সববাংলায়

ট্যাসিটাস

রোমান সাম্রাজ্যের বিস্তৃত ইতিহাস অনুসন্ধান করতে হলে যেসব ঐতিহাসিকদের শরণাপন্ন হতে হয়, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ট্যাসিটাস (Tacitus)। তিনি কেবলমাত্র একজন ঐতিহাসিকই ছিলেন না, পাশাপাশি একজন প্রতিভাবান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবেও তাঁর পরিচিতি ছিল যথেষ্ট। তিনি রোমের কনসাল এবং এশিয়া প্রদেশের প্রো-কন্সাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তাঁর রচিত রোমান সাম্রাজ্যের ইতিহাস মূলত সম্রাট অগাস্টাসের মৃত্যু থেকে ডোমিশিয়ানের মৃত্যু পর্যন্ত বিস্তৃত। তাঁর লেখায় কালানুক্রমিক বর্ণনার ধারা বজায় রাখতেন তিনি। বড়ো-সড়ো কোনও চিত্রের রূপরেখা তিনি কদাচিৎ তুলে ধরতেন এবং পাঠকের কল্পনাকে ডানা মেলতে সাহায্য করতেন কল্পলোকে সেই চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে। তাঁর ইতিহাসগ্রন্থ ক্ষমতার রাজনীতির মনোবিজ্ঞানকে তুলে ধরে। সরল বর্ণনা এবং নাটকীয় বিবরণের এক মিশ্রণ ট্যাসিটাসের রচনা। রোমের শাসক শ্রেণির ক্রমবর্ধমান দুর্নীতি তিনি প্রকাশ করেছিলেন তাঁর রচনায়। তাঁর ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থান পণ্ডিতমহলে রীতিমত চর্চার বিষয় ছিল। রোমান ঐতিহাসিক হিসেবে পরিচিত হলেও জার্মানি ভ্রমণের পর জার্মান উপজাতিদের নিয়ে রচিত তাঁর একটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল ‘জার্মানিয়া’। অনেকে তাঁকে লাতিন ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ ইতিহাসবিদ বলেও মনে করে থাকেন।

আনুমানিক খ্রিস্টীয় ৫৬ অথবা ৫৭ সালে সম্ভবত উত্তর ইতালিতে, অথবা গ্যালিয়া বেলজিকাতে কিংবা হয়তো গালিয়া নারবোনেনসিসে (বর্তমান দক্ষিণ-পূর্ব ফ্রান্স) এক অ-কুলীন বংশে ট্যাসিটাসের জন্ম হয়। তাঁর প্রাথমিক জীবন সম্পর্কে তথ্য ভীষণ কম পাওয়া যায়। উল্লিখিত জন্মস্থান গবেষকদের অনুমান থেকে প্রাপ্ত। কেউ কেউ ট্যাসিটাসের নামের মধ্যেকার কর্নেলিয়াস অংশটুকুর জন্য মনে করেন কোনও অভিজাত রোমান বংশের সন্তান তিনি। যদিও তেমন কোনও প্রমাণিত তথ্য পাওয়া যায়নি এ বিষয়ে। অনেকসময় প্রাদেশিক পরিবারগুলি গভর্নরের নাম নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করে নিতেন, যে গভর্নর তাঁদের রোমান নাগরিকত্ব প্রদান করত। অনেকে মনে করেন ট্যাসিটাসের জন্ম এক অশ্বারোহী পরিবারে হয়েছিল। তবে যাই হোক না কেন, ট্যাসিটাসের পরিবার যে যথেষ্ট মুক্তমনা প্রকৃতির ছিল তাঁর লেখা থেকেই সেই প্রমাণ পাওয়া যায়। তাছাড়াও তাঁর পরিবারে অনেক সিনেটর এবং নাইটেরও অস্তিত্ব ছিল বলে অনুমান করা হয়। মনে করা হয় তাঁর বাবার নাম কর্নেলিয়াস ট্যাসিটাস (Cornelius Tacitus) যিনি বেলজিকা এবং জার্মানিয়ার প্রকিউরেটর হিসেবে কাজ করতেন। প্লিনি দ্য এল্ডার উল্লেখ করেছেন যে কর্নেলিয়াসের একটি সন্তান ছিল অকালেই যার মৃত্যু ঘটে। যদি বাস্তবিকই ট্যাসিটাস কর্নেলিয়াসের পুত্র হন, তবে খুব সম্ভব মৃত সন্তানটি তাঁর অনুজ ছিল, কারণ কোনও রোগভোগের অবস্থার উল্লেখ ট্যাসিটাসের প্রাথমিক জীবনে ছিল বলে মনে করেন না গবেষকরা। ৭৭ সালে ট্যাসিটাস জিনিয়াস জুলিয়াস এগ্রিকোলার কন্যাকে বিবাহ করেন। ৭৭ বা ৭৮ সালে এগ্রিকোলা সাম্রাজ্যের রাষ্টদূতের পদে উন্নীত হয়েছিলেন এবং পরবর্তীকালে ব্রিটেনের গভর্নর হিসেবেও প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেছিলেন তিনি। এগ্রিকোলার রাজনৈতিক সংযোগ থেকে অবশ্যই উপকৃত হয়েছিলেন ট্যাসিটাস।

