আষাঢ় মাসের রথযাত্রা থেকে উল্টোরথের মধ্যে যে শনি বা মঙ্গলবার পড়ে, সেইদিনে বিপত্তারিণী ব্রত করা হয়। বিশ্বাস করা হয় স্ত্রীলোকেরা মনে মনে যা চেয়ে এই ব্রত করে, তাদের সেই মনস্কামনা সফল হয় এবং এই ব্রত পালন করলে সংসারের সব বিপদ কেটে যায়। মা দুর্গারই আর এক রূপ বিপত্তারিণী। বলা হয়, দেবাসুরগণ যখন সমুদ্র মন্থন করছিল, তখন যে বিষ উঠে আসে, ভগবান শিব মা দুর্গার নাম স্মরণ করেই সেই বিষ পান করেন। সেই বিপদ থেকে ভগবান শিবকে মা দুর্গাই রক্ষা করেন। এই ব্রত সম্বন্ধে আরও একটি কথা বলা হয়। যশোদা কৃষ্ণের ছোটবেলায় তাঁর হাতে দুর্গানাম স্মরণ করে রক্ষা-কবচ বেঁধে দিতেন, যাতে কোনও বিপদ না হয়। যদি কৃষ্ণ কোনও বিপদেও পড়তেন, তখন তিনি মা দুর্গাকে স্মরণ করতেন। এমনকি কালীয়কে দমন করবার সময়ও দুর্গানাম স্মরণ করেই করেছিলেন। জেনে নেওয়া যাক এই ব্রতের পেছনে প্রচলিত কাহিনী।
প্রাচীনকালে বিদর্ভদেশে এক রাজা আর এক রানী ছিল। রানী নিষ্ঠা সহকারে বিপত্তারিণী ব্রত পালন করতেন। একজন মুচির বউ তাঁর বন্ধু ছিলেন। তাঁকে রানী মাঝে মধ্যেই ফল, খাবার বা অন্যান্য জিনিস উপহার দিতেন, কিন্তু তাঁর থেকে কিছু নিতেন না। গরীব মুচিবউ রানীকে কিছু দিতে গেলেই রানী তাঁকে বলতেন কিছু লাগলে নিজেই চেয়ে নেবেন। এদিকে মুচিবউয়ের খুব ইচ্ছা রানীকে তিনিও কিছু উপহার দেবেন। কিন্তু রানী আর কিছু চান না তাঁর কাছে। হঠাৎ একদিন রানী তাঁকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, “সই, তোরা তো গরুর মাংস রান্না করিস, নিয়ে আয় না একদিন! দেখব কেমন দেখতে হয়?”
মুচিবউ তো রানীর আবদারে খুব খুশি! অবশেষে তাহলে রানী তাঁর থেকে কিছু তো চেয়েছেন। তিনি বাড়ি গিয়ে খুব যত্নে গো-মাংস রান্না করে সেটা কাপড় চাপা দিয়ে রাজবাড়িতে এনে রানীকে উপহার দিলেন। রানী তো শুধুই দেখবার জন্য মাংস আনতে বলেছিলেন, তাই কাপড় চাপা দিয়েই রেখে দিলেন।
এদিকে মুচিনীকে মাংস আনতে দেখে, রাজবাড়ীর এক চাকর রাজাকে গিয়ে সে কথা বলে দেন। রাজা তো শোনামাত্রই রানীর ঘরে উপস্থিত হয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন যে মুচিবউ কি দিয়ে গেছেন? সঙ্গে রাজা এও জানালেন যে যদি আপত্তিকর কিছু থাকে, তাহলে রানীর মুণ্ডচ্ছেদ করা হবে। রানী ভয় পেয়ে মনে মনে মা বিপত্তারিণীকে ডাকতে থাকলেন। মা বিপত্তারিণী ভক্তের ডাকে রানীর কানে কানে বললেন, “দ্যাখ! তোর মাংস সব ফুল হয়ে গেছে!”
রানীও রাজাকে ডেকে সেই ফুলগুলো দেখালেন এবং বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেলেন। তারপর থেকে তিনি বাকি সারাটা জীবন বিপত্তারিণী ব্রত নিষ্ঠাভরে পালন করেছিলেন। এই ভাবেই এই ব্রতের কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
লেখাটি ভিডিও আকারে দেখুন এখানে
তথ্যসূত্র
- বেনীমাধব শীলের ফুল পঞ্জিকা, ১৪২৪
- পণ্ডিতপ্রবর গোপালচন্দ্র সম্পাদিত এবং রমা দেবী কর্তৃক সংশোধিত, পরিবর্ধিত বারোমাসের মেয়েদের ব্রতকথা, পৃষ্ঠা ৭৩
- মেয়েদের ব্রতকথা- লেখকঃ শ্রীকালীকিশোর বিদ্যাবিনোদ সংকলিত ও শ্রীসুরেশ চৌধুরী কর্তৃক সংশোধিত প্রকাশকঃ অক্ষয় লাইব্রেরী, পৃষ্ঠা ৬৮
আপনাদের উপস্থাপনা আরো বিশদ ভাবে বা বিস্তারিত ভাবে উপস্থাপন হলে ভালো হয়।