eid

রমজান

রমজান মাস। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র এই মাসটি কঠোর উপবাসের মধ্যে দিয়ে এক মাস ধরে পালিত হয়  এ আমরা সবাই জানি। কিন্তু এই উপবাসের মাহাত্ম্য কি সে সম্পর্কে আমরা কজনই বা খোঁজ রাখি। এই সুযোগে  আসুন আজ একটু জেনে নেওয়া যাক পবিত্র রমজান  সম্পর্কে।

সৌর ক্যালেন্ডার অর্থাৎ আকাশে সূর্যের অবস্থান অনুযায়ী যে ক্যালেন্ডারটি তৈরী, যা কিনা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত (মানে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর) সেরকম ইসলাম ধর্মেও আর এক ধরনের ক্যালেন্ডারের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এই ক্যালেন্ডার চান্দ্র ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত কারণ এই ক্যালেন্ডারটি গণনা করা হয় আকাশে চাঁদের উপস্থিতির ওপর ভিত্তি করে। এই ইসলামিক ক্যালেন্ডারের নবম মাসটি হল ‘রামাদান’ (Ramadan) যাকে আমরা ভারতীয়রা ‘রমজান’ (Ramadan) মাস নামে চিনি। এই রমজান মাসটিকে ইসলামে সবচেয়ে পবিত্র মাস হিসেবে গণ্য করা হয় কারণ ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা মনে করেন এই রমজান (Ramadan) মাসেই হজরত মহম্মদ (সাঃ) সর্বপ্রথম কোরানের উপদেশগুলি দেন এবং তিনি এও বলেন এই মাসের পুরোটা জুড়েই স্বর্গের দরজা অবারিত উন্মুক্ত হবে এবং নরকের দরজা বন্ধ থাকবে। রমজান এর পরবর্তী মাস হল ‘শাওয়াল’ এবং এই শাওয়াল মাসটির প্রথম দিনটি ‘ঈদ উল ফিতর’ হিসেবে পালিত হয়।

রমজান মাসের প্রতি দিন সুর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পুরো সময়টা সম্পূর্ণ উপবাস করে থাকেন ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা। সূর্যোদয়ের আগেই সারাদিনের মতো খাওয়া-দাওয়া করে নেন তাঁরা যা ‘সেহরি’নামে পরিচিত। আবার সূর্যাস্তের পর খাদ্য গ্রহণ করেন যাকে ‘ইফতার’বলা হয় । মুসলিমরা এই রমজান  মাসের পুরোটা জুড়ে উপবাস করে। এই উপবাস হজরত মহম্মদ(সাঃ) মুসলিমদের জন্য আবশ্যিক করেন। এই উপবাস ‘সাওম’ নামে পরিচিত হলেও ‘রোজা’ হিসেবে বেশী পরিচিত।খ্রিষ্টানদের মধ্যেও ইস্টার-এর আগে চল্লিশ দিন উপবাসের রীতি প্রচলিত আছে, যার নাম ‘লেন্ট’,তবে তাঁদের এই উপবাস বাধ্যতামূলক নয়। মুসলিমদের মতো ইহুদিরাও ‘ইয়ম কিপ্পুর’-এ উপবাস করেন, আর হিন্দুদের মধ্যে উপবাসের রীতি তো আছেই। রমজানের উপবাস সকলের কর্তব্য, কেবল অসুস্থ বা জরাগ্রস্ত মানুষ, অন্তঃসত্ত্বা নারীরা ছাড় পান।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

রামাদান (Ramadan) কথাটি এসেছে মূল আরবি শব্দ ‘রামীদা’ বা ‘আর-রামাদ’ থেকে, যার মানে পুড়িয়ে দেওয়া গরম। রামাদান কথাটির মাধ্যমে কৃচ্ছ্রসাধন ও ত্যাগের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে যাতে মানুষের মনের জোর (তৌফিক)আরো দৃঢ় হয়। পৃথিবীর নানা জায়গায় বেশ কিছু মসজিদে রমজান (Ramadan) মাসের সাতাশ রাত্রি ধরে সমগ্র কোরান পাঠ করা হয়, যার নাম ‘তারাবি’। এই এক মাস জীবনাচরণের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কঠোর সংযম পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এই মাসটির একটি বড় বৈশিষ্ট্য ‘জাকাত’। আয়ের একটা অংশ দরিদ্রকে দান করার (‘সাদাকা’) এই রীতি ইসলামি জীবনাচরণের একটি স্তম্ভ। রমজানের সময় এই দানের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়।

সর্বশক্তিমানের কাছে করুণা ভিক্ষা এবং মানবজাতির শান্তি কামনা ঈদের প্রার্থনার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। রমজান (Ramadan) মাসের এই কঠোর কৃচ্ছ্রসাধন সেই শান্তি কামনারই এক কঠোর প্রস্তুতি।

2 comments

আপনার মতামত জানান