আরও পড়ুন:  মার্ক জুকারবার্গ

ট্যাসিটাস অলঙ্কারশাস্ত্র অধ্যয়ন করেছিলেন এবং সেই সূত্রে সাহিত্যের সঙ্গেও তাঁর পরিচয় ঘটে ও গদ্য রচনারও এক প্রকার অনুশীলনের সুযোগ হয় তাঁর। এই প্রশিক্ষণ ছিল মূলত প্রশাসনিক অফিসে কাজ করবার জন্য একটি পদ্ধতিগত প্রস্তুতি। এরপর ট্যসিটাস দুই নেতৃস্থানীয় বক্তা মার্কাস অ্যাপার এবং জুলিয়াস সেকেন্ডাসের অধীনে আইন অধ্যয়ন করেন আইনজীবী হওয়ার জন্য। এরপর তিনি একটি ভিজিনটিভাইরেট এবং একটি সামরিক ট্রাইবুনেট থেকে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। অলঙ্কার শিক্ষার পাশাপাশি ট্যাসিটাস ছিলেন একজন বাগ্মী যুবক। ফলে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূত্রপাতও সেসময় থেকে হয়েছিল বলা চলে।

৭৮ বা ৭৯ সালে রোমান সম্রাট ভেসপাসিয়ানের সময় তিনি রাজকোষের কোয়েস্টরের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। আবার ৮০ কিংবা ৮১ সালে টাইটাসের শাসনকালে শহরের উৎসব এবং সরকারি ভবনগুলির রক্ষণাবেক্ষণের সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। ৮৮ সালে ডোমিশিয়ানের রাজত্বকালে আদালতের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব সামলেছিলেন ট্যাসিটাস। সেবছরই তিনি একটি যাজক কলেজের সদস্য হন। এরপর অনুমান করা হয় তিনি চার বছর একটি সাধারণ সৈন্যদলের কমান্ডে সিনিয়র প্রাদেশিক পদে বহাল ছিলেন। যখন ট্যাসিটাস রোমে ফিরে আসেন, তখন তিনি রোমান অভিজাতদের উপরে সম্রাট ডোমিশিয়ানের অত্যাচারের দিনগুলি প্রত্যক্ষ করেছিলেন। ৯৩ সালে এগ্রিকোলার মৃত্যু হয়, কিন্তু ততদিনে ট্যাসিটাস নিজের একটি পাকাপোক্ত স্থান তৈরি করে ফেলেছিলেন রাজনীতিতে। ৯৭ সালে সম্রাট নেরভার অধীনে তিনি রাষ্ট্রদূতের পদে উন্নীত হন এবং ভার্জিনিয়াস রুফাসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় একটি বক্তৃতা রাখেন। এই বক্তৃতাই বক্তা হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে দিয়েছিল এবং তাঁর সরকারি মর্যাদাও প্রতিফলিত হয়েছিল তার মাধ্যমে।

