বিশ্ব ব্রেইল দিবস

৪ জানুয়ারি ।। বিশ্ব ব্রেইল দিবস

অন্ধদের পড়াশোনা করার বিশেষ পদ্ধতি হল ব্রেইল পদ্ধতি যা লুই ব্রেইল উদভাবন করেন। ব্রেইল পদ্ধতিতে ৬ টি ডট দিয়ে অক্ষর, সংখ্যা, চিহ্ন ইত্যাদিকে সূচিত করা হয়। ব্রেইল পদ্ধতি প্রচলন হওয়ার পর বিশ্বের অন্ধ মানুষদের কাছে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। অন্ধ মানুষেরা নিজে নিজে পড়াশোনা করার, জানার স্বাধীনতা লাভ করে।
তাই ব্রেইল পদ্ধতিকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য জাতিসংঘ (United Nations) লুই ব্রেইলের জন্মদিন জানুয়ারি ৪ দিনটিকে বিশ্ব ব্রেইল দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব রাখে। ২০১৯ সাল থেকে এই দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে।

১৮০৯ সালের ৪ জানুয়ারি ফ্রান্সে জন্মগ্রহণ করেন ব্রেইল। বাবা চামড়া থেকে তৈরী বিভিন্ন দ্রব্য তৈরী করতেন। একদিন বাবার চামড়ায় ফুটো করবার যন্ত্র নিয়ে খেলতে গিয়ে সেই যন্ত্র হাত ফসকে ব্রেইলের একটি চোখকে মারাত্মকভাবে আঘাত করে। পেনিসিলিন আবিষ্কার তখনও না হওয়ায়  আঘাতপ্রাপ্ত চোখ থেকে সংক্রমণ পাশের চোখেও ছড়িয়ে পড়ে। ক্রমে দুটো চোখই যখন নষ্ট হয়ে গেল ব্রেইলের, ব্রেইলের বয়স তখন মাত্র পাঁচ।দৃষ্টি চলে গেলেও জীবন থেমে থাকেনি ব্রেইলের জন্য। অর্গান এবং চেলো বাজানো শুরু করলেন। পড়াশোনার জন্য ভর্তি হলেন প্যারিসের দৃষ্টিহীনদের জন্য তৈরী বিশেষ স্কুলে। লুইস ক্রমে ক্রমে অর্গান আর চেলো বাদক হিসেবে অসম্ভব জনপ্রিয়তা অর্জন করতে লাগলেন। এখানেই একদিন জানতে পারলেন আ‌্যলফাবেট কোডের কথা। ফরাসি সৈন্যবাহিনীর অফিসাররা সৈন্যদের সাথে রাতে কথা বলার সময় শত্রুপক্ষের নিশানা থেকে বাঁচতে এই কোডে কথা বলতেন। এই আ‌্যলফাবেট কোড বেশ কিছু বিন্দু আর ছোট লাইনের সমষ্টি যেগুলো পাতার ওপর একটু উঁচু করে খোদাই করা থাকত যাতে আঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ করে সেগুলো পড়া যায়। ব্রেইলের ভাল লাগল এই নতুন পদ্ধতি। কিন্তু বেশ কিছুদিন ব্যবহার এর পর ব্রেইল বুঝলেন এর চেয়ে অনেক সহজ এবং কার্যকর পদ্ধতি বানানোর ক্ষমতা রাখেন উনি। স্কুল ছুটি পড়লে বাড়ি ফিরে শুরু হল তার নিরলস অধ্যবসায়। একদিন বাবার দোকানে বসে থাকতে থাকতে ব্রেইলের হাতে কিসের যেন একটা ছোঁয়া লাগল। হাতে নিয়ে ভাল করে নেড়ে ঘেঁটে বুঝলেন এ হল সেই চামড়া ফুটো করবার যন্ত্র যেটা তার হাত ফসকে চোখ নষ্ট করে দেয়। ব্রেইলের মাথায় যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল। ব্রেইল ঠিক করলেন এই যন্ত্র যে তার দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নিল সারা জীবনের জন্য, সেই যন্ত্রকেই তিনি কাজে লাগাবেন দৃষ্টিহীনদের পড়বার পদ্ধতিকে আরো সহজ করে তোলার জন্য। অবশেষে তৈরী হল ছয় বিন্দু সম্বলিত ব্রেইল পদ্ধতি। সারা পৃথিবীর সমস্ত দেশে সমস্ত ভাষায় এই পদ্ধতির ব্যবহার সেই যে শুরু হল আজও এর কোন বিকল্প বেরোলো না।লুইস ব্রেইল কে অমর করে দিয়ে গেল সেই যন্ত্র যা একদিন তাকে নিঃস্ব করে দিয়েছিল। জীবনের শিক্ষা দানের পদ্ধতিটাই বড় অদ্ভুত। তাই না?

জীবনের চরমতম অগ্নিপরীক্ষায় যাঁরা দৃঢ় ভাবে টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যেতে পারেন তাঁদেরই জীবন পরিণত হয় মহাজীবনে। এই মহাজীবন কেবল দৃষ্টিহীনদের চোখকেই আলোকিত করেনি দৃষ্টিবানদেরও জীবন জ্যোতি প্রদান করেছে।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

4 comments

আপনার মতামত জানান