ইদুজ্জোহা সমগ্র পৃথিবী জুড়ে ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষদের কাছে একটি পবিত্র দিন। এই দিনটির অন্যান্য আরও নাম আছে। ঈদুল আজহা বা ঈদুল আধহা বা বকরি ঈদ। অনেক সময় একে কোরবানির (বলিদান) ঈদ বলেও অভিহিত করা হয়। ঈদ শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল উৎসব। আধহা শব্দটির অর্থ ত্যাগ। ঈদুল আজহা বা ঈদুল আধহা শব্দটি আরবি শব্দ, যার অর্থ ‘ত্যাগের উৎসব’। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের দুটি সবচেয়ে বড় উৎসব বা ঈদ পালিত হয়। তার মধ্যে একটি হল ঈদুল ফিতর আর অন্যটি হল ইদুজ্জোহা।
হিজরি বছরের শেষ মাস হল জিলহজ। এই মাস মুসলিমদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই মাসেরই ১০ তারিখে ইদুজ্জোহা পালিত হয়। যেহেতু ইসলাম চন্দ্র পঞ্জিকা মান্য করে চলে, তাই ইদুজ্জোহা ঘোষণা করার সময় চাঁদ দেখা জরুরী। ইসলামী বিধান অনুযায়ী একটা বিষয় খুব জরুরী তা হল এই ঈদের চাঁদ স্বচক্ষে দেখে তবেই ঈদের ঘোষণা বা পালন করা সম্ভব। যদি নিজে চোখে চাঁদ নাও দেখে তাহলে বিশ্বস্ত এবং জ্ঞানী কেউ (বিশেষ করে সেই এলাকার মসজিদের ইমাম) ঈদের চাঁদ দেখেছে কিনা তা জানতে চাওয়া হয়। যদি প্রাকৃতিক কোন কারণে (যেমন মেঘে ঢাকা থাকা), সেই এলাকায় চাঁদ না দেখা যায়, তাহলে অন্য এলাকায় বিশ্বস্ত এবং জ্ঞানী ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করা হয়। যদি তাও না হয়, তাহলে সেই রাজ্যের কেউ দেখেছে কিনা, না হলে সেই দেশে কেউ দেখেছে কিনা। এই চাঁদ দেখার জন্য বাংলাদেশে আছে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি।
কোরানের বর্ণনা অনুযায়ী আল্লাহর অন্যতম প্রিয় দূত হজরত ইব্রাহিম (মতান্তরে আব্রাহাম) স্বপ্নে আল্লাহর কাছ থেকে তার সবথেকে প্রিয় সম্পদটিকে ত্যাগ করার আদেশ পান। তিনি স্বপ্নে এই আদেশ প্রথমে তাঁর প্রিয় কয়েকটি উট কোরবানি করলেন। কিন্তু তার পরেও তিনি আবার একই স্বপ্ন দেখলেন। তখন তিনি বুঝলেন তাঁর সবথেকে প্রিয় সম্পদ তো তার পুত্র ইসমাঈল। একথা বুঝতে পেরে তিনি পুত্রকে কোরবানির উদ্দেশ্যে মিনায় যাত্রা শুরু করলেন। এর মধ্যে আবির্ভাব ঘটে শয়তানের। শয়তান ইব্রাহিমকে অনেকভাবে নিরস্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাতে সে আল্লাহর ইচ্ছা না পূরণ করে। ইব্রাহিম অবশেষে শয়তানকে পাথর ছুঁড়ে বিদায় করে। পাথর ছুঁড়ে শয়তান বিদায়ের এই ঘটনা হজের নিয়মের একটি অন্যতম পালনীয় আচার যেখানে বড় বড় থামকে শয়তান রূপে কল্পনা করে পাথর ছোঁড়া হয়। আরাফাত পর্বতের ওপর হজরত ইব্রাহিম যখন তাঁর পিয়তম পুত্রকে কোরবানি দিতে গিয়েছিলেন তখন মন যাতে দুর্বল না হয় তার জন্য চোখে কাপড় বেঁধে নিয়েছিলেন। কিন্তু কোরবানির পর কাপড় সরিয়ে দেখেন সামনে ছেলে দাঁড়িয়ে। ইব্রাহিম অবাক হয়ে দেখে যে তার পুত্র সম্পূর্ণ অক্ষত রয়েছে , আর তার পুত্রের জায়গায় কোরবান হয়েছে একটি দুম্বা। ইব্রাহিমের আল্লাহর প্রতি এই যে বিশ্বাস এবং নিষ্ঠা, তা দেখে আল্লাহ তার পুত্রকে অক্ষত রেখে দেন। এটা আল্লাহ শুধুই তাঁর পরীক্ষা নিচ্ছিলেন।
ইব্রাহিমের এই তার পুত্রকে বলিদানের ঘটনা আল্লাহর প্রতি ইব্রাহিমের বিশ্বাস ও নিষ্ঠা আছে সেটাই প্ৰমাণ করে। মুসলমানেদের বিশ্বাস অনুযায়ী আল্লাহর প্রতি ইব্রাহিমের মতই বিশ্বাস ও নিষ্ঠা থাকা প্রতিটি মুসলমানের একান্ত কর্তব্য ।
বাংলাদেশ সহ অন্যান্য মুসলিম প্রধান দেশগুলোতে ইদুজ্জোহা বড় উৎসব। এই দিনে যে যার নিজের সামর্থ্যমত পশু কোরবানির ব্যবস্থা করেন। সাধারণত গরু ও ছাগল কোরবানি দেওয়া হয়। এছাড়া ভেড়া, মহিষ, উট, দুম্বাও কোরবানি দেওয়া হয়। ইসলামের বিধান অনুযায়ী কোরবানিকৃত পশুর মাংস তিনভাগে ভাগ করা হয়। একভাগ নিজেদের জন্য রাখতে হয়, অন্যভাগ আত্মীয়, বন্ধু বা প্রতিবেশীদের দিতে হয় এবং তৃতীয় ভাগ প্রকৃত গরীবদের দিতে হয়। আত্মীয় প্রতিবেশীদের মধ্যে ভাগ করে দেয়। এই দিনে একে অন্যদের বাড়িতে বেড়াতে যায়। বড়দের থেকে ছোটরা উপহার গ্রহণ করে, যাকে বলা হয় ঈদি। ছোটদের কাছে ঈদি খুবই জনপ্রিয়।
তথ্যটি ভিডিও আকারে দেখুন এখানে
BHALO LAGLO …