বর্তমান দুনিয়ায় উন্নত বিজ্ঞান-প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে জনপ্রিয় কিছু সমাজ মাধ্যমের নির্মাণ পৃথিবীকে আমূল বদলে দিয়েছে। প্রযুক্তির সেই অবদানের নেপথ্যে যেসব মানুষের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন মার্ক জুকারবার্গ (Mark Zuckerberg)। তিনি মূলত একজন ইন্টারনেট উদ্যোক্তা ও সমাজসেবী। বর্তমানে সারা বিশ্বে সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম বা স্যোশাল মিডিয়া ফেসবুক এবং তারই মূল কোম্পানি ‘মেটা প্ল্যাটফর্মস’-এর (Meta Platforms) সহ-প্রতিষ্ঠাতা, চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হলেন মার্ক জুকারবার্গ। প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য তৈরি করলেও ফেসবুক ধীরে ধীরে বিস্তর প্রসার লাভ করে। আরও দুই জনপ্রিয় ও বহু ব্যবহৃত স্যোশাল মিডিয়া ইনস্টাগ্রাম (Instagram) এবং হোয়াটস-অ্যাপকেও (Whatsapp) অধিগ্রহণ করে নেয় ফেসবুক। অনুন্নত দেশগুলিতে ইন্টারনেট পরিষেবা উন্নত করতে এবং তা সহজলভ্য ও তার খরচ হ্রাস করতে ভারত, রাশিয়ার মতো দেশগুলির সঙ্গে আলোচনাও করেছেন তিনি। অন্যের ধারণা অবৈধভাবে ব্যবহার করার মতো অভিযোগেরও সম্মুখীন হতে হয়েছিল জুকারবার্গ এবং ফেসবুককে। মাত্র তেইশ বছর বয়সে নিজের দক্ষতায় তিনি বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ কোটিপতি হন। তাঁকে বিশ্বের ১০০ জন প্রভাবশালী ও ক্ষমতাশালী ব্যক্তির তালিকাতেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
১৯৮৪ সালের ১৪ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের হোয়াইট প্লেইনসে মার্ক জুকারবার্গের জন্ম হয়। তাঁর পুরো নাম মার্ক এলিয়ট জুকারবার্গ। তাঁর বাবা এডওয়ার্ড জুকারবার্গ একজন দাঁতের চিকিৎসক এবং মা কারেন কেম্পনার একজন সুপরিচিত মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। তাঁদের মোট চার সন্তানের মধ্যে জুকারবার্গ ছিলেন দ্বিতীয় সন্তান। তাঁর তিন বোনের নাম র্যান্ডি, ডোনা এবং এরিয়েল। মূলত জার্মানি, পোল্যান্ড এবং অস্ট্রিয়া থেকে আসা অভিবাসীদের বংশধর তিনি। তাঁরা নিউইয়র্কে হাডসন নদীর পূর্ব-তীরে একটি শান্ত শহর ডবস ফেরিতে বেড়ে উঠেছিলেন একসঙ্গে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষে একটি পার্টিতে জুকারবার্গের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল প্রিসিলা চ্যানের (Priscilla Chan)। সেখান থেকেই তাঁর প্রতি জুকারবার্গের অনুরাগের জন্ম হয়। ২০১২ সালে মার্ক জুকারবার্গ এবং প্রিসিলা চ্যান জুকারবার্গের বাড়ির উঠোনে বিবাহ সম্পন্ন করেন। তাঁদের দুই কন্যার নাম ম্যাক্সিমা চ্যান এবং অগাস্ট চ্যান।
