দুর্গাপূজা হিন্দু বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব। সেই উৎসবে সন্ধিপূজা এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। সন্ধি মানে মিলন। অষ্টমী ও নবমীর মিলনক্ষণে দেবী দুর্গাকে পুজো করা হয় চামুণ্ডা রূপে। যখন মহিষাসুরের সঙ্গে দেবী যুদ্ধ করছিলেন, সেই সময় মহিষাসুরের দুই সেনাপতি চণ্ড ও মুণ্ড আক্রমণ করে। এদের দুর্গা বধ করেছিলেন, সেই থেকে তাঁর নাম হয় চামুণ্ডা। চণ্ড ও মুণ্ডকে যে সন্ধিক্ষণে বধ করা হয়েছিল, তাকে স্মরণে রেখে সন্ধি পুজোর আয়োজন করা হয়।
অষ্টমীর শেষদন্ড ও নবমীর প্রথমদণ্ডে অনুষ্ঠিত সন্ধিপূজা এত গুরুত্বপূর্ণ হবার কারণ পুরাণের গল্পে পাওয়া যায়। এই সন্ধিক্ষণে দুর্গার পরিবর্তে কালীর আরেকরূপ দেবী চামুন্ডার পুজো করা হয়ে থাকে। চণ্ড ও মুন্ড নামে দুই অসুর দেবী অম্বিকার (দুর্গার আরেক রূপ) সাথে যুদ্ধ করার জন্য হঠাৎ উপস্থিত হয়, তখন দেবী অম্বিকা হিমালয় পর্বতে সিংহের উপর বসেছিলেন। চন্ড-মুন্ড সুন্দরী দেবীকে দেখে তাকে ধরার জন্য দৌড়ে আসে এবং যুদ্ধে আহ্বান না জানিয়ে দেবীকে পিছন থেকে আক্রমণ করে। চন্ড মুন্ডের এমন অশোভন আচরণে দেবী অম্বিকা ক্রোধে কাঁপতে থাকেন তার মুখমন্ডল কালো রূপ ধারণ করে। রাগে তারপর তাঁর ত্রিনেত্র খুলে যায়। তখন তাঁর ললাটদেশ থেকে দেবী কালিকা নির্গত হন। ভয়ঙ্করী কালিকা অসুর চন্ড মুণ্ডের সাথে মহাযুদ্ধ করে তাদের বিনাশ করেন। এই কারণে তিনি চামুন্ডা নামেও পরিচিত।
অষ্টমীতিথির শেষ ২৪মিনিট ও নবমীতিথির প্রথম ২৪মিনিট মিলিয়ে মোট ৪৮মিনিট সময়ের যে মহাসন্ধিক্ষণ সেই সময়ে সন্ধিপূজা করা হয়। বলা হয়ে থাকে ঠিক এই সময়েই দেবী দুর্গা চন্ড ও মুন্ড নামে দুই ভয়ঙ্কর অসুরের নিধন করেছিলেন। এই ঘটনাটি মনে রাখার জন্যই প্রতি বছর অষ্টমী এবং নবমীর সন্ধিক্ষণে এই সন্ধিপূজা করা হয়। চন্দ্রমাস ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এই সময়টি প্রতিবছরই পরিবর্তিত হতে থাকে। কোন বছর এই সন্ধিক্ষণ রাত ৮টাতেও হতে পারে আবার কোন বছর ভোররাতেও হতে পারে।
দুর্গা পুজোর এই মহাসন্ধিক্ষনে মহাশক্তিশালী “চামুন্ডা কালিকা” দেবীরই আরাধনা করা হয়। সন্ধিপূজার নৈবেদ্য- নবমীর পুজোই মাকে নৈবেদ্য দেওয়ার শেষ সুযোগ। তাই সন্ধিপূজার আয়োজনও সাড়ম্বরে করা হয়। ১০৮টি পদ্ম এবং ১০৮টি মাটির প্রদীপ সন্ধি পুজোর গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। নৈবেদ্যয় দেওয়া হয় গোটা ফল (বলা হয় লাল রঙের ফল থাকা বাঞ্ছনীয়), জবা ফুল, শাড়ি, সাদা চাল, গহনা (যারা দিতে চায়) এবং বেলপাতা। প্রতিটি পারিবারিক পুজোয় এবং বারোয়ারি পুজোয় যে যার নিজের মত করে সাজিয়ে দেয় এই নৈবেদ্যগুলি। কিন্তু ১০৮টি পদ্ম এবং ১০৮টি প্রদীপ জ্বালিয়ে সাজিয়ে দেওয়ার নিয়মটি চিরাচরিত, এর কোনো অন্যথা করা হয় না । বলা হয় পদ্ম হল ভক্তির প্রতীক এবং প্রদীপ জ্বালানো জ্ঞানের প্রতীক। আর এই যে চণ্ড এবং মুণ্ড হল যথাক্রমে মানুষের মনের প্রবৃত্তি বা নিবৃত্তি এর প্রতীক। প্রবৃত্তি অর্থে ভোগ এবং নিবৃত্তি অর্থে ত্যাগ। মোক্ষলাভের জন্য এই দুইকেই বধ করার মাধ্যমে দেবী চণ্ডীর পূজা করা হয় এবং তা করা হয় এই সন্ধিপূজায়।
এই তথ্যটি দেখতে চাইলে দেখুন এখানে
তথ্যসূত্র
- ভাগ্যফল, শারদীয় ১৪২৩, সন্ধিপূজার রহস্য - স্বামী বেদানন্দ, পৃষ্ঠা ২৯-৩১
- https://bengali.oneindia.com/from-kalparambha-to-sandhi-puja-important-moments-of-durga-puja-and-its-significance
- https://www.speakingtree.in/blog/sandhi-puja-and-its-significance
4 comments