অশোক কুমার ঠাকুর বনাম ভারত মামলা

অশোক কুমার ঠাকুর বনাম ভারত মামলা

ভারতের আইন ও বিচারের ইতিহাস ঘাঁটলে এমন কয়েকটি ঐতিহাসিক মামলার সন্ধান মিলবে, যেগুলি আমাদের সংবিধানের ভিত্তিভূমিকে আর দৃঢ় করে তুলেছিল। অশোক কুমার ঠাকুর বনাম ভারত মামলাটি তেমনি একটি মামলা। সমাজে বৈষম্যের সমস্যা সমাধানের জন্য, সমতা আনয়নের উদ্দেশ্যে সংবিধান ও সরকার যে সংরক্ষণ ব্যবস্থার সূচনা করার পদক্ষেপ নিয়েছিল এই মামলাটিতে মূলত ভারতের সেই সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিয়েই আলোচনা উঠে এসেছিল। ২০০৬ সালে যখন সরকার ভারতের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ওবিসি এবং অন্যান্য পিছিয়ে পড়া শ্রেনীর জন্য ২৭% আসন সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তখনই অশোক কুমার ঠাকুর আপত্তি জানান এবং আদালতে এই বিলের প্রতিবাদ করে মামলা অভিযোগ দায়ের করেন। যথাযথভাবে পশ্চাদপদ শ্রেণীর নির্ধারনের বিষয়টি এই মামলার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ১৫, ৪৬, ৩৪০, ১৯(৬) ইত্যাদি অনুচ্ছেদগুলি এই অশোক কুমার ঠাকুর বনাম ভারত মামলা র বিচারের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। এই জনস্বার্থ মামলাটিতে মন্ডল কমিশনকেও চ্যালেঞ্জ করেছিলেন আবেদনকারীরা।

সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠীর মানুষদের নাগরিক জীবনের সামনে মূলস্রোতে এবং সমতায় ফিরিয়ে আনার জন্য, বৈষম্যের বাধা দূর করে ইতিবাচক পদক্ষেপের প্রচার করার জন্য, শিক্ষার আলো অসামর্থ্য মানুষের দরবারেও পৌঁছে দেওয়ার জন্য সংরক্ষণ ব্যবস্থার সূচনা করা হয়েছিল। আম্বেদকরও স্বয়ং গণপরিষদে সমতা বিষয়ে ভাষণ দিয়েছিলেন। ভারতে প্রচলিত ‘অসমতার নীতির’ দিকে নির্দেশ করেছিলেন তিনি সে-বক্তৃতায়। প্রাথমিকভাবে সংরক্ষণের সুবিধা তপশিলি জাতি, উপজাতিদের জন্যই ছিল, কিন্তু মন্ডল কমিশনের সুপারিশের পরে অন্যান্য অনগ্রসর (ওবিসি) শ্রেণীও সংরক্ষণের সুযোগ পেতে থাকে। এখন, সংবিধান  (৯৩তম সংশোধনী) আইন, ২০০৫ এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণী (ওবিসি), তপশিলি জাতি (এসসি), তপশিলি উপজাতিদের (এসটি) সংরক্ষণের জন্য ২০০৭ সালের আইন প্রণয়ন করা হলে সমাজে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল। ৯৩তম সংশোধনী আইনের পরে ২০০৬ সালে কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (ভর্তি সংরক্ষণ) আইন সংসদে পাশ হয়। এই আইনের ধারা ৩ অনুযায়ী কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অনগ্রসর জাতিদের (ওবিসি) জন্য ২৭ শতাংশ আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় এবং সাধারণ শ্রেণীভুক্ত (জেনারেল কাস্ট) ছাত্রছাত্রীদের জন্য পড়ে থাকে মাত্র ৫০ শতাংশ আসন।  যদিও তফসিলি জাতি এবং উপজাতিদের সংরক্ষণ নিয়ে আবেদনকারীরা কোনো কথা বলেনি, কিন্তু অন্যান্য সামাজিক এবং শিক্ষাগতভাবে অনগ্রসর শ্রেণীর পক্ষে ২৭% সংরক্ষণ এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন আবেদনকারীর দ্বারা দৃঢ়ভাবে সমালোচিত হয়েছিল। মূলত অশোক কুমার ঠাকুর নামে এক ব্যক্তি এই সংবিধান সংশোধনীর বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করেছিল সর্বোচ্চ আদালতে এবং সূচনা হয়েছিল এই ঐতিহাসিক অশোক কুমার ঠাকুর বনাম ভারত মামলা। অশোক কুমার কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আইন, উনবিংশতম সংশোধনী আইনের সাংবিধানিকতা এবং সংবিধান (৯৩তম সংশোধনী) আইনের দ্বারা ১৫ ধারায় অন্তর্ভুক্ত (৫) উপধারার  বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন মূলত।

