বিশ্ব ওজোন দিবস

১৬ সেপ্টেম্বর ।। বিশ্ব ওজোন দিবস

প্রতিবছর প্রতিমাসের নির্দিষ্ট কিছু দিনে বিভিন্ন দেশেই কিছু দিবস পালিত হয়। ঐ নির্দিষ্ট কিছু দিনে অতীতের কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে স্মরণকরা বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরী করতেই এই সমস্ত দিবস পালিত হয়। তেমনই বিশ্বব্যাপী পালনীয় সমস্ত দিবস গুলির মধ্যে একটি হল ‘বিশ্ব ওজোন দিবস’ (World Ozone Day)৷

প্রতিবছর ১৬ সেপ্টেম্বর সারা বিশ্ব জুড়ে বিশ্ব ওজোন দিবস পালন হয়ে থাকে ওজোন স্তরের ক্ষয় ও তার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী গণসচেতনতা তৈরি করতে।

১৯৮৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বায়ুমন্ডলের ওজনস্তর ক্ষয় হওয়ার জন্য দায়ী দ্রব্যগুলির ব্যবহার নিষিদ্ধ বা সীমিত করার জন্য ভিয়েনা কনভেনশনের আওতায় ওজোন স্তর ধ্বংসকারী পদার্থগুলির ওপর মন্ট্রিল প্রোটোকল স্বাক্ষরিত হয়। এরপর ১৯৯৪ সাল থেকে এই স্তরকে সুরক্ষিত রাখার উদ্দেশ্যে এই বিশেষ দিনের প্রযোজনীয়তা অনুভব করে রাষ্ট্র সংঘের সাধারণ অধিবেশনে সেই বছর থেকেই ১৬ সেপ্টেম্বর দিনটি বিশ্ব ওজোন দিবস বা আন্তর্জাতিক ওজোন রক্ষা দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ওজোন স্তর এক ধরনের বিশেষ বায়ুস্তর যা পৃথিবীর প্রায় ২০ থেকে ৪০ কিমি ওপরে অবস্থান করে। বায়ুমণ্ডলের এই স্তর সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মি থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করে। ১৯১৩ সালে ফরাসি পদার্থবিদ চার্লস ফ্যাব্রি ও হেনরি বাইসন প্রথম ওজোন স্তর আবিষ্কার করেন। এ স্তরের বৈশিষ্ট্যের কথা প্রথম বলেন ব্রিটিশ আবহাওয়াবিদ জিএমবি ডবসন। নিজের তৈরি স্পেকট্রোফটোমিটার বা সরল বর্ণবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে ভূমি থেকেই স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ওজোন মাপার কৌশল বের করেন ডবসন। সাধারণত বিষুবরেখার কাছাকাছি ওজোনের পরিমাণ কম, আর মেরু এলাকায় বেশি থাকে। ঋতু অনুযায়ীও এই স্তরে পার্থক্য দেখা যায়। বসন্তকালে ওজোন স্তর বেশি পুরু হয়, অন্যদিকে শরতকালে কম পুরু থাকে। উত্তর আর দক্ষিণ গোলার্ধের মাঝামাঝি থেকে উচ্চতর অক্ষাংশে বেশি পরিমাণে ওজোন গ্যাস থাকে। ওজোনের এ তারতম্য আবহাওয়ার পরিবর্তন ও সৌরশক্তির তীব্রতার ওপর নির্ভর করে। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে প্রতিনিয়ত ক্লোরো ফ্লুরো কার্বন (সিএফসি) গ্যাসসহ অন্যান্য ক্ষতিকর গ্যাস উৎপাদন ও ব্যবহারের ফলে ওজোন স্তর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই স্তর পৃথিবীকে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি এবং গ্যাস থেকে রক্ষা করে। এই স্তরের ক্ষতি হওয়ার অর্থ পৃথিবীর ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাওয়া।

প্রসঙ্গত, ওজোন স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি প্রথম ধরা পড়ে সত্তরের দশকে।বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন, বায়ুমণ্ডলে প্রতি দশকে চার শতাংশ হারে ওজোন স্তর পাতলা হয়ে যাচ্ছে। ওজোন স্তর পাতলা হয়ে পড়লে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি পৃথিবীর বায়ু মন্ডলে প্রবেশ করে মানুষের ত্বকে ক্যান্সার, চর্ম রোগ, চোখে ছানি পড়াসহ সকল উদ্ভিদ ও প্রাণি জগতের ক্ষতি করে। তাই ওজোন স্তরের ক্ষয়রোধ এবং বিশ্বব্যাপী উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে পরিবেশবান্ধব এবং বিদ্যুৎসাশ্রয়ী পণ্য উৎপাদন ও ব্যবহার জরুরি। ওজোন স্তর ও পরিবেশ সুরক্ষায় ফ্রিজ, এসিসহ এ ধরনের যন্ত্রে আধুনিক পরিবেশ বান্ধব গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, তা দেখে ক্রয় করা প্রয়োজন।

প্রতিবছর বিশেষ কিছু প্রতিপাদ্য বা থিমের মধ্য দিয়ে এই দিনটি উদযাপন হয়ে থাকে৷ ২০১৭ সালে প্রতিপাদ্য ছিল – ‘সূর্যের অধীন সমস্ত জীবনের যত্ন নেওয়া’ (Caring for all life under the sun)। ২০১৮ সালের প্রতিপাদ্য ছিল – ঠাণ্ডা থাকুন এবং চলতে থাকুন (Keep Cool and Carry On)। ২০১৯ সালের থিম ছিল ‘৩২ বছর ধরে সুস্থ হচ্ছে’ (32 years and Healing)। ২০২০ সালের প্রতিপাদ্য ছিল ‘জীবনের জন্য ওজোন – ওজোন স্তরের সুরক্ষার ৩৫ বছর’ (Ozone for Life – 35 Years of Ozone Layer Protection)। ২০২১ সালের প্রতিপাদ্য ছিল ‘মন্ট্রিল প্রোটোকল – আমরা, আমাদের খাবার এবং আমাদের টীকা সবকিছু শীতল রাখা’ (Montreal Protocol – keeping us, our food and vaccines cool)। ২০২২ সালের প্রতিপাদ্য ছিল ‘বিশ্বজুড়ে সহযোগিতা করে পৃথিবীতে জীবন রক্ষা’ (Global Cooperation Protecting Life on Earth)। ২০২৩ সালের প্রতিপাদ্য হল ‘মন্ট্রিল প্রোটোকল – ওজোন স্তর সংশোধন এবং জলবায়ু পরিবর্তন কমানো’ (Montreal Protocol – fixing the ozone layer and reducing climate change)।

One comment

আপনার মতামত জানান