পৌষ সংক্রান্তির দিন সুয়ো দুয়োর ব্রত পালন করা হয়ে থাকে। জেনে নেওয়া যাক এই ব্রতের পেছনে প্রচলিত কাহিনী।
এক দেশে এক সদাগর বাস করতো,তার সাত ছেলে ও একটি মেয়ে ছিল।মেয়েটি সবার বড়, তাই তার বিয়ে হয়ে দূর দেশে চলে গেল।বিয়ের পর সে আর বাপের বাড়ি আসেনি আর তার মা বাবাও মেয়ে ভালো আছে ভেবে তার খোঁজ করে নি।এইভাবে সাত বছর কাটার পর একদিন সদাগর মারা যায়।সদাগরের ছেলেরা এখন বড় হয়েছে,তারা সাত ভাই সাতটি ডিঙি নিয়ে বিদেশে বাণিজ্য করতে গেল।যেতে যেতে পথেই তাদের ছয় মাস কেটে গেল।এক দিন সাত ভাই ঘাটে ডিঙি ভিড়িয়ে একটি গ্রামে নামলো। গ্রামে হাটতে হাটতে তারা একটি বাড়ির সামনে এসে উপস্থিত হয়।সাত ভাইকে দেখে সেই বাড়ির কর্তা তাদের খুব আদর যত্ন করে খাওয়ালো। খানিক পরে সেই বাড়ির গিন্নি এসে তারা কোথা থেকে এসেছে তাদের পরিচয় জিজ্ঞাসা করলো।তাদের পরিচয় জেনে সেই বাড়ির গিন্নি কাঁদতে কাঁদতে বললো, “তোমরা আমার আপন ভাই,তোমরা এখনি এখান থেকে পালাও,এই গ্রাম ডাকাতের গ্রাম ,তোমাদের ভগ্নিপোত এই ডাকাতদের সর্দার।তোমাদের সব কিছু ওরা কেড়ে নেবে,এই ঘরে আগুন লাগিয়ে তোমরা উত্তর দিক দিয়ে পালাও আর মাকে বলো আমি বেঁচে আছি।”
এরপর সর্দারের বউ ঘরে আগুন দিয়ে চিৎকার শুরু করলো,চিৎকার শুনে ডাকাতেরা এলে, গিন্নি বললো ওরা ঘরে আগুন লাগিয়ে দক্ষিণ দিকে পালিয়ে গেছে।ডাকাত দল দক্ষিণ দিকে দৌড়ে গেল। বাণিজ্য করতে বেরিয়ে এইভাবেই সাত ভাইযের এক বছর কেটে গেল।ওই দিকে সদাগরের বউ তার সাত ছেলের কথা ভেবে ভেবে দিন কাটায়।তা দেখে মা চন্ডীর দয়া হল, তিনি বৃদ্ধা বামুনির বেশে দেখা দিয়ে বললেন তুমি এত চিন্তা করো না সুয়ো দুয়োর ব্রত কর।এই ব্রত করলে হারানো ছেলে ফিরে পাওয়া যায়,আর কেউ ওদের ক্ষতি করতে পারবে না।”
সদাগরের বউ বলে, “এই পুজোর কি নিয়ম তা বলে দাও মা।”
বৃদ্ধা বেশধারী মা চন্ডী বললেন,”পৌষ সংক্রান্তির দিন কলার পেটোর সাতটি ডিঙি তৈরি করে তার চারধারে ফুল দিয়ে সাজিয়ে,কাঠালি কলা,পান সুপারি ও জোড়া কড়ি দিয়ে ডিঙি সাজাবে।তারপর উপোষ করে বামুন দিয়ে পুজো করিয়ে ঘি এর প্রদীপ জ্বালিয়ে নদী বা গঙ্গায় তা ভাসিয়ে দিতে হবে।”
এর পর মা চন্ডী অদৃশ্য হলেন।পৌষ সংক্রান্তির দিন সদাগরের বউ মা চন্ডীকে স্মরণ করে কলার পেটো গুলো একে একে নদীতে ভাসিয়ে দিলো,অমনি ঘাটে চোদ্দ ডিঙি এসে ভিড়লো।তার পর সাত ছেলে সাত বউ নিয়ে ডিঙি থেকে বেরিয়ে মাকে প্রনাম করলো।সদাগরের বউ আনন্দে পাঁচটি এয়ো নিয়ে এসে বউদের বরণ করে ঘরে তুললো।পরে ছেলেদের মুখে তার মেয়ে জামাইয়ের কথা শুনে লোক পাঠিয়ে তাদের বাড়ি আনলো।দিদি জামাইবাবু বাড়ি এলে সাত ভাই মিলে তাদের খুব যত্ন করলো।পরে তারা বাড়ি যাবার সময় সদাগরের বউ তার জামাইকে বলে ,”বাবা এই পাপ ব্যবসা তুমি ছেড়ে দাও আর বাড়ি ফিরে সুয়ো দুয়োর ব্রত করো তাহলে সব পাপ থেকে মুক্তি পাবে।”
মেয়ে জামাই দেশে ফিরে গিয়ে সুয়োদুয়োর ব্রত করলো,তাদের দেখে গ্রামের আরো সবাই এই ব্রত করলো।এই ভাবে সুয়োদুয়োর ব্রত সারা দেশে প্রচার পেল।
তথ্যসূত্র
- মেয়েদের ব্রতকথা- লেখকঃ আশুতোষ মজুমদার, প্রকাশকঃ অরুণ মজুমদার, দেব সাহিত্য কুটির
- মেয়েদের ব্রতকথা- লেখকঃ গোপালচন্দ্র ভ ট্টাচার্য সম্পাদিত ও রমা দেবী কর্তৃক সংশোধিত, প্রকাশকঃ নির্মল কুমার সাহা, দেব সাহিত্য কুটির