বাবার সক্রিয় সহযোগিতায় জুকারবার্গ মিডল স্কুলে কম্পিউটার ব্যবহার ও প্রোগ্রামিং শেখা শুরু করেন এবং খুবই অল্প সময়ের মধ্যেই বেশ পারদর্শী হয়ে ওঠেন তিনি। তাঁর বাবা তাঁকে ১৯৯০-এর দশকে আটারি বেসিক প্রোগ্রাম শেখানোর মাধ্যমে প্রোগ্রামিংয়ের প্রাথমিক কিছু পাঠ দেন। তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে পাঠ দেওয়ার জন্য তাঁর বাবা এডওয়ার্ড একজন সফটওয়্যার ডেভেলপার ডেভিড নিউম্যানকে নিয়োগ করেছিলেন। ১৯৯৭ সালে যখন জুকারবার্গের মাত্র ১৩ বছর বয়স, তখন তিনি একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তৈরি করেন যার নাম দেন ‘জুকনেট’। এর সাহায্যে তাঁর বাড়ির কম্পিউটারগুলি এবং বাবার ডেন্টাল অফিসের কম্পিউটারগুলির মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়েছিল। এটি ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত এওএল-এর ইনস্ট্যান্ট মেসেঞ্জারের একটি আদিম সংস্করণ। এছাড়াও জুকারবার্গ কিছু কম্পিউটার গেমও নির্মাণ করেছিলেন পরবর্তীকালে। দুই বছর ধরে তিনি আর্ডসলে পাবলিক হাই স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন। সেখানকার অধ্যয়ন সমাপ্ত করে ২০০০ সালে তিনি নিউ হ্যাম্পশায়ারের ফিলিপস এক্সেটার অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হন। সেখানে ফেন্সিং দলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। তাছাড়াও সেখানে পড়াকালীন জুকারবার্গ গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, পদার্থবিদ্যা এবং ধ্রুপদী বিষয়ে বেশ পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন এবং বেশ কিছু পুরস্কারও অর্জন করেছিলেন। তিনি জনস হপকিন্স সেন্টার ফর ট্যালেন্টেড ইয়ুথ সামার ক্যাম্পেও গিয়েছিলেন। ফরাসি, হিব্রু, লাতিন ও প্রাচীন গ্রিক ভাষায় সাবলীল মার্ক জুকারবার্গ। ফিলিপস এক্সেটার অ্যাকাডেমিতেই কম্পিউটারের প্রতি তাঁর ভালবাসা ও আবেগ বৃদ্ধি পায়। উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময়ে তিনি ‘সিনাপস মিডিয়া প্লেয়ার’ নামে একটি মিউজিক সফটওয়্যার তৈরি করেছিলেন তিনি। তাঁর বন্ধু অ্যাডাম ডি’অ্যাঞ্জেলোর সঙ্গে এই প্রকল্পে কাজ করেন তিনি। এই সফটওয়্যারটির সাফল্যের কারণে প্রযুক্তি বিনিয়োগকারীর দল তা কিনতে চেয়েছিল। তবে তাঁরা দুজন সমস্ত প্রস্তাব প্রত্যাখান করে সফটওয়্যারটি বিনামূল্যে অনলাইনে পোস্ট করেছিলেন এবং উচ্চশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।
সেকারণেই ২০০২ সালের সেপ্টেম্বরে জুকারবার্গ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন উচ্চ স্তরের শিক্ষালাভের জন্য। হার্ভার্ডে ক্লাস শুরু করার সময় তিনি ইতিমধ্যেই একজন ‘প্রোগ্রাম প্রোডিজি’ (program podigy) হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান ও কম্পিউটার বিজ্ঞান অধ্যয়ন করতে থাকেন জুকারবার্গ। দ্বিতীয় বছরে জুকারবার্গ ‘কোর্সম্যাচ’ (Coursematch) নামক একটি প্রোগ্রাম তৈরি করেন। এটি অন্যান্য শিক্ষার্থীদের পছন্দের ওপর ভিত্তি করে ক্লাস নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিতে