দীপাবলি হল পাঁচদিন ধরে চলা হিন্দু উৎসব যা কিনা উত্তর ভারতে শরৎ আর দক্ষিণ ভারতে বসন্তকালে অনুষ্ঠিত হয়। আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশী অর্থাৎ উৎসবের দ্বিতীয় দিনটিকে নরক চতুর্দশী বা ভূত চতুর্দশী বলা হয়। বাংলায় যখন ভূত চতুর্দশী পালন করা হয় দক্ষিণ ভারতে বিশেষ করে গোয়া, তামিলনাড়ু এবং কর্ণাটকে সেদিন নরক চতুর্দশী সাড়ম্বরে পালিত হয়। পুরাণ অনুসারে, এই বিশেষ তিথিতে শ্রীকৃষ্ণ, সত্যভামা এবং দেবী কালিকা নরকাসুরকে বধ করেছিলেন।
পুরাণ অনুসারে নরকাসুরের মা ভূমি দেবী বিষ্ণুর কাছে তাঁর পুত্রের দীর্ঘায়ু এবং সুস্বাস্থ্য কামনা করে বর চেয়েছিলেন। বিষ্ণু এই বর দান করেন এবং নরকাসুরকে কামাখ্যাদেবীর পূজা করতে বলেন।বর লাভ করে নরকাসুর প্রভাবে ক্রমে অত্যাচারী হয়ে ওঠে। নরকাসুরের এই চারিত্রিক অবনতির অন্যতম কারণ শোণিতপুরের বাণাসুর।একদিন নরকাসুর কামাখ্যা দেবীকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে দেবী শর্ত দেন, তিনি এই বিবাহে রাজী যদি নরকাসুর মোরগ বা কুক্কুট রাত পেরোনোর জানান দেওয়ার আগেই নীলাচল পাহাড়ের তলা থেকে মন্দির পর্যন্ত এক রাতের মধ্যে সিঁড়ি তৈরি করে দিতে পারেন তবেই। নরকাসুর নেমে পড়লেন কাজে পুরোদমে। রাত পেরোনোর আগেই কামাখ্যা দেবী দেখলেন নরকাসুর সিঁড়ি তৈরি প্রায় শেষ করে ফেলেছেন। দেবী কামাখ্যা মোটেও আগ্রহী ছিলেন না এক অসুরের সাথে বিবাহ বন্ধনে জড়াতে।তাই অসম্ভব একটি কাজ সম্পাদনের শর্ত দেন নরকাসুরকে এই ভেবে যে নরকাসুর নিশ্চয়ই এই দুঃসাধ্য কাজ এক রাতের মধ্যে শেষ করে উঠতে পারবেননা। কিন্তু কাজের অগ্রগতি দেখে দেবী সত্যিই ভয় পেয়ে যান।তিনি তখন ছলনার আশ্রয় নেন। তিনি একটি মোরগকে চেপে ধরলে সেই মোরগ ভয়ে ডেকে ওঠে।মোরগের ডাক শুনে নরকও ভাবেন রাত বুঝি শেষ হল।নরকাসুর সিঁড়ি তৈরির কাজ অর্ধেক রেখেই ক্ষান্ত হলেন।কিন্তু পরে নরকাসুর আসল সত্যি জানতে পেরে কুক্কুটটিকে (মোরগ) প্রচণ্ড রাগে ধাওয়া করে হত্যা করেন। এই কারণেই আসামের দরং জেলায় “কুকুরাকটা” নামে একটি স্থান আছে।নরকাসুরের অর্ধসমাপ্ত ঐ সিঁড়িটিকে “মেখেলা-উজোয়া পথ” বলা হয়। পৃথিবীর সকল
রাজ্য জয় করার পর নরকাসুর স্বর্গ আক্রমণ করলে ইন্দ্র সহ দেবতারা স্বর্গ থেকে পালাতে বাধ্য হন। নরকাসুর প্রায় ১৬০০০ স্ত্রীকে অপহরণ করেন। ইন্দ্র, কামাখ্যা সহ সকল দেব দেবী বিষ্ণুর কাছে নরকাসুরকে হত্যার আবেদন জানালে বিষ্ণু কৃষ্ণ অবতারে নরকাসুরকে হত্যা করবেন বলে কথা দেন। পরবর্তীকালে কৃষ্ণর স্ত্রী সত্যভামা কৃষ্ণকে নরকাসুরকে হত্যার জন্য রাজি করান। কৃষ্ণ এবং সত্যভামা গরুড়ে চড়ে নরকাসুরের রাজ্য আক্রমণ করেন এবং সেখানে কৃষ্ণ নরকাসুরের সেনাপতি “মুর”কে বধ করেন।”মুর”কে বধ করার জন্য কৃষ্ণ “মুরারী” নামেও পরিচিত। অবশেষে সুদর্শন চক্র দ্বারা কৃষ্ণ নরকাসুরকে বধ করেন এবং অদিতির সোনার কুণ্ডলের সঙ্গে ১৬০০০ জন স্ত্রীকে উদ্ধার করেন। প্রাগজ্যোতিষপুরের সিংহাসনে নরকাসুরের পুত্র ভগদত্তকে স্থাপন করা হয়।
উত্তর গুয়াহাটীতে “অশ্বক্রান্ত” (অর্থ – অশ্বের আরোহণ) নামে একটি মন্দির আছে। জনশ্রুতি প্রাগজ্যোতিষপুর আক্রমণ করার পূর্বে কৃষ্ণ এই স্থানে বিশ্রাাম নিয়েছিলেন এবং তাঁর ঘোড়াগুলি এখানে জল খেয়েছিল।
তথ্যসূত্র
- https://en.wikipedia.org/wiki/Naraka_Chaturdashi
- https://bn.wikipedia.org/wiki/
- https://ebela.in/national/observing-naraka-chaturdashi-in-autumn-dgtl-1.484114
- http://archives.anandabazar.com/e_kolkata/2011/october/story61_1.html
- https://bengali.oneindia.com/astrology/do-these-things-get-rich-wealth-on-narak-chaturdashi-024977.html
- https://www.hindujagruti.org/hinduism/celebrate-second-day-diwali-narakchaturdashi
2 comments