কলকাতার সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার বিবর্তন

কলকাতার সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার বিবর্তন

সব দেশে, মানুষের দুটি পা ছাড়া তার যাতায়াতের আদিমতম ও একমাত্র উপায় ছিল জলপথ। দুশো বছর আগে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তাঁর আট বছর বয়সে পিতার সঙ্গে বীরসিংহ গ্রাম থেকে কলকাতা এসেছিলেন হাঁটাপথে। আরো পনেরো বছর পরে ১৮৪৩ সালে জর্জ এভারেস্ট, যাঁর নামে হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম, দেরাদুন থেকে নদীপথে কলকাতা এসেছিলেন। সময় লেগেছিল ৩৫ দিন। তারও পনেরো বছর পরে ১৮৫৬ সালে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতা থেকে কাশী গিয়েছিলেন নৌকায়। যদিও তখন অল্প-বিস্তর রেল লাইন পাতা শুরু হয়েছিল। সময় লেগেছিল দেড় মাস আর নৌকা ভাড়া লেগেছিল একশো টাকা। কিন্তু হাঁটাপথ বা নদীপথ নয়, আমরা এখানে কলকাতার সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার বিবর্তন নিয়ে আলোচনা করব।

আমরা চলতি কথাবার্তায় একটা যমজ শব্দ প্রায়ই বলি ‘গাড়ি-ঘোড়া’। যেমন, হরতালের দিন রাস্তাঘাট শুনসান, ‘গাড়ি-ঘোড়া’র দেখা নেই –এই রকম। কথায় ঘোড়ার আগে গাড়ি থাকলেও আসলে কিন্তু গাড়ির অনেক আগে ঘোড়া এসেছে। মানুষ বা মালপত্র বইবার জন্য পশুশক্তির ব্যবহার হয়ে আসছে সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকেই। এখনো প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে মাল পরিবহন তো বটেই মানুষ পরিবহনের জন্য গরুর গাড়ির ব্যবহার হয়। এখন এই আধুনিক জেট-গতির যুগে বিস্ময়কর লাগে যে প্রায় দেড়শো বছর আগে ১৮৭৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে স্বামী বিবেকানন্দের মা ভুবনেশ্বরী দেবী বালক নরেন্দ্রনাথকে নিয়ে বাগবাজার থেকে মধ্যপ্রদেশের (এখন ছত্তিশগড়) রায়পুরে গিয়েছিলেন গরুর গাড়িতে চেপে – দূরত্ব প্রায় সাড়ে আটশো কিলোমিটার। বিবেকানন্দের পিতা বিশ্বনাথ দত্ত রায়পুরে এটর্নি ছিলেন। স্থলপথে দূর-দূরান্তে যাওয়ার জন্য গরুর গাড়ি ছাড়া আর উপায়ই বা কি ছিল!

কলকাতা খুব বেশি প্রাচীন শহর নয়। বয়স তিনশো বছরের কিছু বেশি। কলকাতার বিকাশও স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হয়নি । এদেশে বাণিজ্য করতে আসা ইংরেজ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী তাদের বাণিজ্যকুঠি বানানোর জন্য বেহালার সাবর্ণ চৌধুরীদের কাছ থেকে সুতানূটি,কলকাতা ও গোবিন্দপুর নামে তিনটি গ্রামের জমিদারি সত্ব কিনেছিল। সেই তিনটি গ্রাম মিলেই কলকাতা। ইংরেজ কোম্পানী তিনটি গ্রামের জমিদারি সত্ব কিনেছিল ১৬৯৮ সালের ১০ই নভেম্বর।

