আধুনিক চীনদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং শ্রেষ্ঠ বিপ্লবী ও নেতা হিসেবে বিবেচিত হন সান ইয়াত-সেন (Sun Yat-sen)। তাঁকে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের বিপ্লবের অগ্রদূত বলা হয়ে থাকে। বিপ্লবী হওয়ার পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন রাষ্ট্রনায়ক, চিকিৎসক এবং রাজনৈতিক-দার্শনিক। সিনহাই বিপ্লবের সময় কিং রাজবংশের উৎখাতে সান ইয়াত-সেনের ভূমিকা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়ে থাকে। তিনি চীন প্রজাতন্ত্রের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন এবং কুওমিনতাং নামক চীনা জাতীয়তাবাদী দলের প্রথম নেতা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পালন করেছিলেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবন ছিল অত্যন্ত সংঘর্ষময় এবং ঘন ঘন তিনি নির্বাসনে গিয়েছিলেন। বিপ্লবী সান ইয়াত-সেনের জনপ্রিয়তা বৃহত্তর চীনের বাইরেও অনেকদূর ছড়িয়েছিল। তাঁকে চীন প্রজাতন্ত্রে জাতির পিতা হিসেবে সম্মান জানানো হয়।
১৮৬৬ সালের ১২ নভেম্বর বর্তমান গুয়াংডং প্রদেশের রাজধানী গুয়াংঝুর জিয়াংশান কাউন্টির অন্তর্গত কুইহেং নামক গ্রামে এক কৃষক পরিবারে সান ইয়াত-সেনের জন্ম হয়। তিনি ক্যান্টোনিজের ঝোংশান উপভাষায় কথা বলতেন। তাঁর পিতা সান দাচেং ছিলেন পেশায় একজন দর্জি ও কৃষক এবং সানের মায়ের নাম মাদাম ইয়াং। খুব সামান্য জমি কিনে সান দাচেং ম্যাকাওতে দর্জির কাজ শুরু করেন। এছাড়াও কুলির কাজও করেছিলেন তিনি। সান দাচেং এবং মাদাম ইয়াং-এর মোট ছয় সন্তান ছিল। সান ইয়াত-সেনের অনেকগুলি নামের হদিশ পাওয়া যায়। তাঁর বংশগত নাম ছিল সান ডেমিং, আবার স্কুলের শিক্ষক তাঁর নাম দিয়েছিলেন সান ওয়েন। পরবর্তীকালে ব্যাপটিজমের পর তাঁর নাম হয় রিক্সিন। চীনদেশে তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় চৈনিক নাম ছিল সান ঝোংশান।
প্রাথমিকভাবে কুইহেং প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সান ইয়াত-সেনের শিক্ষালাভের সূচনা হয়েছিল। তবে ১৮৭৯ সালে ১৩ বছর বয়সে তিনি হাওয়াইয়ের হনলুলুতে চলে আসেন তাঁর দাদা সান মেই-এর কাছে। এখানে থেকে ইওলানি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন পড়াশুনার জন্য। ১৮৮২ সালে হাইস্কুল থেকে ডিপ্লোমা অর্জন করেন সান। সেই স্কুলে তিনি ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান এবং খ্রিস্টধর্ম অধ্যয়ন করেছিলেন। ইংরেজি ভাষা বলতে অক্ষম সান দ্রুত এই ভাষাকে আয়ত্তে এনে ফেলেন এবং ইংরেজিতে অসামান্য কৃতিত্বের জন্য রাজা ডেভিড কালাকাউয়ার কাছ থেকে একটি পুরষ্কারও পেয়েছিলেন। এরপর ওহু কলেজে একটি সেমিস্টারের জন্য ভর্তি করা হয় তাঁকে। তবে দাদা সান মেই তাঁকে শীঘ্রই চীনে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছিলেন, কারণ, খ্রিস্টধর্ম অধ্যয়ন এবং তার প্রতি সান ইয়াতের আগ্রহের ফলে সান মেই আশঙ্কা করেছিলেন হয়তো খুব তাড়াতাড়ি সান খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করবেন।
