রোস-ভেইল্ড ফেয়ারি রাসে (Rose-veiled fairy wrasse) একটি সিরহিলাব্রস ফিনিফেন্মা (Cirrhilabrus finifenmaa) প্রজাতির মাছ যে মাছটি তার অসামান্য উজ্জ্বল রামধনু রঙা গায়ের রঙের কারণে বিখ্যাত। তবে কেবল উজ্জ্বল রঙের কারণেই নয় মাছটি বিখ্যাত মূলত তার বিশেষ শারীরিক বৈশিষ্ট্যের জন্যে। মাছটি নারী হয়ে জন্মালেও বয়স যত বাড়তে থাকে মাছটি ক্রমশ পুরুষ হতে শুরু করে। তাঞ্জানিয়ার জাঞ্জিবার অঞ্চলের মেসোফোটিক রিফে প্রথম সন্ধান পাওয়া যায় এই প্রজাতির মাছের। সম্প্রতি মালদ্বীপে ভারতসাগরে দেখা that changes sexমিলেছে এই মাছের অন্য আরেকটি প্রজাতির। ২০২২ সালে এই মাছটির নাম রাখা হয় মালদ্বীপের জাতীয় ফুল ‘ফিনিফেনমা’র নামে। স্থানীয় ধিভেহি ভাষায় ‘যার অর্থ হল গোলাপি গোলাপ বা পিঙ্ক রোস। এই ফুলের নামেই মাছটির নাম রাখা হয় ‘রোস-ভেইল্ড ফেয়ারি রাসে’। জন্মের সময় এই মাছ থাকে নারী। কিন্তু নির্দিষ্ট বয়স পার হলেই এই মাছ পরিণত হয় পুরুষে। শারীরিক গঠন এবং হরমোনাল পরিবর্তনের সাথে সাথে শরীরের রঙও বদলে যায় এদের। আঁশেরও পরিবর্তন হয় এবং আঁশের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সমুদ্রের ৭০ থেকে ১৫০ মিটার গভীরে এই মাছের বাস। সমুদ্রের একদম মাঝামাঝি গভীরতায় থাকার কারণে এরা এতদিন যেমন স্কুবা ডাইভারদের নজর এড়িয়ে গেছে, তেমনি সাবমেরিনও এদের নাগাল পায়না। ফলে এতদিন আড়ালেই ছিল এই বিচিত্র প্রজাতির মাছটি। তবে রোস-ভেইল্ড ফেয়ারি রাসে -র ক্ষেত্রে এই লিঙ্গ পরিবর্তনের বিষয়টি জনমানসে বিস্ময়ের উদ্রেক করলেও মৎস্য জগতে এই ঘটনা আদৌ বিরল কিংবা বিচিত্র নয়। নারী থেকে পুরুষ হয়ে যাওয়ার উদাহরণ যেমন আছে তেমনি পুরুষ থেকে নারী তে রূপান্তরিত হওয়ার ঘটনাও আছে। বিজ্ঞানীদের মতে সমগ্র বর্তমান সমস্ত মৎস্য প্রজাতির দুই শতাংশ প্রজাতির মধ্যে এই ধরণের লিঙ্গ পরিবর্তনের ক্ষমতা লক্ষ করা যায়। যেমন কবুডাই। মূলত জাপানে পাওয়া যায় এই মাছ। কবুডাইও রোস-ভেইল্ড ফেয়ারি রাসের মতো নারী থেকে পুরুষে নিজেকে রূপান্তরিত করে নিতে পারে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ান ব্যারামুন্ডি, গিল্টহেড সিব্রীম এই মাছগুলি পুরুষ হয়ে জন্মালেও নিজেকে পরবর্তীকালে নারীতে রূপান্তরিত করে নিতে সক্ষম। তবে এই বিশেষ প্রজাতির মাছেদের মধ্যে লিঙ্গ পরিবর্তনের এই ক্ষমতা এবং প্রয়োজনীয়তা কেন হল তা এখনো জানা যায়নি। গবেষকরা এটি নিয়ে এখনো গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