কলকাতার নগরায়ন শুরু হয়েছিল আরো পঞ্চাশ বছর পর থেকে, ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের পর, কেননা এরপরই ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী এদেশে তাদের দখলদারি পাকা করেছিল সিরাজদৌল্লাকে পরাজিত ও হত্যা করে। তো এই নতুন ‘নগর কলকাতা’র পত্তনের সময়কার চেহারাটা একবার দেখে নেওয়া যাক। ১৭০৬ খৃষ্টাব্দে মুঘল আমলে কলকাতা, গোবিন্দপুর ও সুতানূটি গ্রামের জরীপের তথ্য অনুযায়ী এই তিনটি গ্রা্ম- যা নিয়ে ‘নগর কলকাতা’, তার মোট জমির পরিমান ছিল ৫০৭৬ বিঘা। যার মধ্যে ১৫২৫ বিঘা ছিল ধানক্ষেত, ৪৮৬বিঘায় বাগান, ২৫০বিঘায় কলাগাছ, ১৮৭বিঘাতে তামাক চাষ ও ১৫০বিঘায় শাক-সব্জির চাষ। ১১৬বিঘাতে ছিল রাস্তা, খাল,পাতকূয়া ও পুকুর আর ১১৪৪ বিঘা ছিল পতিত। এই ছিল পত্তনের সময়কার ‘নগর কলকাতার’ চেহারা। তখন নগর কলকাতায় মাত্র দুটি ‘স্ট্রিট’ আর দুটি ‘লেন’, রোড বা চওড়া রাস্তা একটাও ছিল না। রাস্তা নেই তো গাড়ি গড়াবে কি করে? অগত্যা এক গ্রাম থেকে আর এক গ্রামে বা এক পাড়া থেকে আর এক পাড়ায় যাতায়াত করার উপায় ছিল সরু কাঁচা রাস্তা দিয়ে পায়ে হাঁটা, কিংবা গরুর গাড়ি নয় তো পালকি। এই দুটি যানই স্থলপথে যাতায়াতের জন্য আমাদের আদি গ্রামীণ বন্দোবস্ত। পালকি স্বচ্ছল লোকেদের পক্ষে ব্যবহার করা সম্ভব হত। কলকাতার নগরায়ন শুরু হওয়ার পরও ‘পালকি’ সম্ভ্রান্ত ও অর্থবান বাঙ্গালিদের ও সাহেবদের কাছে ছিল খুব আদরের। এ ছিল আদি ‘নগর কলকাতা’র বাবু কালচারের অন্যতম প্রধান চিহ্ন। সওয়ারি হত দুজন, বইতো ছয় জন বেহারা, মালপত্র বওয়ার জন্য কুলি আর রাতের পথে একজন মশালচি।

সাহেবরা কলকাতা নগরীর পত্তন করল মানে দ্রুত গতিতে সে এগিয়ে চলল এমন নয় মোটেই। পত্তনের পর আরো একশ বছর কলকাতার চেহারাটা প্রায় একই রকম ছিল। যাতায়াতের জন্য কয়েকটা সরু কাঁচা রাস্তায় গোরুর গাড়ি আর পালকি ভরসা। প্রথম বড় চওড়া খোয়া বাধান রাস্তা সার্কুলার রোড তৈরী হয়েছিল ১৭৯৮/৯৯ নাগাদ, ফলে তখন থেকেই ছুটতে লাগল দ্রুত গতির ঘোড়ায় টানা গাড়ি। আর ঘোড়া মানেই গতি, দ্রুত গতির প্রতীক। এরপর, আরো একশো বছর ঘোড়ায় টানা গাড়িই ছিল নগর কলকাতার একমাত্র দ্রুতগতির যানবাহন। যাত্রীবাহী মোটর বাস কলকাতায় চলতে শুরু করেছিল ১৯২২ থেকে। তার আগে অবশ্য ট্যাক্সি চলা শুরু হয়েছে ১৯০৬ থেকে।

ঘোড়ার গাড়ির চল হওয়া শুরু হতেই কলকাতার জনজীবনে গতি এল। অনেক রাস্তা তৈরী হল। কলকাতার রাস্তা-ঘাট তৈরী করার জন্য ইংরেজরা একটা ‘লটারি কমিটি’ করেছিল, লটারির টাকায় শহরের নানান উন্নয়ন করা হত। ওয়েলসলি সাহেব যখন গভর্ণর জেনারেল। ১৮৩৬ সালের মধ্যে কলকাতায় অনেক প্রধান রাস্তার নির্মাণ হয়ে গেল । স্ট্রান্ড রোড, কলেজ স্ট্রিট, আমহার্স্ট স্ট্রিট, মির্জাপুর স্ট্রিট, হেয়ার স্ট্রিট প্রভৃতি। ১৮৮৮ সাল পর্যন্ত কলকাতার মোট রাস্তার পরিমান ছিল ১৮২ মাইল। ঐ বছরেই ‘নগর কলকাতা’র আয়তন বাড়ল। এন্টালি,বেনেপুকুর, ট্যাংরা,তপসিয়া,বালিগঞ্জ, ভবানীপুর,কালিঘাট, চেতলা, আলিপুর ও খিদিরপুর। নগর কলকাতার সেইসব রাস্তা এখনকার মত মসৃণ এসফল্ট বা পিচ বাঁধান ছিল না, ছিল খোয়া বাঁধান। কারণ ১৯১০ সালের আগে এসফল্ট বা বিটুমিন’এর ব্যবহার জানা ছিল না। ঐসব রাস্তা দিয়ে ছুটতো ঘোড়ার গাড়ি ।

