রোমান্টিক যুগের ফরাসি সাহিত্য রচয়িতাদের মধ্যে অন্যতম প্রভাবশালী এবং প্রতিভাবান সাহিত্যিক ছিলেন ফরাসি লেখক ভিক্টর হুগো (Victor Hugo)। কবিতা, নাটক, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ব্যঙ্গরচনা ইত্যাদি সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় তাঁর উজ্জ্বল অবদান আগামী প্রজন্মের সারস্বত সমাজকে প্রভাবিত করেছিল বিস্তর। তাঁর লেখার শৈলীতে ছিল একধরনের মুক্ত আঙ্গিক, ছিল সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা এবং কল্পনাপ্রবণ অভিব্যাক্তির শৈল্পিক প্রকাশ। সাহিত্য রচনার পাশাপাশি সক্রিয় রাজনীতিতেও অংশগ্রহণ করেছিলেন ভিক্টর হুগো। প্রজাতন্ত্রবাদকে সমর্থন করতেন তিনি এবং ডেপুটি ও সেনেটর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বিপুল পরিমাণ সাহিত্যরচনার পরেও প্রায় চার হাজার ছবি এঁকেছিলেন তিনি। তৃতীয় নেপোলিয়নের অভ্যুত্থানের সময় নির্বাসনে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন হুগো। উনবিংশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক ভিক্টর হুগোর একটি উল্লেখযোগ্য রচনা হল ‘লেস মিজারেবলস’।
১৮০২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পূর্ব ফ্রান্সের বেসানকোনে ভিক্টর হুগোর জন্ম হয়। তাঁর বাবা জোসেফ লিওপোল্ড সিগিসবার্ট হুগো (Joseph Léopold Sigisbert Hugo) নেপোলিয়নের সেনাবাহিনীর একজন জেনারেল ছিলেন এবং ছদ্মনামে লেখালেখির চর্চাও করতেন। ভিক্টর হুগোর মা সোফি ট্রেবুচেট (Sophie Trébuchet) নান্টেসের বিপ্লবী দাঙ্গায় অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং চিত্রশিল্পে ছিলেন সিদ্ধহস্ত। সোফি এবং জোসেফের তিন সন্তানের মধ্যে ভিক্টর হুগো ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। তাঁদের আরও দুই সন্তান হলেন যথাক্রমে অ্যাবেল জোসেপ এবং ইউজিন। হুগোর পরিবার উত্তর-পূর্ব ফ্রান্সের লোরেনের অন্তর্গত ন্যান্সি থেকে আগত। ন্যান্সিতে হুগোর ঠাকুরদা একজন কাঠের ব্যবসায়ী ছিলেন। মতবিরোধের কারণে হুগোর বাবা-মায়ের মধ্যে এক দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। সোফির রাজবংশের প্রতি আনুগত্য ও ক্যাথলিক ধর্মে বিশ্বাস এবং জোসেফের প্রজাতন্ত্রকে সমর্থন, তাঁদের মধ্যেকার অসঙ্গতিকে স্পষ্ট করে তুলেছিল। তাছাড়া হুগোর বাবার সামরিক কর্মজীবনের জন্য তাঁদের পরিবারকে ঘন ঘন স্থানান্তরিত হতে হত। নেপলস এবং রোমেও তাঁরা বসবাস করেছিলেন। এই ভ্রাম্যমান জীবনে ক্লান্ত হয়ে সোফি ১৮০৩ সালে সন্তানদের নিয়ে প্যারিসে বসতি স্থাপন করেছিলেন। হুগো তাঁর জীবনের প্রথম দিনগুলির অধিকাংশ সময়টাই মায়ের সঙ্গে প্যারিসে কাটিয়েছিলেন। ১৮০৭ সালে তাঁরা পুনরায় জোসেফ লিওপোল্ডের কাছে ফিরে যান। তখন কর্নেল হুগো অ্যাভেলিনা প্রদেশের গভর্নর ছিলেন। সেই শহরে ভিক্টরকে অঙ্ক শিখিয়েছিলেন
