নবরত্ন স্থাপত্য একপ্রকারের মন্দিরের স্থাপত্যশিল্প। পুরনো বাংলার রাজাদের আমলে অষ্টাদশ শতকে এ স্থাপত্যের আগমন ঘটে। এই স্থাপত্যে মন্দিরের প্রধান দুটি ধাপ থাকে। প্রথম ধাপের চারটি কোণে চারটি চুড়া থাকে। আর দ্বিতীয় ধাপের চার কোণে চারটি আর কেন্দ্রে একটি চূড়া থাকে। এই চূড়াগুলোকে রত্নও বলা হয়ে থাকে। এইভাবে দুটি ধাপে মোট নয়টি চূড়া বা রত্ন থাকে বলে এই স্থাপত্যশিল্পকে নবরত্ন বলা হয়।
বাংলার বিভিন্ন মন্দিরে এই স্থাপত্যের উদাহরণ পাওয়া যায়। অনেকে নবরত্ন স্থাপত্য রীতিটিকে পঞ্চরত্ন স্থাপত্যেরই বর্ধিত রূপ বলে মনে করে থাকে। এই তালিকার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু মন্দিরের নাম হল ভারতের বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা মন্দির ও দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির, বাংলাদেশের কান্তনগর মন্দির ও হাটিকুম্রুল মন্দির। এছাড়া এই স্থাপত্যের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য মন্দিরের মধ্যে পড়ে কলকাতার নিকটবর্তী তালপুকুর মন্দির, কেনডুলির রাধা বিনোদ মন্দির, জয়পুরের মন্দির, বিষ্ণুপুরের শ্রীধারা মন্দির, চন্দ্রকোণায় শান্তিনাথ শিব মন্দির এবং বীরভূমের দুবরাজপুরের মন্দির।
অবিভক্ত বাংলার প্রথম নবরত্ন মন্দির হল পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা মন্দির। বর্ধমান রাজবংশের রাজা কীর্তিচাঁদ ১৭০২ সালে এই মন্দির তৈরি করেন। এই মন্দিরটি বর্ধমানের পুরনো মন্দিরগুলোর মধ্যে একটি। প্রচলিত কথা অনুযায়ী মন্দিরে যে কষ্টিপাথরের দেবী দুর্গার মূর্তি আছে তা হাজার বছরের পুরনো এবং যুগ যুগ ধরে শাস্ত্রীয় সাহিত্য ও পবিত্র গ্রন্থে তার অস্তিত্বের উল্লেখও নাকি আছে। মন্দির প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বর্ধমান রাজ পরিবারই বহুদিন এই মন্দিরের দেখাশোনা করে আসছিলেন। তারপর জমিদারি ব্যবস্থা বিলোপের পর একটি ট্রাস্ট বোর্ড গঠন করে তাদেরকে মন্দিরের ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয় , যা আজও অব্যাহত আছে।
নবরত্ন স্থাপত্যের সবচেয়ে বড় মন্দির হল বাংলাদেশের দিনাজপুরে অবস্থিত কান্তনগর মন্দির। কখন একে শুধু নবরত্ন মন্দির নামেও অভিহিত করা হয়। এই মন্দিরটি কান্ত বা কৃষ্ণের মন্দির। তখনকার দিনাজপুরের জমিদার প্রাণনাথ রায় এই মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ১৭২২ সালে তাঁর মৃত্যু হলে তাঁর পোষ্যপুত্র রাজা রামনাথ রায় ১৭৫২ সালে মন্দিরটির নির্মাণ কাজ শেষ করেন। ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে মন্দিরটি ভূমিকম্পের কবলে পড়লে এর চূড়াগুলো ভেঙে যায়।
5 comments