গাড়ি টানার কাজে ঘোড়াকে নানান উপায়ে ব্যবহার করা হত। উদ্দেশ্য দ্রুতগতিতে যাতায়াত। ব্রাউনলো নামে এক সাহেব বের করলেন ‘ব্রাউন বেরি’ নামে গাড়ি। সাবেকি পালকিতেই চারটি চাকা বসিয়ে সামনে ঘোড়া জুতে দিয়ে বানিয়ে ফেলল এক ঘোড়ায় টানা‘ব্রাউনবেরি’ গাড়ি, ১৮২৭ সালে। ব্রাউন বেরির ভাড়া ছিল প্রথম একঘন্টায় চোদ্দ আনা, পরের প্রতি ঘন্টায় আট আনা আর সারা দিনের জন্য নিলে চার টাকা। নানান ধরনের ঘোড়ার গাড়ি ছিল। সাহেবদের জন্য দামি গাড়ি, সাধারণ কর্মচারিদের জন্য আলাদা গাড়ি। নানান নামের এইসব ঘোড়ার গাড়ি। চেরট, ফিটন, ল্যান্ডো, টমটম, ছ্যাকরা গাড়ি এইরকম। অনেক বড় বড় কোম্পানী হয়েছিল ঘোড়ার গাড়ি তৈরী করার জন্য। এক্কা গাড়ি, টমটম, ছ্যাকরা গাড়ি এসব নামগুলো প্রবাদের মত হয়ে গেছে। বহু যুগ ধরে বাংলা বর্ণমালায় পড়া “এক্কা গাড়ি ঐ ছুটেছে, ঐ দেখো ভাই চাঁদ উঠেছে”, বহুদিন অতীত হয়ে গেছে কলকাতার রাস্তা থেকে। তবু গোড়ার গাড়িই বোধ হয় কলকাতার সবচেয়ে ‘নস্টালজিক হেরিটেজ’। এককালে কলকাতার ‘বাবু’রা ফিটনে চেপে ময়দানে হাওয়া খেতেন। আর সেই ঐতিহ্যের পথ বেয়ে এই সেদিনও ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে সারি দেওয়া ফিটন গাড়ি দেখা যেত ময়দানে শখের হাওয়া-ভ্রমণের জন্য। ২৬শে মার্চ ২০১২ থেকে তাদেরও বিদায় করা হয়ে গেছে।

