কলকাতা ডার্বি

কলকাতা ডার্বি

কলকাতা ফুটবল ডার্বি বা কলকাতা ডার্বি (Kolkata Football Derby) বিষয়ে জানার আগে প্রথমে জেনে নিতে হবে ‘ডার্বি’ কাকে বলে। সাধারণভাবে, স্থানীয় দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী দল যাদের মধ্যে খেলা নিয়ে ঐতিহাসিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে, সমর্থকদের মধ্যে রয়েছে প্রবল উন্মাদনা সেই রকম দুটি দলের মধ্যে খেলাকেই ডার্বি বলা হয়। ডার্বি কথাটির উৎপত্তি ঘৌড় দৌড়ের প্রতিযোগিতা থেকে। তবে বর্তমানে যেকোন খেলাতেই ব্যবহার করা হয়। আর সব থেকে বেশি ব্যবহৃত হয় ফুটবলের ক্ষেত্রে। সারা বিশ্বে এরকম কিছু বিখ্যাত ডার্বি হল – ইংল্যান্ডের ম্যাঞ্চেস্টার ডার্বি (ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড – ম্যাঞ্চেস্টার সিটি), স্পেনের মাদ্রিদ ডার্বি (রিয়াল মাদ্রিদ – অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ) ইত্যাদি। ভারতের কলকাতা শহরেও এরকম তিনটি বিখ্যাত ফুটবল ডার্বির কথা বলা যায় – মোহন বাগান – ইস্ট বেঙ্গল (Mohun Bagan vs East Bengal), মোহন বাগান – মহামেডান (Mohun Bagan vs Mahammedan), ইস্ট বেঙ্গল – মহামেডান (East Bengal vs Mahammedan)। তবে এর মধ্যে মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গলের মধ্যে ডার্বি এশিয়ার বৃহত্তম ফুটবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হিসেবে ধরা হয় এবং ফিফা (FIFA) একে ‘ক্লাসিক ফুটবল ডার্বি’ (Classic Football Derby) হিসেবে মর্যাদা দিয়েছে। এই ডার্বিকে ‘বড় ম্যাচ’ ও বলা হয়ে থাকে।

প্রায় ১০০ বছর পূর্ণ হতে চলা এই ফুটবল ডার্বির শুরুর ইতিহাসের দিকে নজর দেওয়া যাক। মোহনবাগান ভারতের প্রাচীনতম ফুটবল ক্লাব যা এখনও বর্তমান। মোহনবাগানের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে। ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে খালি পায়ে খেলে ব্রিটিশদের ক্লাব ইস্ট ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্টকে আইএফএ শিল্ডের (IFA Shield) ফাইনালে হারিয়ে দেশাত্মবোধের এক অনন্য নজির সৃষ্টি করে। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে জোড়াবাগানের বিরুদ্ধে খেলায় মোহনবাগান তাদের তারকা খেলোয়াড় শৈলেশ বোসকে ছাড়াই মাঠে নামে। ফলত ক্লাবের সহ-সভাপতি সুরেশচন্দ্র চৌধুরী এতটাই ক্ষুব্ধ হন যে ইস্ট বেঙ্গল ক্লাব তৈরি করেন। প্রথম মোহনবাগান ইস্ট বেঙ্গল ম্যাচটি হয়েছিল ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই আগস্ট। ক্লাবের সহ প্রতিষ্ঠাতারা প্রধানত পূর্ববঙ্গের (বর্তমান বাংলাদেশ) ছিলেন বলে ক্লাবটি পূর্ববঙ্গের মানুষদের দ্বারা সমর্থিত হয় ফলত পশ্চিমবঙ্গের মানুষেরা মোহনবাগানকে সমর্থন করতে থাকেন। একটা সময় পর্যন্ত মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল যথাক্রমে ঘটি ও বাঙাল ক্লাব হিসেবে চিহ্নিত হয়ে এসেছে। তবে বর্তমানে, এই সমর্থন আস্তে আস্তে পাল্টাচ্ছে এবং ঘটি-বাঙাল নির্বিশেষে দুদলকেই সমর্থন করছে। ইস্ট বেঙ্গলের প্রতীক ইলিশ মাছ ও মোহনবাগানের প্রতীক গলদা চিংড়ি হিসেবে পরিচিত। পরিসংখ্যান নিয়ে সমর্থকদের মধ্যে তর্কবিতর্ক থাকলেও সমস্ত রকম প্রতিযোগিতার বিচারে দুটি দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে ইস্টবেঙ্গল এগিয়ে থাকলেও ট্রফি জয়ের বিচার মোহনবাগান এগিয়ে।

আরও পড়ুন:  ফিফা বিশ্বকাপ ১৯৮৬

ভারতীয় ফুটবলে মানুষের আগ্রহ কম থাকলেও কলকাতা ডার্বি নিয়ে উৎসাহ তুঙ্গে ওঠে এবং স্টেডিয়াম সবসময়েই কানায় কানায় পূর্ণ হয়। এর মধ্যে ১৯৯৭ সালের ফেডারেশন কাপ সেমি ফাইনালে ১,৩১,০০০ দর্শক হয় যা ভারতের যেকোন রকম ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সর্বাধিক।

One comment

আপনার মতামত জানান