অনেকে এই সংরক্ষণ ব্যবস্থার তীব্র বিরোধিতা শুরু করলে সুপ্রিম কোর্ট ২০০৭-২০০৮ শিক্ষাবর্ষে মেডিক্যাল এবং পেশাদারি প্রতিষ্ঠানগুলিতে ভর্তির ক্ষেত্রে ওবিসিদের ২৭ শতাংশ সংরক্ষণের ব্যবস্থার উপরে স্থগিতাদেশ জারি করেছিল। আবেদনকারীরা বেশ কয়েকটি যুক্তিযুক্ত অভিযোগ তুলেছিলেন এই মামলায়। আবেদনকারীদের মধ্যে অশোক কুমার ছাড়াও ছিলেন হরিশ সালভে, এফএস নরিমান, কে.কে ভেনুগোপাল, পিপি রাও, রাজীব ধাবন এবং সুশীল কুমার জৈন-এর মতো মানুষ। প্রথমত, তিরানব্বইতম সংশোধনী আইনের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে সন্দেহ করেন তাঁরা এবং তাঁদের মত ছিল এই আইনটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে লঙ্ঘন করে। তাঁদের বক্তব্য ছিল যে, এই সংবিধান আইন ২০০৫ দ্বারা সংবিধানের ১৪, ১৯ এবং ২১ পরিচ্ছেদের যে সোনালী ত্রিভুজ, তার ভারসাম্য এবং কাঠামোটি অপসারিত হয়েছে। এই সংশোধনীর ফলে যে ১৫(৫) ধারা সংযোজিত হয় তাতে বলা হয়েছিল, যে, সামাজিক ও শিক্ষাগতভাবে পিছিয়ে থাকা শ্রেনীর জন্য কোনো বিশেষ বিধান করতে কোনো আইন দ্বারাই রাষ্ট্রকে বাধা দেওয়া চলবে না। এছাড়াও অনুচ্ছেদ ১৫(৫) থেকে সংংখ্যালঘু শিক্ষামূলক সংস্থা বাদ পড়ায় তা নিয়েও তদন্ত হয় এবং এই ১৫(৫)-এর সাংবিধানিক বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আবেদনকারীরা৷ তাঁরা বলেন, সংখ্যালঘু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এভাবে অবহেলা করা সংবিধানের ১৪ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। তাঁদের মতে, শুধুমাত্র জাতপাতের ভিত্তিতে অগ্রাধিকারমূলক ভর্তির জন্য ১৫(৫) আইনের এই বিধান ২৯(২) অনুচ্ছেদকেও লঙ্ঘন করে।  আবেদনকারীরা একইভাবে কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আইনের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন৷ তাঁদের দাবি ছিল যে এই আইনটি সংবিধানের ১৪, ১৫ এবং ১৯(১)(জি)-এর অপব্যবহার করে। এতে উল্লিখিত জাতের ভিত্তিতে অনগ্রসর শ্রেণীর সনাক্তকরণ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫-কে লঙ্ঘন করে। আরেকটি যে বড় সমস্যার কথা তাঁরা বলেছিলেন, তা হল, ওবিসি বা এসইবিসিদের নির্বাচন করার জন্য কোনও নির্দিষ্ট মানদণ্ড বা পদ্ধতি নেই, ফলে সংরক্ষণের সুবিধা যাদের সত্যই প্রাপ্য, তাদের নির্ধারণের কাজটা কঠিন হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ক্রিমি লেয়ার (সহজ কথায় নিম্নবিত্তের মধ্যেকার উপরতলার লোক) বর্জনের প্রসঙ্গও তোলেন তাঁরা। তাছাড়া তাঁরা বলেন ১৫(৫) অনুচ্ছেদ রাজ্যকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংরক্ষণ প্রদানের জন্য আইন প্রণয়নের ক্ষমতা দেয়, যা-কিনা আদতে মৌলিক অধিকারের উপর একটি অযৌক্তিক সীমাবদ্ধতা এনে ফেলে। 

