ঈদুল ফিতর

ঈদুল ফিতর

ঈদুল ফিতর সমগ্র পৃথিবী জুড়ে ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষদের কাছে একটি পবিত্র দিন। ঈদুল ফিতর একটি আরবি শব্দ, যার বাংলা অর্থ ‘রোজা ভাঙার দিন’। যদিও চলতি কথায় ঈদ অর্থে ঈদুল ফিতরকে বোঝানো হয়ে থাকে, কিন্তু ঈদুল ফিতর আর ঈদ শব্দ দুটি সমার্থক নয়। ঈদ শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল উৎসব। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের দুটি সবচেয়ে বড় উৎসব বা ঈদ পালিত হয়। তার মধ্যে একটি হল ঈদুল ফিতর আর অন্যটি হল ইদুজ্জোহা

সারা রমজান মাসে রোজা রাখার পর শাওয়াল মাসের শুরুতে মুসলমানেরা ঈদুল ফিতর দিনটি আনন্দের সাথে পালন করে। রমজান মাসের শেষ এবং শাওয়াল মাসের শুরু হয় ঈদুল ফিতরের মধ্যে দিয়ে। যেহেতু ইসলাম চন্দ্র পঞ্জিকা মান্য করে চলে, তাই ঈদুল ফিতরের ঘোষণা করার সময় চাঁদ দেখা জরুরী। রমজান মাসের শেষে একফালি নতুন চাঁদ দেখা গেলে পরদিন ঈদুল ফিতর পালিত হয়। এই যে একফালি চাঁদ ওঠে, তাকেই ঈদের চাঁদ বলা হয়। ঈদের আগের রাতটিকে ইসলামী পরিভাষায় ‍‍লাইলাতুল জায়জা‌ বলা হয়। এর আক্ষরিক অর্থ হল পুরস্কারের রাত। ইসলামী বিধান অনুযায়ী একটা বিষয় খুব জরুরী তা হল এই ঈদের চাঁদ স্বচক্ষে দেখে তবেই ঈদের ঘোষণা বা পালন করা সম্ভব। যদি নিজে চোখে চাঁদ নাও দেখে তাহলে বিশ্বস্ত এবং জ্ঞানী কেউ (বিশেষ করে সেই এলাকার মসজিদের ইমাম) ঈদের চাঁদ দেখেছে কিনা তা জানতে চাওয়া হয়। যদি প্রাকৃতিক কোন কারণে (যেমন মেঘে ঢাকা থাকা), সেই এলাকায় চাঁদ না দেখা যায়, তাহলে অন্য এলাকায় বিশ্বস্ত এবং জ্ঞানী ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করা হয়। যদি তাও না হয়, তাহলে সেই রাজ্যের কেউ দেখেছে কিনা, না হলে সেই দেশে কেউ দেখেছে কিনা। এই চাঁদ দেখার জন্য বাংলাদেশে আছে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি।

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ঈদুল ফিতরের প্রবর্তন করেন। তিনিই প্রথম ঈদুল ফিতরের আয়োজন করেছিলেন। যখন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মদিনাতে এসেছিলেন, তিনি দেখেছিলেন সেখানকার মানুষজন দুটি বিশেষ দিন কে খুব আনন্দ আর উৎসবের মধ্যে দিয়ে পালন করেন। তিনি মুসলমানদের সেই উৎসব দুটি পালন করতে মানা করেন এবং বলেন যে মহান আল্লাহ ওই উৎসবের বিনিময়ে পবিত্র দুটি দিন দান করেছেন। সেই বিশেষ দুটি দিন‌ হল ঈদুল ফিতর এবং ইদুজ্জোহা। আনুমানিক ইংরাজি ৬২৪ সালের ৩০ বা ৩১ মার্চ মুসলমানেরা প্রথম ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়ে।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

সাধারণত খোলা মাঠ অথবা বড় কোনো ঘরে বা মসজিদে ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়া হয়। ঈদের দিন ভোরে মুসলমানরা আল্লাহর ‘ইবাদত’ অর্থাৎ প্রার্থনা করে থাকে। ফযরের নামাজ অর্থাৎ সূর্য ওঠার আগের নামাজের নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর ঈদুল ফিতরের নামাজের সময় হয়। সাধারণত ঈদের নামাজের পরে মুসলমানরা সমবেতভাবে ‘মুনাজাত’ অর্থাৎ আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে এবং একে অন্যের সাথে কোলাকুলি করে ঈদের সম্ভাষণ বিনিময় করে থাকে এবং পরস্পরকে তারা বলে “ঈদ মুবারাক”। ঈদের দিন অবশ্যকর্তব্য আরেকটি কাজ হল অভাবী বা দুঃস্থ মানুষদের টাকা পয়সা দান করা, যেটিকে ‘ফিৎরা’ বলা হয়ে থাকে । এই কাজটি মুসলমান মানুষদের একটি কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। ঈদের নামাজের আগেই ফিৎরা আদায় করার কথা বলা হয়। তবে ভুলক্রমে নামাজ পড়া হয়ে গেলেও ফিৎরা আদায় করা যায়।

বাংলাদেশ সহ অন্যান্য মুসলিম প্রধান দেশগুলোতে ঈদুল ফিতর বড় উৎসব। এই সময়ে নতুন পোশাক কেনার রীতি আছে। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সারা রমজান মাস ধরেই কেনাকাটা চলে। বড়দের থেকে ছোটরা উপহার গ্রহণ করে, যাকে বলা হয় ঈদি। ছোটদের কাছে ঈদি খুবই জনপ্রিয়। এই দিনে খুব সুন্দর করে বাড়ি সাজানো হয়। যে যার বাড়িতে নিজের সাধ্যমতো বিশেষ খাবারের আয়োজন করে।  অনেকে এই দিনে আত্মীয় বা বন্ধুবান্ধবকে আমন্ত্রণ করে খাওয়ায়।

আপনার মতামত জানান