অমরিশ পুরি

অমরিশ পুরি

ভারতীয় হিন্দি সিনেমা এবং নাট্য জগতের অতিপরিচিত ব্যক্তিত্ব হলেন অমরিশ পুরি(Amrish Puri)৷ মূলত খল চরিত্রে অভিনয়ের জন্যই তিনি জনপ্রিয় ছিলেন।

১৯৩২ সালের ২২ জুন পাঞ্জাবের নওয়ানশাহরে অমরিশ পুরির জন্ম হয়৷ তাঁর বাবার নাম ছিল লালা নিহাল চন্দ্ এবং মায়ের নাম ছিল বেদ কৌর৷ তিনি হিমাচল প্রদেশের সিমলায় অবস্থিত বি.এম. কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েট হন।

অমরিশ পুরির কর্মজীবন বলতে তাঁর অভিনয় জীবনের কথাই বলতে হয়৷ অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ১৯৫০ সালে মুম্বাইয়ে আসেন অমরিশ। দাদা মদন পুরি আগেই মুম্বাইয়ের চলচ্চিত্র জগতে নিজের পরিচয় গড়ে তুলেছেন ততদিনে। অমরিশ অভিনেতা হওয়ার প্রথম স্ক্রীন টেস্টে ব্যর্থ হন৷ ব্যর্থ হয়ে জীবিকা নির্বাহের জন্য তিনি এল.আই.সি তে চাকরি শুরু করেন৷ চাকরির পাশাপাশি তিনি পৃথ্বী থিয়েটারে অভিনয়ও করতেন সেই সময়ে। সত্যদেব দুবে রচিত নাটকগুলির মঞ্চ অভিনেতা হিসাবে তিনি ধীরে ধীরে সুপরিচিত হয়ে উঠতে থাকেন৷ ১৯৭৯ সালে তিনি সংগীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। থিয়েটার জগতে স্বীকৃতি পাওয়ার পরই টেলিভিশন বিজ্ঞাপনগুলিতে তাঁকে দেখা যায় এবং শেষ পর্যন্ত ৪০ বছর বয়সে সিনেমাতে তিনি অভিনয়ের সুযোগ পান । ১৯৬৭ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ৫০০ টিরও বেশী সিনেমাতে তিনি অভিনয় করেছেন৷ ভিলেনের চরিত্রে তিনি অসামান্য ছিলেন৷ বলিউডের অন্যতম সফল ভিলেন ছিলেন তিনি৷ তাঁর অভিনিত প্রায় প্রতিটি চরিত্রই সফল হয়েছিল৷ অমরিশ পুরি হিন্দি, কান্নাডা, মারাঠি, হলিউড, পাঞ্জাবি, মালায়ালাম, তেলেগু এবং তামিল ছবিতে অভিনয় করেছেন। যদিও তিনি অনেক আঞ্চলিক ছবিতে সফল হয়েছিলেন তবুও বলিউড সিনেমায় তাঁর কাজের জন্য সবথেকে বেশি জনপ্রিয়তা পান৷ ১৯৭০ এর দশকে অমরিশ পুরি মূলত ভিলেনের চরিত্র এবং সহায়ক অভিনেতার ভূমিকা পালন করেছিলেন৷ ১৯৭০ এ মু্ক্তি পায় তাঁর অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘প্রেম পূজারী’, ১৯৭১ এ মুক্তি পায় ‘রেশমা অৌর সেহেরা’। এরপরে শ্যাম বেনেগালের ‘নিশান্ত’, ‘মন্ত্রন ‘এবং ‘ভূমিকা’। তারপর ‘সুরজ কা সাতবান ঘোড়া” র মতো অসংখ্য আর্ট ফিল্মে ভিলেন বা সহায়ক অভিনেতার ভূমিকা পালন করেন তিনি। ১৯৮০ সালে মুক্তি পাওয়া ছবি ‘হম পাঁচ’-এ তিনি ভিলেনের ভূমিকায় দর্শকদের নজর কাড়েন৷ এরপর থেকেই তিনি অন্যান্য সিনেমাতে প্রধান ভিলেন হিসাবে অভিনয়ের সুযোগ পান । ১৯৮২ সালে সুভাষ ঘাইয়ের সুপারহিট ছবি ‘বিধাতা’ তে তিনি প্রধান খলনায়ক, জগাবার চৌধুরী চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। সে বছরই তিনি ‘শক্তি’ ছবিতে ভিলেন জে.কে র চরিত্রে অভিনয় করেন দিলীপ কুমার এবং অমিতাভ বচ্চনের উল্টোদিকে। ১৯৮৩ সালে সুভাষ ঘাই তাঁকে ‘হিরো” সিনেমায় আবার প্রধান ভিলেন হিসাবে দর্শকদের সামনে আনেন৷ পরবর্তীকালে অমরিশ পুরি নিয়মিতভাবে সুভাষ ঘাইয়ের ছবিতে অভিনয় করে গেছিলেন ।

