন্যাসিয়ামে তাঁর শিক্ষার সমাপ্তিতে, জন ভন নিউম্যান গণিতের জাতীয় পুরস্কার ইওটভস পুরস্কার জিতেছিলেন।

নিউম্যানের বন্ধু থিওডোর ফন কার্মনের মতে নিউম্যানের বাবা চেয়েছিলেন ছেলে গণিতের পিছনে অযথা সময় না দিয়ে তাঁর ব্যবসাটি যেন দেখে। এমনকি কার্মনকেও ভনের বাবা বলেছিলেন ছেলে যাতে গণিতকে প্রধান বিষয় হিসেবে বেছে না নেয় সে বিষয়ে রাজি করাতে। শেষ পর্যন্ত ভন নিউম্যান বাবার সাথে  কথা বলে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ার জন্য মনস্থির করেন । নিউম্যান বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নে দুই বছরের নন-ডিগ্রী কোর্সে ভর্তি হন। এরপরে তিনি মর্যাদাপূর্ণ ইটিএইচ জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসেন। ১৯২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সেই পরীক্ষা পাস করেন তিনি। একই সময়ে, ভন নিউম্যান বুদাপেস্টের পাজমানি পিটার বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতে পিএইচডি করবার জন্য ভর্তি হন। থিসিসের জন্য তিনি ক্যান্টরের সেট তত্ত্বের একটি স্বতঃসিদ্ধকরণ তৈরি করতে উদ্যত হন। ১৯২৬ সালে নিউম্যান ইটিএইচ জুরিখ থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক হন এবং একইসময়ে গণিতে ডিস্টিংকশন সহ পিএইচডি  ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। এরপর তিনি ডেভিড হিলবার্টের অধীনে গণিত পড়ার জন্য রকফেলার ফাউন্ডেশনের অনুদানে গটিংগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। সেখানে গটিংগেনের ঠান্ডায়, বৃষ্টি ভেজা রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে নিউম্যান ও ডেভিড হিলবার্ট হাইপারকমপ্লেক্স সংখ্যা পদ্ধতি এবং তাদের উপস্থাপনা নিয়ে আলোচনা করতেন। ১৯২৬ থেকে ১৯২৭ সাল পর্যন্ত সেখানেই পোস্ট ডক্টোরাল গবেষণা করেন নিউম্যান। এইসময় তাঁর বেশ একটু পরিচিতি হয়েছিল বিজ্ঞানমহলে।

১৯২৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর পোস্ট ডক্টোরাল ডিগ্রি সম্পূর্ণ হয়ে গেলে নিউম্যান ১৯২৮ সালে বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচার দিতে শুরু করেন। সে বছরেই তিনি ‘অন দ্য থিওরি অব পার্লার গেমস’ প্রকাশ করেন যা গেমতত্ত্বের ওপর একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা। এর পাশাপাশি হিলবার্টের সঙ্গে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ওপর কাজ চালিয়ে যান তিনিযার ফলস্বরূপ তাঁর প্রথম বই, ‘দ্য ম্যাথমেটিকাল ফাউন্ডেশনস অফ কোয়ান্টাম মেকানিক্স’ প্রকাশিত হয়। বইটি ১৯৩২ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯২৯ সালে নিউম্যান হামবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯২৯ সালেরই অক্টোবরে, তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে গাণিতিক পদার্থবিদ্যার ভিজিটিং লেকচারার হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়। মূলত কোয়ান্টাম তত্ত্বের উপরে বক্তৃতার জন্যই আমন্ত্রণ করা হয়েছিল তাঁকে। সেখানে কোয়ান্টাম তত্ত্বের জন্য উপযুক্ত একটি গাণিতিক কৌশল বের করার লক্ষ্যে রিং তত্ত্বের উপর কাজ শুরু করেন তিনি। কাজটি শেষ হতে প্রায় এক দশক সময় লেগেছিল এবং এখন এটি গণিতের দুনিয়ায় ‘ভন নিউম্যান অ্যালজেব্রাস’ নামে পরিচিত।