ইতিমধ্যে ১৮৫৪ সালের অগষ্ট মাস থেকে হাওড়া স্টেশন থেকে হুগলী পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু কলকাতার ভেতরে একসঙ্গে বেশি পরিমান মালপত্র বইবার বা একসঙ্গে অনেক মানুষের যাতায়াতের কোন ব্যবস্থা ছিল না। সেই অসুবিধা দূর হল ঘোড়ায় টানা ট্রাম চালু করে। ১৮৭০ সালের মার্চ থেকে তোড়জোড় শুরু করে, শিয়ালদহ স্টেশন থেকে বউবাজার, ডালহৌসি স্কোয়ার স্ট্রান্ড রোড হয়ে আর্মেনিয়ান ঘাট পর্যন্ত পাতা হল ট্রাম লাইন আর ২৪শে ফেব্রুয়ারি ১৮৭৩ থেকে ঘোড়ায় টানা ট্রাম গাড়ি চলা শুরু করল। দুটো বলিষ্ঠ ঘোড়া দিয়ে চালানো হত ট্রাম। এরপর অনেক রাস্তায় ট্রাম লাইন পাতা হল, কলকাতা ট্রামওয়েস কোম্পানী গঠন হল। ঘোড়ায় টানা ট্রামই হয়ে উঠল কলকাতার প্রথম গণপরিবহন ব্যবস্থা। ১৮৯০-৯১ সনে কলকাতায় ট্রাম টানবার জন্য ঘোড়ার সংখ্যা ছিল একহাজার, সবই শীতপ্রধান দেশ থেকে নিয়ে আসা বেশ বলবান ঘোড়া। প্রায় ত্রিশ বছর চালু ছিল ঘোড়ায় টানা ট্রামের ব্যবস্থা। ঘোড়ায় টানা ট্রামের যুগ শেষ হল ১৯০২ সালে। ২৭শে মার্চ ১৯০২ সালে প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রাম চলতে শুরু করল ধর্মতলা – খিদিরপুর পথে। তার আগে কিছুদিন পরীক্ষামূলক ভাবে কয়েকটি পথে বাষ্পীয় ইঞ্জিন দিয়ে ট্রাম চালানো হয়েছিল। এখন তো কলকাতার কয়েকটা মাত্র পথে ট্রাম চলে।

১৮৮৬ সালে জার্মানীতে মোটরগাড়ি আবিষ্কার হওয়ার পর দশ বছরের মধ্যেই কলকাতার রাস্তায় মোটর গাড়ি দেখা দিল, আর তার দশবছর পরে ১৯০৬ সালে কলকাতায় চলে এল ট্যাক্সি। ১৯৪০-৪৫ সাল নাগাদ কলকাতায় ট্যাক্সির ভাড়া ছিল কমপক্ষে আট আনা, তারপর প্রত্যেক ১/৪ মাইলের জন্য দু’আনা। তখন যাতায়াতের জন্য কলকাতায় প্রধান উপায় ছিল ট্রাম। কিন্তু শহরের বাইরে, দূরে যাওয়ার সমস্যা ছিল, কারণ ট্যাক্সিতে খরচ বেশি। অবশেষে ১৯২২ সালে কলকাতায় চালু হয়ে গেল যাত্রীবাহী মোটর বাস। এর অনেক আগে – মোটর গাড়ি আবিষ্কারই হয়নি, তখন কিছু দিনের জন্য ঘোড়ায় টানা বাস চলার কথা জানা যায়। ধর্মতলা থেকে বারাকপুর পর্যন্ত ঘোড়ায় টানা বাস চলেছিল ১৮৩০ সালে। কতদিন চলেছিল – এসব তথ্য জানা যায় না। ১৯২২ সাল থেকে মোটর বাসই হয়ে গেল কলকাতার প্রধান গণ পরিবহন ব্যবস্থা। চালু হওয়ার সময় ১৯২৪ সালে কলকাতায় বাসের সংখ্যা ছিল ৫৫টি। সেই সংখ্যাটা ১৯২৫ সালে হয় ২৮০। ১৯২৬ সালে চালু হয় দোতলা বাস। প্রথম দোতলা বাস চলেছিল শ্যামবাজার থেকে কালিঘাট। প্রথম চালু হওয়া দোতলা বাসগুলি বছর কুড়ি আগে দেখা বা ছবিতে দেখা বাসের মত ছিল না। বাসগুলির ওপরে ছাদ বা ছাউনি থাকত না। বর্ষায় যাত্রীরা ছাতা মাথায় বসে থাকতেন। আটের দশক পর্যন্তও বেশ কিছু প্রধান রাস্তায় দোতলা বাস চলত। তারপর ১৯৯০ সাল থেকে সেই সময়ের সরকার দোতলা বাস চালানো বন্ধ করে দেয়। এখনও অনেকেই দোতলা বাসে চড়ার স্মৃতি রোমন্থন করে তৃপ্তি লাভ করেন। এখন নানা চেহারায় এই যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থা – বাস, মিনিবাস, অটো, টোটো ইত্যাদি। ১৯৪৮ সাল থেকে সরকারী বাস চলাচল ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়, গঠিত হয় স্টেট ট্রানসপোর্ট কর্পোরেশন। ১৯৭৫ সালে চালু হয় ‘মিনিবাস’। সেই সময় যারা মিনিবাসে চড়তেন তাঁদের মনে পড়বে, সেগুলির উচ্চতা বেশ কম ছিল, যার জন্য সাধারণ উচ্চতার যাত্রীকেও দাঁড়িয়ে যেতে হলে সারাক্ষণ ব্যথা সহ্য করেও বাসের মধ্যে ঘাড় নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে হত।