ইতালীয় বিজ্ঞানী লুকা ডি স্যামুয়েল ক্যাগনাজির বড় ভাই জিউসেপ দে স্যামুয়েল ক্যাগনাজি। জোসেফ পেনিনসুলার যুদ্ধের জন্য স্পেনে রওনা দিলে ১৮০৮ সালে পুনরায় সোফি এবং তাঁর সন্তানদের প্যারিসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
১৮১১ সালে হুগো স্পেনে বাবার কাছে চলে যান মা এবং দাদাদের সঙ্গে। সেখানে ভিক্টর এবং তার ভাইদের মাদ্রিদের রিয়েল কলেজিও দে সান আন্তোনিও দে আবাদে স্কুলে পাঠানো হয়েছিল। ১৮১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভিক্টর এবং ইউজিনকে প্যারিসে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে এক বোর্ডিং স্কুলে তাঁদের ভর্তি করা হয়েছিল। তিন বছর সেখানে ছিলেন ভিক্টর এবং লাইসি লুই লে গ্র্যান্ডে বক্তৃতায় অংশ নেন। ১৮১৭ সালে পনেরো বছর বয়সে একাডেমি ফ্রাঙ্কেস দ্বারা আয়োজিত প্রতিযোগিতার জন্য একটি কবিতা লিখেছিলেন এবং সম্মান পেয়েছিলেন। তখন শিক্ষাবিদরা বিশ্বাস করতে অস্বীকার করেন হুগোর বয়স মাত্র পনেরো। পরের বছর আইন স্কুলে ভর্তি হয়ে অধ্যয়ন শুরু করেন এবং সেখান থেকে স্নাতক তিনি। সেসময় শৈশবের বান্ধবী অ্যাডেল ফাউচারের (Adèle Foucher) প্রেমে পড়েন এবং মাকে লুকিয়ে বাগদানও সেরে ফেলেন। ১৮২১ সালের জুন মাসে হুগোর মায়ের মৃত্যু হয় এবং তাঁর বাবা ক্যাথরিন থমাসকে বিবাহ করেন একমাস পরে। পরেরবছর ১৮২২ সালের ১২ অক্টোবর হুগো অ্যাডেল ফাউচারকে বিবাহ করেছিলেন। তাঁদের পাঁচ সন্তানের নাম, লিওপোল্ড, লিওপোল্ডাইন, চার্লস, ফ্রাঁসোয়া-ভিক্টর এবং অ্যাডেল। ১৮১৯ সালে ভিক্টর হুগো তাঁর দাদার সঙ্গে সমবেতভাবে ‘লে কনজারভেটার লিটারেয়ার’ নামে একটি সাময়িকী প্রকাশ করেছিলেন।
১৮২২ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে হুগোর প্রথম কবিতার সংকলন ‘ওডস টু পোয়েসিয়েস ডাইভার্সেস’ প্রকাশিত হয়েছিল। সেই বইতে প্রকাশিত রাজতান্ত্রিক অনুভূতির জন্য অষ্টাদশ লুইয়ের কাছ থেকে সম্মানীয় বৃত্তিও অর্জন করেছিলেন হুগো। পরবর্তী বছর অর্থাৎ ১৮২৩ সালে প্রকাশিত হয় হুগোর প্রথম উপন্যাস ‘হান ডি’আইল্যান্ড’। বইটি ১৮২৫ সালে ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়েছিল। সাংবাদিক চার্লস নোডিয়ার এই বইটি সম্পর্কে খুব উৎসাহী ছিলেন এবং হুগোকে তিনি টেনে আনেন রোম্যান্টিসিজমের ভক্ত একদল তরুণের মধ্যে। রোম্যান্টিসিজম আন্দোলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লেখক ফ্রাঙ্কোইস-রেনে ডে চ্যাটাউব্রিন্ডের দ্বারা ভীষণই প্রভাবিত হয়েছিলেন হুগো। ১৮২৬ সালে প্রকাশিত হয়েছিল হুগোর দ্বিতীয় উপন্যাস ‘বাগ-জার্গাল’। ১৮২০-এর দশকের শেষদিকে রোম্যান্টিসিজমকে আরও এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি পরিণত কিছু কাজের মাধ্যমে। ১৮২৮ সালে প্রকাশিত গীতিধর্মী কবিতার সংকলন ‘ওডস এট ব্যালাডস’ প্রকাশিত হলে মহৎ কবি হিসেবে স্বীকৃতি পান হুগো এবং একজন শক্তিশালী গীতিকার হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেন। কথাসাহিত্যের ধারায় হুগোর প্রথম পরিণত কাজ ‘লে ডারনিয়ার জাউর ডি আন কনডামে’ (‘দ্য লাস্ট ডে অব আ কনডেমড্ ম্যান’) প্রকাশিত হয়েছিল ১৮২৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। এই রচনাটি পরবর্তীকালের বিখ্যাত কিছু সাহিত্যিক যথা, ফিওডোর দস্তয়েভস্কি, আলব্যেয়ার ক্যামু, চার্লস ডিকেন্স প্রমুখদের বিস্তর প্রভাবিত করেছিল। ১৮২৯ সালে তাঁর আরেকটি কবিতার সংকলন ‘লেস ওরিয়েন্টালস’ প্রকাশিত হয়েছিল, যেটি মূলত গ্রিক স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে অনুপ্রাণিত। ১৮৩৪ সালে হুগো ‘ক্লদ গুয়েক্স’ নামে একটি ছোটগল্প লিখেছিলেন, যেটিকে পরবর্তীকালের বিখ্যাত উপন্যাস ‘লেজ মিজারেবল’ রচনার বীজ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন তিনি। ১৮২৭ সালে প্রকাশিত নাটক ‘ক্রোমওয়েল’ এবং ১৮৩০ সালে প্রকাশিত নাটক ‘হারনানি’র মাধ্যমে রোম্যান্টিক সাহিত্য আন্দোলনের একজন গুরুত্বপূর্ণ লেখক হয়ে ওঠেন ভিক্টর হুগো। একজন নাট্যকার হিসেবে হুগোর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছিল পরবর্তী যেসব নাটকের জন্য সেগুলি হল, ‘মেরিয়ন ডেলর্মে’ (১৮৩১), ‘লে-রয় সেমিউস’ বা ‘দ্য কিং অ্যামিউসেস হিমসেল্ফ’ (১৮৩২), এবং ‘রুয় ব্লাস’ (১৮৩৮)। ভিক্টর হুগোর ‘দ্য কিং অ্যামিউসেস হিমসেল্ফ’ নাটকটিকে প্রথমে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। ১৮৩৩ সালে জুলিয়েট ড্রুয়েট নামের এক ফরাসি অভিনেত্রীর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল হুগোর। জুলিয়েট মৃত্যুর আগে পর্যন্ত হুগোর সঙ্গে ছিলেন যদিও তাঁদের বিবাহ হয়নি কখনও।
১৮৩০-এর দশকে জুলাই রাজতন্ত্রের সময় যেসব বিখ্যাত কবিতার সংকলন প্রকাশিত হয়েছিল হুগোর সেগুলি হল, ‘লেস ফেউইলেস ডাওটোমনে’ (১৮৩১), ‘লেস চ্যান্টস ডু ক্রেপাসকিউল’ (১৮৩৫), ‘লেস ভোয়া ইন্টারিউরেস’ (১৮৩৭) এবং ‘লেস রেওনস এট লেস ওমব্রেস’ (১৮৪০)।
১৮৩১ সালের হুগোর বিখ্যাত উপন্যাস ‘নটর-ডেম ডে প্যারিস’ (‘দ্য হাঞ্চব্যাক অব নোতর-দাম’) প্রকাশিত হয়েছিল এবং খুব দ্রুতগতিতে তা সমগ্র ইউরোপে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হতে শুরু করেছিল। এই গ্রন্থটি প্রাক-রেনেসাঁ বিভিন্ন ভবনের প্রশংসা করেছিল যার ফলে সেই সমস্ত ভবনের সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ১৮৬২ সালে হুগোর জীবনের সম্ভবত শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি ‘লেস