বুদ্ধ পূর্ণিমা বা বৈশাখী পূর্ণিমা হল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পবিত্রতম উৎসব। এই পুণ্যোৎসব বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে উদযাপিত হয় বলে এই উৎসব কে ‘ভেসাক’ বলে। পালি ভাষায় ‘বৈশাখ’ ‘ভেসাক’ নামে পরিচিত। ‘বুদ্ধ জয়ন্তী’ নামেও এই উৎসব বেশ পরিচিত অনেক দেশে। এই একই পূর্ণিমা তিথিতে গৌতম বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেছিলেন, বোধি লাভ করেছিলেন এবং মহাপরিনির্বাণ লাভ করেছিলেন।
১৯৫০ সালে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত ‘ওয়ার্ল্ড ফেলোশিপ অফ বুদ্ধিস্ট’ এর প্রথম কনফারেন্সে বৈশাখ মাসের এই পূর্ণিমা তিথিটিতে বুদ্ধের জন্মদিবস পালন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই দিনে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা স্নান করে শুচিবস্ত্র পরিধান করে মন্দিরে বুদ্ধের বন্দনা করে থাকেন। ভক্তরা প্রতিটি মন্দিরে বহু প্রদীপ জ্বালান, ফুলের মালা দিয়ে মন্দিরগৃহ সুশোভিত করে বুদ্ধের আরাধনায় নিমগ্ন হন। এছাড়া বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা এই দিনে বুদ্ধ পূজার পাশাপাশি পঞ্চশীল, অষ্টশীল, সূত্রপাঠ, সূত্রশ্রবণ, সমবেদ প্রার্থনাও করে থাকেন।
শ্রীলঙ্কায় ‘ভেসাক’ প্রায় এক সপ্তাহ ব্যাপী পালন করা হয়ে থাকে। এই এক সপ্তাহ শ্রীলঙ্কায় মদ, মাংস ইত্যাদি বিক্রি বন্ধ থাকে। এমনকি কসাইখানাগুলোকেও বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়ে থাকে। দুঃস্থদের ভিক্ষা দান করা হয়ে থাকে এই সময়ে। এছাড়াও বড় বড় প্যান্ডেল তৈরি করা হয় এবং প্রতিটি প্যান্ডেলে জাতক থেকে গল্প লেখা থাকে। এইদিন সাধারণত বন্দী পশু পাখিদের ছেড়ে দেয়ার মাধ্যমে ‘মুক্তি’ দেওয়ার রেওয়াজ আছে এখানকার মানুষদের মধ্যে।
নেপালে একমাত্র এইদিনটিতেই স্বয়ম্ভূ মন্দিরের প্রধান ফটকটি খোলা হয়। ‘ভেসাক’ বা বুদ্ধ পূর্ণিমা এখানে ‘বুদ্ধ জয়ন্তী’ হিসেবে পালিত হয়। নেপালে ‘বুদ্ধ জয়ন্তী’-এর দিন ‘পাবলিক হলিডে’।
জাপানে ‘বুদ্ধ পূর্ণিমা’ ‘হান্মাতসুরি’ নামে পরিচিত। চাইনিজ ক্যালেন্ডারের চতুর্থ মাসের অষ্টম দিনটিকে জাপানে ‘বুদ্ধ পূর্ণিমা’ হিসেবে পালন করা হয়। প্রচলিত উপকথা অনুসারে বুদ্ধের জন্মদিনের দিন আকাশ থেকে এক ড্রাগন আবির্ভূত হয়ে বুদ্ধের মাথায় ‘সোমরস’ ঢেলে দেয়। বর্তমানে এই সোমরস এর স্থান দখল করেছে ‘হাইড্র্যানজিয়া মাইক্রোফিলিয়া’ গোত্রের এক বিশেষ শ্রেণীর ফুলের গাছ থেকে প্রাপ্ত চা, যা ‘আমাচা’ নামে পরিচিত। এই ‘আমাচা’ বুদ্ধের প্রতিকৃতির ওপর ঢেলে দেওয়া হয়ে থাকে এই দিন।
বাংলাদেশে এই দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রতি বছরই পালিত হয়। বৌদ্ধধর্মের উৎসব হলেও ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশে সর্বসাধারণের জন্য এই দিনটি সরকারি ছুটি থাকে। প্যাগোডায় চলতে থাকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দিবস উদযাপনের যাবতীয় কার্যক্রম। এছাড়া বিভিন্ন গ্রাম ও বিহারে এই দিনে মেলা বসে। সবচেয়ে বড় মেলাটি বসে চট্টগ্রামের বৈদ্যপাড়া গ্রামে, যা বোধিদ্রুম মেলা নামে পরিচিত।
ভারতে বুদ্ধগয়ার ‘মহাবোধি’ মন্দিরে এইদিন বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের ব্যাপক সমাগম ঘটে। দিল্লী তে এইদিন ন্যাশনাল মিউজিয়াম থেকে ১৮৯৮ সালে উত্তরপ্রদেশের পিপ্রাহা জেলা থেকে প্রাপ্ত দেহের ধ্বংসাবশেষ যা প্রকৃতপক্ষে স্বয়ং গৌতম বুদ্ধের বলে মনে করা হয়, তার প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়।
2 comments