বিশ্বের এক অন্যতম প্রতিভাবান ফরাসি সাহিত্যিক, ঐতিহাসিক এবং দার্শনিক রোমাঁ রোলাঁ (Romain Rolland)। মূলত একজন নাট্যকার হিসেবে পরিচিত হলেও একাধারে তিনি ছিলেন প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, সঙ্গীত সমালোচক এবং একজন প্রভাবশালী চিন্তাবিদ। রোমাঁ রোলাঁ অধ্যাত্মবাদী এবং শান্তিবাদী একজন মানুষ। ন্যায়বিচার এবং মানবতাবাদী আদর্শে তাঁর অবস্থান ছিল অবিচল। শান্তিসন্ধানী এই মানুষটি আজীবন ফ্যাসিজমের বিরোধিতা করে গেছেন। চিরকাল সত্যের পক্ষে সওয়াল করেছেন তিনি। ভারতবর্ষের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল নিবিড়, বিশেষত ভারতীয় দর্শনচিন্তা এবং অধ্যাত্মচিন্তা বিষয়ে তাঁর প্রবল আগ্রহ ছিল। রবীন্দ্রনাথ, গান্ধীজির সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল পরবর্তীকালে। হিন্দু ধর্মদর্শন এবং স্বামী বিবেকানন্দের বেদান্ত দর্শন তাঁকে প্রভূত প্রভাবিত করেছিল। তিনিই প্রথম ‘পিপলস থিয়েটার’ বা গণনাট্য আন্দোলনের উদ্গাতা ছিলেন।
১৮৬৬ সালের ২৯ জানুয়ারি মধ্য ফ্রান্সের নিভ্র বিভাগের অন্তর্গত ক্ল্যামেসি কমিউনে রোমাঁ রোলাঁর জন্ম হয়। তাঁর পিতা এমিলে রোলাঁ (Emile Rolland) চার প্রজন্মের পারিবারিক ঐতিহ্য বহন করে নোটারি অর্থাৎ আইন পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দেশপ্রেমিক এমিলে ছিলেন ফরাসি প্রজাতন্ত্রী বু্র্জোয়াদের মধ্যে অন্যতম। রোমাঁ রোলাঁর মা অ্যান্টোইনেট-মারি কোরোট রোঁলা (Antoinette-Marie Courot Rolland) সম্পূর্ণ অন্য ধরনের এক জীবনযাপন করতেন৷ জাগতিক বিভ্রান্তির চেয়ে তিনি ভক্তি এবং ধার্মিকতাকেই পছন্দ করতেন বেশি। রোমাঁ রোলাঁকে সঙ্গীতের প্রতি আগ্রহী করে তুলেছিলেন তাঁর মা। রোলাঁর বৌদ্ধিক গঠনেও প্রভূত প্রভাব ছিল তাঁর মায়ের। রোঁলার দুই বোন ছিল যাদের উভয়েরই নাম ছিল ম্যাডেলিন। প্রথম ম্যাডেলিন রোমাঁ রোলাঁর থেকে দুই বছরের ছোট ছিল এবং ১৮৭১ সালে মাত্র তিন বছর বয়সে সম্ভবত ডিপথেরিয়ার কারণে তার মৃত্যু হয়। এর ফলে মৃত্যুভয় রোঁলাকে শঙ্কিত করে তোলে। ছোটোবেলায় লাইব্রেরিতে অনেকটা সময় কাটাতেন তিনি। সেখানেই শেক্সপিয়ার এবং অন্যান্যদের সাহিত্যের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন রোলাঁ। ১৮৯২ সালের ৩১ অক্টোবর রোমাঁ রোলাঁ বিবাহ করেন ক্লোটিল্ড ব্রেল (Clotilde Bréal) নামক এক ফরাসি ইহুদি মহিলাকে। ক্লোটিল্ড প্যারিসের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী এবং শিক্ষাবিদদের পরিবারের মেয়ে এবং প্রচণ্ড সঙ্গীতানুরাগী মানুষ ছিলেন। তাঁরা কিছু সময়ের জন্য রোমে বসবাস করেন যদিও ১৯০১ সালে তাঁদের বিবাহ ভেঙে যায়।
