প্রতিবছর প্রতিমাসের নির্দিষ্ট কিছু দিনে বিভিন্ন দেশে কিছু দিবস পালিত হয়। ওই নির্দিষ্ট দিনে অতীতের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা কে স্মরণ করা বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতেই এই সমস্ত দিবস পালিত হয়। পালনীয় সেই সমস্ত দিবস গুলির মধ্যে একটি হল আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার দিবস (বিশ্ব) (World Day for International Justice)।
প্রতিবছর ১৭ জুলাই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার দিবস উদযাপন করা হয়ে থাকে। সারা বিশ্বে অপরাধ বিচারের উদীয়মান ব্যবস্থাকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রচেষ্টায় এবং সর্বোপরি যে-কোনো অপরাধের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার পক্ষে সওয়াল করে এই বিশেষ দিনটি পালিত হয়ে থাকে। মানবতাবিরোধী, সমাজবিরোধী বা যেকোনো রকমের অপরাধ করলে যেন অপরাধীদের সুষ্ঠু এক বিচারব্যবস্থার আওতায় এনে ফেলা যায়, এই গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যটিকেই স্পষ্ট করে তুলে ধরার জন্যই ১৭ জুলাই দিনটিকে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। এই দিবসটিতে সেইসমস্ত মানুষ একত্রিত হন যাঁরা ন্যায়বিচারকে সমর্থন করেন। ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচারের অধিকার প্রচার করার জন্য জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করবার লক্ষ্যেও এই দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম। সাধারণ মানুষকে বিচারের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে এই বিশেষ দিন। জাতির শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নকারী নানা অপরাধ প্রতিরোধেও সহায়তা করে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার দিবস।
২০১০ সালের ১ জুন কাম্পালাতে (উগান্ডা) অনুষ্ঠিত রোম সংবিধির একটি পর্যোলোচনা অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদলগুলির সমাবেশ ১৭ই জুলাই দিনটিকে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার দিবস হিসেবে উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আসলে আন্তর্জাতিকভাবে গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের জন্য ইতালির রোমে জাতিসংঘের সামনে এক কুটনৈতিক সম্মেলনে একটি চুক্তি গৃহীত হয়েছিল ১৭ জুলাই ১৯৯৮ সালে। ১২০টি দেশের সমর্থন প্রাপ্ত এই চুক্তি রোম সংবিধি নামে পরিচিত ছিল। সেই চুক্তি বা রোম সংবিধি মূলত ছিল কিছু আইন। এই চুক্তিটিই পরবর্তীকালে ২০০২ সালে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট (ICC) প্রতিষ্ঠার ভিত্তিভূমি হিসেবে কাজ করেছিল। নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে এই আদালতের সদর দপ্তর অবস্থিত। এটি বিশ্বের প্রথম স্থায়ী আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। ১৯৯৮ সালের পর থেকে ১৩৯টি দেশ আদালতের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে এবং বিশ্বের প্রতিটি অঞ্চলের প্রতিনিধিত্বকারী ৮০টিরও বেশি দেশ এটিকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই ঐতিহাসিক রোম সংবিধি গ্রহণের তারিখটিকেই সেকারণে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার দিবস হিসেবে পালনের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল।
বিশ্বজুড়ে বিভিন্নরকম অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই গুরুত্বপূর্ণ দিনটি পালন করা হয়ে থাকে। সংবাদপত্র, রেডিও স্টেশন, টেলিভিশনের মাধ্যমে এই বিশেষ দিনটিতে ন্যায়বিচারের অধিকার এবং প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয় সাধারণ মানুষের দরবারে। এছাড়াও কিছু সমাজসচেতন গোষ্ঠী কয়েকটি জরুরি বিষয় যেমন নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা, কিংবা গণহত্যার মতো ঘটনাগুলির প্রতি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে নানা উপায়ে। এছাড়াও নানারকম ইভেন্ট এবং সেমিনারের আয়োজন করে বিশ্বব্যাপী জনগণের শান্তি ও ন্যায়বিচারের পাশাপাশি আইনের শাসন এবং মানবিক মর্যাদার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি মানুষের সামনে তুলে ধরা প্রয়াস করা হয়। মানুষকে এবিষয়ে সচেতন করা হয় যে, যেখানে ন্যায়বিচারকে অস্বীকার করা হয় সেখানে ব্যক্তি বা সম্পত্তি নিরাপদে থাকতে পারে না। এমনকি দারিদ্র্য কাটিয়ে উঠতে গেলেও যথাযথ ন্যায়বিচারের প্রয়োজন। এমনই সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জনসাধারণের কাছে স্পষ্ট করে উপস্থাপনের জন্য বিভিন্ন মাধ্যমের সাহায্যে নানারকম আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ নেওয়া হয়ে থাকে।
প্রত্যেক বছরই এই দিনটি বিশ্বজুড়ে একটি নির্দিষ্ট থিম বা প্রতিপাদ্যকে কেন্দ্র করে পালিত হয়। ২০১৯ সালের প্রতিপাদ্য ছিল – আপনি যদি শান্তি ও উন্নয়ন চান, সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য কাজ করুন(If you want Peace and Development, Work for Social Justice)। ২০২০ সালের প্রতিপাদ্য ছিল – সামাজিক ন্যায়বিচার অর্জনের জন্য বৈষম্যের ব্যবধান দূর করা (Closing the Inequalities Gap to Achieve Social Justice)। ২০২১ সালের প্রতিপাদ্য ছিল – ডিজিটাল অর্থনীতির ওপর সামাজিক ন্যায়বিচার (Social justice in the digital economy)। ২০২২ সালের প্রতিপাদ্য ছিল – প্রথাগত কর্মসংস্থানের মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়বিচার অর্জন (Achieving Social Justice through Formal Employment)। ২০২৩ সালের প্রতিপাদ্য – সামাজিক ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য বাধা বিপত্তি অতিক্রম করা (Overcoming Barriers and Unleashing Opportunities for Social Justice)।
One comment