রামধনু ধনুরাকৃতি হয়

রামধনু ধনুরাকৃতি হয় কেন

রামধনু বা ইন্দ্রধনু বা রঙধনু (Rainbow) ধনুরাকৃতি রঙিন আলোর রেখা যা সাধারণত বৃষ্টির পর আকাশে সূর্যের বিপরীত দিকে দেখা যায়। রামধনু ধনুরাকৃতি হয় কেন জানতে হলে প্রথমে জানতে হবে রামধনু তৈরি হয় কীভাবে – তার জন্যে এখানে দেখুন।

রামধনু গঠনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ যেমন দরকার তেমনই এই বিশেষ আকারের পিছনে বিজ্ঞানের নির্দিষ্ট নীতিনিয়ম কাজ করে। রামধনু তৈরি হতে গেলে একদিকে বাতাসে বৃষ্টি বা যথেষ্ট ভাসমান জলবিন্দু  থাকতে হবে এবং তা দর্শকের সামনের দিকে থাকতে হবে, সেই সঙ্গে সূর্যকে দর্শকের পিছনে থাকতে হবে। আবার দিগন্তরেখা থেকে সর্বাধিক ৪২ ডিগ্রি কোণ পর্যন্ত উচ্চতায় সূর্যকে থাকতে হবে। তবে সূর্য আকাশের যত নীচে থাকবে তত বেশি ধনুকাকার হবে। সূর্য একদম দিগন্ত রেখায় থাকলে রামধনু অর্ধবৃত্তাকার হবে।

 সূর্য বা চাঁদ আমাদের চোখে দ্বিমাত্রিক প্রায় গোলাকার থালার মতো লাগলেও বাস্তবে এরা যেমন ত্রিমাত্রিক, তেমনই রামধনু অসংখ্য জলকণা থেকে বিচ্ছুরিত বিভিন্ন আলোক বর্ণের মোজাইক প্যাটার্ন নিয়ে তৈরি একটা ত্রিমাত্রিক আলোক বিভ্রম। পৃথিবীর মাটিতে দাঁড়িয়ে দিগন্তের দুদিকে বাধা পায় বলে রামধনুকে পুরোপুরি বৃত্তাকার কখনো দেখা যায় না কিন্তু এরোপ্লেন বা অন্যান্য আকাশযানে পূর্ণ বৃত্তাকার রামধনু দেখা সম্ভব।

রামধনু ধনুরাকৃতি হয় কেন
রামধনু ধনুরাকৃতি হয় কেন

রামধনু বিষয়ক বিজ্ঞান বুঝতে হলে ত্রিমাত্রিক তলে সমস্ত বিষয়টি ভাবতে হবে। এক্ষেত্রে জলকণাগুলি ত্রিমাত্রিক গোলক হিসেবে কাজ করে। সূর্য থেকে আগত আলোকরশ্মি বায়ুতে ভাসমান জলবিন্দুর মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় প্রথমে প্রতিসরণ ঘটে ও পরে জলবিন্দুর উল্টোতলে প্রতিফলিত হয়ে দর্শকের দিকে ফিরে আসে ও আবার জলকণা থেকে বায়ুমন্ডলে আলোক প্রতিসরণ ঘটে (চিত্র সহ আলোচনার জন্য রামধনু কীভাবে হয় দেখুন)।এই আলোকের বিচ্ছুরণের ফলে আলো তার পূর্বপথ থেকে ৪০-৪২ ডিগ্রি বিচ্যুত হয়। বায়ুতে থাকা ভাসমান জলকণাগুলি এই বিচ্যুত  আলোকরশ্মিকে একত্রিত করে বৃত্তাকার ( বা অর্ধবৃত্তাকার) আকার দেয়। দর্শকের চোখের সাপেক্ষে জলকণাগুলি থেকে আগত আলোকরশ্মিগুলি একটি শঙ্কু আকৃতি (cone) তৈরি করে যেখানে চোখ ওই আলোক শঙ্কুর শীর্ষবিন্দু আর রামধনুটি শঙ্কুর নীচের তল যা গোলাকার হয় (পাশের চিত্র দেখুন)।

যেহেতু আলোকরশ্মির তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের পার্থক্য অনুযায়ী দিগন্তরেখা থেকে সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রীর মধ্যে থাকলেই জলবিন্দু থেকে তা প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসে তাই এই আলোক শঙ্কুর কাল্পনিক তল ও অক্ষের মধ্যের ৪০-৪২ ডিগ্রীর মধ্যের আলোকরশ্মিগুলোই চোখে আসবে। এই জন্য মাটিতে থাকা কোন দর্শক অর্ধবৃত্তাকার বা ধনুরাকৃতি রামধনু দেখতে পাবে কিন্তু এরোপ্লেনে বা উপরে থাকা কোন দর্শক কাল্পনিক শঙ্কুর সম্পূর্ণ তল অর্থাৎ সম্পূর্ণ বৃত্তাকার রামধনু দেখতে পাবে।

আপনার মতামত জানান