বিবাহ হল প্রায় সারা বিশ্ব জুড়ে স্বীকৃত একটি সম্পর্ক যেখানে সাধারণত একটি নারী ও একটি পুরুষ পরস্পরের প্রতি সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিপুল বৈচিত্রময় এই পৃথিবীতে যেমন বিভিন্ন ধরনের মানবগোষ্ঠী বা সমাজ রয়েছে তেমনই গোষ্ঠী বা দেশ ভেদে বিবাহের রীতি নীতিও আলাদা। এমনকি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়ে চলেছে বিবাহ সম্পর্কিত রীতি-রেওয়াজের। ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যেই বিভিন্ন রীতির বিবাহ প্রথা আছে তবে প্রধানত ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করলে উল্লেখযোগ্য বিবাহ রীতিগুলি হল হিন্দু বিবাহ, মুসলিম বিবাহ, খ্রীষ্টান বিবাহ ইত্যাদি। প্রতিটি রীতিরই আবার জাতি বা স্থান ভেদে অনেক আলাদা নিয়মরীতি আছে। এখানে আমরা পড়ব ইসলাম ধর্মের বিবাহ সম্পর্কিত নানান তথ্য।
ধর্মভেদে বিবাহের রীতিনীতির পার্থক্য দেখা গেলেও একটু পর্যালোচনা করলে বুঝতে পারব সামান্য অদল বদল হলেও আসলে সব নিয়ম কোথাও না কোথাও একই হয়ে যায়৷ ইসলামী বিবাহরীতিতে বিবাহ আসরে পাত্র পাত্রী উভয়ের সম্মতি নেওয়া হয়। তারপর বিবাহের সময় উভয়পক্ষের বৈধ অভিভাবক বা ওয়ালীর উপস্থিতি ও সম্মতির প্রয়োজন। ইসলামে বিয়ে কে সুন্নাহ বা মুহাম্মাদের আদর্শ হিসেবে ধরা হয় এবং ইসলামে বিয়ে করার জন্য অত্যন্ত জোরালো ভাবে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। মজার ব্যপার হল বর্তমানে ইসলামী বিবাহে যৌতুকের কোন স্থান নেই তবে বিয়ের পূর্বেই পাত্রের পক্ষ হতে পাত্রীকে পাত্রীর দাবি অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা বা অর্থসম্পদ বাধ্যতামূলক ও আবশ্যকভাবে দিতে হয়, একে দেনমোহর বলা হয়। অর্থাৎ যৌতুকের বদলে ” দেনমোহর “। এছাড়া বিয়ের পর তা পরিবার পরিজন ও পরিচিত ব্যক্তিবর্গকে জানিয়ে দেয়াও ইসলামী করনীয়সমূহের অন্তর্ভুক্ত। ইসলামী বিধান অনুযায়ী, একজন পুরুষ সকল স্ত্রীকে সমান অধিকার প্রদানের তার চাহিদা অনুসারে সর্বোচ্চ চারটি বিয়ে করার অনুমতি পায়৷ আর যদি সমান অধিকার দিতে না পারেন তবে একটি বিয়ে করার অনুমতি পাবে। যদিও এই নিয়ম কেবল পুরুষদের জন্য৷ মেয়েদের ক্ষেত্রে একাধিক বিয়ের অনুমতি নেই। একজন মুসলিম পুরুষ মুসলিম নারীর পাশাপাশি ইহুদী কিংবা খ্রিষ্টান নারীকে বিয়ে করতে পারবে কিন্তু মুসলিম নারীরা শুধু মুসলিম পুরুষের সাথে বিবাহে আবদ্ধ হতে পারবে। ইসলামে বিবাহপূর্ব ও বিবাহবহির্ভূত যৌনতা নিষিদ্ধ।
ইসলামের আগমনের পূর্বে এবং পরে যেই ধরনের বিবাহের কথা উল্লেখ আছে সেগুলি হল –