মিজারেবেল’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়েছিল। এই উপন্যাস রচনা করতে সতেরো বছর সময় লেগেছিল তাঁর। নিজের জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতার সমাবেশ তিনি ঘটিয়েছিলেন এই লেখায়। এই বইয়ের প্রকাশক ছিলেন অ্যালবার্ট ল্যাক্রোইক্স। প্রকাশের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই এটি বিক্রি হয়ে যায় এবং ফরাসি সমাজে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। ১৮৬৬ সালে প্রকাশিত ‘ট্র্যাভাইলিউরস দে লা মের’ উপন্যাসে হুগো গার্নসি দ্বীপকে উৎসর্গ করেছিলেন যেখানে জীবনের ১৫ বছর নির্বাসনে কাটিয়েছিলেন তিনি। পরবর্তী উপন্যাস ‘লোহম্মে কুই রিট’ রাজনৈতিক এবং সামাজিক বিষয় নিয়ে রচিত৷ এই উপন্যাসে অভিজাততন্ত্রের সমালোচনা করেছিলেন তিনি। ফরাসি বিপ্লবের সময়কার সন্ত্রাসের রাজত্বকে কেন্দ্র করে হুগো জীবনের শেষ উপন্যাস ‘কোয়াট্রে-ভিঙ্গট্-ট্রেইজে’ রচনা করেছিলেন।
তিনটি ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর হুগো ১৮৪১ সালে অ্যাকাডেমি ফ্রাঙ্কাইজে নির্বাচিত হন এবং সাহিত্য ও শিল্পকলায় নিজের স্থান দৃঢ় করেন। এরপর ধীরে ধীরে ফরাসী রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। রাজা লুই-ফিলিপের মনোনয়ন পেয়ে ১৮৪৫ সালে হুগো পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষে একজন পেয়ার ডে ফ্রান্স হিসাবে প্রবেশ করেন , যেখানে তিনি মৃত্যুদণ্ড ও সামাজিক অবিচারের বিরুদ্ধে এবং পোল্যান্ডের নিজস্ব সরকার ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলেছিলেন। একজন কনজার্ভেটিভ হিসেবে ১৮৪৮ সালে হুগো দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্রের জাতীয় পরিষদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৮৪৯ সালে কনজার্ভেটিভদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন এবং দারিদ্র্যের অবসানের আহ্বান জানিয়ে একটি উল্লেখযোগ্য বক্তৃতা দেন। অন্যান্য বক্তৃতায় সর্বজনীন ভোটাধিকার এবং সকল শিশুর জন্য বিনামূল্যে শিক্ষার আহ্বান জানান তিনি। মৃত্যুদণ্ড বাতিল করার জন্য হুগোর ওকালতি আন্তর্জাতিকভাবে বিখ্যাত ছিল। এই সমস্ত বক্তৃতাগুলি পরবর্তীকালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছিল। যখন লুই নেপোলিয়ন (নেপোলিয়ন তৃতীয়) ১৮৫১ সালে সম্পূর্ণ ক্ষমতা দখল করেন এবং একটি সংসদ-বিরোধী সংবিধান প্রতিষ্ঠা করেন, তখন হুগো তাকে প্রকাশ্যে ফ্রান্সের বিশ্বাসঘাতক বলে ঘোষণা করেছিলেন। এরপর তিনি চলে যান ব্রাসেলসে এবং সেখান থেকে জার্সিতে। জার্সি থেকে তিনি বিতাড়িত হয়েছিলেন কারণ সেখানকার এমন একটি সংবাদপত্রকে সমর্থন করেছিলেন তিনি যেটিতে রাণী ভিক্টোরিয়ার সমালোচনা করা হয়েছিল। অবশেষে