প্যালিনড্রোম (Palindrome) হল এমন কিছু বিশেষ শব্দ বা সংখ্যা বা ক্রম যার শুরু কিংবা শেষ দুদিক থেকে পড়লেই শব্দের উচ্চারণ বা অর্থের কোন পরিবর্তন হয়না এবং সংখ্যার ক্ষেত্রে সংখ্যার মান একই থাকে।
মূল গ্রীক শব্দ ‘প্যালিনড্রোমাস’ যার অর্থ ‘আগু পিছু আসা যাওয়া’ (Running back again) থেকেই ইংরেজি ‘প্যালিনড্রোম’ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে বলে পণ্ডিতেরা মনে করেন। বাংলাদেশি তরুণ লেখক মহম্মদ আবদুল্লাহ এই প্যালিনড্রোমের যে সংজ্ঞা দিয়েছেন সেটিও আবার একটি প্যালিনড্রোম – “ইহা উল্টে পাল্টে উহাই।”
প্যালিনড্রোমের আবিষ্কারক কে তা নিয়ে মতভেদ থাকলেও মোটামুটিভাবে সর্বজন স্বীকৃত মত হল খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে গ্রিক কবি সোতাদেস (Sotades) হলেন প্যালিনড্রোমের স্রষ্টা। গ্রিসে সেকারণেই অনেকে প্যালিনড্রোমকে ‘সোতাদিক কাব্য’ বলে থাকে। তাঁর সামান্য কিছু লেখা ছাড়া প্রায় সব লেখাই নষ্ট হয়ে গেছে। তবে প্যালিনড্রোমের সব থেকে আদি নজির হিসেবে যে রচনাটি পাওয়া গেছে তা খ্রিস্টীয় ৭৯ শতকের বলে মনে করা হয়। প্রাচীন রোমের অন্তর্গত পম্পেই শহরটি ৭৯ শতকে মাউন্ট ভিসুভিয়াসের ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাতে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। ১৭৩৮ সালে সেই শহর পুনরাবিষ্কৃত হলে সেখান থেকেই পাওয়া যায় প্রাচীনতম প্যালিনড্রোম রচনাটি যেটিতে লেখা আছে – Sator Arepo Tenet Opera Rotas’ অর্থাৎ, “অ্যারিপো, বীজ বপনকারী বহু চেষ্টায় চাকাটি ধরে আছে”। বাক্যটি ডান বা বাম যেদিক থেকেই পড়া হোক না কেন, একই অর্থ একই উচ্চারণ হবে। এছাড়াও লেখাটির আরো একটি মজার দিক রয়েছে,
S A T O R
A R E P O
T E N E T
O P E R A
R O T A S
এই বাক্যটিকে বর্গাকারে সাজালে দেখা যাবে, বাক্যটিকে ডান, বাম, উপর বা নিচ যেদিক থেকেই পড়া হোক না কেন, এর একই উচ্চারণ ও অর্থ হবে।
ল্যাটিনে জনপ্রিয় একটি প্যালিনড্রোম হলো, ‘In girum imus nocte et consumimur igni’ যার অর্থ, “আমরা চক্রাকারে ঘুরি এবং আগুন আমাদের গ্রাস করে”। সংস্কৃত সাহিত্যেও ব্যাপক হারে প্যালিনড্রোমের ব্যবহার দেখা যায়। চতুর্দশ শতকের দৈবজ্ঞ সূর্য পণ্ডিতের লেখা ৪০ শ্লোকের ‘রামকৃষ্ণ বিলোম কাব্যম’ নামের একটি কবিতা পাওয়া যায়, যার প্রতিটি শ্লোক একেকটি প্যালিনড্রোম। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় – “তামসীত্যসতি সত্যসীমতা মায়য়াক্ষমসমক্ষয়ায়মা। মায়য়াক্ষমসমক্ষয়ায়মা তামসীত্যসতি সত্যসীমতা॥” সংখ্যার দিক থেকে দেখলে সবচেয়ে বেশি প্যালিনড্রোমের ব্যবহার দেখা যায় – ইংরেজি ভাষায়। যেমন – EYE, DEED, CIVIC, NUN, NOON, MADAM, WOW ইত্যাদি। প্যালিনড্রোমের মাধ্যমে লেখা ইংরেজি বাক্যের নমুনা হল –
A dog! A panic in a pagoda,
A lot not new I saw as I went on to L.A.
A man, a plan, a canal – Panama
বাংলা ভাষায় প্যালিনড্রোমের জনক ধরা হয় দাদাঠাকুর নামে খ্যাত শরৎচন্দ্র পণ্ডিতকে। তাঁর জন্মসালটিও একটি প্যালিনেড্রোম ১৮৮১ সালের ২৭ এপ্রিল। বাংলায় কিছু বিখ্যাত প্যালিনড্রোমের উদাহরণ :
মরম, মলম, দরদ, জলজ, বনমানব, নবজীবন, সহিস, কালিকা, সরেস, তফাত, বাহবা, সন্ন্যাস, সন্ত্রাস, নরুন, তখত, কন্ক, নয়্ন ,সরস, নিড়ানি,,খামোখা, কালিকা, হুবহু,ইহাই ,বলিব ইত্যাদি।
বাঙালি ব্যক্তি নামেও প্যালিনড্রোম লুকিয়ে আছে যেমন –
সুবললাল বসু
রমাকান্ত কামার
সদানন দাস,
রায়মণি ময়রা,
নিধুরাম রাধুনি
হারান রাহা
ইলু দলুই
সুবর্ণা বসু
সদাই দাস
প্যালিনড্রোমে লেখা কিছু বাংলা বাক্য বা বাক্যাংশ :
বই চাইব,
নাম লেখালেম না
বিকল্প কবি,
তুমি কি মিতু
ঘুরবে রঘু
মার কথা থাক রমা
কীর্তন মঞ্চ পরে পঞ্চম নর্তকী
কাক কাঁদে কাঁক কা
চেনা সে ছেলে বলেছে সে নাচে
তাল বনে নেব লতা
চার সের চা
ঠাকুরদাদার কুঠা
খা সমস্ত রুটি রুস্তম সখা
না না কেনা না।
না বললে লব না
তোল হস্তে আরে খা রে আস্তে হল তো?
ওর মা আজ আমারও
বিরহে রাধা নয়ন ধারা হেরবি
থাক রবি কবির কথা
মামাতো মামা
কাকা তো কাকা
রবীন দা দানবীর।
নন্দনন্দন।