সুভদ্রা কুমারী চৌহান

সুভদ্রা কুমারী চৌহান

সুভদ্রা কুমারী চৌহান (Subhadra Kumari Chauhan) একজন ভারতীয় মহিলা কবি তথা স্বাধীনতা সংগ্রামী যিনি ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন গান্ধীজি পরিচালিত অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম মহিলা অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিত্ব হিসেবে। কেবল প্রথম মহিলা সত্যাগ্রহী হিসেবেই নয়, ইতিহাসে তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন তাঁর বিখ্যাত কবিতা ‘ঝাঁসী কি রানী’ -এর জন্যেও।

১৯০৪ সালের ১৬ আগস্ট উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদ জেলার নিহলপুর গ্রামে সুভদ্রা কুমারী চৌহানের জন্ম হয়। ১৯১৯ সালে মাত্র ষোলো বছর বয়সে খান্দোওয়ায়ের ঠাকুর লক্ষ্মণ সিং চৌহানের সাথে তাঁর বিয়ে হয়। পরবর্তীকালে তাঁদের পাঁচটি সন্তান হয়েছিল।

সুভদ্রা কুমারী চৌহান এলাহাবাদের ক্রোস্টওয়ায়েট গার্লস স্কুল থেকে ১৯১৯ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা পাস করেন। এই একই বছরে তাঁর বিয়ে হওয়ার কারণে তিনি স্বামীর সাথে জব্বলপুর চলে আসেন।

১৯২০ সাল নাগাদ মহাত্মা গান্ধীর আহ্বানে সারা ভারত জুড়ে ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। সুভদ্রা কুমারী চৌহান ও তাঁর স্বামী ঠাকুর লক্ষ্মণ সিং চৌহান গান্ধীজির ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯২১ সালে এই আন্দোলনে যোগ দেন। সুভদ্রা কুমারীই ছিলেন এই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী প্রথম ভারতীয় নারী। আন্দোলনে যোগদানের অপরাধে ব্রিটিশ পুলিশ তাঁকে নাগপুরে গ্রেপ্তার ও জেলবন্দী করে। তিনি ছিলেন প্রথম ভারতীয় মহিলা সত্যাগ্রহী যিনি ব্রিটিশ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন এবং কারাবরণ করেন। তৎকালীন সেন্ট্রাল প্রভিন্সের আইন সভার সদস্য ছিলেন সুভদ্রা।

কেবল মাত্র একজন বীরাঙ্গনা স্বাধীনতা সংগ্রামীই ছিলেন না সুভদ্রা আদ্যন্ত একজন সাহিত্যিকও ছিলেন বটে। তিনি বেশ কিছু হিন্দি কবিতা লিখে থাকলেও ঝাঁসীর রানী লক্ষ্মীবাঈয়ের জীবন কাহিনি নিয়ে রচিত ‘ঝাঁসী কি রানী’ কবিতাটি তাঁকে হিন্দি সাহিত্যে র প্রভাবশালী কবি হিসেবে বিশেষ খ্যাতি এনে দেয়। তাঁর এই কবিতাটি হিন্দি সাহিত্যের অন্যতম বহুল পঠিত কবিতা হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহে রানী লক্ষ্মীবাঈয়ের যোগদান ও সেই প্রসঙ্গে তাঁর অসমসাহসী বীরগাথার এক অনবদ্য চিত্র কেবল শব্দের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন সুভদ্রা এই কবিতায়। কবিতাটির প্রতিটি পংক্তি শেষে দুটি লাইন লেখা আছে যেটি পরবর্তী সময় প্রায় কিংবদন্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে –

“বুন্দেলে হারবালো কি মুঁহ হামনে সুনি কাহানি থী,

খুব লড়ি মরদানি ও তো ঝাঁসীওয়ালি রানী থী । । ”

সুভদ্রা রচিত অন্যান্য কবিতার মধ্যে ‘ঝাঁসী কি রানী’ কবিতাটি ছাড়াও ‘বীরোঁ কা কায়সা হো বসন্ত’ , ‘রাখি কি চুনৌতি, এবং ভিদা’, ‘জালিয়ানওয়ালাবাগ মে বসন্ত’ উলেখযোগ্য। তাঁর এই বীর রসাত্মক কবিতাগুলি সেই সময়ে তরুণদের স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রবলভাবে উৎসাহিত করেছিল। খাড়িবোলি ভাষায় রচিত তাঁর বীর রসাত্মক কবিতা ছাড়াও শিশুদের জন্যও বেশ কিছু কবিতা তিনি লিখেছিলেন।

১৯৪৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সুভদ্রা কুমারী চৌহানের মৃত্যু হয়।

ভারতীয় কোস্ট গার্ড তাঁর স্মরণে একটি জাহাজের নামকরণ করেন – আই সি জি এস সুভদ্রা কুমারী চৌহান। জব্বলপুর পৌর নিগমের অফিসের সামনে সম্প্রতি তাঁর একটি পূর্ণাঙ্গ মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। ১৯৭৬ সালে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে তাঁর স্মরণে ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়েছে। তাঁর ‘ঝাঁসী কি রানী’ কবিতাটি বর্তমানে এন.সি.ই.আর.টি (NCERT)-র সুপারিশে ষষ্ঠ শ্রেণীর পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

2 comments

আপনার মতামত জানান