নিজের পরিবার নিয়ে তিনি গ্রানসির সেন্ট পিটার পোর্টে ১৮৫৫ সালের অক্টোবর থেকে ১৮৭০ পর্যন্ত নির্বাসনে থাকেন। এসময় তিনি তৃতীয় নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে তাঁর বিখ্যাত রাজনৈতিক প্রচারপত্র ‘নেপোলিয়ন লে পেটিট’ এবং হিস্টোয়ার ডি’উন ক্রাইম’ প্রকাশ করেন। ফ্রান্সে এগুলি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও এর প্রভাব পড়েছিল ব্যাপক। ‘লেস মিজারেবল’ এবং কবিতার সংকলন ‘লেস কন্টেমপ্লেশন’ ছাড়াও ‘লা লেজেন্ড দেস সিকেলস’ (১৮৫৯) এসময়ে লেখা তাঁর বিখ্যাত কবিতার সংকলন।
১৮৪৩ সালে লিওপোল্ডিন স্বামীর সঙ্গে জলে ডুবে মারা গেলে কন্যার জন্য শোকের মুহুর্তে হুগো আশ্রয় নিয়েছিলেন কবিতার এবং এই নির্বাসনকালে রচনা করেছিলেন ‘লেস কন্টেমপ্লেশন”(১৮৫৬)। এসময়তেই ‘উইলিয়াম শেক্সপিয়ার’ (১৮৬৪) নামক একটি প্রবন্ধ-গ্রন্থ রচনা করেছিলেন হুগো। অনেকের মতে, হুগো বারবারি উপকূলে দাস ব্যবসার অবসান ঘটিয়েছিলেন। ক্যারিবীয় অঞ্চলে দাসপ্রথা ও ফরাসি ঔপনিবেশিকতার বিলুপ্তির জন্য লড়াই করা একজন লেখক ভিক্টর শেলচারের সংস্পর্শে আসার পর , তিনি দাসপ্রথার বিরুদ্ধে জোরালো প্রচারণা শুরু করেছিলেন। তৃতীয় নেপোলিয়নের পতনের পর তৃতীয় প্রজাতন্ত্র গঠিত হলে হুগো স্বদেশে ফিরে আসেন এবং সেখানে তিনি জাতীয় পরিষদে ও জীবনের শেষ পর্যায়ে নবনির্মিত সেনেটে নির্বাচিত হন।
১৮৭০ সালে প্রুশিয়ান সেনার অবরোধের সময় হুগো প্যারিসে ছিলেন এবং প্যারিসের চিড়িয়াখানার দেওয়া প্রাণীদের মাংস খেতেন। বিপ্লবী প্যারিস কমিউন সরকার ১৮৭১ সালের ১৮ মার্চ ক্ষমতা গ্রহণ করে এবং ২৮ মে তাদের পতন হয়। এর সমালোচনা করে হুগো বলেছিলেন এই কমিউন জাতীয় পরিষদের মতোই নির্বোধ। কারাদন্ড, নির্বাসন বা মৃত্যুদন্ডের হুমকিতে থাকা কমুনার্ডদের সরকার রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে অস্বীকার করলে হুগো বেলজিয়ানের সংবাদপত্রে ১৮৭১ সালের ২২ মার্চ সংখ্যায় সরকারের নিন্দা করেন। তখন তিনি ব্রাসেলসে। এর ফলে এক সন্ধ্যায় হুগোর বাড়িতে পঞ্চাশ-ষাটজন দুষ্কৃতি হানা দিয়েছিল তাঁর মৃত্যুর দাবিতে। শিল্পীদের অধিকার এবং কপিরাইটের জন্য তাঁর উদ্বেগের কারণে , হুগো লিটারেয়ার এট আর্টিস্টিক ইন্টারন্যাশনালের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন।
রাজনীতি এবং সাহিত্যকর্মের পাশাপাশি ছবি আঁকার চর্চাও করতেন হুগো। প্রায় চার হাজারের বেশি ছবি এঁকেছিলেন তিনি। ১৮৪৮ থেকে ১৮৫১ সাল, এই সময়কালের মধ্যে ছবি আঁকার চর্চাই করেছেন তিনি সবচেয়ে বেশি। ভ্যান গগের মতো শিল্পীরা তাঁর ছবির প্রশংসা করেছিলেন।
নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১৮৮৫ সালের ২২ মে ৮৩ বছর বয়সে ভিক্টর হুগোর মৃত্যু হয়।
2 comments