সতীপীঠ কালমাধব

সতীপীঠ কালমাধব

কালমাধব মন্দিরটি ভারতের মধ্যপ্রদেশের অন্তর্গত অমরকণ্টকে অবস্থিত। সতীপীঠ কালমাধব একান্ন সতীপীঠের একটি অন্যতম পীঠ। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে এখানে সতীর বাম নিতম্ব পড়েছিল। এখানে অধিষ্ঠিত দেবী হলেন ভদ্রকালী এবং ভৈরব হলেন অসিতানন্দ। মতান্তরে বলা হয়, কালমাধব সতীপীঠের দেবী কালমাধব এবং ভৈরব এখানে অসিতাঙ্গ নামে পূজিত হন। একান্ন পীঠের মধ্যে কালমাধব সতীপীঠ অন্যান্য পীঠস্থানের তুলনায় অনেক কম পরিচিত। অনেকের মনে এই কালমাধব মন্দিরের অবস্থান নিয়ে বিতর্ক আছে। নবরাত্রির পূজা উপলক্ষে প্রতি বছর এখানে বহু ভক্তের সমাগম ঘটে। বিন্ধ্য এবং সাতপুরা পর্বতের মধ্যে অবস্থিত অমরকণ্টক সাধারণভাবেই একটি দৈবী মাহাত্ম্যপূর্ণ তীর্থস্থান হিসেবে সমাদৃত, তার সঙ্গে জড়িত আছে এই শক্তিপীঠের মাহাত্ম্যও।

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে মাতা সতী বাবার কাছে স্বামীর অপমান সহ্য করতে না পেরে নিজের বাপের বাড়িতেই দেহত্যাগ করেছিলেন। মাতা সতীর দেহত্যাগের খবর মহাদেবের কাছে পৌঁছাতেই মহাদেব সেখানে উপস্থিত হন। সতীর মৃতদেহ দেখে ক্রোধে উন্মত্ত মহাদেব এই দেহ কাঁধে নিয়ে তান্ডব নৃত্য শুরু করেন। মহাদেবের তান্ডব নৃত্যে পৃথিবী ধ্বংসের আশঙ্কায় শ্রীবিষ্ণু তার সুদর্শন চক্র দ্বারা মাতা সতীর দেহ একান্নটি খণ্ডে খণ্ডিত করেন। সেই দেহখণ্ডগুলিই যে যে স্থানে পড়েছিল সেখানে একটি করে সতীপীঠ প্রতিষ্ঠা হয়। সেই রকম একটি পীঠ হলো কালমাধব সতীপীঠ। বলা হয় সতীর বাম নিতম্ব পড়ে জন্ম হয়েছে এই কালমাধব সতীপীঠের।

মধ্যপ্রদেশের অমরকণ্টক হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি মাহাত্ম্যপূর্ণ তীর্থস্থান। এখানে অবস্থিত দুটি সতীপীঠের মধ্যে কালমাধব সতীপীঠটি তুলনামূলকভাবে কম পরিচিত। নর্মদা নদীর তীরে এই সতীপীঠ তন্ত্রসাধনার জন্য প্রসিদ্ধ। অমরকন্টক থেকেই উৎপত্তি হয়েছে নর্মদা, মহানদী ও শ্যোন নদীর। পুরাণে কথিত আছে এই নর্মদা তীরে তপস্যা করলে পুণ্যফল লাভ হয় তাই পুণ্যভূমি নর্মদা তীরে যুগ যুগ ধরে বহু সন্ত-সন্ন্যাসীর আগমন ঘটেছে। অমরকণ্টকে তাই একাধারে শৈবপীঠ, তন্ত্রপীঠ এবং অঘোরপীঠ গড়ে উঠেছে। তারই মধ্যে অন্যতম শক্তিপীঠ কালমাধব। ‘তন্ত্রচূড়ামণি’ শাস্ত্রে এই পীঠস্থানের মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলা আছে – ‘নিতম্বকালমাধবে ভৈরবশ্চাসিতাঙ্গশ্চ দেবী কালিকা সুসিদ্ধিদা’। মধ্যযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি ভারতচন্দ্র তাঁর ‘অন্নদামঙ্গল’ কাব্যে লিখেছেন – ‘নিতম্বের অর্ধ কালমাধবে তাহার / অসিতাঙ্গ ভৈরব দেবতা কালী তার’। কোনো কোনো ব্যক্তির মতে শ্যোন নদীর তীরে পাহাড়ের গুহায় এই মন্দির অবস্থিত, আবার অনেকে মনে করেন যে পুরীর মন্দির থেকে অনতিদূরে কালমাধব শক্তিপীঠের অবস্থান। কিন্তু অমরকণ্টকেই যে এই সতীপীঠের অবস্থান তা নিশ্চিত করে বর্তমানে বলা সম্ভব।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

মনে করা হয় আনুমানিক ছয় হাজার বছর আগে সূর্যবংশীয় সম্রাট মান্ধাতা শ্যোন নদীর তীরে অমরকন্টকে এই কালমাধব মন্দির নির্মাণ করেছিলেন।  

পাহাড়ের উপরে শ্বেত-শুভ্র পাথরে তৈরি এই মন্দির। মন্দিরের চারপাশে রয়েছে শ্বেতপাথরে বাঁধানো পুকুর। এছাড়াও মন্দিরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা শ্যোন নদী এখানকার অন্যতম আকর্ষণ। পাদদেশ থেকে মূল মন্দিরে যাওয়ার জন্য একশোটি সিঁড়ি রয়েছে। মন্দির ছাড়াও এখানে সাতপুরা আর বিন্ধ্য পর্বতের সন্ধিস্থল রয়েছে যার সৌন্দর্য অতুলনীয়।

কালমাধব মন্দিরে দেবী কালী রূপে পূজিত হন।  প্রত্যেকটি সতীপীঠ বা শক্তিপীঠে দেবী এবং ভৈরব উপস্থিত থাকে। দেবী হলেন সতীর রূপ। ভৈরব হলেন দেবীর স্বামী। কালমাধব সতীপীঠে দেবী হলেন কালী তথা কালমাধব এবং ভৈরব হলেন অসিতাঙ্গ। অনেকে আবার মনে করেন, এখানে অধিষ্ঠিত দেবীর নাম ভদ্রকালী এবং ভৈরব হলেন অসিতানন্দ।

নবরাত্রির দিন উপলক্ষ্যে এই মন্দিরকে ঘিরে অনেক ভক্তের সমাগম ঘটে বলে জানা যায়।

আপনার মতামত জানান