kolabou

কলাবউ ।। নবপত্রিকা

দুর্গাপূজার সময় যদি আমরা মণ্ডপে গিয়ে শ্রী গণেশ কে দেখি, তো দেখতে পাই তাঁর পার্শ্বে লাল পেড়ে শাড়িতে ঘোমটা তে ঢাকা একটি কলা বৃক্ষ দেখি। অনেকে এটি কে কলাবউ ও শ্রী গণেশের বউ হিসাবে বলে থাকেন। কিন্তু আদৌ এটি শ্রী গণেশের বউ নয়। কারণ গণেশের দুই  বউয়ের নাম রিদ্ধি ও সিদ্ধি। তাহলে কলাবউ কে? আসলে যাকে আমরা কলাবউ হিসাবে জানি তা হল ‘নবপত্রিকা’ , যিনি মা দুর্গা । অর্থাৎ গণেশের জননী। 

দুর্গাপুজোর আচারের মধ্যে নবপত্রিকা স্নান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। নবপত্রিকা কথাটির অর্থ নয়টি পাতা। নয়টি উদ্ভিদের পাতা দিয়ে নবপত্রিকা গঠন করা হয়। নবপত্রিকা নজন দেবীর প্রতীক, নয় পাতায় বাস করা নবদুর্গা। এই পাতা গুলো যথাক্রমে

১. কলাগাছঃ কলারূপে দেবী ব্রহ্মাণীকে পুজো করা হয়। এই পুজো বাস্তু অ পরিবেশের অশুভ শক্তিকে নাশ করে।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

২. কচু ঃ দেবী কালিকা, অভয়দায়িনী।

৩. হলুদঃ এর দেবী রাত্রী । এটি ঔষধের কাজ করে এবং আমাদের মঙ্গলদায়ক।

৪. জয়ন্তীঃ দেবী কার্তিকী। ইনি ঔজ্জ্বল্যদায়িনী।

৫.  বিল্বঃ ইনি দেবী ত্রিপুরেশ্বরী বা শিবানী। বিল্বপত্র শিবের সন্তোষ এবং পরম তৃপ্তি।

৬. ডালিমঃ ইনি রক্তদন্ডিকা।

৭. অশোকঃ ইনি শোকরহিতা পরমপূর্ণদা।

৮. ধানঃ দেবী লক্ষ্মী।

৯. মানকচুঃ ইনি চামুণ্ডা

একটি কলাগাছের সাথে আটরকম গাছের পাতা বা ডাল একত্রে করে অপরাজিতা লতা দিয়ে বেঁধে নবপত্রিকা গঠন করা হয়। দুর্গাপুজোর সপ্তমীর দিন সকালে এই কলাবউ বা নবপত্রিকাকে গঙ্গায় স্নান করাতে নিয়ে যাওয়া হয়। শাস্ত্রমতে স্নানের পর তাকে নতুন শাড়িপরিয়ে ঢাক,ঘন্টা বাজিয়ে পূজামণ্ডপে নিয়ে এসে কাঠের সিংহাসনের উপর দেবীর ডান দিকে স্থাপন করা হয়।মণ্ডপে নবপত্রিকা প্রবেশের পর দুর্গাপুজোর প্রথাগত অনুষ্ঠানের সূচনা হয়ে যায়। নবপত্রিকা বা কলাবউ মণ্ডপে প্রবেশের পর দর্পনে দুর্গামাকে মহাস্নান করানো হয়। পুজোর বাকি দিনগুলো সপরিবার দেবীপ্রতিমার সাথে এই কলাবউ পূজিত হয়ে থাকে।

এই কলাবউকে গণেশের ডানদিকে ঘোমটা দেওয়া, লালপারশাড়ি পরিহিতা রূপে দেখতে পাওয়া যায়। তাই অনেকই কলাবউকে গণেশের বউ বলে ভেবে নেয়।

নবপত্রিকা কি ভাবে দুর্গা পূজার সাথে মিশে গেলো – তা নিয়ে পণ্ডিতদের নানা মত। মার্কণ্ড পুরাণে নবপত্রিকা পূজার বিধান নেই। দেবী ভাগবতে নব দুর্গার উল্লেখ থাকলেও নবপত্রিকার উল্লেখ নেই। কালিকা পুরাণে এই নিয়ম না থাকলে সপ্তমীতে পত্রিকা পূজার কথা আছে। কৃত্তিবাসী রামায়নে এর উল্লেখ পাওয়া যায়। – “বাঁধিলা পত্রিকা নব বৃক্ষের বিলাস।”

সম্ভবত শবর জাতি গণ কোন এক সময় নয়টি গাছ দিয়ে নব দুর্গার পূজা করতেন। সেই থেকে এই রীতি হয়তো দুর্গা পূজোতে প্রবেশ করেছে । আবার শস্য দেবীকে দুর্গা দেবীর সাথে মিশিয়ে দেবার জন্য এই রীতির আয়োজন। যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি লিখেছেন, “আমি নবপত্রিকার উৎপত্তি ও প্রয়োজন বিন্দুমাত্র বুঝিতে পারি নাই। নবপত্রিকা নবদুর্গা, ইহার দ্বারাও কিছুই বুঝিলাম না। দেবীপুরাণে নবদুর্গা আছে, কিন্তু নবপত্রিকা নাই।… নবপত্রিকা দুর্গাপূজার এক আগন্তুক অঙ্গ হইয়াছে।… বোধ হয় কোনও প্রদেশে শবরাদি জাতি নয়টি গাছের পাতা সম্মুখে রাখিয়া নবরাত্রি উৎসব করিত। তাহাদের নবপত্রী দুর্গা-প্রতিমার পার্শ্বে স্থাপিত হইতেছে।”

কলাবউ নিয়ে সব তথ্য শুনতে হলে এখানে শুনুন

তথ্যসূত্র


  1. ভাগ্যফল শারদীয়া পূজাবার্ষিকী ১৪২৪ (২০১৭)
  2. https://eibela.com/mobile/article/kolabou
  3.  http://www.bhorerkagoj.net/print-edition/2016/10/10/110775.php
  4. https://m.dailyhunt.in/news/india/bangla/কলাবউ

 

3 comments

আপনার মতামত জানান