ভারতের প্রতিবেশী দেশ হল চীন। এটা গণপ্রজাতন্ত্রী চীন নামেও পরিচিত। চীনারা তাদের দেশকে চুংকুও নামে ডাকে, যার অর্থ “মধ্যদেশ” বা “মধ্যবর্তী রাজ্য”। “চীন” নামটি বিদেশীদের দেওয়া। এটি সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকের ছিন রাজবংশের নামের বিকৃত রূপ।
চীন পূর্ব এশিয়ার একটি রাষ্ট্র। চীনের পূর্ব দিকে দক্ষিণ চীন সাগরে দীর্ঘ তটরেখা রয়েছে, যেটি প্রশান্ত মহাসাগরের অংশ। এর উত্তর সীমান্তে আছে রাশিয়া, মঙ্গোলি এবং উত্তর কোরিয়া অবস্থিত, পশ্চিম সীমান্তে, কাজাকিস্তান, কিরজিস্তান,
তাজাকিস্তান, এবং আফগানিস্তান, দক্ষিণ পশ্চিম দিকে, পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, এবং ভুটান, এবং দক্ষিণ পূর্ব দিকে, বুরমস, লাওস,এবং ভিয়েতনাম অবস্থিত। উত্তর-দক্ষিণে চীন মোহো অঞ্চলের উত্তরের হেইলুংচিয়াং নদীর কেন্দ্রস্থল অর্থাৎ ৫৩.৩০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ থেকে দক্ষিণে নানসা দ্বীপপুঞ্জের চেনমু-আনসা অর্থাৎ ৪ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত৷
দেশের উত্তর অঞ্চলে অবস্থিত বেইজিং বা পেইচিং চীনের রাজধানী এবং দেশের সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও যোগাযোগ কেন্দ্র। এটি বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতির শহর হল । ২০১০ সালে এর জনসংখ্যা ছিল আনুমানিক ১৯,৬১২,৩৬৮ জন। এই শহরটি চীনের উত্তর দিকে অবস্থিত এবং নগরের প্রশাসনিক ব্যবস্থা জাতীয় সরকার কর্তৃক সরাসরি পরিচালিত। যার মধ্য ১৪টি শহর ও উপশহর এবং ২টি গ্রামীন এলাকা রয়েছে।বেইজিং পৌরসভা হপেই প্রদেশ দ্বারা পরিবেষ্টিত শুধুমাত্র দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রতিবেশী থিয়েন চিনের অবস্থান। ইয়াংছে নদীর কাছে অবস্থিত সাংহাই শহর সবচেয়ে জনবহুল শহর, বৃহত্তম শিল্প ও বাণিজ্য নগরী এবং চীনের প্রধান বন্দর।
আয়তনের দিক থেকে চীন এশিয়ার বৃহত্তম দেশ এবং রাশিয়া ও কানাডার পর চীন বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম দেশ।
চীনের মুদ্রার নাম রেন্মিবি ( Chinese yuan )। যুক্তরাষ্টের পরেই জিডিপি এবং ক্রয়ক্ষমতার দিক দিয়ে চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক দেশ। এটি বিশ্বের বৃহত্তম রপ্তানিকারক এবং দ্বিতীয় আমদানিকারক দেশ।
চীনের সবচেয়ে বেশি কথিত ভাষাগুলি চৈনিক-তিব্বতি ভাষা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। হাজার বছর ধরে ধ্রুপদী চীনা ভাষা লিখিত চীনা ভাষার আদর্শ মানদন্ড ছিল। এর ফলে চীনের বিভিন্ন পরস্পর-অবোধগম্য ভাষা ও উপভাষার বক্তারা নিজেদের মধ্যে লিখিত মাধ্যমের সাহায্যে যোগাযোগ করতে পারতেন বলে জানা যায়৷ আজও চীনের উচ্চবিদ্যালয়গুলির পাঠ্যক্রমে ধ্রুপদী চীনা ভাষা শিক্ষা দেওয়া হয়ে থাকে৷
১৯৪৯ সালে নয়া চীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর চীন সরকার ধর্ম বিশ্বাসের স্বাধীনতা নীতি প্রনয়ন করেছে এবং দেশের বাস্তব অবস্থার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ রাজনীতি ও ধর্মের সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। চীনের নাগরিকরা অবাধে নিজেদের ধর্ম বাছাই করতে পারেন এবং কোন ধর্মে বিশ্বাস করেন সেই পরিচয় দিতে পারেন। তবে চীনে বৌদ্ধ মন্দির বেশী সংখ্যক দেখা যায়। চীনা ধর্ম সম্পর্কে আলোচনা করলে পুরাণ নিয়ে আলোচনা চলে আসে৷ চীনা পুরাণে বর্ণিত আছে যে জেড সম্রাট স্বর্গ, নরক ও পৃথিবী এই তিন ভূখণ্ড পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত। চীনা পুরাণ কনফুসীয় ধর্ম, তাও ধর্ম ও বৌদ্ধ ধর্মের সাথে সম্পর্কিত। হান সাম্রাজ্য পূর্ববর্তী পৌরাণিক