১৮৮০ সালে মায়ের জোরাজুরিতে আরও ভালো স্কুলে পড়বার জন্য রোমাঁ রোলাঁ তাঁর পরিবারসহ প্যারিসে চলে আসেন। প্রথমে প্যারিসের লাইসি সেইন্ট-লুইস স্কুলে পড়াশোনা করেন তিনি। ১৮৮২ সালে লিসি লুই-লে-গ্র্যাণ্ডে ভর্তি হন এবং পরবর্তী চার বছর ‘ইকোলে নরমাল’ নামের প্রতিষ্ঠানে ভর্তির প্রস্তুতি নিতে থাকেন। সেখানে পড়াকালীন বিভিন্ন সঙ্গীতের কনসার্টে যোগ দিতেন তিনি, ফলে সঙ্গীতের প্রতি আবেগ আরও বেড়ে উঠতে থাকে তাঁর। ১৮৮৬ সালে প্যারিসের ইকোলে নরমাল সুপারিউর নামক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করেন তিনি। যদিও দুবার প্রবেশিকা পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছিলেন রোলাঁ। সেখানে তিনি প্রথম দর্শন অধ্যয়ন করেন। যদিও দর্শনের যুক্তির কঠোর প্রকৃতি তাঁর পছন্দ হয়নি। এই প্রতিষ্ঠান থেকে ১৮৮৯ সালে ইতিহাসে অষ্টম স্থানসহ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন রোমাঁ রোলাঁ। এই সময়ে ফরাসি সমাজের অধঃপতনের ফলে তাঁর মোহভঙ্গ হয় এবং তিনি ক্যাথলিক ধর্মে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। ইতিমধ্যে ইকোলে নরমালে পড়বার সময় তিনি বেনেডিক্ট ডি স্পিনোজা এবং লিও টলস্টয়ের লেখা আবিষ্কার করেন। ১৮৮৯ সালে তিনি চলে আসেন রোমে এবং সেখানে ‘ফ্রেঞ্চ স্কুল অব আর্ট অ্যাণ্ড আর্কিওলজি’তে পড়াশোনা করতে থাকেন। সেখানে ইতালীয় রেনেসাঁর ঢেউ তিনি অনুভব করতে পারেন এবং এই রেনেসাঁর প্রভাব তাঁর চিন্তার বিকাশে বহুল সাহায্য করেছিল। সেখানে মালভিদা ভন মেসেনবার্গের সঙ্গে দেখা হয় রোলাঁর যার সান্নিধ্যে বিপ্লবের ধারণায় উজ্জীবিত হয়ে ওঠেন তিনি।
১৮৯১ সালে রোলাঁ ফিরে আসেন প্যারিসে এবং এই পঁচিশ বছর বয়সেই ‘অ্যাকাডেমি অফ ফ্রান্স’-এ শিল্প-ইতিহাসের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন তিনি। এসময় সমাজতন্ত্রের দিকে একটা ঝোঁক তৈরি হয় তাঁর। সঙ্গীতের পাশাপাশি নাট্যশাস্ত্র এবং সাহিত্যেও তাঁর ছিল অগাধ আগ্রহ। অধ্যাপক হিসেবেও তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। ১৮৯২ সালে ইতালিতে একটি প্রত্নতাত্ত্বিক অভিযানে সামিল হয়েছিলেন রোমাঁ রোলাঁ। ১৮৯৫ সালে ফ্রান্সে ফিরে আসেন রোলাঁ এবং সেবছরই সরবোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিল্পকলায় ডক্টরেট উপাধি অর্জন করেন তিনি। