জয়ন্তী

সতীপীঠ জয়ন্তী

সতীপীঠ জয়ন্তী পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জেলায় পাহাড় জঙ্গল অতিক্রম করে ভুটান সীমান্তে অবস্থিত। এটি একান্ন সতীপীঠের একটি পীঠ। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে এখানে সতীর বামজঙ্ঘা পড়েছিল। এখানে অধিষ্ঠিত দেবীর নাম জয়ন্তি এবং এখানের ভৈরব হলেন ক্রমদীশ্বর।

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে মাতা সতী নিজের বাপের বাড়িতে বাবার কাছে স্বামীর অপমান সহ্য করতে না পেরে সেখানেই দেহত্যাগ করেছিলেন। মাতা সতীর দেহত্যাগের খবর মহাদেবের কাছে পৌঁছতেই মহাদেব সেখানে উপস্থিত হন। সতীর মৃতদেহ দেখে ক্রোধে উন্মত্ত মহাদেব সেই দেহ কাঁধে নিয়ে তাণ্ডব নৃত্য চালু করেন। মহাদেবের তাণ্ডব নৃত্যে পৃথিবী ধ্বংসের আশঙ্কায় শ্রীবিষ্ণু তার সুদর্শন চক্র দ্বারা মাতা সতীর দেহ একান্নটি খণ্ডে খণ্ডিত করেন।  সেই দেহখন্ডগুলোই যে যে স্থানে পড়েছিল সেখানে একটি করে সতীপীঠ প্রতিষ্ঠা হয়। বলা হয় এখানে সতীর বামজঙ্ঘা পড়েছিল। আর মহাকাল সেই ভার ধরে রেখেছেন। এখানে দেবীর থেকে মহাকালের প্রাধান্য ই বেশি।তন্ত্রের মতে শক্তিই প্রকৃতি, সব শক্তি প্রকৃতিতেই বিরাজমান।ও শিব ছাড়া কোনো শক্তির ই অস্তিত্ব নেই।এখানে প্রকৃতির সাথে শক্তির মিলন হয়েছে। সর্বোপরি উল্লেখ করতে হয় পাহাড়ের উপর প্রকৃতির শোভা তথা পাহাড়ে পাহাড়ে সীমান্তে দুই দেশের মিলন এ এক অপূর্ব সৌন্দর্য।

পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার থেকে ৩৭ কিমি দূরে পাহাড় জঙ্গল আর মাঝ দিয়ে বয়ে চলা নদী জয়ন্তী , এই সব কিছু নিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম ।এখান থেকে অনেক পথ অতিক্রম করে পৌছাতে হয় সতীর একুশতম পীঠ জয়ন্তীতে। জয়ন্তী এই স্থানটির উত্তরে দার্জিলিং, দক্ষিনে গাঙ্গেও সমভূমি এর মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা তোর্সা , এরই অববাহিকায় জয়ন্তী অবস্থিত। পাহাড় জঙ্গলের রাস্তা পেরিয়ে ট্রেকিং করে পৌঁছাতে হয় মহাকালের মন্দির। যেখানে বাঘ ভালুক সহ অনেক জন্তুর পাওয়া যেতে পারে। সমতল থেকে প্রায় তিন হাজার ফুট উঁচুতে জঙ্গল আর পাহাড়ে ঢাকা ভারত ও ভুটান সীমান্তে, ভুটানের মহাকাল পাহাড়ের উপর এই মহাকাল মন্দির অবস্থিত। রহস্যময় জঙ্গলে ঘেরা পাহাড়ের চূড়ায় তিনটি গুহা অবস্থিত। এই তিনটি গুহা মন্দিরকে একত্রে মহাকাল মন্দির বলা হয়। প্রথম গুহায় রয়েছে ব্রহ্মা- বিষ্ণু- মহেশ্বর । দ্বিতীয়টিতে বাবা ভোলানাথ ও তৃতীয় গুহায় আছে মা মহাকালী। চুনা পাথরের পাহাড়ের উপর এই গুহা প্রকৃতির সৃষ্টি। গুহায় নানা দিক থেকে জল বেয়ে পড়ছে। হাজার হাজার বছর ধরে চুনার জল পরে গুহায় সৃষ্টি হয়েছে নানা আশ্চর্য দৃশ্যের। যেগুলি দেখতে জলের ফোটার মত অথচ এইগুলি কঠিন প্রস্তরীভূত। গুহায় সুরঙ্গের মাঝে চুনা জল জমে যেগুলি ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে তার নাম স্ট্যালাগটাইট আর মাটির উপর ফোঁটা ফোঁটা চুনা জল জমে যেগুলি উঁচু হয়ে আছে তার নাম স্ট্যালাগনাইট। এই অদ্ভুত দৃশ্য চোখে দেখার মতো।গুহার ভিতর গর্ভগৃহে হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকতে হয়।সেখানে সারাক্ষণ প্রদীপ জ্বালানো থাকে।এই প্রকৃতির সৃষ্টির মধ্যেই মায়ের অবস্থান।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

প্রতি বছর শিবরাত্রির সময় মহাকালের মন্দিরে পুজো দিতে দশহাজারেও বেশি পূর্ণাথী এসে ভিড় করে।এই সময় অনেক নিরাপত্তার ব্যাবস্থা থাকে।

আপনার মতামত জানান