বাঙালি গৃহিণীরা নিজের সন্তান এর মঙ্গল কামনায় নীরোগ সুস্থ জীবন কামনা করে চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন নীলষষ্ঠী ব্রত পালন করে। জেনে নেওয়া যাক এই ব্রতের পেছনে প্রচলিত কাহিনী।
এক দেশে এক ব্রাহ্মণ আর ব্রাহ্মণী বাস করতেন। তারা অতি ভক্তি করে সমস্ত বার-ব্রত পালন করতেন, তবুও তাঁদের সন্তান একটাও বাঁচে না। তাঁদের মনে এই ধারণা হল যে এই সব বার-ব্রত করে কিছু লাভ নেই। আসলে সমস্তটাই মিথ্যে। এই বলে তাঁরা সব ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে দু’জনে কাশী চলে গেলেন।
একদিন কাশীতে গঙ্গায় দুজনে স্নান করে উঠে ঘাটের উপর বসে মনের দুঃখে কাঁদতে লাগলেন। তাই দেখে মা ষষ্ঠী বুড়ি ব্রাহ্মণীর বেশ ধরে এসে তাঁদের জিজ্ঞেস করলেন, “হ্যাঁগা, তোরা কাঁদছিস কেন?”
ব্রাহ্মণী বললেন, “সে কথা তোমায় বলে কী হবে মা! আমরা বড় মনের জ্বালায় জ্বলছি, আমাদের অনেকগুলো ছেলে আর একটি মেয়ে হয়েছিল, কিন্তু সব ক’টাই মরে গেল। তাই ভাবছি যে, সব বার–ব্রত, ঠাকুর দেবতা মিথ্যে। আমরা তো কোন বার-ব্রত বাদ দিইনি, তবে কেন আমাদের সব সন্তান মরে গেল?”
মা ষষ্ঠী বললেন, “দেখো বাছা, তোমরা সব বার-ব্রত করো ব’লে মনে বড় অহঙ্কার ছিল, সেইজন্যে সব মরে গেছে। শুধু কি আর বার-ব্রত করলেই হয়? ভগবানের ওপর বিশ্বাস থাকা চাই, মন পবিত্র থাকা চাই, সবার কাছে নিচু হওয়া চাই, একমনে মা ষষ্ঠীকে ডাকা চাই, তবে হয়।”
তখন ব্রাহ্মণী বলল, “তাহলে আমাদের উপায় কী হবে মা?”
মা ষষ্ঠী জিজ্ঞাসা করলেন, “তোরা কি নীল ষষ্ঠী করেছিস?”
ব্রাহ্মণী বলল, “সে কী মা? কই ও ব্রত তো আমরা জানি না।”
তখন মা ষষ্ঠী বললেন, “সমস্ত চৈত্র মাস সন্ন্যাস করে শিব পুজো করবে, তারপর সংক্রান্তির আগের দিন, সমস্ত দিন উপোষ করে সন্ধ্যার সময় নীলাবতীর পুজো করে নীলকণ্ঠ শিবের ঘরে বাতি জ্বেলে দিয়ে, মা ষষ্ঠীকে প্রণাম করে তবে জল খাবে।ঐ দিনকে ষষ্ঠীর দিন বলে।যারা নীলষষ্ঠী করে তাদের ছেলে মেয়ে কখনও অল্প বয়সে মরে না।” এই কথা বলে মা ষষ্ঠী অদৃশ্য হয়ে গেলেন।
তারপর ব্রাহ্মণ- ব্রাহ্মণী দেশে ফিরে গিয়ে খুব ভাল করে নীল ষষ্ঠীর পুজো আরম্ভ করল।এরপর তাঁদের যতগুলো ছেলেমেয়ে হল, সবাই দিব্যি বেঁচে রইল। পাড়ার সকলে ব্রাহ্মণীর সুখ দেখে আর ঐ নীলষষ্ঠীর ব্রত জানতে পেরে সবাই নীলষষ্ঠীর ব্রত করতে লাগল। এই ব্রত করে সবারই ছেলেপুলে নীরোগ হয়ে বেঁচে রইল।
তথ্যসূত্র
- মেয়েদের ব্রতকথা- লেখকঃ আশুতোষ মজুমদার, প্রকাশকঃ অরুণ মজুমদার, দেব সাহিত্য কুটির, পৃষ্ঠা ৪৯
- মেয়েদের ব্রতকথা- লেখকঃ গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য সম্পাদিত ও রমা দেবী কর্তৃক সংশোধিত, প্রকাশকঃ নির্মল কুমার সাহা, দেব সাহিত্য কুটির, পৃষ্ঠা ১৮৬
3 comments