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ইউরোপে সঙ্গীতের ইতিহাস এবং সেই গবেষণাপত্রের শিরোনাম ছিল ‘দ্য অরিজিনস অফ মডার্ন লিরিক থিয়েটার : আ হিস্টোরি অফ অপেরা ইন ইউরোপ বিফোর লুলি অ্যাণ্ড স্কারলেত্তি’। সঙ্গীতের ওপর সরবোন থেকে এই প্রথম কোনো গবেষণা সম্পন্ন হল। ১৮৯৫ সালেই ষোড়শ শতাব্দীতে ইতালীয় তৈলচিত্রের পতনের উপর ল্যাটিন ভাষায় লেখা তাঁর আরেকটি গবেষণাপত্র ‘কার আর্স পিকচারে আপুদ ইটালোস XVI সেসিউলি ডেসিডারিট’ প্রকাশিত হয়। প্যারিসের বিভিন্ন লাইসি বা উচ্চস্তরের সেকেণ্ডারি স্কুলে শিক্ষকতা করেছিলেন রোমাঁ রোলাঁ। লাইসি হেনরি ফোর স্কুলে ইতিহাসের শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। এরপর স্কুল শিক্ষক হিসেবে অনেকদিন কাজ করবার পর অবশেষে প্যারিসের ইকোলে নরমালেতে ম্যাট্রি ডি কনফারেন্স বা সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন রোমাঁ রোলাঁ। সরবোনে প্রথম সঙ্গীতের ইতিহাস শিক্ষার প্রচলন করে এক নতুন পথ খুলে দিয়েছিলেন এবং ১৯০৩ সাল থেকে ১৯১০ সাল পর্যন্ত সেখানে সঙ্গীত-ইতিহাসের ‘ফার্স্ট চেয়ার’ অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। ১৯১১ সালে খুব অল্প সময়ের জন্য রোমাঁ ফ্লোরেন্সের ফ্রেঞ্চ ইনস্টিটিউটের সঙ্গীত বিভাগ পরিচালনা করেন। সরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি তিনি এসময় সঙ্গীত সমালোচনায় নিয়োজিত হন। তাঁর এই বিশ্লেষণাত্মক সমালোচনামূলক রচনাগুলি শুধু ফ্রান্সে নয়, সমগ্র ইউরোপেই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। সঙ্গীত বিষয়ক এই সমালোচনাগুলি নিয়ে ১৯০৮ সালে ‘সাম মিউজিশিয়ানস অব ফর্মার ডে’জ’ এবং ‘মিউজিশিয়ানস অফ টুডে’ নামক দুটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল। রোমাঁ রোলাঁ বিখ্যাত সঙ্গীতকার এবং লেখকদের যেসব জীবনী রচনা করেছিলেন সেগুলির মধ্যে বিঠোফেনের জীবনী ‘লা ভি ডি বিথোভেন’ (১৯০৩), মাইকেল অ্যাঞ্জেলোর জীবনী ‘ভি ডি মিশেল-অ্যাঞ্জ’ (১৯০৮) এবং টলস্টয়ের জীবনী ‘লা ভি ডি টলস্টোই’ (১৯১১) ছিল উল্লেখযোগ্য।
শিক্ষকতা করাকালীন নাটক রচনায় মনোনিবেশ করেন রোমাঁ রোলাঁ। ১৮৯৭ সালে ‘সেন্ট-লুইস’ নামে পাঁচ অঙ্কের একটি নাটক রচনার মাধ্যমে বিশুদ্ধ সাহিত্যে তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল বলা যায়। ১৮৯৮ সালে ফরাসি বিপ্লবকে কেন্দ্র করে তিনি লিখেছিলেন তাঁর ‘লেস লুপস’ নামে আরেকটি নাটক। এই নাটকের সাফল্য তাঁকে ফরাসি বিপ্লবের মহান মুহূর্তগুলি অবলম্বনে আরও নাটক রচনায় উদ্বুদ্ধ করে। তারপরই তিনি রচনা করেন ‘ট্রিওমফে দে লা রাইসন’ (১৮৯৯), ‘ড্যান্টন’ (১৯০০), ‘লে টেম্পস ভিয়েন্দ্রা’ (১৯০৩) ইত্যাদি নাটকগুলি। ১৯০৯ সালে এই