অলিভার ক্রমওয়েল

অলিভার ক্রমওয়েল

ইংল্যান্ডের রাজনীতির দীর্ঘ উত্থানপতনময় ইতিহাসে যাঁদের অবদান স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন ব্রিটিশ জেনারেল এবং রাষ্ট্রনায়ক অলিভার ক্রমওয়েল (Oliver Cromwell)। একজন দক্ষ সামরিক নেতা হিসেবে তিনি ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ইংল্যান্ডের গৃহযুদ্ধের সময়ে প্রথম চার্লসের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক সংগ্রামে পার্লামেন্টের অশ্বারোহী সেনাবাহিনীর নেতৃত্বদানকারী হিসেবে নিজের অনবদ্য সমরকুশলতা প্রদর্শন করেছিলেন তিনি। স্টুয়ার্ট রাজতন্ত্রের পতনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। নবপ্রতিষ্ঠিত প্রজাতন্ত্রী কমনওয়েলথের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন ক্রমওয়েল। আমৃত্যু তিনি ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডের লর্ড প্রোটেক্টরের আসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। পিউরিটান ধর্মবিশ্বাসে প্রবল আস্থাবান এই মানুষটি দেশে-বিদেশে নানা সমরাভিযানে সাফল্য অর্জন করেছিলেন। রণনৈপুণ্য, চারিত্রিক দৃঢ়তা এবং নেতৃত্বদানের যোগ্যতা অলিভার ক্রমওয়েলকে আধুনিক ইউরোপীয় ইতিহাসের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য শাসকদের মধ্যে অন্যতম একজন করে তুলেছে।

১৫৯৯ সালের ২৫ এপ্রিল ইংল্যান্ডের কেমব্রিজশায়ারের একটি শহর হান্টিংডনে অলিভার ক্রমওয়েলের জন্ম হয়। তাঁর বাবা রবার্ট ক্রমওয়েল (Robert Cromwell) এবং তাঁর মা এলিজাবেথ (Elizabeth) ছিলেন উইলিয়াম স্টুয়ার্ডের কন্যা এবং রবার্ট ক্রমওয়েলের দ্বিতীয় স্ত্রী। তাঁদের দশ সন্তানের মধ্যে অলিভার ছিলেন পঞ্চম। অলিভারের বাবা রানি এলিজাবেথের পার্লামেন্টের একজন সদস্য ছিলেন। একজন ভূস্বামী এবং শান্তি স্থাপনকারী বিচারক হিসেবে তিনি স্থানীয় অনেক ঘটনায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করতেন। উত্তরাধিকারসূত্রে রবার্ট একটি বাড়ি এবং কিছু পরিমাণ জমি পেয়েছিলেন। অষ্টম হেনরির মুখ্যমন্ত্রী টমাস ক্রমওয়েল ছিলেন অলিভারের প্রপিতামহ। এসব থেকেই বুঝতে পারা যায় বেশ সম্ভ্রান্ত এক পরিবারেই অলিভারের জন্ম হয়েছিল। উত্তরাধিকার সূত্রে তিনিও বেশ কিছু সম্পত্তির মালিক হন। অলিভার তাঁর পিতামহের কাছেই বড় হয়ে ওঠেন। তাঁর পিতামহ নিয়মিত রাজার শিকার দলকে আপ্যায়ন করতেন।অলিভারের বয়স যখন আঠারো বছর তখন তাঁর পিতৃবিয়োগ ঘটে।যদিও তাঁর বিধবা মা ৮৯ বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন।