৯৮ সালে যে দুটি উল্লেখযোগ্য কাজ করেছিলেন ট্যাসিটাস সেগুলি হল ‘দে ভিটা জুলি এগ্রিকোলে’ (লাইফ অফ জুলিয়াস এগ্রিকোলা) এবং ‘দে অরিজিন এট সিটু জার্মানোরাম’ (অন দ্য অরিজিন অ্যান্ড অ্যারেঞ্জমেন্ট অফ দ্য জার্মান)। প্রথম গ্রন্থটি জুলিয়াস এগ্রিকোলার জীবন অবলম্বনে রচিত। তবে এই গ্রন্থটিতে ব্রিটেনের ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক ও নৃতাত্ত্বিক বর্ণনাও পাওয়া যায়। ব্রিটেনের আবহ ভীষণভাবে জীবন্তরূপ পেয়েছে এই গ্রন্থে কারণ এগ্রিকোলার মৃত্যুর পর ট্যাসিটাস নিজে ব্রিটেনে গিয়েছিলেন। ব্রিটেনের যুদ্ধ, সেদেশের জনসংখ্যা, রীতিনীতি, এমনকি দেশের অবস্থান পর্যন্ত ট্যাসিটাসের এই গ্রন্থটি থেকে জানা যায়। একই সময়ে তিনি রচনা করেছিলেন একটি নৃতাত্ত্বিক গ্রন্থ ‘অন দ্য অরিজিন অ্যান্ড অ্যারেঞ্জমেন্ট অফ দ্য জার্মান’। এই গ্রন্থে বিখ্যাত রোমান নাট্যকার সেনেকার ভাষার শৈলী অনুকরণ করেছিলেন তিনি। ৯৭ সালে সম্ভবত জার্মানি গিয়েছিলেন ট্যাসিটাস। জার্মান উপজাতিদের সম্পর্কে, তাঁদের উপাসনা, দেব-দেবী, আচার অনুষ্ঠান ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিতভাবে এই গ্রন্থটিতে লিখেছিলেন তিনি৷ এই বইটিই ‘জার্মানিয়া’ নামে পরিচিত। রোম বহির্ভূত উত্তরের জার্মান উপজাতিদের নিয়ে রচিত এই গবেষণামূলক গ্রন্থটি মূল্যবান নৃতাত্ত্বিক জরিপে ভরপুর। তাছাড়াও রোমের নৈতিক শিথিলতার বিপরীতে জার্মান উপজাতিদের আদিম দুষ্টতার উপর জোর দিয়েছিলেন তিনি। এই লেখা ভূগোল ছাড়িয়ে রাজনৈতিক নৃতাত্ত্বিকতায় পৌঁছে গিয়েছিল। সম্ভবত ৯৮ সালেই এই গ্রন্থ রচনা করেছিলেন তিনি। অনেক গবেষক বলেন তিনি কখনও জার্মানিতে যাননি। এই গ্রন্থটি রচনার সময় ৯৭ সাল নাগাদ উচ্চ জার্মানির একজন ডেপুটি উলপিয়াস ট্রাজান সম্রাট নেরভার সহ-শাসক হিসেবে নির্বাচিত হন এবং নেরভার মৃত্যুর পর ট্রাজান রোমান সাম্রাজ্যের একমাত্র সম্রাট হন। নেরভার অধীনে তিনি উদারনীতির প্রভাব উপভোগ করেছিলেন এবং কিছু বিশিষ্টতাও অর্জন করেন। এখানে উল্লেখ্য যে, ট্রাজানের সময়কালে পাবলিক অ্যাফেয়ার্সে ট্যাসিটাস নিজের অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হন এবং ১১২-১১৩ সাল নাগাদ শীর্ষস্থানীয় প্রাদেশিক গভর্নরশিপ এশিয়ার প্রো-কনস্যুলেটরের দায়িত্ব লাভ করেন।

