প্রতিবছর প্রতিমাসের নির্দিষ্ট কিছু দিনে বিভিন্ন দেশেই কিছু দিবস পালিত হয়। ঐ নির্দিষ্ট কিছু দিনে অতীতের কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে স্মরণকরা বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরী করতেই এই সমস্ত দিবস পালিত হয়। ভারতবর্ষও এর ব্যতিক্রম নয়৷ ভারতবর্ষে পালনীয় সমস্ত দিবস গুলির মধ্যে একটি হল ‘কার্গিল বিজয় দিবস’ (Kargil Vijay Diwas)।
সমগ্র ভারত জুড়ে ২৬ জুলাই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলা কার্গিল যুদ্ধে ভারতের বিজয় উপলক্ষ্যে ও এই যুদ্ধে শহীদ ভারতীয় বীর সেনাদের স্মরণ করে ‘কার্গিল বিজয় দিবস’ পালিত হয়ে থাকে।
১৯৯৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের কার্গিল- দ্রাস সেক্টরে ভারত পাকিস্তানের মধ্যে যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল সেটি ইতিহাসে ‘অপারেশন বিজয়'(Operation Vijay) নামে পরিচিত। কারগিল যুদ্ধ শুরু হয় ৩ মে এবং শেষ হয় ২৬ জুলাই। এই লড়াই চলেছিল মোট ২ মাস তিন সপ্তাহ ২ দিন। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলা কার্গিল যুদ্ধে ভারতের বিজয় ও এই যুদ্ধে শহীদ ভারতীয় বীর সেনাদের স্মরণ করে ‘কার্গিল বিজয় দিবস’ পালিত হয়ে থাকে।
শীতকালে কাশ্মীর সীমান্তের কিছু অঞ্চলে তাপমাত্রা মাইনাস ৪০ ডিগ্রি নেমে যায়। ফলে ভারত পাকিস্তান দু’দেশের মধ্যেই একটি অলিখিত চুক্তি ছিল যে, শীতকালে কোনরকম সামরিক কার্যকলাপ চলবে না। অথচ সেই চুক্তি ভেঙে শীতের সময়েই শুরু হয়েছিল পাকিস্তানি সেনাদের অনুপ্রবেশ। এই ঘটনায় পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ বলেছিলেন, তিনি এই বিষয়ে কিছুই জানতেন না এবং সমস্ত ঘটনার জন্য তিনি সেনাপ্রধান পারভেজ মুশারফকে দায়ী করেন। ১৯৭১-এর ‘মুক্তিযুদ্ধ’-এর পর থেকে দীর্ঘকালীন শান্তি বজায় থাকলেও ১৯৯৮-এর মে মাসে ভারত-পাকিস্তান উভয় দেশেরই পারমাণবিক বোমা পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যুদ্ধের পটভূমিকা রচিত হয়েছিল। এই যুদ্ধে পাকিস্তানের মূল উদ্দেশ্য ছিল লাদাখ এবং কাশ্মীরের মধ্যে সংযোগ ছিন্ন করা এবং কাশ্মীর দখল করা। প্রায় ৫২৭ জন ভারতীয় সশস্ত্র সেনা শহীদ হয়েছিলেন এই যুদ্ধে। এই যুদ্ধ ‘কারগিল ওয়ার’ নামে পরিচিত হলেও, আসলে ‘কারগিল কনফ্লিক্ট’ নামেই এর সূত্রপাত ঘটেছিল।
প্রতিবছর ২৬ জুলাই সারা দেশ জুড়ে পালিত হয় কার্গিল বিজয় দিবস৷ শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে যারা দেশকে বাঁচিয়েছিলেন, তাঁদের প্রতি সম্মান জানাতে এই দিন সারা দেশজুড়ে তাঁদের স্মরণে পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সম্মান প্রদর্শন করা হয়। এই দিন ভারতের রাষ্ট্রপতি শ্রীনগরে অবস্থিত চিনার কর্পস ওয়ার মেমোরিয়াল-এ ভারতীয় বীর সেনানীদেরদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে থাকেন। ভারতীয় সেনার তিন বাহিনীর প্রধান জম্মু ও কাশ্মীরে অবস্থিত দ্রাস ওয়ার মেমোরিয়াল-এ ভারতীয় বীর সেনানীদেরদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে থাকেন। ২০১৯ সালে কুড়িতম বার্ষিকীতে দেশ জুড়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই দিনটি স্মরন করা হয়েছিল। এই দিবস পালন উপলক্ষ্যে ২০১৯ সালের থিম ছিল- স্মরণ কর, আনন্দ কর, নতুন সৃষ্টি কর (‘Remember, Rejoice, Renew’)। ২০২০ সালে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ভারতীয় সেনাদের আত্মত্যাগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।