১৯৮৭ সালে শেখর কাপুর পরিচালিত সুপার হিট ছায়াছবি ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ -তে ভিলেন মোগাম্বোর চরিত্রে অভিনয় করেন৷ তাঁর অভিনীত সেরা চরিত্র ‘মোগাম্বো’। “মোগাম্বো খুশ হুয়া” সংলাপটি আজও সমান জনপ্রিয় হয়ে রয়েছে হিন্দি ছবির দুনিয়ায় । এছাড়া ‘ঘায়েল’-এ বলবন্ত রায়, ‘দামিনী’তে ব্যারিস্টার চড্ডা, ‘করণ অর্জুন’-এ ঠাকুর দুর্জন সিং হিসেবে তিনি খ্যাতি পেয়েছেন৷ ‘চাচি ৪২০’ সিনেমায় কমিক ভূমিকায় দর্শকদের কাছে তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন৷

১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সালে বলিউডের বেশীর ভাগ সিনেমাতে প্রধান খলচরিত্রের ভূমিকায় অমরিশ পুরিকে দেখা গেছে৷ অসামান্য অভিনয় প্রতিভা এবং তাঁর কন্ঠস্বর সোনালী পর্দায় তাঁকে অনন্য স্থান দিয়েছে৷ ১৯৮২ সালে রিচার্ড অ্যাটেনবারো পরিচালিত ‘গান্ধী’ তে তাঁর অভিনীত ‘খান’ চরিত্র এবং ১৯৮৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত স্টিভেন স্পিলবার্গের ‘ইন্ডিয়ানা জোনস’-এর “টেম্পেল অফ ডুম’ (Temple of Doom)-এ ‘মোলা রাম’ চরিত্র তাঁকে আন্তর্জাতিক দর্শকদের কাছে জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিল৷ স্পিলবার্গ তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন “Amrish is my favorite villain।”

ভিলেনের অভিনয় করার জন্য তিনি সর্বাধিক পরিচিতি পেলেও ‘পরদেশ’ (১৯৯৭) ও ‘চোরি চোরি চুপকে চুপকে'(২০০১) সিনেমায় ‘ভালো’ চরিত্রেও তিনি অভিনয় করেছেন৷ এছাড়া
তিনি কয়েকটি সিনেমায় উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সেগুলি হল, ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে’, ‘ফুল অর কান্টে’, ‘গর্দীশ’, ‘বিরাসাত’, ‘ঘাত্ক’, ‘মুঝে কুছ কেহনা হ্যায়’, ‘চায়না গেট’ এবং ‘মহাব্বতে’ ।

পাঞ্জাবি সিনেমায় তিনি অত্যাচারী জমিদার জোগিন্দর সিংয়ের চরিত্রে কিংবদন্তি ছবি ‘পারদেশী” (১৯৮০) তে অভিনয় করার জন্য সবচেয়ে বেশি খ্যাতি পেয়েছিলেন । ধর্মীয় পাঞ্জাবি ছায়াছবি ‘সাত শ্রী অকাল’ (১৯৭৭)-তে খলনায়ক জালাম সিংয়ের চরিত্রে অভিনয় করে স্মরণীয় হয়ে আছেন । এছাড়া ‘আদিত্যা-৩৬৯’, ‘কোনদাবেদী দোঙ্গা’, ‘অশ্বমেধ্ধাম’, ‘আখারী পোরাতাম’ তেলেগু সিনেমায় তাঁকে অভিনয় করতে দেখা গেছে৷ তিনি মণি রত্নম পরিচালিত তামিল ছবি ‘দালপতিটতেও অভিনয় করেছিলেন৷ একজন দুষ্ট তান্ত্রিকের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন ‘বাবা’ সিনেমায়।
অমরিশ পুরি তাঁর অভিনয় জীবনে বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন৷ ১৯৮৬ সালে ‘মেরী জঙ্গ’ ও ১৯৯৭ সালে ‘ঘাতক’, ১৯৯৮ সালে ‘বিরাসত’ সিনেমায় সেরা সহায়ক অভিনেতা হিসেবে তিনি ফিল্ম ফেয়ার অ্যওয়ার্ড পান৷

অমরিশ পুরির টুপি সংগ্রহ করার নেশা ছিল৷ তিনি প্রতিবার বিদেশ ভ্রমণকালে একটি বা দুটি করে টুপি কিনতেন৷ তাঁর সংগ্রহে বিশ্বজুড়ে ২০০ টিরও বেশি টুপি ছিল। ‘The Act of Life’ নামে লেখা তাঁর আত্মজীবনী ২০০৬ সালে প্রকাশিত হয়৷

অমরিশ পুরির ২০০৫ সালের ১২ জানুয়ারি ৭২ বছর বয়সে মৃত্যু হয়৷

2 comments

আপনার মতামত জানান