বিশ্ব ফটোগ্রাফি দিবস

১৯ আগস্ট।। বিশ্ব ফটোগ্রাফি দিবস

প্রতিবছর প্রতিমাসের নির্দিষ্ট কিছু দিনে কিছু দিবস পালিত হয়। নির্দিষ্ট দিনে অতীতের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে স্মরণ করা বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরী করতেই এই সমস্ত দিবস পালিত হয়। বিশ্বে পালনীয় সেই সমস্ত দিবসগুলি মধ্যে একটি হল বিশ্ব ফটোগ্রাফি দিবস (World Photography Day)।

প্রতি বছর ১৯ আগস্ট সারা বিশ্বে ফটোগ্রাফির ইতিহাসকে সম্মান জানাতে এবং এই শিল্প মাধ্যমের প্রতি মানুষের আগ্রহকে উদযাপন করতে বিশ্ব ফটোগ্রাফি দিবস পালন করা হয়।

১৮৩৭ সালে ফ্রান্সের লুই ডগার (Louis Daguerre) এবং যোশেফ নিসফোর নিপস (Joseph Nicephore Niepce) মিলিতভাবে ছবি তোলার একটি বিশেষ পদ্ধতি, ডগারিওটাইপ (Daguerreotype) আবিষ্কার করেন। ১৮৩৯ সালের ৯ জানুয়ারি ফ্রেঞ্চ আকাদেমি অফ সায়েন্স ডগারিওটাইপ পদ্ধতির কথা প্রথম ঘোষণা করলে সেই বছরেই ১৯ আগস্ট ফরাসি সরকার এই পদ্ধতিটির সত্ত্ব কিনে নেয় এবং এই যুগান্তকারী আবিষ্কারকে সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

ফটোগ্রাফির ইতিহাসে ডগারিওটাইপ যে প্রথম স্থায়ী ফটোগ্রাফিক ছবি ছিল তা নয়। ১৮২৬ সালে যোশেফ নিসফোর নিপস একটি ছবি তোলেন যাকে প্রথম স্থায়ী ফটোগ্রাফিক ছবি বলা হয়ে থাকে। এই ছবিটির নাম ছিল ‘ভিউ ফ্রম দ্য উইন্ডো অ্যাট লে গ্রাস’ (View from The Window at Le Gras)। এই ছবিটি যোশেফ নিসফোর নিপস হেলিওগ্রাফি (Heliography) পদ্ধতিতে তুলেছিলেন। ১৮৬১ সালে থমাস সাটন প্রথম স্থায়ী রঙিন ছবিটি তোলেন। লাল, সবুজ এবং নীল ফিল্টার ব্যবহার করে তিনটি সাদা-কালো ছবির সেট প্রস্তুত করা হয়্য। তবে তৎকালীন যে ফটোগ্রাফিক ইমালসন ব্যবহার করা হত তা বর্ণালীর ক্ষেত্রে অসংবেদী ছিল। তাই ছবিটি ত্রুটিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় এবং গোটা বিশ্লেষণটি সহজেই মানুষের স্মৃতি থেকে বেরিয়ে যায়।আজকে যে নিজস্বীর এত চল, যাকে সাধারণ মানুষ সেলফি (Selfie) বলতেই বেশি স্বচ্ছন্দ, সেই নিজস্বী বা সেলফি প্রথম তোলেন আমেরিকার রবার্ট কর্নেলিউয়াস । রবার্ট কর্নেলিউয়াস তাঁর ক্যামেরাটি সেট করে, লেন্সের ঢাকনা বা লেন্স ক্যাপটি তুলে নিয়ে দৌড়ে ফ্রেমের মধ্যে চলে যান। এভাবেই প্রথম নিজস্বীটি ওঠে। ছবিটির পিছনে তিনি লিখেছিলেন “১৮৩৯ সালে তোলা প্রথম আলোকচিত্র” ( The first light picture ever taken 1839)।  কোডাকের ইঞ্জিনিয়ার প্রথম ডিজিটাল ক্যামেরাটি আবিষ্কার করার প্রায় ২০ বছর আগে ১৯৫৭ সালে প্রথম ডিজিটাল ফটোগ্রাফটি তোলা হয়েছিল। ফটোটি আসলে রাশেল কির্স্কের (Russel Kirsch) ছেলের একটি ছবির ডিজিটাল স্ক্যান ছিল, যার রেজলিউশন ছিল ১৭৬*১৭৬।

২০১০ সালের বিশ্ব ফটোগ্রাফি দিবসে অর্থাৎ ১৯ আগস্টে প্রথম একটি অনলাইন গ্যালারির সূচনা করা হয়, যেখানে দেশ বিদেশের প্রায় ২৭০ জন ফটোগ্রাফার তাঁদের ছবি পাঠিয়েছিলেন। সারা পৃথিবীর ১০০ টিরও বেশি দেশের মানুষ এই ওয়েবসাইটটিতে এসে ছবিগুলি দেখেছিলেন। এইদিন থেকেই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে পৃথিবী জুড়ে বিশ্ব ফটোগ্রাফি দিবস উদযাপনের বিষয়টি জনপ্রিয় হয়, এবং পৃথিবীর সমস্ত মানুষের কাছে এই দিনটির গুরুত্ব পৌঁছে দেওয়া শুরু হয়।

এই দিনটি সারা পৃথিবী জুড়ে নানান অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালিত হয়। স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে থাকা ফটোগ্রাফি ক্লাবের মাধ্যমে বিভিন্ন ইভেন্টের আয়োজন করা হয়। গণমাধ্যমগুলিও এর ব্যতিক্রম নয়। ব্যক্তিগতভাবে অথবা সমষ্টিগতভাবে ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, ইউটিউব সহ অন্যান্য নানান গণমাধ্যমে মানুষ বিশ্ব ফটোগ্রাফি দিবস পালন করে থাকেন। কেউ ভাগ করে নেন নিজের তোলা ছবির আনন্দ, কেউ আবার ছড়িয়ে দেন অন্যের তোলা নিজের পছন্দের ছবি।

প্রত্যেক বছরই এই দিনটি বিশ্বজুড়ে একটি নির্দিষ্ট থিম বা প্রতিপাদ্যকে কেন্দ্র করে পালিত হয়। ২০১৯ সালের প্রতিপাদ্য ছিল – ইতিহাসের প্রতি উৎসর্গীকৃত (Dedicated to History)।  ২০২০ থেকে ২০২২ সালের প্রতিপাদ্য ছিল – ক্যামেরার চোখে অতিমারী ও লক ডাউন – (Pandemic Lock down through the lens )। ২০২৩ সালের প্রতিপাদ্য – মেঘ সম্পর্কে ধারণা তৈরি করা (Understanding Clouds)।

One comment

আপনার মতামত জানান