টেরিটি বাঁজার

টেরিটি বাজার

কলকাতার মানচিত্রে বেশ কিছু ‘বাজার’ আছে, যেমন  বাগবাজার, শ্যামবাজার, লালবাজার, বৌবাজার ( বহুবাজার) , আমিনীবাজার, জানবাজার, চিনাবাজার, বড়বাজার, টেরিটি বাজার, শোভাবাজার ইত্যাদি৷ প্রত্যেকটি বাজারেরই আছে তার নিজস্বতা, আছে তার ইতিহাস। এইরকমই স্থাননামে প্রসিদ্ধ কলকাতার বাজার-গুলির মধ্যে এখানে  টেরিটি বাজার (Tiretta Bazar) নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হল।

বাজার নিয়ে যদি কথা শুরু করতে গেলে খাওয়ার বাজারের কথা দিয়েই শুরু করা ভালো। পূর্ব কলকাতার এই বাজারটির নাম টেরিটি বাজার বা টিরেটো বাজার৷
ব্রিটিশ আমলের সেই সময়ের কথা যখন প্রায় ২০০০০ চিনা জাতির লোক বসবাসের উদ্দেশ্যে আসেন এবং পূর্ব কলকাতার এলাকা জুড়ে তাদের বসতি স্থাপন হয়। বর্তমানে এই এলাকায় সেই লোক বসতি কমে প্রায় ২০০০ গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বাজারের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ধরা হয় এডওয়ার্ড টিরেটা নামের জনৈক ইতালীয় ব্যক্তিকে। কোনও কোনও বইয়ে ‘ভেনিস দেশীয়’ বিশেষণ তাঁর জন্য প্রয়োগ করা হয়েছে। রাজনৈতিক কারণবশত স্বদেশ থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয় এবং তিনি পরাধীন ভারতের সেই সময়ের রাজধানী কলকাতায় আশ্রয় নেন। তিনি পেশায় ছিলেন ‘সিভিল আর্কিটেক্ট’ বা রাস্তাঘাট রক্ষণাবেক্ষণকারী পরিদর্শক। ১৭৮৮ খ্রিষ্টাব্দে লটারি কমিটির ডাকা লটারিতে টিরেটাসাহেব যে বাজারটিকে নিলামে চড়ান, সেটিকেই পরে টিরাটা বাজার বা টেরিটি বাজার নামে অভিহিত করা হয়৷ ১৭৯১ খ্রিষ্টাব্দে বাজারটির মালিক ছিলেন চার্লস ওয়েস্টন সাহেব।

বাজারটির নামের উৎস খুঁজলে জানা যায় মহম্মদ হারুন রশিদ সংকলিত আরবি-ফারসি-বাংলা অভিধানে একটি শব্দ ‘তরতিব’। এটি একটি আরবি শব্দ এর অর্থ শৃঙ্খলাবদ্ধ ভাবে ও পর্যায়ক্রমিক ভাবে আইন মেনে করা কাজ । লটারি কমিটির টাকায় প্রথম দিকে অনেক কিছু করা হয়েছিল নির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী, কঠোর কিছু নিয়ম মেনে। বস্তুত লালবাজারের পাশে এই বাজারটিও এরকমি নিয়ম মেনে তৈরী হয়েছিল। তাই হয়ত আরবি-ফারসি জানা লোকজন বাজারটিকে ‘তরতিববাজার’ বলে ডাকত । ‘তরতিব বাজার’ লোকমুখে দ্রুত উচ্চারণের ফলে ‘তরতিব্বাজার’ বা ‘তরতিবাজার’। আর ইউরোপীয় সাহেবদের মুখে ‘তরতিবাজার’ পরিবর্তন হয়ে হয়ে উঠল ‘টরটি বাজার’ বা ‘টিরেটা বাজার’ বা ‘টেরিটি বাজার’। বাঙালির মুখে মুখে এই নামটিই প্রচলিত হয়ে গেল।

মজার ব্যপার হল এই বাজার খোলা থাকে ভোর পাঁচটা থেকে নয়টা পর্যন্ত। এখানে চিনা খাবার পাওয়া যায়। এই খাবারের মূল্য অত্যন্ত কম এবং খাবার ভীষণ সুস্বাদু। মধ্য কলকাতার এই ছোট্ট অঞ্চলটি জুড়ে থাকা চিনা খাবারের সম্ভার আর ব্রেকফাস্ট সারতে ভিড় লেগে থাকে মানুষের। এখানে  চিকেন মোমো, ফিশ ডাম্পলিং, ফ্রায়েড মোমো ছাড়াও পাওয়া যাবে রাইস পুডিং, হ্যামসিং পাং, ফিশ বল, মিট বল, প্যান কেক, প্রন ওয়েফার্স এবং আরও অনেক কিছু।

তাহলে কলকতার মধ্যে থাকা ট্যাংরার চায়না টউন  ছাড়া আরও একটি ছোট্ট চিনা অঞ্চলের সন্ধান দেয় লালবাজার সংলগ্ন টেরিটি বাজার। পুরনো কলকাতার আমেজ নিয়ে সমস্ত জাতি ধর্ম মিলে মিশে কীভাবে এক হয়ে থাকা যায় কলকাতা শিখিয়ে যাচ্ছে সুদূর অতীত থেকে। তারই এক নিদর্শন টেরিটি বাজার৷

5 comments

আপনার মতামত জানান