আরও পড়ুন:  ভূপেন হাজারিকা

ট্যাসিটাস তখনও আইনের অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ১০০ সালে তিনি প্লিনি দ্য ইয়ংগারের সঙ্গে জোরপূর্বক অর্থ আদায়ের অপরাধে মারিয়াস প্রিসকাস নামক একজন আফ্রিকানের বিচার করেছিলেন। এসময় তিনি অনুভব করেছিলেন যে জনসমক্ষে বক্তৃতা (Oratory) তার রাজনৈতিক চেতনা হারাচ্ছিল, যার অন্যতম কারণ অনুশীলনকারীদের দক্ষতার ঘাটতি। এসময় তিনি একটি উল্লেখযোগ্য, আকারে তুলনামূলক ছোট একটি কাজ করেন, যার নাম ‘ডায়ালগস ডে অরেটরিবাস’। এই গ্রন্থটি সংলাপের ধরণে লিখিত হয়েছিল। এই বইতে তিনি তাঁর যৌবনকে স্মরণ করেছেন, তাঁর দুই শিক্ষক এপার এবং সেকেন্ডাসকে স্মরণ করেছেন। সাহিত্যিক জীবনের একটি উপায় হিসেবে ‘বক্তৃতা’কে ট্যাসিটাস কবিতার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। এও দেখিয়েছিলেন জনসাধারণের বিষয়গুলিতে বাগ্মীতা কীভাবে ক্রমপতনের দিকে চলেছিল। তিনি দেখিয়েছেন যে পূর্বের রোমান প্রজাতন্ত্র বাগ্মীতার অনেক সুযোগ তৈরি করেছিল, কিন্তু বর্তমান সাম্রাজ্য তাকে সংকীর্ণ করে ফেলেছে। বাগ্মীতার এই অবক্ষয়ের জন্য ট্যাসিটাস দায়ী করেছেন মূলত শিক্ষার পতন, পরিবার এবং স্কুলকেও। তাঁর বক্তব্য ছিল, শিক্ষা আগের মতো সঠিক পথে নেই, এবং কিছু অকেজো বক্তৃতাই সাধারণ সংস্কৃতির জায়গা দখল করে বসেছে। এই মনোভাব থেকেই বক্তৃতা বা বাগ্মীতা থেকে তাঁর ইতিহাসের দিকে ঝুঁকে পড়া।

ট্যাসিটাসের লেখা অন্যতম ইতিহাসগ্রন্থটি হল ‘হিস্টোরিয়া’। এই গ্রন্থের ঘটনার শুরু ৬৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে যখন গালবা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত এবং এটি ৯৬ সালে ডোমিশিয়ানের মৃত্যু পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রাথমিকভাবে জানা যায় এই গ্রন্থটি মূলত ১২ বা ১৪টি খন্ডের সমন্বয়, যদিও গবেষকরা পরবর্তীকালে মন্তব্য করেছেন যে, ট্যাসিটাসের ‘হিস্টোরিয়া’ এবং ‘অ্যানালস’ গ্রন্থ দুটিই অসম্পূর্ণ এবং সর্বমোট তিরিশটি গ্রন্থের সমাহার। প্লিনির রেফারেন্স অনুযায়ী ১০৫ সালের মধ্যে এর বেশ কয়েকটি গ্রন্থ প্রস্তুত ছিল, ১০৭ সালের মধ্যে লেখা আরও অনেকখানি অগ্রসর হয়, এবং অবশেষে ১০৯ সালের মধ্যে কাজটি শেষ হয়েছিল। ‘হিস্টোরিয়া গ্রন্থের প্রথম থেকে চতুর্থ খন্ড এবং পঞ্চম খন্ডের কিছু অংশ জুড়ে কেবল ৬৯-৭০ সালের ঘটনারই বর্ণনা রয়েছে। এই খন্ডগুলিতে গালবা এবং পিসোর পতন, প্রাচ্যে ভেসপাসিয়ানের অবস্থান, ওথোর আত্মহত্যা, ভেসপাসিয়ানের পক্ষে দানুবিয়ান সৈন্যদের দ্বারা ভিটেলিয়াসের পরাজয় এবং ভেসপাসিয়ানের রাজত্বের সূচনা ইত্যাদি বিচিত্র ঘটনা সম্পর্কে বিশদে লেখা রয়েছে। তাছাড়াও রোমান ইতিহাসের ফ্ল্যাভিয়ান সময়কালকেও দারুণভাবে বর্ণনা করা হয়েছে এই গ্রন্থে। ৬৯ সালের গৃহযুদ্ধের আঁচও পাওয়া যাবে এই গ্রন্থটি থেকে। ডোমিশিয়ানের খ্যাতি এবং পতনের বিস্তারিত বিবরণ এই গ্রন্থের মূল্যবান অংশ।

