ওস্তাদ এনায়েত খাঁ

ওস্তাদ এনায়েত খাঁ

ওস্তাদ এনায়েত খাঁ (Ustad Enayat Khan) ছিলেন বিশ শতকের প্রথমদিকের অন্যতম খ্যাতনামা সেতার ও সুর বাহার শিল্পী। তিনি ছিলেন পরবর্তীকালের বিখ্যাত সেতারবাদক পণ্ডিত বিলায়েত খাঁ এর বাবা।

১৮৯৪ সালে উত্তর প্রদেশের এটাওয়া শহরে ওস্তাদ এনায়েত খাঁর জন্ম হয়। তাঁর বাবা ইমদাদ খাঁ ছিলেন প্রতিষ্ঠিত সেতার-সুরবাহার শিল্পী। তাঁর কাছেই এনায়েত খাঁর সঙ্গীতজীবনের শুরু। বাবার কাছেই তিনি সেতার ও সুরবাহারের তালিম নেন। এই ঘরানা ইমদাদখানি ঘরানা বা এটাওয়া ঘরানা নামে পরিচিত। এটাওয়া আগ্রার কাছে অবস্থিত একটি ছোট গ্রাম। বাবা ছাড়াও তিনি ধ্রুপদিয়া আল বন্দে খান এবং জাকির উদ্দিন খান এর কাছে তালিম নিয়েছিলেন।

এনায়েত খাঁর সঙ্গীতপ্রতিভা ছিল অসাধারণ। অল্প বয়সেই তিনি সঙ্গীতজগতে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। মাত্র ২৮ বছর বয়সে ১৯২২ সালে তিনি ময়মনসিংহের গৌরীপুরের জমিদার ব্রজেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর দরবারে সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবে নিযুক্ত হন। সেখানে তিনি বীরেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীকে সঙ্গীতে তালিম দেন। এনায়েত খাঁ জন্মসূত্রে অবাঙালি হলেও গৌরীপুরেই তাঁর কর্মময় জীবনের অধিকাংশ সময় অতিবাহিত হয়েছে।


সববাংলায় সাইটে বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য আজই যোগাযোগ করুন
contact@sobbanglay.com


 

এনায়েত খাঁ প্রখ্যাত খেয়াল গায়ক বন্দে হোসেনের কন্যা বসিরান বিবিকে বিবাহ করেছিলেন। এনায়েত খাঁ ছিলেন সমকালীন শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম। সঙ্গীতে তাঁর অসামান্য দক্ষতার জন্য বিভিন্ন জমিদারের কাছে সঙ্গীত পরিবেশনের আমন্ত্রণ পেতেন। এনায়েত খাঁ প্রচলিত সেতারের গঠন আরো উন্নত করেছিলেন এমনকি তিনিই প্রথম যিনি সঙ্গীত পরিবেশনের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে সাধারণ শ্রোতার মধ্যে সংগীতকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। গৌরীপুরে থাকাকালীন তিনি ইন্দোর, বরোদা, ভূপাল, রামগোপালপুর, আগরতলাসহ বিভিন্ন এলাকার নবাব ও জমিদারের দরবারে গিয়ে সঙ্গীত পরিবেশন করেন।

এনায়েত খাঁ বাবা ইমদাদ খাঁর প্রতিষ্ঠিত সেতার-সুরবাহার ঘরানাকে বাংলা সঙ্গীতজগতে জনপ্রিয় করে তোলেন। এটি তাঁর শ্রেষ্ঠ কীর্তি হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। তিনিই প্রথম ইমদাদ খাঁর ঘরানায় ঠুংরি অঙ্গে সেতার বাজান। গৌরীপুর ও কলকাতায় তাঁর বিশাল শিষ্যমন্ডলী গড়ে ওঠে। তাঁর শিষ্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ডাক্তার কল্যাণী মল্লিক, প্রকাশ চন্দ্র সেন, ময়মনসিংহের জমিদার ব্রজকিশোর রায়চৌধুরী, বীরেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, বিপিনচন্দ্র পাল, শ্রীনিবাস নাগ, বীরেন্দ্র মিত্র, জিতেন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত, জ্যোতিষচন্দ্র চৌধুরী, বিমলাকান্ত রায়চৌধুরী, জ্ঞানদাকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী, ধ্রুবতারা যোশী, জন গোমেজ, অমিয়কান্ত ভট্টাচার্য, নীরদাকান্ত লাহিড়ী, মনোরঞ্জন মুখোপাধ্যায়, রেণুকা সাহা প্রমুখ। এরা এনায়েত খাঁর কাছে সেতার ও সুরবাহারের তালিম লাভ করেন।

সেতার ও সুরবাহার উভয় যন্ত্রেই এনায়েত খাঁর গ্রামোফোন রেকর্ড আছে। সেতারে আছে যোগিয়া, ভূপালী ও তিলক কামোদের খেয়াল অঙ্গে গৎ এবং পিলু, খাম্বাজ ও ভৈরব রাগে ঠুমরি অঙ্গে গৎ; আর সুরবাহারে আছে বাগেশ্রী, মূলতান। এছাড়াও রয়েছে বেহাগ ও ভৈরব রাগে আলাপ। সেতার-সুরবাহার ছাড়াও তিনি ধ্রুপদ, খেয়াল ও ঠুমরিতেও দক্ষ ছিলেন।

এনায়েত খাঁ উত্তরাধিকারসূত্রে বাবার থেকে যে অসামান্য সঙ্গীতপ্রতিভা লাভ করেছিলেন, তাঁর উত্তরাধিকারীদের মধ্যেও তার প্রতিফলন ঘটেছিল। পরবর্তীকালে তাঁর দুই পুত্র বিলায়েত খান ও ইমরত খান এবং দৌহিত্র রইস খান এই ঘরানার বাজনায় ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের জগতকে বিশেষ ভাবে সমৃদ্ধ করেছেন।

১৯৩৮ সালে কলকাতায় এনায়েত খাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৪৩ বছর।

আপনার মতামত জানান