বিশ্ব অডিও ভিজুয়াল ঐতিহ্য দিবস

২৭ অক্টোবর ।। বিশ্ব অডিও ভিজুয়াল ঐতিহ্য দিবস

প্রতি বছর প্রতি মাসের নির্দিষ্ট কিছু দিনে বিভিন্ন দেশে কিছু দিবস পালিত হয়। ওই নির্দিষ্ট দিনে অতীতের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে স্মরণ করা বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতেই এই সমস্ত দিবস পালিত হয়। পালনীয় সেই সমস্ত দিবস গুলির মধ্যে একটি হল বিশ্ব অডিও ভিজুয়াল ঐতিহ্য দিবস(World Day for Audiovisual Heritage)।

সারাবিশ্বে প্রতি বছর ২৭ অক্টোবর বিশ্ব অডিও ভিজুয়াল ঐতিহ্য দিবস পালন করা হয়ে থাকে। অডিও ভিজুয়াল বা দৃশ্যশ্রাব্য যা কিছু অর্থাৎ সিনেমা, রেডিও বা টেলিভিশনের অনুষ্ঠান, সংগ্রহ করে রাখা শব্দ বা কিছু ভিডিও ইত্যাদি কেবল যে বিনোদনের জন্য তা নয় অতীতকালের গুরুত্বপূর্ণ নথি হিসেবেও এগুলোকে গণ্য করা হয়ে থাকে। সভ্যতার অগ্রগতি এবং ক্রমবিবর্তনের ধারাটি বহুকাল থেকে প্রচলিত এই সমস্ত দৃশ্যশ্রাব্য নথিগুলির সাহায্যে সঠিকভাবে অনুধাবন করা যায়। বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যদি সারা বিশ্বকে আগাগোড়া জানতে চায় তবে সেক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন কালের এইসমস্ত অডিও ভিজুয়াল নথি খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু অত্যাধুনিক প্রযুক্তির বাড়বাড়ন্তের যুগে কেবল অবহেলার কারণেই প্রাচীন এইসব অডিও, ভিডিও, চলচ্চিত্রের সম্ভার অবলুপ্তপ্রায়। বিশ্বজুড়ে ২৭ অক্টোবর এই বিশেষ দিনটি পালনের মাধ্যমে এইসব দৃশ্যশ্রাব্য নথির গুরুত্ব এবং অতীত বিশ্বকে জানতে সেগুলি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা যে কতখানি সে বিষয়ে আপামর জনসাধারণকে সচেতন করবার চেষ্টা করা হয়ে থাকে। এছাড়াও অডিও ভিজুয়াল ঐতিহ্য সম্পর্কিত বিষয়ে গণমাধ্যমের মনোযোগ আকর্ষণ করা, এই ঐতিহ্যের সাংস্কৃতিক মর্যাদা বৃদ্ধি করা, সংরক্ষানাগারগুলি যে জনসাধারণের ব্যবহারের যোগ্য সেকথা ঘোষণা করা এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিতে যে এইসমস্ত ঐতিহ্যশালী দৃশ্যশ্রাব্য নথিগুলি ধ্বংসের পথে সে বিষয়টিকে সকলের সামনে তুলে ধরবার উদ্দেশ্যেও এই দিনটি বিশেষ মর্যাদা সহকারে পালন করা হয়ে থাকে।

১৯৮০ সালে ইউনেস্কোর (United Nations Educational, Scientific and Cultural Organization বা UNESCO) ২১তম সাধারণ সম্মলেনে পুরোনো দিনের ঐতিহ্যময় চলমান চিত্র সম্ভার সংরক্ষণের একটি প্রস্তাব পেশ করা হয়েছিল। মূলত সেই প্রস্তাবের গুরুত্ব বুঝেই ইউনেস্কো ২০০৫ সালে বিশ্ব অডিও ভিজুয়াল ঐতিহ্য দিবস উদযাপনের ঘোষণা করে। এই দিবস উদযাপনের আয়োজন করে থাকে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন শব্দ ও চলচ্চিত্র সংগ্রহশালা ও লাইব্রেরি, বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্প্রচারক সংস্থারা। এইসব সংগ্রহশালাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো, অ্যাসোসিয়েশন অব মুভিং ইমেজ আর্কাইভিস্টস (Association of Moving Image Archivists বা AMIA), ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অন আর্কাইভস (International Council on Archives বা ICA), ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব সাউন্ড অ্যান্ড অডিওভিজুয়াল আর্কাইভস (International Association of Sound and Audiovisual Archives বা IASA) এবং ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফিল্ম আর্কাইভস (International Federation of Film Archives বা FIAF)।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

বিশ্বের নানাপ্রান্তে বিবিধ আয়োজনের মাধ্যমে এই বিশেষ দিবসটি উদযাপনের ব্যবস্থা করা হয়। বিভিন্ন জায়গায় নানা ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। যেমন কোথাও কোথাও লোগো তৈরির প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা হয় এই দিনটির গুরুত্ব মানুষের কাছে তুলে ধরবার জন্য। স্থানে স্থানে বিচিত্র অনুষ্ঠানের আয়োজনে সরকার, জাতীয় চলচ্চিত্র সংগ্রহশালা, বিভিন্ন দৃশ্যশ্রাব্য সোসাইটি এবং টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেলগুলি সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে। এছাড়াও আলোচনা সভা, জনসম্মেললন, সেমিনারের আয়োজন করা হয় গুরুত্বপূর্ণ অডিও ভিজুয়াল নথির সংরক্ষণ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করে তোলবার জন্য। কোথাও বা বিশেষ চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থাও করা হয়ে থাকে।

প্রতি বছর এই বিশেষ দিনটি পালনের জন্য একটি নির্দিষ্ট বিষয় বা থিম নির্ধারণ করা হয়। ২০১৮ সালের বিষয় ছিল ‘আপনার গল্পটি চলমান’ ( Your Story is Moving)। ২০১৯ সালের থিম, ‘শব্দ এবং ছবির মাধ্যমে অতীতকে যুক্ত করুন’। (Engage the Past Through Sound and Images)। বর্তমান বছর অর্থাৎ এই ২০২০ সালের বিষয় হিসেবে ভাবা হয়েছে, ‘বিশ্বমুখী আপনার জানালা’ (Your Window to the World)।

আপনার মতামত জানান