১৮৮৩ সালে যখন সান ইয়াত দেশে ফিরে আসেন, দেখেন যে, চীনের মানুষদের থেকে অত্যধিক কর ও শুল্ক নেওয়া হচ্ছে। সেখানকার পরিবেশও ছিল রক্ষণশীল ফলে, স্কুলগুলিতে মুক্ত এবং উদারনৈতিক চিন্তাচর্চা হত না একেবারেই। হাওয়াইতে খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারকদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এসে সান ইয়াত চীনের এই সংকীর্ণ রূপ এবং ঐতিহ্যগত চীনা ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি ঘৃণা করতে থাকেন। একবার বেইজি নামক চৈনিক সম্রাট-ঈশ্বরের এক বিগ্রহের হাত ভেঙে দিয়ে গ্রামবাসীদের ক্রোধের শিকার হয়ে সান এবং তাঁর এক বন্ধু হংকং-এ পালিয়ে গিয়েছিলেন। হংকং-এ অ্যাংলিকান ডায়োসেসান হোম অ্যান্ড অরফানেজ স্কুলে ইংরেজিতে পড়াশুনা করেছিলেন। ১৮৮৪ সালে সানকে গফ স্ট্রীট-এর গভর্নমেন্ট সেন্ট্রাল স্কুলে স্থানান্তরিত করা হয়। সেই বছরই চার্লস রবার্ট হেগার নামক এক আমেরিকান ধর্মপ্রচারকের অধীনে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হন সান। ব্যাপটিজমের পরেই তাঁর নাম হয় সান ইয়াত-সেন। এই ১৮৮৪ সালেই লু মুজেন নামক এক কন্যার সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। তাঁদের তিন সন্তানের নাম হল, পুত্র সান ফো, কন্যা সান জিনুয়ান এবং সান জিনওয়ান। সান অবশ্য পরে আরও বিবাহ করেন।
উক্ত সেন্ট্রাল স্কুল থেকে ১৮৮৬ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ১৮৮৬ সালে সান খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারক জন জি কেরের অধীনে গুয়াংজু বোজি হাসপাতালে মেডিসিন অধ্যয়ন করেন। এরপর ১৮৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হংকং কলেজ অব মেডিসিন থেকে ১৮৯২ সালে একজন মেডিকেল ডাক্তার হিসেবে লাইসেন্স অর্জন করেন।
১৮৮৮ সালে ডাক্তারী অধ্যয়নের সময় কিং বংশের বিদ্রোহের আবহে সান হংকং কলেজ অব মেডিসিনে ফোর ব্যান্ডিটস নামক বিপ্লবী চিন্তাবিদদের দলের সঙ্গে ছিলেন। ডাক্তার হিসেবে সানের ভালই পসার ছিল। সানের মনে হয়েছিল জাতি হিসেবে চীনকে বাঁচাতে চিকিৎসা অধ্যয়ন খুব প্রয়োজন। তিনি কিং সরকারের রক্ষণশীল রাজনীতি, লাগাতার দুর্নীতি এবং চীনা জনগণের দুর্দশা লক্ষ করে ডাক্তারী ছেড়ে বিপ্লবের পথ বেছে নিয়েছিলেন। প্রথমে সান ফুরেন লিটারারি সোসাইটি, যারা কিংকে উৎখাত করতে চাইছিলেন, তাঁদের সঙ্গে কাজ করেন। ১৮৯৪ সালে সান ঝিলির গভর্নর জেনারেল লি হংঝাং-কে একটি চিঠি লেখেন চীনকে আরও বেশি শক্তিশালী করবার পরামর্শ দিয়ে। যদিও হংঝাং সানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে রাজি হননি। এই ঘটনা কিং বংশের প্রতি সানের আরও বিরূপ মনোভাব তৈরি করে। এরপর থেকে রাজতন্ত্রের বিলুপ্তি এবং প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ডাক দিতে শুরু করেন তিনি। ১৮৯৪ সালে হাওয়াইতে চলে যান এবং সমৃদ্ধ চীনের লক্ষ্য প্রচারের জন্য ও ভবিষ্যতের বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হিসেবে রিভাইভ চায়না সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন। সমাজের নিম্নস্তরের অনেক মানুষ এই সোসাইটির সদস্য ছিল। ১৮৯৪ সালেই ফুরেন লিটারারি সোসাইটি ও রিভাইভ চায়না সোসাইটি একীভূত হয় এবং সান সোসাইটির সেক্রেটারি হন, যার সভাপতি ছিলেন ইয়েং কু-ওয়ান।
১৮৯৫ সালে চীন-জাপান যুদ্ধের সময় চীন গুরুতর পরাজয়ের সম্মুখীন হলে তার সংস্কারের জন্য আহ্বান করা হয় সরকারের তরফে, কিন্তু অন্যদিকে সান ইয়াত-সেন এবং অন্য কয়েকজন রাজতান্ত্রিক সাম্রাজ্যের অবসান ও আধুনিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান। ১৮৯৫ সালে রিভাইভ চায়না সোসাইটি কিংকে উৎখাত করার প্রচেষ্টায় প্রথম গুয়াংজু বিদ্রোহের আয়োজন করে।