১৫৯৯ সালের ২৯ এপ্রিল সেন্ট জন’স চার্চে অলিভার খ্রিস্টধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেন। প্রাথমিক স্তরের শিক্ষালাভের জন্য প্রথমে তিনি হান্টিংডন গ্রামার স্কুলে ভর্তি হন। তারপর এক বছরের জন্য তিনি কেমব্রিজের সিডনি সাসেক্স কলেজে ভর্তি হন আরও উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য। সেসময় তিনি তাঁর মালিকানাধীন জমির ভাড়াটিয়াদের খাজনা থেকেই নিজের জীবন চালাতেন। যদিও বাবার মৃত্যুর পর তিনি তাঁর বিধবা মা এবং বোনেদের দেখাশোনা করবার জন্য ১৬১৭ সালের জুন মাসে ডিগ্রি না নিয়েই কেমব্রিজ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। অনেক জীবনীকারের কথা অনুযায়ী, অলিভার নাকি লন্ডনের বিখ্যাত আইন অধ্যয়নের প্রতিষ্ঠান লিঙ্কনস ইনে ভর্তি হয়েছিলেন, কিন্তু লিঙ্কনস ইনের আর্কাইভ থেকে এই তথ্যের প্রমাণ কিছু মেলে না। আন্তোনিয়া ফ্রাশের মতে, তিনি লন্ডনের ইনস অফ কোর্টের একটিতে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে ১৬২০ সালের ২২ আগস্ট লন্ডনের ফোরস্ট্রীটে অবস্থিত সেন্ট গিলেস-উইদআউট-ক্রিপলগেটে এলিজাবেথ বার্চিয়ারকে (Elizabeth Bourchier) বিবাহ করেন অলিভার ক্রমওয়েল। এলিজাবেথের বাবা স্যার জেমস বার্চিয়ার ছিলেন লন্ডনের একজন চামড়া ব্যবসায়ী যিনি এসেক্সে বিস্তীর্ণ জমির মালিক ছিলেন। এই বিবাহের পর ক্রমওয়েলের বিচারপতি ও রাজনীতিবিদ অলিভার সেন্ট জেন এবং লন্ডনের বণিক সম্প্রদায়ের নেতৃত্বস্থানীয় সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপিত হয়। এই যোগাযোগ পরবর্তীকালে তাঁর সামরিক এবং রাজনৈতিক জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হবে। অলিভার এবং এলিজাবেথের যে পাঁচ পুত্র এবং চার কন্যার জন্ম হয়েছিল তাঁরা হলেন যথাক্রমে রবার্ট ক্রমওয়েল, অলিভার ক্রমওয়েল, ব্রিজেট ক্রমওয়েল, রিচার্ড ক্রমওয়েল, হেনরি ক্রমওয়েল, এলিজাবেথ ক্রমওয়েল, জেমস ক্রমওয়েল, মেরি ক্রমওয়েল এবং ফ্রান্সেস ক্রমওয়েল। বিবাহের পর নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন হয়ে ওঠেন তিনি। তবে সেসময় এক আধ্যাত্মিক এবং মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে তাঁকে যেতে হয়েছিল, ফলে তাঁর মন বিভ্রান্ত এবং স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ক্রমে পিউরিটান ধর্মের প্রতি বিশ্বাস তাঁর বদ্ধমূল হয়ে ওঠে। তাঁর মধ্যে ধর্মবিশ্বাসের এই পুনর্নবীকরণ হওয়ার ফলে তিনি ইংল্যান্ডে প্রোটেস্ট্যান্ট সংস্কারের জন্য লড়াই করার এবং ক্যাথলিক প্রভাব থেকে গির্জাকে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন।


সববাংলায় সাইটে বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য আজই যোগাযোগ করুন
contact@sobbanglay.com


 

১৬২৮ সালে অলিভার হান্টিংডনের সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে সক্রিয় রাজনীতিতে পদার্পণ করেছিলেন। ১৬২৯ সালের ২ মার্চ পর্যন্ত এই পদের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ১৬২৯ সালে হান্টিংডন শহরের জন্য একটি নতুন সনদ সংক্রান্ত ব্যাপারে সেখানকার ভদ্রলোকদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন তিনি এবং ১৬৩০ সালে তাঁকে প্রিভি কাউন্সিলের সামনে ডাকা হয়। ১৬৩১ সালে ক্রমওয়েল সম্ভবত বিবাদের ফলে, হান্টিংডনে তার বেশিরভাগ সম্পত্তি বিক্রি করে দেন এবং কাছাকাছি সেন্ট আইভসের একটি খামারে চলে যান। ১৬৩৪ সালে অলিভার ক্রমওয়েল আমেরিকার কানেকটিকাট কলোনিতে অভিবাসন করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সরকার তাকে যেতে বাধা দেয়।