কাহিনী, যেমন সাংহাই জিং থেকে কিছু উপাদান তাও ধর্মে এবং চীনা সংস্কৃতি ও বৌদ্ধ ধর্মে গৃহীত হয়েছে। এছাড়া ধর্মীয় উপাদানসমূহ চীনা পুরাণের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে গেছে। চীনের ড্রাগন চীনা পুরাণের একটি গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টি। ড্রাগনকে সবচেয়ে শক্তিশালী ও স্বর্গীয় প্রাণী হিসেবে গন্য করা হয় । বিশ্বাস করা হত যে, তাদের শ্বাস-প্রশ্বাস থেকে মেঘ উৎপন্ন হয়। ড্রাগন শক্তির প্রতীক ও দেবতাদের কাজে সাহায্য করত।
গণপ্রজাতান্ত্রিক চিনের রাজনীতি একটি একদলীয় সমাজতান্ত্রিক প্রজাতান্ত্রিক কাঠামোয় সংঘটিত হয়। চীনের বর্তমান সংবিধানটি ১৯৫৪ সালে প্রথম গৃহীত হয় এবং এখানে দেশের শাসনব্যবস্থা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। চীনের কমিউনিস্ট পার্টি দেশটির রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। দেশের ৭ কোটিরও বেশি লোক কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য। চীনের সংবিধান অনুযায়ী গণ কংগ্রেস সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। গণকংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব চীনের গণ-আদালত নামের বিচার ব্যবস্থাকেও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে৷
চীনের উল্লেখযোগ্য ভ্রমণ স্থানের তালিকা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে যদি তালিকার শুরুতেই চীনের মহাপ্রাচীর বা গ্রেট ওয়ালের নাম না থাকে। চীনের মহাপ্রাচীর মানুষের হাতে তৈরি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্থাপত্য। এই প্রাচীর প্রায় ৫ থেকে ৮ মিটার উচু এবং ৮৮৫২ কিলোমিটার লম্বা। এটি শুরু হয়েছে সাংহাই পাস এবং শেষ হয়েছে লোপনুর নামক স্থানে। এটি ছাড়াও বিখ্যাত ভ্রমণ স্থানের মধ্যে পড়ে সাংহাং হোয়াংপু রিভার ক্রুজ, তিয়েন আনমেন স্কোয়ার, ইত্যাদি।
চায়ের প্রচলন চীনেই প্রথম শুরু হয়৷ ১৬৫০ খ্রিষ্টাব্দে চীনে বাণিজ্যিকভাবে চায়ের উৎপাদন শুরু হয়েছিল। চীনের খাদ্য খুব সাধারণ এবং স্টীম বা সিদ্ধ করে রান্না করা হয়৷ রান্নার মূল উপকরণ হিসেবে ময়দা জাতীয় পদার্থের ব্যবহার করা হয়ে থাকে৷ রোস্টেড ডাক, নুডলস, স্যুপ বানস, ডাম্পলিং জাতীয় সুস্বাদু খাদ্য এখানে পাওয়া যায়৷
চীনের জাতীয় খেলা হল টেবিল টেনিস। যদিও এই খেলার জন্ম ইউরোপে। ১৯৫৯ সালে ২৫তম বিশ্ব টেবিল টেনিস প্রতিযোগিতায় চীনের খেলোয়াড় রণ গুও তেয়েন পুরুষ এককে চ্যাম্পীয়ন হয়েছিলেন, যার ফলে তিনিই চীনের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্ব চ্যাম্পীয়নশীপ অর্জন করেছিলেন। চীনে এই খেলা ক্রমে ক্রমে জনপ্রিয়তা লাভ করে৷ সারা পৃথীবিতে চীনের জাতীয় খেলাকে আরো জনপ্রিয় করে তোলার জন্য চীনের অলিম্পিক কমিটি৷ তবে জানা যায় জিমন্যাস্টিকস্ প্রাচীন চীনের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হিসেবে স্থান পেয়েছিল।
তথ্যসূত্র
- https://googleweblight.com/i?u=https://bn.m.wikipedia.org/wiki/গণচীন
- https://googleweblight.com/i?u=https://bn.m.wikibooks.org/wiki/উইকিশৈশব:এশিয়া/চীন
- https://googleweblight.com/i?u=https://bn.m.wikipedia.org/wiki/বেইজিং
- https://googleweblight.com/i?u=https://bn.m.wikipedia.org/wiki/চীনা-পুরাণ
- http://www.touristguide24.com/category.php?type=270
- https://googleweblight.com/www.chinahighlights.com/travelguide/must-taste-chinese-food
- https://googleweblight.com/i?u=https://bn.m.wikipedia.org/wiki/ক্রীড়া
- https://googleweblight.com/en.m.wikipedia.org/wiki/China
- ছবি ২
7 comments