১৯৩১ সালে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণ সময়ের অধ্যাপক নিযুক্ত হন নিউম্যান। তবে গণিতের অধ্যাপক হিসেবে তিনি খুব জনপ্রিয় হননি এখানে কারণ তাঁর গতির সঙ্গে ছাত্ররা অনেকসময় তাল মেলাতে পারত না৷

১৯৩৩ সালে ভন নিউম্যানকে নিউ জার্সির ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিতে আজীবন অধ্যাপক পদের প্রস্তাব দেওয়া হয় যা তিনি গ্রহণ করেছিলেন। সেই প্রতিষ্ঠানের গণিতের ছয়জন মূল অধ্যাপকের একজন হয়ে ওঠেন তিনি। ছয়জন মূল অধ্যাপকের মধ্যে একজন ছিলেন অ্যালবার্ট আইনস্টাইন। আইনস্টাইনের সঙ্গেও কাজ করেছিলেন তিনি। এমনকি আইনস্টাইনের ‘অ্যানালস অব ম্যাথেমেটিক্স’ বইটির সহ-সম্পাদক হন নিউম্যান। ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত প্রতি গ্রীষ্মে তিনি জার্মানিতে যেতেন তাঁর একাডেমিক অবস্থান বজায় রাখার জন্য কিন্তু জার্মানিতে নাৎসিদের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে তিনি পদত্যাগ করা বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করেন এবং স্থায়ীভাবে প্রিন্সটনে চলে যান। 

ভন নিউম্যান ১৯৩৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করেন। নিউম্যান এবং তাঁর স্ত্রী ক্লারা স্থানীয় একাডেমিক সম্প্রদায়ের মধ্যে সামাজিকভাবে সক্রিয় ছিলেন। ২৬ ওয়েস্টকট রোডে তাঁর সাদা ক্ল্যাপবোর্ডের বাড়িটি ছিল প্রিন্সটনের বৃহত্তম ব্যক্তিগত বাসস্থানগুলির মধ্যে একটি।

প্রাচীন ইতিহাসের প্রতি আজীবন আগ্রহ ছিল নিউম্যানের এবং তিনি তাঁর ইতিহাস-জ্ঞানের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। প্রিন্সটনের বাইজেন্টাইন ইতিহাসের একজন অধ্যাপক একবার বলেছিলেন যে বাইজেন্টাইন ইতিহাসে তাঁর চেয়ে বেশি দক্ষতা ছিল নিউম্যানের। গিবনের পতন ও সেই পতনের অনেক উপাদান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন নিউম্যান এবং রাতের খাবারের পর বিভিন্ন ঐতিহাসিক আলোচনায় অংশ নিতে পছন্দ করতেন তিনি। একবার নাকি আমেরিকার গৃহযুদ্ধ হয়েছিল এমন একটি স্থানে গাড়ি চালানোর সময় সেই গৃহযুদ্ধের খুঁটিনাটি তিনি বর্ণনা করেছিলেন। ১৯৩৭ সাল থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত ভন নিউম্যান ল্যাটিস তত্ত্বের উপর মনোনিবেশ করেছিলেন, যেখানে তিনি পরিপূরক মডুলার টপোলজিক্যাল ল্যাটিসে মাত্রার একটি বিমূর্ত অনুসন্ধান প্রদান করেছিলেন এবং পরে এটির উপর ভিত্তি করে অবিচ্ছিন্ন জ্যামিতির ক্ষেত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে নিউম্যান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেন কিন্তু বয়সের কারণে তাঁকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। এর বদলে বেশকিছু সামরিক প্রকল্পে কাজ করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় তাঁকে। ১৯৪৩ সালের শেষদিকে ম্যানহাটন প্রকল্পের জন্যও তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ম্যানহাটনে নিউম্যান প্রধানত বিস্ফোরক লেন্সগুলির ওপর  কাজ করেছিলেন যা ‘ফ্যাট ম্যান’ নামক নাগাসাকিতে ফেলা পারমাণবিক বোমার প্লুটোনিয়াম কোরকে সংকুচিত করতে সক্ষম ছিল। তিনি কেবল এর ধারণাটিই দেননি, এর নকশায়ও অবদান রেখেছিলেন। এছাড়াও তিনি বোমা বিস্ফোরণের প্রভাব সম্পর্কিত গণনাগুলিও তদারকি করেছিলেন যেমন বিস্ফোরণের আনুমানিক আকার, প্রত্যাশিত মৃতের সংখ্যা, সর্বাধিক প্রভাবের জন্য বোমাটি যে দূরত্বে চিহ্নিত করা উচিত ইত্যাদি।

যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে, নিউম্যান সরকার ও শিল্প উভয় ক্ষেত্রেই পরামর্শক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৪৪ সালে তিনি হার্ড-ওয়্যার্ড এনিয়াক কম্পিউটারের বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ ধারণাগুলি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন। ১৯৪৫ সালে পারমাণবিক বোমা প্রকল্পে যোগ দেন তিনি। ১৯৫০ সালের দিকে, তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের পারমাণবিক সক্ষমতা ধ্বংস করার জন্য পারমাণবিক হামলারও পরামর্শ দেন। ১৯৫০ সাল নাগাদ তিনি লস আলামোস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে এনরিকো ফার্মির অধীনে হাইড্রোজেন বোমা তৈরিতে সহায়তা করেছিলেন।

১৯৫৪ সালে, নিউম্যান পারমাণবিক শক্তি কমিশনের সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়াও ১৯৫০-এর দশকে তিনি স্ট্র্যাটেজিক মিসাইল ইভল্যুশন কমিটি এবং আইসিবিএম সায়েন্টফিক অ্যাডভাইজরি কমিটি-সহ বেশ কয়েকটি প্রতিরক্ষা বিভাগের কমিটির সভাপতি হয়েছিলেন। এমনকি তিনি পারমাণবিক অস্ত্রের উপর আমেরিকার শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ এবং শীর্ষস্থানীয় প্রতিরক্ষা বিজ্ঞানী হিসেবে বিবেচিত হন।

সারাজীবনে প্রায় ১৫০টিরও বেশি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলেন নিউম্যান। সেগুলির মধ্যে ছিল ৬০টি বিশুদ্ধ গণিতে, ৬০টি ফলিত গণিতে,  ২০টি পদার্থবিদ্যায় এবং বাকিসব বিশেষ গাণিতিক বা অ-গাণিতিক বিষয়ে।

নিউম্যানের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলির মধ্যে রয়েছে, ‘দ্য কম্পিউটার অ্যান্ড দ্য ব্রেন’ (শেষতম কাজ), যৌথভাবে রচিত ‘থিওরি অফ গেমস অ্যান্ড ইকোনমিক বিহেভিয়ার’ ইত্যাদি। এছাড়াও কম্পিউটার বিজ্ঞানের লজিক্যাল ডিজাইনের বিকাশে তিনি পথপ্রদর্শকস্বরূপ। তিনি ডিএনএ আবিষ্কারেরও আগে স্ব-প্রতিলিপি গঠনের বিষয়টিকে বিশ্লেষণ করেছিলেন।

নিউম্যানের প্রাপ্ত পুরস্কারগুলির মধ্যে, বোচার মেমোরিয়াল পুরস্কার (১৯৩৮), নেভি ডিস্টিংগুইশড সিভিল সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড (১৯৪৬), মেডেল ফর মেরিট (১৯৪৬), মেডেল অফ ফ্রিডম (১৯৫৬) এবং এনরিকো ফার্মি অ্যাওয়ার্ড (১৯৫৬) সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য।

অবশেষে ১৯৫৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ওয়াশিংটন ডিসির ওয়াল্টার রিড আর্মি মেডিকেল সেন্টারে সামরিক নিরাপত্তার অধীনে মাত্র ৫৩ বছর বয়সে জগদ্বিখ্যাত গণিতবিদ জন ভন নিউম্যানের মৃত্যু হয়।

2 comments

আপনার মতামত জানান