ভাই হেনরির সঙ্গে অলিভার মুরগি এবং ভেড়ার একটি ছোট খামার দেখাশোনা করতেন এবং ডিম ও পশম বিক্রি করে নিজেদের ভরণ-পোষণ করতেন। এক কৃষকের মতো জীবনযাপন করতেন তিনি তখন। ১৬৩৬ সালে উত্তরাধিকার সূত্রে অলিভার তাঁর মায়ের দিক থেকে এলি শহরে কিছু সম্পত্তি পেয়েছিলেন এবং সেইসঙ্গে পেয়েছিলেন এলি ক্যাথিড্রালের ধর্মীয় একপ্রকার কর ‘টিথে’ বা দশমাংশ সংগ্রহ করবার কাজ যা তাঁর কাকা করতেন। সেসময় তিনি একজন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ পিউরিটান হয়ে ওঠেন এবং লন্ডন ও এসেক্সের নেতৃস্থানীয় পরিবারগুলির সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ পারিবারিক সম্পর্ক স্থাপন করেন।

হান্টিংডন সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর প্রথম চার্লস সংসদ ছাড়াই এগারো বছর শাসন করেন, কিন্তু স্কটিশ বিশপদের বিদ্রোহের সম্মুখীন হয়েছিলেন যখন, তহবিলের অর্থাভাবে তাঁকে পুনরায় সংসদ আহ্বান করতে হয় ১৬৪০ সালে। এই সংসদে কেমব্রিজের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন অলিভার ক্রমওয়েল । যদিও এই সংসদ মাত্র তিন মাস টিকেছিল বলে একে সংক্ষিপ্ত সংসদ বলা হয়। ১৬৪০ সালেই অলিভার তাঁর পরিবার নিয়ে এলি থেকে লন্ডনে চলে আসেন। সেবছরই একটি দ্বিতীয় সংসদ আহ্বান করা হয়, এটি দীর্ঘ সংসদ নামে পরিচিত হয় এবং পুনরায় কেমব্রিজের সদস্য হিসেবে ক্রমওয়েল ফিরে আসেন। এই লং পার্লামেন্টের প্রথম দুই বছর ক্রমওয়েল হাউস অফ লর্ডস এবং হাউস অফ কমন্সের সদস্যদের ধার্মিক গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন যাদের সঙ্গে তিনি ১৬৩০-এর দশকে পারিবারিক এবং ধর্মীয় সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন।

১৬৪২ সালে রাজা চার্লস এবং পার্লামেন্টের মধ্যেকার বিবাদ, সংগ্রাম ক্রমে যুদ্ধের দিকে অগ্রসর হয় এবং শুরু হয় ইংল্যান্ডের প্রথম গৃহযুদ্ধ। সেইসময় সংসদের পক্ষ থেকে অস্ত্রধারণ করা সদস্যদের মধ্যে প্রধান ছিলেন অলিভার ক্রমওয়েল । এই সংঘাত স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড এবং ওয়েলসে ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রায় নয় বছর স্থায়ী হয়। কেবলমাত্র একজন পিউরিটান হিসেবেই নয়, বরং এক নেতৃত্বে সক্ষম এবং দক্ষ সংগঠক রূপেও দেখা দেন অলিভার। জুলাই মাসে ‘হাউস অফ কমন্স’ থেকে কেমব্রিজকে সংগঠিত করতে এবং প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠন করতে নির্দেশ পান তিনি। আগস্ট মাসে নিজে কেমব্রিজ যান অলিভার ক্রমওয়েল এবং কলেজগুলি থেকে রাজার সুবিধার্থে যে রূপার পাত পাঠানো হত, সেই চালান বন্ধ করে দেন। এরপর নিজের জন্মস্থান হান্টিংডনে অশ্বারোহী সৈন্যদের তালিকাভুক্ত করেন। প্রথমবারের মত তিনি অধিনায়ক হিসেবে তাঁর সৈন্যদের সঙ্গে নিয়ে এজহিলের যুদ্ধের একেবারে শেষপর্যায়ে উপস্থিত হন। ১৬৪৩ সালের ২৮ জুলাই ইস্ট অ্যাংলিয়ায় গেইনসবরোর যুদ্ধে সাফল্য লাভ করেন অলিভার ক্রমওয়েল। পরবর্তীকালে আইল অব এলির গভর্নর পদের দায়িত্ব পান তিনি এবং ইস্টার্ন অ্যাসোসিয়েশনের একজন কর্নেল হিসেবেও নিযুক্ত হন।

