বিশ্ব কিডনি দিবস

বিশ্ব কিডনি দিবস

প্রতিবছর প্রতিমাসের নির্দিষ্ট কিছু দিনে বিভিন্ন দেশে কিছু দিবস পালিত হয়। ওই নির্দিষ্ট দিনে অতীতের  কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে স্মরণ করা বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতেই এই সমস্ত দিবস পালিত হয়। পালনীয় সেই সমস্ত দিবসগুলির মধ্যে একটি হল বিশ্ব কিডনি দিবস (World Kidney Day)।

প্রতি বছর ইংরাজি মার্চ মাসের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার কিডনিজনিত রোগ প্রতিরোধ এবং এর ঝুঁকি বিষয়ক সচেতনতা সম্পর্কে জনগণকে শিক্ষিত এবং অধিক সচেতন করবার জন্যই বিশ্বজুড়ে বিশ্ব কিডনি দিবস পালন করা হয়।

ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অফ্ নেফ্রোলজি (International Society of Nephrology Or ISN) এবং ‘ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ্ কিডনি ফাউণ্ডেশনস্’-এর (International Federation of Kidney Foundationss Or IFKF) যৌথ উদ্যোগে বিশ্ব কিডনি দিবসের সূত্রপাত হয়েছিল ২০০৬ সালের ৯ মার্চ এবং তখন থেকে ক্রমশ এটি বিস্তার লাভ করেছে নানা দেশে। ২০০৬ সালে ৬৬টি দেশ এই দিনটি উদযাপন করেছ। ২০০৮-এ ‘বিশ্ব কিডনি দিবস’ পালন করে ৮৮টি দেশ।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

কিডনি মানবদেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। সমীক্ষায় দেখা গেছে সমগ্র বিশ্বের নিরিখে প্রত্যেক দশ জনের মধ্যে একজন কিডনি সংক্রান্ত রোগে আক্রান্ত হয়। ক্রমশ মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়ার কারণস্বরূপ ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে দুরারোগ্য কিডনিজনিত অসুখ (Chronic Kidney Disease Or CKD)। বিশ্বজুড়ে আনুমানিক ১৭লক্ষ মানুষ প্রতি বছর মারা যান তীব্র কিডনি জনিত সমস্যায় (Acute Kidney Inury Or AKI)। বিশেষত সকলের কিডনির বা বৃক্কের সুস্থতা বজায় রাখবার কথা মাথায় রেখেই ‘বিশ্ব কিডনি দিবস’ পালনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। প্রত্যেক বছর একটি নির্দিষ্ট দিনে জনমানসে কিডনির সুস্থতা সম্পর্কিত নানা জরুরি তথ্য সরবরাহ করে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যেই ‘বিশ্ব কিডনি দিবস’ পালন করা হয়ে থাকে। 

যখন একটি সুস্থ কিডনির কার্যকারিতা নির্দিষ্ট মানদণ্ডের নিচে নামতে থাকে, তখন তাকে বলা হয় কিডনি ক্ষয় (Kidney Failure)। চিকিৎসা না করানোর ফলে এই কিডনি ক্ষয় প্রাণঘাতী হতে পারে। এরকম সমস্যার হাত থেকে বাঁচার জন্য একমাত্র উপায় কিডনি প্রতিস্থাপন (Kidney transplant) অথবা ডায়ালিসিস (Dialysis) করানো। দুরারোগ্য কিডনিজনিত সমস্যা হতে পারে মূলত বহুমূত্ররোগ (Diabetes) উচ্চ রক্তচাপ এবং অন্যান্য অসুস্থতা থেকে। ‘আমেজিং কিডনি’ শীর্ষক একটি সচেতনতা প্রকল্পেও এই বিষয়গুলির ওপরই অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে রোগের সনাক্তকরণ ও তার যথাসম্ভব সুস্থ চিকিৎসাই পারে দীর্ঘস্থায়ী কিডনিজনিত রোগকে খারাপ অবস্থা থেকে রক্ষা করতে। সিকেডি(CKD), একেআই (AKI)-এর মতো রোগগুলি বৃদ্ধি পায় দূষিত সামাজিক পরিস্থিতির পাশাপাশি দারিদ্র্য, লিঙ্গ বৈষম্য, শিক্ষার অভাব এবং পেশাগত বিপত্তি থেকে। ভারত সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের উদ্যোগে প্রতিবছর জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের আওতায় জাতীয় ডায়ালিসিস প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়। এই কর্মসূচিটি ‘প্রধানমন্ত্রী ন্যাশনাল ডায়ালিসিস প্রোগ্রাম’ নামেও পরিচিত।