অনুচ্ছেদ ১৫(৪) হল  তপশিলি জাতি (এসসি), তপশিলি উপজাতি (এসটি) এবং সামাজিক ও শিক্ষাগতভাবে অনগ্রসর শ্রেণীগুলির (এসইবিসি) সংরক্ষণের জন্য আইন প্রণয়ন ক্ষমতার একটি উৎস এবং ১৫(৫) সাহায্যপ্রাপ্ত বা অনুদানপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে ও সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠানকে অন্তর্ভুক্ত করে না। ফলে আবেদনকারীরা অনুচ্ছেদ ১৫(৪) এবং ১৫(৫)-এর সাংঘর্ষিক অবস্থান নিয়েও বিতর্ক উত্থাপন করেছিলেন। ওবিসি জনসংখ্যা নির্ধারণের অবৈধ পদ্ধতি নিয়েও কথা বলেন তাঁরা। সর্বোপরি তাঁদের বক্তব্য ছিল ভারত সরকারের “ইতিবাচক পদক্ষেপ” নীতি আসলে বৈষম্যমূলক এবং সাধারণ জনস্বার্থের বিরুদ্ধে।

সরকার পক্ষের আইনজীবীরাও আবেদনকারীদের যুক্তির পরে সুকৌশলে তাঁদের প্রতিযুক্তি সাজিয়েছিলেন। এই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে ছিলেন, কে. পরাশরণ, জি. ই বাহনবতী, গোপাল সুব্রমনিয়াম, রাম জেঠমালানি, টি. আর অন্ধ্যারুজিনা, ইন্দ্রা জয়সিং, রাকেশ দ্বিবেদী, রবিবর্মা কুমার প্রমুখ। ১৫(৫) ধারায় সংখ্যালঘু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয় স্থান না পাওয়া প্রসঙ্গে তাঁদের যুক্তি ছিল যে, ১৫(৫)- এ সংখ্যালঘু অন্তর্ভুক্তি গুরুত্বপূর্ণ নয় কারন অনুচ্ছেদ ৩০-এর অধীনেই সংখ্যালঘুদের সুযোগ-সুবিধার দিকগুলি সুরক্ষিত রয়েছে এবং সেখানে এবিষয়ক সম্পূর্ণ আয়োজনের কথাও উল্লিখিত রয়েছে। তাঁদের বক্তব্য ছিল, চাকরিতে হোক বা শিক্ষায় সংরক্ষণ করা সংবিধানের মৌলিক কাঠামো বা সমতার বিধানের লঙ্ঘন নয়।

এই ঐতিহাসিক মামলার বিচারের জন্য বিচারপতিদের যে বেঞ্চ গঠিত হয়েছিল, তাতে ছিলেন, কেজি বালাকৃষ্ণান, সি.কে ঠাক্কর, দলবীর ভান্ডারি, অরিজিৎ পাসায়াত এবং আরভি রবেন্দ্রন। এই বেঞ্চ পর্যবেক্ষণ করেছিল যে একক অনুদানবিহীন বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে কেউই তিরানব্বইতম সংশোধনীর বিরোধিতা করে আদালতে পিটিশন দাখিল করেনি। তাই, ৯৩তম সংশোধনী আইন অনুদানবিহীন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সংবিধানের “মৌলিক কাঠামো” লঙ্ঘন করে কিনা সে প্রশ্নে আদালত প্রবেশ করতে চায় নি। আদালত শুধুমাত্র রাষ্ট্র পরিচালিত প্রতিষ্ঠান এবং সাহায্যপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এই সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে কাজ করেছিল।এই মামলায় উত্থাপিত একাধিক সমস্যার যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছিল  তা বাস্তবিকই সংবিধানের ভীতকে শক্ত করেছিল।সংবিধান আইন (৯৩তম সংশোধন) ২০০৫-এর প্রসঙ্গে আদালত জানিয়েছিল, যে, এই আইন এখনও পর্যন্ত সংবিধানের মৌলিক কাঠামো লঙ্ঘন করে না, কারণ, এটি রাষ্ট্র পরিচালিত ও সাহায্যপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত। তবে বেসরকারি অনুদাহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাগুলির ক্ষেত্রে এই সংশোধনী আইন বৈধ হবে কিনা সে বিষয়ক প্রশ্নের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আদালত উপযুক্ত বিচারের ক্ষেত্রটি উন্মুক্ত রেখেছে।