তবে অল্পদিনের মধ্যেই তাঁদের পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে পড়ে এবং লু হাওডং-সহ ৭০ জনেরও বেশি সদস্যকে কিং সরকারের হাতে বন্দী হতে হয়। এই ব্যর্থতার ফলে নির্বাসনে চলে যান তিনি।
সান ইয়াত-সেন তাঁর নির্বাসনের ষোল বছর ইউরোপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং জাপানের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করেছিলেন। ১৮৯৬ সালে লন্ডনে থাকাকালীন সান তাঁর বিপ্লবী দলের জন্য এবং চীনে বিদ্রোহকে সমর্থন করার জন্য অর্থ সংগ্রহ করেন। লন্ডনের চাইনিজ লিগেশনে তাঁকে আটক করা হয় এবং সেখানকার চাইনিক সিক্রেট সার্ভিস বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডের জন্য মৃত্যুদন্ড দেওয়ার উদ্দেশ্যে তাঁকে চীনে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা করে। অবশ্য অনেকের চেষ্টায় ১২দিন পর তিনি মুক্তি পান। ১৮৯৭ সালে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সান রচনা করেছিলেন ‘কিডন্যাপড ইন লন্ডন’ নামক এক গ্রন্থ। ইংল্যান্ডে থাকাকালীন কার্ল মার্কসের লেখালেখি মন দিয়ে পড়েছিলেন তিনি।
এরপর কানাডা হয়ে জাপানে চলে যান সান। ১৮৯৭ সালের ১৬ আগস্ট তিনি জাপানের ইয়োকোহামায় পৌঁছন এবং সেখানকার রাজনীতিবিদ টোটেন মিয়াজাকির সঙ্গে দেখা করেন। সেখানেই ফিলিপাইন প্রজাতন্ত্রের কূটনীতিক মারিয়ানো পন্সের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেন তিনি। এই ইয়োকোহামায় সানের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় কাওরু ওতসুকির। পরে সান পুনরায় জাপানে এলে ১৯০৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের বিবাহ হয় এবং ফুমিকো নামে এক কন্যার জন্ম হয়। যদিও জাপান ছেড়ে চলে যাওয়ার পর স্ত্রী এবং কন্যার কাছে আর ফিরে আসেননি।
ফিলিপাইন-আমেরিকা যুদ্ধের সময় সান ইয়াত-সেন ফিলিপাইনে অস্ত্র পাঠিয়ে তাদের সাহায্য করেন। তাঁর আশা ছিল, ফিলিপাইন এই যুদ্ধ জিতলে সেই দ্বীপপুঞ্জটিকে বিপ্লবের একটি ঘাঁটি হিসেবে তিনি ব্যবহার করবার সুযোগ পাবেন। তবে আমেরিকা জয়লাভ করায় সেই আশাও বৃথা হয় তাঁর।
তবুও হাল ছাড়েননি সান। গুয়াংজু বিদ্রোহের পাঁচ বছর পর তিনি গুয়াংডংয়ে হুইঝো এবং প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষকে আক্রমণের জন্য হুইঝো বিদ্রোহ শুরু করেছিলেন। ১৯০৩ সালে ব্যাংককে একটি গোপন সফর করেন তিনি। তাঁর অনুগামীরা সিয়ামে সংবাদপত্র প্রকাশ করে সানের বিপ্লবী ভাবধারা প্রচার করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সহজেই সান প্রবেশ করতে পারেননি সেখানকার চীনা বর্জন আইনের জন্য। প্রবেশের প্রথম প্রচেষ্টায় সান ফ্রান্সিসকোতে তাঁকে আটক করা হয়েছিল। অবশেষে বাণিজ্য ও শ্রম বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব তাঁকে অনুমতি দেন প্রবেশের।
সানের রাজনৈতিক দর্শনের ভিত্তি ছিল মানুষের তিন নীতি যথা, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র এবং কল্যাণের নীতি। ১৯০৫ সালে টোকিওতে অধ্যয়নরত চীনা ছাত্রদের বিপ্লবীদলে যোগ দেন তিনি এবং টংমেমঘুই দল গঠন করেন। মালয়েশিয়ায় বসবাসকারী চীনাদেরও সমর্থন লাভ করেন তিনি। সিঙ্গাপুর তখন টংমেনঘুইয়ের সদর দপ্তর ছিল। নিম্নস্তরের মানুষের মধ্যেও বিপ্লবী ভাবধারা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি।