নাটকগুলি নিয়ে দুটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয় যার মধ্যে ‘ট্র্যাজেডিস অফ ফেইথ’ গ্রন্থটিতে ছিল ‘সেন্ট-লুইস’, ‘আর্ট’ (১৮৯৮) এবং ‘লে ট্রাইমফে দে লা রাইসন’ (১৮৯৯) নাটক তিনটি আর ‘থিয়েটার দে লা রেভোলিউশন’ বইতে ছিল আরো তিনটি নাটক ‘ড্যান্টন’, ‘লেস লুপস’ এবং ‘লে কোয়াটর্জে জুইলেট’। ১৯৩৯ সালে ফরাসি বিপ্লবকে কেন্দ্র করে ‘রোবসপীয়ার’ নামে একটি নাটক রচনা করেন রোমাঁ রোলাঁ।
১৯০৩ সালে ‘লে থিয়েটার ডু পিপলে’ প্রবন্ধে থিয়েটারের গণতন্ত্রীকরণের পক্ষে সওয়াল করেন রোমাঁ রোলাঁ। থিয়েটারকে সামাজিক সংগ্রামের হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলেছিলেন তিনি৷ তাঁর ধারণা থেকেই বিশ্ব-থিয়েটারে গণনাট্যের উৎপত্তি ঘটে। ১৯০৪ সাল থেকে ১৯১২ সাল পর্যন্ত ‘লেস ক্যাহিয়ার্স দে লা কুইনজাইন’ নামক একটি পাক্ষিক পত্রিকায় রোমাঁ রোলাঁর মহান উপন্যাস ‘জাঁ-ক্রিস্টোফ’ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। উপন্যাসের প্রথম কিস্তির নাম ছিল ‘ডন’ এবং শেষ কিস্তির নাম ছিল ‘নিউ ডে’।
১৯১২ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদত্যাগ করে লেখালেখিতে সম্পূর্ণভাবে মনোনিবেশ করেন। ১৯১৩ সালে রোলাঁ ‘কোলাস ব্রুগনন’ নামে একটি উপন্যাস লেখেন যা ১৯১৯ সালে প্রকাশিত হয়। এটি ষোড়শ শতকের এক কাঠ খোদাইকারীর জীবনকে চিত্রিত করে। ১৯১৪ সাল থেকে যুদ্ধের সময়ে রোলাঁ প্রধানত সুইজারল্যাণ্ডে বসবাস করতেন। সেসময় ১৯১৫ সালে ‘অউ-ডেসাস দে লা ম্যালি’ শীর্ষক তাঁর লেখা একটি যুদ্ধবিরোধী নিবন্ধের সংকলন প্রকাশিত হয়। সেবছরই সাহিত্যে উজ্জ্বল অবদানের জন্য রোমাঁ রোলাঁকে নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়। বিশ্বযুদ্ধের সময় রোলাঁ শান্তিবাদী আন্দোলনের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন। ১৯১৯ সালে যুদ্ধ নিয়ে একটি ব্যঙ্গাত্মক নাটক ‘লিলুলি’ রচনা করেছিলেন তিনি। যুদ্ধের পরে রোলাঁর নাটক ফ্রান্সের চেয়েও জার্মানিতে বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন না রোমাঁ রোলাঁ, মার্কস কিংবা এঙ্গেলসও পড়েননি তিনি। কিন্তু সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনকে সাদরে স্বাগত জানিয়েছিলেন তিনি। ১৯২২ সালের মে মাসে রোলাঁ ‘ইন্টারন্যাশনাল কংগ্রেস অফ প্রোগ্রেসিভ আর্টিস্ট’-এ যোগদান করেন। এই বছরেই তাঁর সাত খণ্ডে সম্পূর্ণ আরেকটি উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দ্য এনচ্যান্টেড সোল’-এর প্রথম খণ্ডটি প্রকাশিত হয়। ১৯২২ থেকে ১৯৩৩ সালের মধ্যে এই উপন্যাসের সাতটি খণ্ড প্রকাশ পেয়েছিল৷ ১৯২৩ সাল থেকে বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী সিগমুণ্ড ফ্রয়েডের সঙ্গে পত্রবিনিময় চলতে থাকে তাঁর।