দ্বিতীয়ত, আদালত জানায়, অনুচ্ছেদ ১৫(৫) থেকে সংখ্যালঘু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে বাদ দেওয়া অনুচ্ছেদ ১৪-এর লঙ্ঘন নয়, কারণ, সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠানগুলি নিজেরা একটি পৃথক শ্রেণী এবং অন্যান্য সাংবিধানিক বিধান দ্বারা তাদের অধিকার সুরক্ষিত।

তৃতীয়ত, উচ্চ বর্ণ প্রসঙ্গে আদালতের সিদ্ধান্ত ছিল, যে, সামাজিক ও শিক্ষাগতভাবে অনগ্রসর শ্রেণীর ক্ষেত্রে (এসইবিসি) উচ্চ বর্ণ পদ্ধতি বাদ দিতে হবে, নচেৎ তাদের শনাক্তকরণ সম্পূর্ণ হবে না এবং উচ্চ বর্ণ বাদ না দিলে ১৫(১)-এর অধীনে এই ধরনের শণাক্তকরণ বৈধ হতে পারে না। আদালত জানায় যে, উচ্চ বর্ণ পদ্ধতিটি তপশিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য প্রযোজ্য নয়, কারণ, তপশিলি জাতি ও উপজাতি পৃথক বিভাগ এবং সমতার নীতিতে উচ্চ বর্ণ স্তরের ধারণাটি প্রযোজ্য নয়। ধারণাটি শুধুমাত্র সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর শ্রেণী চিহ্নিত করার জন্য প্রয়োগ করা হয়। ওবিসিদের ক্ষেত্রেও উচ্চ বর্ণ নিষিদ্ধ  করেছিল আদালত।

আদালত আরও বলেছে যে যদি কোনও জাতি বা গোষ্ঠী বা কোনও ব্যক্তিকে অনুপযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয় তবে বিচারিক পর্যালোচনার মাধ্যমে এই অন্তর্ভুক্তিকে চ্যালেঞ্জ করায় কোনো বাধা থাকবে না। আদালত এই মামলার সূত্র ধরেই আরও যেসব সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল, সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য, সংসদের একটি সময়সীমা নির্ধারণ করা উচিত যে সময়ের মধ্যে বিনামূল্যে এবং বাধ্যতামূলক শিক্ষা প্রতিটি শিশুর কাছে পৌঁছে যাবে। নিছক স্নাতক পাশ করলেই একজনকে পেশাদার ও শিক্ষাগতভাবে এগিয়ে বলে মনে করব। আবার ওবিসি প্রার্থীদের পরীক্ষার জন্য একটি কাটঅফ নম্বর ঠিক করার কথা বলেছিল আদালত, যাতে করে গুণমান বজায় থাকবে এবং মেধারও ক্ষতি হবে না।

২০০৮ সালে সংঘটিত এই ঐতিহাসিক অশোক কুমার ঠাকুর বনাম ভারত মামলা এভাবেই শিক্ষাক্ষেত্রে সংরক্ষণ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে আইনের ইতিহাসকে যেমন সমৃদ্ধ করে, তেমনি শিক্ষা বিস্তারের কাজেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।

আপনার মতামত জানান