আরও পড়ুন:  মার্কো পোলো

ট্যাসিটাসের আরেকটি উল্লেখযোগ্য এবং পরিণত গ্রন্থ হল ‘অ্যানালস’। এটি লাতিন শব্দ ‘অ্যানাস’ থেকে আগত। এই গ্রন্থে সম্রাট টাইবেরিয়াস, ক্যালিগুলা, ক্লডিয়াস, এবং নিরোর রাজত্বের সময়কে ধরেছেন ট্যাসিটাস। অলঙ্কারশাস্ত্রের জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে রচিত এই গ্রন্থে প্রভূত সাহিত্যিক গুণ দৃশ্যমান। জুলিও-ক্লডিয়ান রাজবংশ, অগাস্টাসের মৃত্যু এবং ১৪ সালে টাইবেরিয়াসের সিংহাসনে আরোহণ থেকে ৬৮ সালে নিরোর রাজত্বের শেষ পর্যন্ত এই গ্রন্থের প্রধান উপজীব্য। এটি মূলত ১৬ বা ১৮টি খণ্ডে সম্পূর্ণ। সম্ভবত ট্রাজানের রাজত্বকালে এই বইটি রচনা শুরু হয়েছিল এবং সমাপ্ত হয়েছিল হ্যাড্রিয়ানের রাজত্বের প্রথম দিকে। এই বইতে জুলিও-ক্লডিয়ান রাজবংশের সমালোচনামূলকভাবে পুনর্ব্যাখা করেছিলেন ট্যাসিটাস। এই গ্রন্থের শুরুতে রোমান সরকারের শক্তিশালী, পর্যায়ক্রমিক ক্ষমতার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছিলেন তিনি। এই বইতে ট্যাসিটাস বর্ণনামূলকভাবে রোমান রাজনৈতিক স্বাধীনতার পতনকে ব্যাখা করেছিলেন।

ট্যাসিটাস তাঁর লেখার সর্বত্র সেনেট এবং সম্রাটদের মধ্যেকার ক্ষমতার ভারসাম্য এবং রোমান শাসক শ্রেণির ক্রমবর্ধমান দুর্নীতি বিষয়ে কথা বলেছেন। তিনি মনে করতেন সেনেটরা তাঁদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নষ্ট করেছেন। সেনাবাহিনীর উপর সম্রাটের নির্ভরশীলতার কথাও তুলে ধরেছিলেন তিনি তাঁর লেখায়। ডোমিশিয়ানের আমল ট্যাসিটাসের রাজনৈতিক জীবনেরও সময়কাল। সেই সময়ের অত্যাচার, দুর্নীতি, অবক্ষয় নিয়েও তিনি সরব হয়েছিলেন। ১৪৭০ সালে ট্যাসিটাসের কাজের প্রথম মুদ্রিত সংস্করণ ১৫৭৪ সালে ভেনিসে প্রকাশিত হয়েছিল।
ট্যাসিটাসের কোনও সন্তান ছিল কিনা তা জানা যায়নি। তবে সম্রাট মার্কাস ক্লডিয়াস ট্যসিটাস তাঁকে নিজের পূর্বপুরুষ বলে দাবি করেছিলেন। ট্যাসিটাসকে সর্বশ্রেষ্ঠ রোমান ইতিহাসবিদ বলে বিবেচনা করে থাকেন পণ্ডিতমহল।

আনুমানিক ১২০ সালে ট্যাসিটাসের মৃত্যু হয়।

error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন।

Discover more from সববাংলায়

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

বাদল সরকারের জীবনী দেখুন

ভিডিওটি দেখতে ছবিতে ক্লিক করুন