এবং অধ্যয়ন গোষ্ঠী তৈরিতে সহায়তা করেছিল এর ব্যবহারকারীদের। অল্প কিছুকাল পরে জুকারবার্গ ‘ফেসমাস’ (Facemash) নামে আরেকটি নতুন প্রোগ্রাম নির্মাণ করেছিলেন। এটির প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল, ক্যাম্পাসের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যক্তিকে খুঁজে বের করা। ব্যবহারকারীরা সমলিঙ্গের দুজনকে দেখে তার মধ্যে থেকে বেছে নেবেন কে বেশি আকর্ষণীয় ও সুন্দর। এক সপ্তাহের মধ্যে ‘ফেসমাস’-এর জনপ্রিয়তা চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। শেষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় এটি বন্ধ করে দেয় কারণ হার্ভার্ডের একটি নেটওয়ার্ক সুইচের উপরে তার বিস্তর প্রভাব পড়েছিল এবং শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি করছিল। তাছাড়া অনেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছিল যে, অনুমতি ছাড়াই তাদের ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষত মহিলাদের এই ব্যাপারে বেশ অসুবিধাই হচ্ছিল। ফলত মার্ক জুকারবার্গ এর জন্য জনসমক্ষে ক্ষমা চেয়েছিলেন।
পরবর্তী সেমেস্টারে ২০০৪ সালের জানুয়ারিতে জুকারবার্গ নতুন একটি ওয়েবসাইটের জন্য কোড তৈরি করতে শুরু করেন। অবশেষে ২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি জুকারবার্গ তাঁর রুমমেট এডুয়ার্ডো সাভারিন, অ্যান্ড্রু ম্যাককালাম, ডাস্টিন মস্কোভিটজ এবং ক্রিস হিউজের সঙ্গে অংশীদারিত্বে ‘দ্য ফেসবুক’ (The Facebook) চালু করেন যা মূলত ‘দ্য ফেসবুক.কম’ নামক ওয়েবসাইটের অন্তর্গত। এই ফেসবুক তৈরির অনুপ্রেরণা জুকারবার্গ সম্ভবত পেয়েছিলেন ফিলিপস এক্সেটার অ্যাকাডেমি থেকে যেখান থেকে ২০০২ সালে স্নাতক হন তিনি। সেই অ্যাকাডেমির নিজস্ব স্টুডেন্ট ডাইরেক্টরি ছিল, তাতে ছবিসহ ছাত্রদের নাম এবং সেইসঙ্গে তাদের অভিজ্ঞতা, বন্ধু-বান্ধব, এমনকি কখনও কখনও টেলিফোন নম্বরের মতো বিষয়গুলিও তালিকাভুক্ত থাকত। ছাত্রছাত্রীরা একে ‘দ্য ফেসবুক’ বলত। সেখান থেকেই জুকারবার্গের নতুন অত্যাশ্চর্য উদ্ভাবন এই ‘দ্য ফেসবুক’। সাইটটি চালু হওয়ার ছয় দিন পরে হার্ভার্ডের তিনজন অগ্রজ ক্যামেরন উইঙ্কলেভস, টাইলার উইঙ্কলেভস এবং দিব্যা নরেন্দ্র মার্ক জুকারবার্গের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন যে তিনি হার্ভার্ড কানেকশন.কম নামক একটি সামাজিক নেটওয়ার্ক তৈরি করতে সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছিলেন, কিন্তু সেই নেটওয়ার্কটির ধারণা চুরি করে তারই প্রতিস্পর্ধী এক মাধ্যম তৈরি করেছেন। উক্ত তিনজনের অভিযোগে ‘দ্য হার্ভার্ড ক্রিমসন’ নামক সংবাদপত্রটি অনুসন্ধান শুরু করে। ফেসবুক সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরে উক্ত তিনজন জুকারবার্গের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। অবশেষে ১২ লক্ষ ফেসবুক শেয়ার ও ২ কোটি নগদ টাকায় এর মীমাংসা হয়েছিল।
