কুন্তীর গর্ভে জন্মেছে তিন তিনটি সর্বগুণসম্পন্ন বীর সন্তান, গান্ধারীর গর্ভে জন্মেছে একশো একটি সন্তান। কৌরব পরিবারের দুই ভাই ধৃতরাষ্ট্র আর পাণ্ডু দুজনেই এখন পিতা হওয়ার আনন্দ উপভোগ করছে। কিন্তু এই স্বাদ থেকে যদি এখনও অবধি কেউ বঞ্চিত আছে, সে হল মাদ্রী। এতে তার নিজের দোষ নেই কোনও, অথচ সে কেন মাতৃত্বের স্বাদ থেকে বঞ্চিত থাকবে? কিন্তু সে তো আর কুন্তীর মত মন্ত্র জানে না! আর স্বামী পাণ্ডুও তো এখনও কুন্তীকে নিয়েই ব্যস্ত আছে। স্বামী কুন্তীর থেকে একের পর এক পুত্র লাভ করেই যাচ্ছে।
অর্জুন জন্মানোর পরেও পাণ্ডু আবার কুন্তীর কাছে এসে আর এক পুত্রের জন্য প্রার্থনা করল। এবার বেশ রেগে গেল কুন্তী, একবার নয়, পাণ্ডুর কথা শুনে তিন তিনবার সে দেবতাদের সঙ্গে মিলনে জন্ম দিয়েছে তিন পুত্রের, তাহলে আবার কিসের পুত্রচাহিদা পাণ্ডুর! পাণ্ডু আর কথা বাড়াল না। এইসময় মাদ্রী এল পাণ্ডুর কাছে। পাণ্ডুকে জানাল তার মাতৃত্বের ইচ্ছা, “দেখো! তুমি মুনির অভিশাপে বাবা হতে পারছ না, তাতে আমার আক্ষেপ নেই। আক্ষেপ নেই গান্ধারীর একশো পুত্রের কথা জেনেও। কিন্তু কুন্তীর থেকে আমি কম কিসে? তোমার কাছে তো দুজনেই সমান আমরা। তাহলে ও যে পুত্র লাভ করল, আমি কেন পারব না?”
স্বামী পাণ্ডু মাদ্রীর দুঃখ বুঝল। কুন্তীর কাছে এসে অনুরোধ করল কুন্তী তাকেও যেন মন্ত্রটা শিখিয়ে দেয়। কুন্তী রাজি হল। তারপর একদিন মাদ্রীকে মন্ত্র শিখিয়ে কুন্তী তাকে বলল, “কিন্তু মনে রাখবে এই মন্ত্রে একবারের জন্যই তুমি কোনও দেবতাকে ডাকতে পারবে”
“ঠিক আছে দিদি!” মাথা নেড়ে সায় জানাল মাদ্রী, মনে তার আলাদা আনন্দ, এবার সেও মা হতে পারবে। তারপর কুন্তীর শেখানো মন্ত্র দিয়ে সে ডাকল যমজ দেবতা অশ্বিনীকুমারদ্বয়কে। তারা এলেন, মাদ্রীর গর্ভে যমজ সন্তান নকুল আর সহদেবের জন্ম দিলেন।
মাদ্রীর এরম যমজ দেবতার আহ্বানে যমজ সন্তানের উৎপাদনে কুন্তীর রাগ হয়েছিল নিশ্চয়ই। যখন পাণ্ডু আবার মাদ্রীর জন্য দ্বিতীয়বার বলতে এল, তখনই সেই রাগের বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাওয়া গেল। কুন্তী পরিষ্কার জানাল যে মাদ্রী দুজন দেবতাকে একসাথে ডেকে কুন্তীকে প্রতারিত করেছে, তাই সে আর শেখাবে না। পাণ্ডু এরপর আর কথা বাড়ায়নি।
তথ্যসূত্র
- "মহাভারত সারানুবাদ", দেবালয় লাইব্রেরী(প্রকাশক সৌরভ দে, তৃতীয় প্রকাশ) - রাজশেখর বসু, আদিপর্ব (২০। যুধিষ্ঠিরাদির জন্ম - পাণ্ডু ও মাদ্রীর মৃত্যু) পৃষ্ঠাঃ ৪৭
- "কৃষ্ণা, কুন্তী ও কৌন্তেয়", আনন্দ পাবলিশার্স, নবম মুদ্রণ - নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী, অধ্যায়ঃ কুন্তী, পৃষ্ঠাঃ ৩৯-৪১
- "মহাভারতের অষ্টাদশী", আনন্দ পাবলিশার্স, চতুর্থ মুদ্রণ - নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী, অধ্যায়ঃ মাদ্রী, পৃষ্ঠাঃ ৩৫৭-৩৬২
One comment