সববাংলায়

বউবাজার

কলকাতার মানচিত্রে বেশ কিছু ‘বাজার’ আছে, যেমন  বাগবাজার, শ্যামবাজার, লালবাজার, বৌবাজার ( বহুবাজার) , আমিনীবাজার, জানবাজার, চিনাবাজার, বড়বাজার, টেরিটি বাজার, শোভাবাজার ইত্যাদি৷ প্রত্যেকটি বাজারেরই আছে তার নিজস্বতা, আছে তার ইতিহাস। এইরকমই স্থাননামে প্রসিদ্ধ কলকাতার বাজার-গুলির মধ্যে এখানে  বউবাজার (Bowbazar) নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হল।

বউবাজারের নামকরণ নিয়ে দুটি গল্প জানা যায়। পূর্বে ডালহৌসী স্কোয়ার (বর্তমানে  বিনয়-বাদল-দীনেশ বাগ) থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত যে রাস্তাটি ছিল পরে তার নাম হয় বউবাজার স্ট্রিট। রাস্তাটির নামের উৎপত্তি নিয়ে দুটি মত রয়েছে। জানা যায়, মাড়োয়ারি ব্যবসায়ী বিশ্বনাথ মতিলাল তাঁর বাঙালি পুত্রবধূকে একটি বাজার লিখে দেন। সেই বাজারটিই ‘বহুবাজার’ (হিন্দিতে ‘বহু’ যার অর্থ ‘পুত্রবধূ’) এবং পরে তা পরিবর্তিত হয়ে ‘বউবাজার’ নাম নিয়েছে৷ তবে এই ব্যবসায়ীর পরিচয় তেমন মেলে না। তাই অপর মতটির কথা উল্লেখ করা যায়, এই অঞ্চলে বহু অর্থাৎ অনেক বাজার ছিল এবং সেই সব বাজারে বহু জিনিসপত্র বিক্রয় হত। সেই থেকেই এই বাজারটি প্রথমে ‘বহুবাজার’ ও পরে তা বিকৃত হয়ে ‘বউবাজার’ নামে পরিচিত হয়।

পরবর্তীতে বউবাজার স্ট্রিটের নামকরণ করা হয় বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিট, স্বাধীনতা সংগ্রামী বিপিনবিহারী গাঙ্গুলির (১৮৮৭-১৯৫৪) নামানুসারে। যদিও লোকমুখে এলাকার নাম বউবাজারই থেকে গেছে। বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিট থেকে মহাত্মা গান্ধী রোড পর্যন্ত এলাকার নাম বৈঠকখানা রোড। এই রাস্তার দক্ষিণ প্রান্তের বাজারটির নামও বৈঠকখানা বাজার।

লালবাজার, বউবাজার, রবীন্দ্র সরণী ও বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের সংযোগস্থলটি হল মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার স্থান হিসেবে পরিচিত ;এখানে একসময়ে একটি ফাঁসিকাঠ ছিল। বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিটের বউবাজার মার্কেট বিখ্যাত গয়নার দোকানের জন্য। এটি মূলত কলকাতার প্রধান গয়নার বাজার। এখানে সোনা, রুপো সহ বিভিন্ন মূল্যবান ধাতু ও রত্নের গয়না পাওয়া যায়। কলকাতার অনেক পরিবারই বিবাহ বা অন্যান্য অনুষ্ঠানে এই বাজার থেকে গয়না ক্রয় করে থাকে।

কেবল গয়না নয় এই বাজারে কাঠের আসবাব, বাদ্যযন্ত্র, জুতো, মরসুমি ফল, তাজা সবজি ও মাংসের বাজার রয়েছে।বউবাজারে কলকাতার বহু বিখ্যাত স্কুল ও কলেজ রয়েছে। কলকাতার শিক্ষার ইতিহাসে এই এলাকার বিশেষ একটি পরিচিতি রয়েছে৷ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সমাজ সংস্কারক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরমহাশয় ১৮২৯ সালে মেদিনীপুরের বীরসিংহ গ্রাম থেকে যখন প্রথম কলকাতায় আসেন, তখন তিনি বউবাজারের পঞ্চাননতলায় থাকতেন। ১৯০৬ সালের ১৫ অগস্ট ১৯/১ বউবাজার স্ট্রিটে বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ অ্যান্ড স্কুল স্থাপিত হয়, পরে যেটি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত হয়৷ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা ড. মহেন্দ্রলাল সরকার ১৮৭৬ সালের জুলাই মাসে ২১০ বউবাজার স্ট্রিটেই এই বিজ্ঞান গবেষণা ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি স্থাপন করেন অবশ্য পরে এটি যাদবপুর অঞ্চলে স্থানান্তরিত হয়েছে। পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার প্রাপক চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রামন এই সংস্থার ল্যাবরেটরিতেই রামন এফেক্ট সংক্রান্ত তাঁর ঐতিহাসিক গবেষণার কাজটি করেছিলেন।

আরও পড়ুন:  শ্রীরামপুর

এই অঞ্চলে অবস্থিত ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি এবং সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স চার্চ।১৮৭৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় প্রথম ঘোড়ায় টানা ট্রাম চালু হয়। প্রথম ট্রামের পথটি ছিল আর্মেনিয়ান ঘাট থেকে বউবাজার ও ডালহৌসি স্কোয়ার হয়ে শিয়ালদহ পর্যন্ত।বউবাজারের গলিগুলিতে আছে অনেক ‘কোঠা’ । এই কোঠায় বাইজিরা থাকেন, কলকাতার বাইজিরা নাচ ও গানের জন্য বিখ্যাত, যদিও এখন বাইজি প্রথার অবনতি ঘটেছে৷তাহলে সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে বহুবাজার বা বউবাজার নানা ধরনের রঙকে বহন করে চলেছে। অনেক গল্পের ছোঁয়া নিয়ে কলকাতার বুকে জীবন্ত হয়ে আছে বউবাজার৷

“বউবাজার” তে 3 টি মতামত

  1. […] শান্তিপুরে, বরানগরের পাঠবাড়ি আশ্রমে, বউবাজারের বিখ্যাত রামকানাই অধিকারীর […]

  2. […] যেমন  বাগবাজার, শ্যামবাজার, লালবাজার, বৌবাজার ( বহুবাজার) , আমিনীবাজার, জানবাজার, […]

  3. […] যেমন  বাগবাজার , শ্যামবাজার, লালবাজার, বৌবাজার ( বহুবাজার), আমিনীবাজার, চিনাবাজার, […]

আপনার মতামত জানান

copyright © 2017-22, Sobbanglay. All rights reserved.
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন।

Discover more from সববাংলায়

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

বাদল সরকারের জীবনী দেখুন

ভিডিওটি দেখতে ছবিতে ক্লিক করুন