ভিকুনা

ভিকুনা পশম – পৃথিবীর সর্বাধিক দামী পশম

কখনও শুনেছেন একটা সাধারণ কোটের দাম পৌনে দুই কোটি টাকা! কিংবা একটা এক জোড়া মোজা বিক্রি হচ্ছে কুড়ি হাজার টাকায়! চোখ কপালে তুলে ভাবছেন নিশ্চয়ই কি এমন সুতোয় তৈরি এগুলো জার জন্য দাম এরকম অকল্পনীয়? এই যদি আপনার মনের প্রশ্ন হয় আসুন তাহলে আপনাকে পরিচয় করাই বিশ্বের সবথেকে বিরল এবং দামী পশমের সাথে – ভিকুনা পশম (vicuna wool)।

দক্ষিণ আমেরিকার পেরুর একটা অংশ ঘিরে সগর্বে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে পৃথিবী বিখ্যাত আন্দিজ পর্বতমালা। এই আন্দিজ পর্বতমালার আল্পীয় তৃণভূমি জুড়ে বাস উট জাতীয় এক বিরল প্রাণীর – ভিকুনা। এই ভিকুনারা স্বভাবে সাংঘাতিক রকমের স্বাধীনচেতা। নিজেদের জাতভাই আলপাকা কিংবা উটের মত পোষ মানানো একপ্রকার অসম্ভব এদের। এই ভিকুনা পেরুর জাতীয় পশু তথা পেরুর রাষ্ট্রীয় প্রতীকেও স্থান করে নিয়েছে। এই আপাত নিরীহ কিন্তু বন্য প্রাণীটি পৃথিবীজুড়ে বিখ্যাত তথা সমাদৃত মূলত একটি কারণে- তার গায়ের লোম। পৃথিবীর সবথেকে উৎকৃষ্ট মানের পশম বা উল (Wool) পাওয়া যায় ভিকুনাদের গায়ের লোম থেকে যা ফ্যাশন দুনিয়ায় ভিকুনা পশম নামে খ্যাত।  বিখ্যাত ইতালীয় লাক্সারি ফ্যাশন ব্র্যান্ড লোরো পিয়ানা এই ভিকুনা পশমের পোশাক তৈরি করে। ভিকুনা পশম দ্বারা তৈরী সবথেকে সস্তার পোশাকটি এক জোড়া মোজা – দাম ভারতীয় মুদ্রায় নব্বই হাজার টাকা। এই কোম্পানি বিক্রীত ভিকুনা পশমের তৈরি সবথেকে দামী পোশাকটি হল একটি কোট যার দাম প্রায় তিন কোটি টাকা।

এরকম অকল্পনীয় অসম্ভব দামের পেছনে বেশ কিছু কারণ আছে – প্রথমত, এই পশমের অসামান্য কোমলতা। কোমলতা ছাড়াও এই পশম উষ্ণতা ধরে রাখতে পারে। ফলত শীতের পোশাক হিসেবে এই পশমের জুড়ি মেলা ভার।  দ্বিতীয়ত, ভিকুনার দুষ্প্রাপ্যতা। পেরু ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও ভিকুনা দেখতে পাওয়া যায় না। সমুদ্রতল থেকে প্রায় ৩৫০০ – ৪৫০০ মিটার উচ্চতায় আন্দিজ পর্বতমালার কিছু নির্দিষ্ট অংশেই কেবল এদের পাওয়া যায়। তৃতীয়ত, ভিকুনার লোমের স্বল্পতা। একটি ভিকুনা থেকে সর্বোচ্চ দুশো গ্রাম লোম পাওয়া যায় তাও আবার তিন বছরে একবার পাওয়া যায়।  একটি প্রাপ্ত বয়স্ক মাপের ওভারকোট বানাতে প্রায় পয়ঁত্রিশটি ভিকুনার প্রয়োজন হয়। 

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

ইনকা (পেরুর আদিম জনজাতি)দের কাছে ভিকুনার লোম – ‘ঈশ্বরের পশম’ নামে পরিচিত।  পেরুর রাজপরিবার ছাড়া ভিকুনার লোম দ্বারা প্রস্তুত পোশাক কোন সাধারণ মানুষের ব্যবহার করার অধিকার নেই।  বছরে একবার সরকারি সহায়তায় একটি শতাব্দী প্রাচীন প্রথার মাধ্যমে ভিকুনার লোম সংগ্রহ করা হয় যা স্থানীয় কোয়েচুয়া ভাষায়  ‘চাক্কু’ নামে পরিচিত। ভিকুনাদের জন্য সংরক্ষিত অরণ্যটির নাম পম্পাস গেলিরাস যা পেরুর লুকানাস রাজ্যের আয়াকুচো জেলায় অবস্থিত।  ভিকুনাদের প্রথমে অরণ্যের গভীর থেকে তাড়িয়ে এনে পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত উন্মুক্ত প্রান্তরে নিয়ে আসা হয়।  তারপর সেখান থেকেও তাদের তাড়া করে বাধ্য করা হয় ছাউনি দেওয়া পশম সংগ্রহের জন্য নির্দিষ্ট একটি ঘরে ঢোকার জন্য।  সেখানে অপেক্ষমান থাকে  পশম সংগ্রহে দক্ষ ব্যক্তিরা।  পশম সংগ্রহ হয়ে গেলেই তৎক্ষণাৎ জঙ্গলের উদ্দেশ্যে ভিকুনাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।  এই অনুষ্ঠানটি তিনদিন ধরে চলে।  সংগৃহীত পশম ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় আটান্ন হাজার টাকা প্রতি কিলো দরে বিক্রি হয়।  

আপনার মতামত জানান