এই ধরণের তথ্য লিখে আয় করতে চাইলে…
আপনার নিজের একটি তথ্যমূলক লেখা আপনার নাম ও যোগাযোগ নম্বরসহ আমাদের ইমেল করুন contact@sobbanglay.com এ
ইসলাম-পূর্ব আরব
১.চুক্তিভিত্তিক বিবাহ –
এ পদ্ধতিতে কনে বর ও কনের পরিবারের মধ্যে বিয়ে ও বৈবাহিক রীতিনীতির ব্যাপারে বহুবিধ চুক্তি হয়ে থাকত৷
২. যুদ্ধবন্দী বিবাহ-
এই পদ্ধতিতে গোত্রে গোত্রে সংঘটিত লড়াই বা যুদ্ধে এক গোত্র অপর গোত্রের মহিলাদেরকে বন্দী করে নিজেদের বাজারে নিয়ে আসতো এবং তাদেরকে স্ত্রী বা দাসী হিসেবে বিক্রি করে দিত৷
৩. যৌতূকের বিবাহ-
এই পদ্ধতিতে বিয়ের সময় কনেপক্ষ বরপক্ষকে যৌতুক প্রদান করে থাকে৷
৪. উত্তরাধিকার সূত্রে বিবাহ-
এ পদ্ধতিতে পিতার মৃত্যুর পর পুত্র তার সৎ-মায়েদেরকে বিয়ে করতে পারত৷
ইসলাম আগমনের পর বৈবাহিক প্রক্রিয়ার পূনর্গঠন হয়। নবীজী (সাঃ) প্রচলিত বৈবাহিক রীতির নতুন করে প্রচলন করেন৷ তিনি চুক্তিভিত্তিক বিবাহ এবং যৌতুকের বিবাহের পুনর্গঠন করেন৷ এই পদ্ধতিতে কনেকে মত প্রকাশের অধিকার দেওয়া হয় এবং যৌতুক বা পণ পাত্রীপক্ষ হতে পাত্রকে দেওয়ার পরিবর্তে পাত্রপক্ষ বা পাত্র হতে পাত্রীকে পণ দেওয়ার বিধান চালু করেন যাকে মোহর নামে নামকরণ দেওয়া হয়৷ এর পাশাপাশি সম্পত্তি বিবাহ ও বন্দীকরণ বিবাহ চিরস্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করা হয়৷
ইসলামে বেশ কিছু ক্ষেত্রে বিবাহে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে৷
ক. রক্তসম্পর্কের ভিত্তিতে : মা, বোন, মেয়ে, দাদী, নানী, খালা, ফুফু, ভাতিজী এবং ভাগ্নী।
খ. বিবাহের ভিত্তিতে :
সৎ-মা, সৎ-দাদি, সৎ-নানী। কোন না কোন সময় সহবাস করেছে এমন স্ত্রীর কন্যা। শাশুড়ি, ছেলের বউ, নাতির বউ৷ স্ত্রীর সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক বিদ্যমান থাকা অবস্থায় তার বোন, খালা, ফুফু, স্ত্রীর ভাইয়ের অথবা বোনের কন্যার সঙ্গে বিবাহ নিষিদ্ধ।
গ. ধর্মের ভিত্তিতে :
একজন মুসলিম পুরুষ কোন মুশরিক (মূর্তিপূজারী) বা কাফির (অবিশ্বাসী) নারীকে বিয়ে করতে পারবে না, শুধুমাত্র কোন মুসলিম নারী এবং পাশাপাশি কোন ইহুদি বা খ্রিষ্টান নারীকেও বিয়ে করতে পারবে। অথচ একজন মুসলিম নারী শুধুমাত্র একজন মুসলিম পুরুষকেই বিয়ে করার অনুমতি পায়৷
কেবল ইসলাম নয় সব ধর্মেই তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ অত্যন্ত অপছন্দনীয় তবে এর অনুমতি আছে। কোন কারণে যদি তালাক হয়ে যায় তবে সে সময় থেকে উক্ত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্কের বৈধতা আর থাকে না৷