১৯০৭ সালে কিং-এর বিরুদ্ধে গুয়াংজি এবং ভিয়েতনামের সীমান্তে জেনানগুয়ান বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন, যদিও সেটিও ব্যর্থ হয়েছিল। ১৯০৭ সালে আরও চারটি এবং ১৯০৮ সালে আরও দুটি বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়। এতগুলি ব্যর্থতার কারণে টংমেনঘুইয়ের সদস্যদের মধ্যে তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল, তাঁকে অপসারণের কথাও ভাবা হয়েছিল।
বিপ্লবী হুয়াং জিং ১৯১১ সালে এপ্রিল মাসে কিং-এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে প্রথমে ব্যর্থ হন। পরে ১৯১১ সালেরই ১০ অক্টোবর হুয়াং জিং-এরই নেতৃত্ব সংঘটিত হয় উচাং বিদ্রোহ, যেটি সিনহাই বিপ্লব নামেও পরিচিত। এই বিদ্রোহই কিং-রাজবংশের পতন ঘটায়। এতে সান ইয়াত-সেন সরাসরি যুক্ত ছিলেন না, সেসময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন এবং সেখানকার চীনাদের সহায়তা অর্জনের চেষ্টা করছিলেন। সরাসরি যুক্ত না থাকলেও বিপ্লবের অর্থায়ন এবং বিপ্লবের চেতনাকে বাঁচিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন সান। বিদ্রোহের সাফল্য এবং কিং-এর পতনের কথা জানতে পেরে চীনে ফিরে আসেন। ১৯১১ সালের ২৯ ডিসেম্বর নানকিং প্রদেশের প্রতিনিধিদের সভায় সান ইয়াত-সেন চীন প্রজাতন্ত্রের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। হুয়াং জিং হন সেনাবাহিনীর মন্ত্রী।
সানের অস্থায়ী সরকার দুর্বল ছিল, তাঁরা উত্তর চীনের বেইয়াং আর্মির কমান্ডার ইউয়ান শিকাইয়ের সঙ্গে আপস করতে বাধ্য হন। ১৯১২ সালে ইউয়ান শিকাই নতুন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। ১৯১৩ সালে ইউয়ানের স্বৈরাচারী শাসনের বিরূদ্ধে একটি ব্যর্থ বিদ্রোহ করেন সান, অবশেষে জাপানে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। সেখানে কুওমিনতাং দলকে পুনর্গঠিত করেন। ১৯১৫ সালে জাপানে সু চিং লিংকে বিবাহ করেন তিনি। ১৯১৫ সালে ইউয়ান নিজেকে চীনের সম্রাট হিসেবে ঘোষণা করেন। তখন সান সাংবিধানিক সুরক্ষা আন্দোলনের জাতীয় সুরক্ষা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।
সেই সময় সামরিক নেতাদের দ্বারা চীন অনেক খন্ডে বিভক্ত ছিল। সান ইয়াত-সেনবুঝেছিলেন এতে বিপদের আশঙ্কা বেশি, সেই কারণে চীনের একীকরণের পক্ষে কথা বলার জন্য ১৯১৭ সালে ফিরে আসেন। ১৯২১ সালে গুয়াংজুতে একটি স্বঘোষিত সামরিক সরকারের সূচনা করেন তিনি এবং তার গ্র্যান্ড মার্শাল নির্বাচিত হন। চীনকে একীভূত করতে দক্ষিণে সামরিক বিজয় প্রয়োজন ছিল। এই বিজয়কে ত্বরান্বিত করতে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সহযোগিতার নীতি গ্রহণ করেন তিনি। নীতি, আদর্শ ও সামাজিক সংস্কারের জন্য লেনিন পর্যন্ত সানের প্রশংসা করেছিলেন। গুয়াংজু-এর কাছে হোয়াম্পোয়া মিলিটারি একাডেমি তৈরি করেন সান, যার কমান্ড্যান্ট ছিলেন চিয়াং কাই-শেক। তবে অনেক রাজনীতিবিদ যুদ্ধবাজ সানের সামরিক সরকারের বিরোধিতা করেছিল। ১৯২৪ সালে তিয়েনসিনে এক বক্তৃতায় সান যুদ্ধবাজ শাসনের অবসান এবং পশ্চিমা শক্তির সাথে সকল অসম চুক্তি বাতিলের আহ্বান জানান।
১৯২৫ সালের ১২ মার্চ পিকিং ইউনিয়ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লিভার ক্যান্সারে ৫৮ বছর বয়সে এই কিংবদন্তি চীনা বিপ্লবী ও রাষ্ট্রনায়ক সান ইয়াত-সেনের মৃত্যু হয়।