২০০৫ সালে ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এডুয়ার্ডো সেভেরিন অভিযোগ আনেন, তাঁর অর্থ অবৈধভাবে ব্যয় করেছেন জুকারবার্গ ব্যক্তিগত খরচের মাধ্যমে। ২০১০ সালে ফেসবুকে ‘ড্র মুহম্মদ’ প্রতিযোগিতার আয়োজন হলে, পাকিস্তানের অ্যাটর্নি জেনারেল জুকারবার্গসহ আরও দুজনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি তদন্ত শুরু করে৷ গ্রেফতারের তোড়জোড়ও করা হয়। ফেসবুক সাময়িকভাবে পাকিস্তানে ব্লক করা হয়েছিল। ২০১০ সালে পল সেগলিয়া আর্থিক ক্ষতির দাবি করে মামলা করে জুকারবার্গের বিরুদ্ধে। মার্ক জুকারবার্গ তাদের মালিকানাধীন ছোট ছোট জমি দাবি করার জন্য শত শত স্থানীয় হাওয়াইয়ানদের বিরুদ্ধে আটটি ‘কোয়াইট টাইটেল অ্যান্ড পার্টিশন’ মামলা দায়ের করেন। এই জমিটি হাওয়াই দ্বীপের ৭০০ একর জমির মধ্যে রয়েছে যা জুকারবার্গ ২০১৪ সালে কিনেছিলেন। ২০১৮-এর ১০ এবং ১১ এপ্রিল জুকারবার্গ ‘ফেসবুক-কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা ডেটা’ লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে ফেসবুক-এর ব্যক্তিগত ডেটা ব্যবহারের বিষয়ে বাণিজ্য, বিজ্ঞান এবং পরিবহন সংক্রান্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট কমিটির সামনে সাক্ষ্য দিতে শুরু করেন।
কেবলমাত্র হার্ভার্ডের মধ্যেই ফেসবুক সীমিত ছিল প্রথমে, কিন্তু রুমমেট ডাস্টিন মস্কোভিটজের সাহায্যে এটিকে অন্যান্য স্কুলে, কলেজে ছড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন জুকারবার্গ। তারা কলম্বিয়া, নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়, স্ট্যানফোর্ড, ডার্টমাউথ , কর্নেল, পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় , ব্রাউন এবং ইয়েল দিয়ে শুরু করেছিলেন। এই প্রকল্পটি সম্পূর্ণ করবার জন্য জুকারবার্গ দ্বিতীয় বছরেই হার্ভার্ড ছেড়ে দেন। জুকারবার্গ, মস্কোভিটজ এবং অন্যান্য সহ-প্রতিষ্ঠাতারা ক্যালিফোর্নিয়ার পালো অল্টোতে চলে যান। সেখানে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে অফিস হিসেবে ব্যবহার করতে থাকেন। ২০০৪ সালে প্রথম অফিস পান তাঁরা। গ্রীষ্মকালে পিটার থিয়েলের সঙ্গে দেখা করেন মার্ক জুকারবার্গ। পিটার কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছিলেন। বড় বড় কর্পোরেশন তাঁদের কোম্পানি কিনে নিতে চাইলেও তাঁরা প্রত্যাখান করেন সেই সমস্ত অফার৷ জুকারবার্গের কথায়, ফেসবুকের লক্ষ্য হল বিশ্বকে উন্মুক্ত করা, টাকার পরিমাণ এখানে গুরুত্বপূর্ণ নয়। ২০০৯ সালে মার্ক জুকারবার্গ নেটস্কেপের প্রাক্তন সিএফও পিটার কুরির কাছ থেকে অর্থায়নের কৌশল সম্পর্কে পরামর্শ চেয়েছিলেন। ২০১০ সালের জুলাই মাসে জুকারবার্গ ঘোষণা করেন ফেসবুক অ্যাপটির সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫০ কোটিতে পৌঁছেছে। তিনি ভ্যানিটি ফেয়ারের শীর্ষ ১০০ জন তথ্যযুগের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। ২০১২ সালের অক্টোবরে ফেসবুক একশো কোটি ব্যবহারকারীর মাইলফলক ছুঁয়েছে। ২০১৭ সালের জুন মাসে মার্ক জুকারবার্গ রিপোর্ট করেন যে ফেসবুক ২০০ কোটি ব্যবহারকারী অর্জন করেছে। ২০০৭ সালে জুকারবার্গকে এমআইটি প্রযুক্তি পর্যালোচনার ‘টিআর৩৫’ তালিকায় ৩৫ বছরের কম বয়সী বিশ্বের শীর্ষ ৩৫ জন উদ্ভাবকের একজন হিসেবে যুক্ত করা হয়। ২০১৭ সালে হার্ভার্ড থেকে সম্মানসূচক ডিগ্রি পান মার্ক জুকারবার্গ।
২০১২ সালের ১ অক্টোবর জুকারবার্গ রাশিয়ায় সোশ্যাল মিডিয়া উদ্ভাবনকে উদ্দীপিত করতে এবং রাশিয়ার বাজারে ফেসবুক-এর অবস্থান বাড়াতে মস্কোতে রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভের সাথে দেখা করেন। চিনে ফেসবুক নিষিদ্ধ হলেও সেই দেশের মানুষ মার্ক জুকারবার্গকে খুবই সম্মান করে। ২০১২ সালে ফেসবুক ছবি এবং ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইন্সটাগ্রামকে অধিগ্রহণ করে নেয়। আরও দু’বছর পর মোবাইল মেসেজিং অ্যাপ হোয়াটস-অ্যাপকেও অধিগ্রহণ করে ফেসবুক। ২০০৪ সালের আগস্ট মাসে জুকারবার্গ, অ্যান্ড্রু ম্যাককালাম, অ্যাডাম ডি’অ্যাঞ্জেলো এবং শন পার্কার মিলে একটি পিয়ার-টু-পিয়ার ফাইল শেয়ারিং পরিষেবা ‘ওয়্যারহগ’ তৈরি করেন যা ২০০৭-এ আত্মপ্রকাশ করে। এর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল ‘আইটুহাব’ (i2hub)। অনুন্নত দেশগুলিতে ইন্টারনেট পরিষেবার উন্নতি এবং প্রায় ৫০০ কোটি মানুষের কাছে ইন্টারনেটকে পোঁছে দেওয়ার জন্য ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে ইন্টারনেট.ওআরজি (internet.org) প্রকল্প চালু করেন তিনি। প্রযুক্তিগত অবকাঠামো নিয়ে আলোচনার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের মতো মানুষদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত সোলার সেইল মহাকাশযান উন্নয়ন প্রকল্প ব্রেকথ্রু স্টারশটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং একজন বোর্ড সদস্য ছিলেন তিনি। এছাড়াও জুকারবার্গ ‘স্টার্ট আপ : এডুকেশন ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা করেছেন। ২০১০ সালে জুকারবার্গ বিল গেটস এবং ওয়ারেন বাফেটের সঙ্গে ‘দ্য গিভিং প্লেজ’-এ স্বাক্ষর করেন এবং বলেন তাঁদের সম্পত্তির অর্ধেক তাঁরা দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করবেন। ২০১২ সালে মার্ক জুকারবার্গ এবং তাঁর স্ত্রী প্রিসিলা চ্যান তাঁদের জীবনের সিংহভাগ সম্পদ মানুষের অগ্রগতি এবং সমতার প্রচারে প্রদান করেন। ২০১৩ সালে ‘ক্রনিকল অফ ফিলানথ্রপি’ ৫০ জন উদার আমেরিকানের তালিকায় জুকারবার্গ এবং তাঁর স্ত্রীকে রেখেছে। ২০১৪ সালে জুকারবার্গ এবং চ্যান ইবোলা ভাইরাস রোগ, বিশেষ করে পশ্চিম আফ্রিকার ইবোলা ভাইরাস মহামারী মোকাবিলায় প্রচুর অর্থ প্রদান করেছিলেন। কোভিড মোকাবিলাতেও অর্থ সাহায্য করেছিলেন তিনি।