সি ভি আনন্দ বোস

সি ভি আনন্দ বোস

পশ্চিমবঙ্গের বাইশতম রাজ্যপাল হিসেবে সি ভি আনন্দ বোস (C. V. Ananda Bose) ২০২২ সালের ১৮ নভেম্বর নিযুক্ত হন।  আনন্দ বোস তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনে জেলাশাসক, মুখ্যসচিব, সচিব এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব সামলেছেন এর আগে। 

১৯৫১ সালের ২ জানুয়ারি কেরালার কোট্টায়াম জেলার একটি গ্রামে সি ভি আনন্দ বোস -এর জন্ম হয়। তাঁদের আসল পদবি কিন্তু  ‘বোস’ নয়। তাঁর বাবার নাম বাসুদেবন নায়ার এবং মায়ের নাম পদ্মাবতী আম্মা। তাঁর বাবা ছিলেন সুভাষচন্দ্রের ভক্ত। মূলত নেতাজি সুভাষের প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা থেকেই তিনি তাঁর পাঁচ পুত্র এবং তিন কন্যার মধ্যে ছয় জনের নামের শেষেই বোস পদবি যোগ করে দিয়েছিলেন। সেই প্রথা অনুসরণ করে সি ভি আনন্দ বোস তাঁর পুত্র বাসুদেব ও প্রয়াত কন্যা নন্দিতার নামের শেষেও ‘বোস’ পদবি যোগ করে দিয়েছেন। 

 বিদ্যালয় শিক্ষা সমাপ্তের পর আনন্দ বোস  কোট্টায়ামের কুরিয়াকোস এলিয়াস কলেজে ভর্তি হন। এখান থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক হওয়ার পর কেরালা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর পাস করেন।  এরপর তিনি বিড়লা ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্স, পিলানি থেকে দর্শনে পি এইচ ডি করেন। 

সি ভি আনন্দ বোস -এর কর্মজীবন শুরু হয় কলকাতায় স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার (এস বি আই) প্রোবেশনারি অফিসার হিসাবে। এস বি আই এর  শ্যামবাজার ও চৌরঙ্গি  শাখায় কাজ করেছেন তিনি। কলকাতায় থাকতেন রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে। এখানে থাকাকালীন সময়ে ‘চৌরঙ্গির ফুলগুলি’ নামে  মালয়ালমে তাঁর ছোটগল্পের সংকলন প্রকাশিত হয়। আনন্দ ১৯৭৭ সালের আইএএস পাস করেন । সরকারি আমলা হিসাবে তাঁর সমগ্র কর্মজীবনে বহু গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। এছাড়া কেন্দ্রীয় বহু প্রকল্পও ছিল তাঁর মস্তিষ্ক প্রসূত। আমলা হিসেবে কেরলে ‘সকলের জন্য আবাসন’-এর লক্ষ্যে তাঁর কাজ দেখে মুগ্ধ হয়ে জ্যোতি বসু তাঁকে বক্রেশ্বরে গরিবদের জন্য কম খরচে আবাসন তৈরি করার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। বাগ্মী হিসাবে বেশ খ্যাতি আছে আনন্দের। টানা তিন বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা বক্তা হয়েছিলেন তিনি। এমনকি মুসৌরিতে আইএএস অফিসারদের  প্রশিক্ষণ কেন্দ্র লালবাহাদুর শাস্ত্রী ট্রেনিং অ্যাকাডেমির বিতর্কসভাতেও প্রথম হয়েছিলেন তিনি। 

কর্মজীবনে কেরলের মুখ্যমন্ত্রীর সচিব হিসাবে কাজ করেছেন আনন্দ বোস । এছাড়াও কেরল সরকারের বিভিন্ন দফতরে প্রধান সচিব হিসাবে তিনি তাঁর দায়িত্ব সামলেছেন। সার্ন (ইউরোপিয়ান কাউন্সিল ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ) এবং  জেনেভা অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ফিউশন এনার্জি অর্গানাইজেশনে ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। অ্যাটমিক এনার্জি এডুকেশন সোসাইটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বও সামলেছেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হওয়ার আগে যেমন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব সামলেছেন তেমনি মেঘালয় সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে কাজও করেছেন। ১৯৭৮ সালে কেরালার কাসারগোড়ের সাব-কালেক্টরের দায়িত্বে থাকাকালীন তিনি গ্রামোৎসবের সূচনা করেছিলেন যার লক্ষ্য ছিল কেরালার গ্রামগুলির সংস্কৃতি ও শিল্পের রূপ উদযাপন করা। তাঁর এই প্রকল্পটি সমগ্র  কেরালা জুড়ে বাস্তবায়িত করা হয়েছে এবং আজও, এই উৎসবটি রাজ্যের পর্যটনসূচির একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। 

সমগ্র শিক্ষাজীবনে আনন্দ বোস পেয়েছেন একশ’টিরও বেশি পদক যার মধ্যে পনেরোটি স্বর্ণপদক। এছাড়াও তিনি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পুরস্কার মিলিয়ে মোট ঊনত্রিশটি পুরস্কার লাভ করেছেন। কেবল একজন নিষ্ঠাবান আমলাই নয় আনন্দ বোস একাধারে একজন সুলেখকও। ইংরেজি, হিন্দি এবং মালায়লম এই তিনটি ভাষা মিলিয়ে মোট  বত্রিশটি বই লিখেছেন তিনি যার মধ্যে উপন্যাস, ছোটগল্প সংগ্রহ এমনকি কবিতার বইও রয়েছে। এই বইগুলির বেশ কিছু  আবার বেস্টসেলারের মর্যাদাও পেয়েছে।  

আপনার মতামত জানান