১৬৪৪ সালের জুলাই মাসে মার্স্টন মুরের যুদ্ধের সময়, ক্রমওয়েল ম্যানচেস্টারের অশ্বারোহী বাহিনীতে লেফটেন্যান্ট জেনারেলের পদে উন্নীত হন এবং সেই যুদ্ধে সফলতা লাভ করেন। এই জয়লাভের ফলে উত্তর ইংল্যান্ড সুরক্ষিত হয়। ১৬৪৫-এর শুরুর দিকে পার্লামেন্ট সেল্ফ-ডিনাইয়িং অর্ডিন্যান্স জারি করেন যাতে সেনাবাহিনীকে একটি জাতীয় ভিত্তিতে পুনর্নিমার্ণের কথা বলা হয়৷ ১৬৪৫ সালে যখন একটি নতুন জাতীয় সেনাবাহিনী হিসেবে ‘দ্য নিউ মডেল আর্মি’ তৈরি করেন পার্লামেন্টের সদস্যরা, তখন অলিভার ক্রমওয়েলকে সেই সেনাদলের অশ্বারোহী বাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে সেকেন্ড ইন কমান্ড পদে নিযুক্ত করা হয়েছিল। নাসেবির যুদ্ধের মাধ্যমে প্রথম গৃহযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটেছিল এবং নাসেবি ছাড়াও ল্যাংপোর্টের যুদ্ধে ক্রমওয়েলের নেতৃত্ব রাজার বাহিনীকে সম্পূর্ণরূপে পরাস্ত করেছিল। ১৬৪৬ সালের ৫ মে স্কটদের কাছে প্রথম চার্লস আত্মসমর্পণ করেন। ১৬৪৭ সালের শারীরিক অসুস্থতার কারণে এক মাসেরও বেশি সময় রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন ক্রমওয়েল। হাউস অফ কমন্সের বেসামরিক নেতারা বলেন যে সেনাবাহিনীকে তারা বিশ্বাস করতে পারেন না এবং এটিকে ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দেন ও পরিবর্তে সুরক্ষার জন্য স্কটিশ সৈন্য নিয়োগ করেন। অলিভারের তাতে সমর্থন ছিল না, কারণ স্কটিশ সৈন্যদের অপছন্দ করতেন তিনি।