কলকাতা বড় বিচিত্র শহর। এই জেটগতির যুগে দ্রুতগতির আধুনিক পরিবহন বন্দোবস্তের পাশাপাশিই মানুষ টানা রিকশর সহাবস্থান । ২০০৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার হাতে টানা রিক্শার চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। তারপর ধীরে ধীরে কলকাতা থেকে এই ঔপনিবেশিক চিহ্নটি বিদায় নেয়, এখনও হয়ত দুয়েকটি হাতে টানা রিক্শ চোখে পড়তে পারে। রিকশ’র জন্ম জাপানে, ১৮৬৯ সালে। জাপানী ভাষায় এ গাড়িকে বলা হত জিন-রি-কি-শ , মানে ‘মানুষ টানা গাড়ি’। ভারতে প্রথম বলা হত ‘জিন রিকশ’। সেটা ছোট হয়ে ‘রিকশ’ হয়েছে। সিমলা তে এই গাড়ি প্রথম দেখা যায় ১৮৮০ সালে। লেডি ডাফরিনের আত্মকথায় আছে। কলকাতায় চিনারা প্রথম নিজেদের ব্যবহারের জন্য রিকশ’র প্রচলন করে ১৯০০/১৯০১ সাল নাগাদ । তারপর চিনারা, ভাড়ায় রিকশ’ চালানো শুরু করে ১৯১৩/১৪ থেকে। ভারতীয়রা রিকশর ব্যবসা শুরু করে ১৯২০ থেকে। ইংরেজ আমলে টানা রিকশ’র ভাড়া ছিল এক মাইল পর্যন্ত – তিন আনা । তার পরের প্রতি মাইলের জন্য তিন আনা। সময়ের হিসাবে একঘন্টার জন্য ছ আনা। এটা দুজনের বসার হিসাব। একজন হলে দেড় আনা প্রতি মাইল, একঘন্টার জন্য তিন আনা ।

স্বল্প দূরতের পথে যাতায়াতের জন্য তিন চাকার সাইকেল রিকশ এখনও মানুষের অপরিহার্য বাহন। কলকাতার রাস্তায় সাইকেল রিকশ চালু হয়েছিল ১৯৪০ সাল নাগাদ। তার পঞ্চাশ বছর আগেই অবশ্য দুই চাকার ব্যক্তিগত বাহন বাই-সাইকেল প্রচলিত হয়েছিল ১৮৮৯ সালে।

কলকাতা শহরকে আরও গতিশীল করে তুলতে ১৯৮৪ সালে শুরু হয় চক্ররেল যা দমদম স্টেশন থেকে শুরু হয়ে দমদমে এসেই শেষ হয় – যদিও এই সম্পূর্ণ পথে ট্রেন চলে না। আর অন্যান্য অনেক উন্নত শহরের অভ্যন্তরের দ্রুততম গণপরিবহন ব্যবস্থা – মেট্রোরেল তাও ভারতের মধ্যে সবার প্রথম কলকাতা শহরে চালু হয়। ১৯৮৪ সালে মেট্রোরেল পাতাল পথে দমদম থেকে টালিগঞ্জ পর্যন্ত চালু হয়, পরবর্তী কালে এর অনেক সম্প্রসারণ হয়েছে, হচ্ছে, এবং বর্তমানে শুধু পাতাল পথে নয়, উড়ালপুল দিয়েও মেট্রোরেল সংযোগ স্থাপিত হচ্ছে সারা কলকাতা জুড়েই।

তথ্যসূত্র


  1. কলিকাতা দর্পণ / রথীন্দ্রনাথ মিত্র।
  2. কলকাতা শহরের ইতিবৃত্ত / বিনয় ঘোষ।
  3. সংবাদপত্রে সেকালের কথা / ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়।

আপনার মতামত জানান