১৯২০-এর দশকে ভারতে আসেন রোলাঁ। বরাবর সহিংসতার বিরোধিতা করে এসেছেন তিনি। হিন্দুধর্মের নানাবিধ দার্শনিক প্রতর্কের উপর রচিত তাঁর গ্রন্থগুলি থেকে এই অহিংসতার প্রতি বিশ্বাস ফুটে ওঠে। তিনি গান্ধীবাদী ধারণার প্রশংসাও করেছিলেন। ১৯২৪ সালে মহাত্মা গান্ধীকে নিয়ে তিনি একটি বইও লিখেছিলেন। ১৯৩১ সালে রোমাঁ রোলাঁর গান্ধীজির সাক্ষাৎ হয়। মানবতাবাদী রোমাঁ রোলাঁ রবীন্দ্রনাথের মতো ভারতীয় দার্শনিকদের চিন্তাভাবনার প্রতিও আকৃষ্ট হয়েছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দের বেদান্ত দর্শনের প্রতিও তাঁর প্রবল আগ্রহের কথা জানা যায়। আইনস্টাইন, বার্ট্রাণ্ড রাসেল, রবীন্দ্রনাথের মতো মানুষদের সঙ্গে তাঁর যে পত্র বিনিময় হয়েছিল সেই সব চিঠি সংকলিত করে প্রকাশিত হয় ‘কাহিয়ার্স রোমাঁ রোলাঁ’। রামকৃষ্ণ এবং বিবেকানন্দের জীবনীও রচনা করেছিলেন তিনি।
১৯২৮ সালে রোলাঁ এবং হাঙ্গেরির এক পণ্ডিত এডমণ্ড বোর্দো সেকেলি যৌথভাবে ‘আন্তর্জাতিক বায়োজেনিক সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ভিলেনিউয়ে লেক লেম্যানের উপকূলে চলে আসেন এবং সম্পূর্ণরূপে সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন। ফ্যাসিবাদ ও নাৎসিবাদের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন তিনি। নির্বাসিত জার্মান লেখকরা ১৯৩৪ সালে রোলাঁর সভাপতিত্বে একটি জার্মান ফ্রিডম লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করে। এসময় বিভিন্ন শিল্প প্রদর্শনীতে ভ্রমণ করছিলেন রোলাঁ। ১৯৩৫ সালে ম্যাক্সিম গোর্কির আমন্ত্রণে রোঁলা মস্কোতে যান এবং সেখানে জোসেফ স্ট্যালিনের তাঁর সাক্ষাৎ হয়। স্ট্যালিনের একজন প্রবল সমর্থক ছিলেন রোঁলা এবং স্ট্যালিনকে সেসময়ের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ বলে মনে করতেন তিনি। রোমাঁ রোলাঁ সোভিয়েত ইউনিয়নে ফরাসি শিল্পীদের রাষ্ট্রদূত হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন, যদিও এই কাজটির আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি ছিল না। ১৯৩৭ সালে ভেজেলেতে ফিরে আসেন রোলাঁ। সেখানে নিজের স্মৃতিকথা লিখতে শুরু করেন যা ১৯৪০ সালে সমাপ্ত হয়। বিঠোফেনের সঙ্গীত বিষয়ে গবেষণার কাজটিও শেষ করেন তিনি।
১৯৪৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর ভেজেলেতে ৭৮ বছর বয়সে রোমাঁ রোলাঁর মৃত্যু হয়।