বিশ্বের নানা প্রান্তে বিবিধ আয়োজনের মাধ্যমে এই দিনটি পালন করা হয়ে থাকে। মূলত বিভিন্ন চিকিৎসা সংস্থা এবং কিডনি অ্যাসোসিয়েশনগুলি বিবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে। হাঁটা, সাইকেল চালানো, জগিং ইত্যাদি বিভিন্নরকম শারীরিক ক্রিয়া সংক্রান্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। নানা স্থানে ক্যাম্প বা সেমিনারের আয়োজন করে মানুষকে কিডনি বিষয়ক নানা তথ্য সরবরাহ করা হয় এবং কীভাবে কিডনিজনিত রোগ প্রতিরোধ করে সুস্থ জীবনযাপন করা সম্ভব, সে বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা হয়ে থাকে। কোথাও আবার বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষাকেন্দ্রে বিশেষত কিডনিপরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়াও কিডনি বিষয়ক নানা লেখা ও ছবির পোস্টার ছড়িয়ে দেওয়া হয় চারদিকে। স্কুল, কলেজ এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে সংশ্লিষ্ট বছরের কিডনি দিবসের থিমসংক্রান্ত জরুরি তথ্য বিতরণ করা হয়। তাছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়ায় কিডনিজনিত রোগ সম্পর্কে ব্লগ লেখার মাধ্যমেও সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা চলে।

প্রতিবছর এই দিনটি উদযাপনের জন্য একটি প্রতিপাদ্য (Theme) নির্ধারণ করা হয়। ২০১৬ সালে এই দিনটির প্রতিপাদ্য ছিল ‘কিডনিজনিত সমস্যা এবং শিশুরা- রোগ প্রতিরোধে  দ্রুত চিকিৎসা’ (‘Kidney Disease & Children  : Act Early to Prevent It’)। ২০১৭ সালের প্রতিপাদ্যটি ছিল ‘কিডনিজনিত অসুখ ও তার স্থূলতা : স্বাস্থ্যকর কিডনির জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনধারা’ (‘Kidney Disease & Obesity. Healthy Lifestyle for Healthy Kidneys’)। ২০১৮-র প্রতিপাদ্য ছিল ‘কিডনি এবং মহিলাদের স্বাস্থ্য: অন্তর্ভুক্তিকরণ, মান নির্ণয় এবং ক্ষমতায়ন’ (‘Kidneys And Women’s Health: Include, Value, Empower’)। ২০১৯ সালের প্রতিপাদ্যটি ছিল ‘সর্বত্রই কিডনির সুস্থতা প্রত্যেকের জন্য জরুরি’ (‘Kidney Health for Everyone Everywhere’)। ২০২০ সালেও পূর্বের প্রতিপাদ্যকেই অব্যাহত রাখা হয়েছিল। ২০২১ সালের প্রতিপাদ্য – কিডনি সংক্রান্ত ব্যাধি সত্ত্বেও ভালভাবে বাঁচা ( Living Well with Kidney Disease)। ২০২২ সালের প্রতিপাদ্য – কিডনির স্বাস্হ্য সবার জন্য (Kidney Health for All)। ২০২৩ সালের প্রতিপাদ্য – কিডনির স্বাস্থ্য সবার জন্য – অপ্রত্যাশিতের জন্য প্রস্তুতি, দুর্বলকে সহায়তা প্রদান (Kidney Health for All – Preparing for the unexpected, supporting the vulnerable)।

One comment

আপনার মতামত জানান