কারারুদ্ধ রাজা আপোশে রাজি হলে হেনরি আইরেটনকে একটি সাংবিধানিক মীমাংসা প্রস্তাব রচনা করতে বলেন অলিভার ক্রমওয়েল। রাজার সঙ্গে একটি রাজনৈতিক চুক্তিতে ব্যর্থতার ফলে শেষ পর্যন্ত ১৬৪৮ সালে দ্বিতীয় গৃহযুদ্ধ শুরু হয় ইংল্যান্ডে। তখন রাজা অস্ত্রের জোরে ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করেন। তখন সাউথ ওয়েলসে রাজকীয় বিদ্রোহ দমন করেন যেমন, তেমনি প্রেস্টনে স্কটিশ রাজপন্থী সেনাদের সঙ্গে সংগ্রামে জয়লাভ করেন ক্রমওয়েল। চার্লসের মৃত্যু পরোয়ানায় অলিভারসহ আরও ৫৯জন স্বাক্ষর করেছিলেন। ১৬৪৯ সালের ৩০ জানুয়ারি রাজার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। রাজার মৃত্যুর পরে একটি প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হয় যা ইংল্যান্ডের কমনওয়েলথ নামে পরিচিত। ক্রমওয়েল রাম্প পার্লামেন্টের এবং পরবর্তীতে কাউন্সিলের সদস্য নিযুক্ত হন। ইতিমধ্যে আয়ারল্যান্ডে পুনরায় রাজতন্ত্র দানা বাঁধতে শুরু করলে রাম্প পার্লামেন্ট ক্রমওয়েলকে তা প্রতিরোধের দায়িত্ব দেয়। লেভেলার বিদ্রোহ দমনের পর জুলাই মাসে আয়ারল্যান্ড যান তিনি। আইরিশ কনফেডারেট ক্যাথলিকদের বিরুদ্ধে তাঁর জয় অনেকের মতে খুব নৃশংস ছিল। দ্বিতীয় চার্লসের নির্বাসন থেকে স্কটল্যান্ডে ফেরা এবং কভেনান্টার শাসন কর্তৃক তাঁকে রাজা হিসেবে ঘোষণা করবার খবর পেয়ে ক্রমওয়েল ১৬৫০ সালে ইংল্যান্ডে ফিরে আসেন এবং স্কটল্যান্ড আক্রমণ করেন। ১৬৫০-এর ৩ সেপ্টেম্বর ডানবারের যুদ্ধে স্কটিশ সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করেন অলিভার ক্রমওয়েল এবং স্কটিশ রাজধানী এডিনবার্গ দখল করেন। ১৬৫১-তে ওর্চেস্টারের যুদ্ধে স্কটিশ রাজকীয় বাহিনীকে পরাস্ত করেন ক্রমওয়েল এবং দ্বিতীয় চার্লস ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডসে পালিয়ে যান, দ্বিতীয় গৃহযুদ্ধেরও অবসান ঘটে।

সেনাবাহিনীরা যখন রাম্প পার্লামেন্টের সদস্যদের দুর্নীতিগ্রস্ত বলে মনে করে দূরে সরে যেতে চায় এবং নতুন পার্লামেন্ট গঠনের কথা বলে তখন সেনাবহিনীর প্রতি ঝুঁকে থাকা ক্রমওয়েল অবশেষে ১৬৫৩ সালে সৈনিকদের আহ্বান করেন ও পার্লামেন্ট ভেঙে দেন। সদস্যদের দুর্নীতির অভিযোগে বহিষ্কার করেন তিনি। এরপর সন্তদের সংসদ বা বেয়ারবোন সংসদ প্রতিষ্ঠিত হয়। ক্রমওয়েলকে তাঁর সদস্য হওয়ার আহ্বান জানালেও তিনি প্রত্যাখান করেন।

বেয়ারবোন সংসদ ভেঙে গেলে জন ল্যামবার্ট নতুন এক সংবিধান পেশ করেন এবং ক্রমওয়েলকে আজীবনের জন্য লর্ড প্রোটেক্টরের দায়িত্ব দেওয়া হলে ১৬৫৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর তিনি  শপথ গ্রহণ করেন। প্রোটেক্টর হিসেবে তিনি প্রথমে জাতির বিশৃঙ্খলা নিরাময় করার পরিকল্পনা করেন, বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের চেষ্টা করেন। ডাচদের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করার ফলে অ্যাংলো-ডাচ যুদ্ধের অবসান হয়। আধ্যাত্মিক এবং নৈতিক সংস্কারেও জোর দেন তিনি। ইংল্যান্ডকে সামরিক জেলাতে বিভক্ত করেন অলিভার ক্রমওয়েল। চতুর্দশ লুইয়ের সঙ্গে প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন তিনি। ইহুদিদের ইংল্যান্ডে ফিরে যেতে উৎসাহিত করেছিলেন অলিভার। প্রোটেক্টর হিসেবে তাঁর আরও নানা সংস্কার এবং কীর্তি ইতিহাসে আজও সমুজ্জ্বল।

১৬৫৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর হোয়াইটহলে ৫৯ বছর বয়সে অলিভার ক্রমওয়েলের মৃত্যু হয়।

One comment

আপনার মতামত জানান